মার্কিন শুল্ক ইস্যুতে সিপিডির নেতৃবৃন্দ :  দরকষাকষি করুন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৭ এএম

শুল্ক হার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে দরকষাকষির আহŸান জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইলে দেশটিতে ২০০ শতাংশ আমদানি বাড়াতে হবে। কমাতে হবে ৫০ শতাংশ রফতানি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহায়তা চুক্তি করতে হবে। বাংলাদেশের রফতানি প্রতিযোগিতায় মার্কিন শুল্কের প্রভাব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ‘ট্রাম্প রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ অ্যান্ড বাংলাদেশ : ইমপ্লিকেশনস অ্যান্ড রেসপন্স’ শীর্ষক সংলাপে সিপিডির পক্ষ থেকে এমন পরামর্শ দেওয়া হয়।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রফতানি পণ্য থেকে বছরে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি শুল্ক আদায় করে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে মার্কিন পণ্য থেকে বাংলাদেশ প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক পায়। সিপিডি বলছে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির ওপর গড়ে ছয় দশমিক দুই শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তবে বিভিন্ন ছাড় বিবেচনায় নেওয়া হলে গড় শুল্ক দুই দশমিক দুই শতাংশে নেমে আসে। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন আমদানির গড় শুল্ক ১৫ দশমিক এক শতাংশ। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততাসহ কৌশলগত বিকল্প খুঁজে বের করারও সুপারিশ করেছে সিপিডি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রফতানি ক্ষেত্রে যেসব পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত বা হ্রাস সুবিধা পেতে চায়, তার একটি তালিকা চেয়ে অনুরোধ করতে পারে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কারোপের পরিপ্রেক্ষিতে, মূল্যছাড় দাবি করছেন দেশটির পোশাক ক্রেতারা। স্থগিত করেছেন ক্রয়াদেশও। এতে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে দাবি বাংলাদেশের শিল্পমালিকদের। সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি ক‚টনৈতিক তৎপরতায় জোর দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, স্থানীয় শিল্প উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বড় ধরনের শুল্কযুদ্ধ শুরু করেছেন। দেশটিতে বাংলাদেশ বছরে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানির বিপরীতে আমদানি করে ২ বিলিয়ন ডরারের পণ্য। এই সমীকরণে ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিলেও ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত করে ১০ শতাংশ আরোপ করেছেন ট্রাম্প।

সিপিডি আয়োজিত মতবিনিময়ে পোশাক শিল্প মালিকরা বলেন, একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকা। তাদের অভিযোগ, রফতানি বাজারটিতে যখন অনিশ্চয়তা, তখন সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত আসছে না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রধান লক্ষ্যবস্তু চীন। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। আরও সময় লাগবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় বিষয়। এই পরিস্থিতিতে আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের উচিত হবে রফতানির বিকল্প বাজার খোঁজা। অর্থনীতিবিদ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন।

নিজেদের যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আছে, তার মধ্যে থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের বাজার বড় করার চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন রেহমান সোবহান। সেখানে আরও কয়েক বছর বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত বাজারের সুবিধা আছে। সেই সঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। এশিয়ার বাজারও আছে; এই মহাদেশ আগামী দিনে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধির মূল কেন্দ্র হবে। আগামী ২৫ বছরের মধ্যে এশিয়াই হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় জায়গা।

রেহমান সোবহান মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মোদ্দাকথা হলো, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রফতানির একক বৃহত্তম বাজার। সেখানে এত অনিশ্চয়তা থাকলে আমাদের বিকল্প খুঁজতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে আয়োজিত সংলাপে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সংলাপ সঞ্চালনা করেন।

মূল প্রবন্ধে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে ১৮ কোটি ডলার আমদানি শুল্ক পাওয়া গেছে। তার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রফতানি পণ্যে ১২৭ কোটি ডলার শুল্ক আদায় করেছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া শীর্ষ তিন পণ্যে শুল্ক শূন্য করলে অন্য দেশকে সমান সুবিধা দিতে হবে। এতে বাংলাদেশের মোট শুল্ক লোকসান হবে ১৭ কোটি ডলার। ফলে নিছক শুল্ক হ্রাস করে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে, বিষয়টি তেমন নয়।

এই ধরণের অনিশ্চিত যে ব্যবসায়ীক পরিস্থিতি বিরাজ করছে এর ফলে আমাদের ক‚টনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর তাগিদটা আরো বেড়ে গেল। জাপানের সঙ্গে আমরা এফটিএ করছি, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে এফটিএ করার কথা চলছে, আরো অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এগুলোর গুরুত্ব কিন্তু আরো বেড়ে গেল।

বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, প্রথমেই বুঝতে হবে, এটা পারস্পরিক শুল্ক নয়। ফলে আমরা যতই সাড়া দিই না কেন, লাভ নেই। আমাদের বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র কী চায়। সে জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। কোনো পণ্যে শুল্ক কমালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি বাড়বে, তা নিশ্চিত নয়। আরেকটি উপায় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করা যায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ করা সহজ নয়। যতবারই আমরা এফটিএ করতে চেয়েছি, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশ এখনো প্রস্তুত নয়।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে জামায়াত
মানুষের স্বপ্ন ফিকে হতে দেবেন না: হেফাজত
আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের স্ট্যাটাস ভাইরাল, কার নাম আছে?
কাল সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে
জটিলতা সৃষ্টি করে সরকারের মান-অভিমান গ্রহণযোগ্য না: আনু মুহাম্মদ
আরও
X

আরও পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে জামায়াত

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে জামায়াত

ইন্ডিয়া যা চায়, 'র' বাংলাদেশে সেটাই বাস্তবায়ন করতে চায় : সৈয়দ ফয়জুল করীম

ইন্ডিয়া যা চায়, 'র' বাংলাদেশে সেটাই বাস্তবায়ন করতে চায় : সৈয়দ ফয়জুল করীম

ঈশ্বরগঞ্জে মগটুলা ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ঈশ্বরগঞ্জে মগটুলা ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ইউএনও'র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল বাউফল

ইউএনও'র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল বাউফল

বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে মোরেলগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির নিন্দা

বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে মোরেলগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির নিন্দা

জকিগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এসএসসি ফলপ্রার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু

জকিগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এসএসসি ফলপ্রার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু

ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশকে ঘিরে কিশোরগঞ্জে যুবদলের প্রস্তুতি সভা অনু‌ষ্ঠিত

ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশকে ঘিরে কিশোরগঞ্জে যুবদলের প্রস্তুতি সভা অনু‌ষ্ঠিত

দেশ অত্যন্ত সংকটের মধ্যে রয়েছে, কখন কি হয়ে যায় সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে: ড. আসাদুজ্জামান রিপন

দেশ অত্যন্ত সংকটের মধ্যে রয়েছে, কখন কি হয়ে যায় সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে: ড. আসাদুজ্জামান রিপন

চা শ্রমিকদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনমান উপযোগী মজুরি ঘোষণার দাবী জানালো বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন

চা শ্রমিকদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনমান উপযোগী মজুরি ঘোষণার দাবী জানালো বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন

কুবি শিক্ষক আনিছের বিরুদ্ধে ফের পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ

কুবি শিক্ষক আনিছের বিরুদ্ধে ফের পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ

মানুষের স্বপ্ন ফিকে হতে দেবেন না: হেফাজত

মানুষের স্বপ্ন ফিকে হতে দেবেন না: হেফাজত

শেরপুরে মেধা ও যোগ্যতায় কনস্টেবল পদে চাকুরি পেল ১৯ জন

শেরপুরে মেধা ও যোগ্যতায় কনস্টেবল পদে চাকুরি পেল ১৯ জন

জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখার আহ্বান শিবিরের

জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখার আহ্বান শিবিরের

আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের স্ট্যাটাস ভাইরাল, কার নাম আছে?

আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের স্ট্যাটাস ভাইরাল, কার নাম আছে?

গোপনে বিয়ে করা স্ত্রীকে জোরপূর্বক অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার পর তাকে আবার ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে।

গোপনে বিয়ে করা স্ত্রীকে জোরপূর্বক অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার পর তাকে আবার ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে।

বিভাজনের উর্ধে উঠে  দায়িত্বশীল  ও সতর্ক আচরণ করতে হবে  ঃ  পীর সাহেব চরমোনাই

বিভাজনের উর্ধে উঠে দায়িত্বশীল ও সতর্ক আচরণ করতে হবে ঃ পীর সাহেব চরমোনাই

কাল সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে

কাল সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে

উখিয়ায় বনবিভাগের অভিযানে মাটি ভর্তি অবৈধ ট্রাক জব্ধ করে উদ্ধার

উখিয়ায় বনবিভাগের অভিযানে মাটি ভর্তি অবৈধ ট্রাক জব্ধ করে উদ্ধার

জটিলতা সৃষ্টি করে সরকারের মান-অভিমান গ্রহণযোগ্য না: আনু মুহাম্মদ

জটিলতা সৃষ্টি করে সরকারের মান-অভিমান গ্রহণযোগ্য না: আনু মুহাম্মদ

ড. ইউনূসের পদত্যাগ চায় না বিএনপি, তবে করলে বিকল্প বেছে নেবে জাতি : সালাহউদ্দিন আহমেদ

ড. ইউনূসের পদত্যাগ চায় না বিএনপি, তবে করলে বিকল্প বেছে নেবে জাতি : সালাহউদ্দিন আহমেদ