আমার ছেলেকে ওরা পুড়িয়ে মারলো, আমি ওদের বিচার চাই : আশুলিয়ায় শহীদ সজলের মা

শহীদ স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় স্তব্ধ শাহবাগের গোটা পরিবেশ

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯ এএম

রাজধানীর শাহবাগে ‘জুলাই, পিলখানা ও শাপলা চত্বর গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি’ শীর্ষক শহীদি সমাবেশে বুকভাঙা কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। তিনটি আলোচিত ঘটনার শহীদদের স্বজনরা সমাবেশে অংশ নিয়ে তাদের প্রিয়জনদের স্মরণে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।

 

 
 

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর তিনটার পর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে ইনকিলাব মঞ্চ। সমাবেশে বক্তারা আওয়ামী লীগকে ‘গণহত্যাকারী দল’ আখ্যা দিয়ে দলটি নিষিদ্ধের দাবি জানান। জুলাই অভ্যুত্থানে সাভারের আশুলিয়ায় শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম ছেলেকে স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পরেন। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে ওরা পুড়িয়ে মারলো। আমি ওদের বিচার চাই। ওদের নিষিদ্ধ করা হোক। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম হান্নান বলেন, আমরা আজকে সবাই একত্রিত করেছি একটি দাবিতে। আমাদের দাবিতে হচ্ছে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ যেন আর কখনো রাজনীতি করতে না পারে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিজ দেশের ছেলেদের মেরে ফেলতে পারে যে দল, সেই দলকে আমরা এই দেশে চাই না।

 

 

 
 

শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে গণহত্যায় শহীদ আল আমিনের ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, এ দেশে এখন যারা ক্ষমতায় আছে এবং যারা ক্ষমতায় আসবেন এসব আমরা কিছুই বুঝিনা। আমরা শুধু একটাই বুঝি সব শহীদ পরিবার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হবে না। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করার জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন মহল নানা কারণ দেখাচ্ছে। তারা আমাদেরকে শোনায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে। এই স্টেক হোল্ডার, তথাকথিত বিভিন্ন মহলকে বলতে চাই, যখন শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড হলো বিডিআর বিদ্রোহ হলো যখন শাহবাগে যাত্রাবাড়িতে উত্তরায় হত্যাকাণ্ড হয় তখন এই বহির্বিশ্ব কোথায় ছিল। ওই পশ্চিমা দেশের দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় ছিল যখন হেলিকপ্টার থেকে গুলো করে হত্যা করা হলো।

 

 

তিনি বলেন, ভারতের প্রেসক্রিপশনে বিডিআর হত্যাকাণ্ড হয়েছে, শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অন্য কোনো কিছুই প্রাসঙ্গিক হতে পারে না। সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে সার্জিক আলম বলেন, এই জেনারেশনকে ভয় করুন। যদি এই জেনারেশনের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে কোনো ধরনের খেলা খেলার চেষ্টা করেন, তাহলে সকল ক্ষমতার উপরে গিয়ে টেনেহিঁচড়ে নামাতে পারে।

 

 

সভাপতির বক্তব্যে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি ৪ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, সরকারকে আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করা ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে প্রথমে নির্বাহী আদেশে, তারপরে আদালতের মাধ্যমে এবং সবশেষে রাজনৈতিক সমঝোতায় সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; শাপলা গণহত্যার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রকৃত শহীদদের তালিকা প্রকাশ করে অবিলম্বে এই গণহত্যার বিচার শুরু করতে হবে; পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে এবং তাদের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহারে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ বিচারের বিষয়ে স্পষ্ট ধারা উল্লেখ থাকতে হবে।

 

 

কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, এসব দাবিতে আগামী ১০০ দিন ৬৪ জেলায় গণসংযোগ করবে ইনকিলাব মঞ্চ। যদি এই সময়ের মধ্যে সরকার কার্যকর কোনো ভূমিকা গ্রহণ না করে, তাহলে আগামী ৩৬ জুলাই (৫ অগস্ট) শাহবাগ থেকে 'মার্চ ফর বাংলাদেশে' কর্মসূচি থেকে সচিবালয় ঘেরাও করবে জুলাই জনতা। সমাবেশে ৫০ এর অধিক শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বক্তব্য দিয়েছেন। 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমাবেশ আজ
উত্তাল ক্যাম্পাস, তদন্তে নতুন মোড়
ঢাকার সড়কপথ অভিভাবকহীন!
‘আলেম-ওলামাকে শত্রু বানালে ফ্যাসিস্টদের মতো পরিণতি ঘটবে’
ইউক্যালিপটাস এবং আকাশমনি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার
আরও
X
  

আরও পড়ুন

চলতি মাসেই বাজারে আসছে আমের রাজধানীর আম

চলতি মাসেই বাজারে আসছে আমের রাজধানীর আম

পাকিস্তানের ‘শূন্য শুল্ক’ প্রস্তাব, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে নতুন কূটনৈতিক বার্তা

পাকিস্তানের ‘শূন্য শুল্ক’ প্রস্তাব, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে নতুন কূটনৈতিক বার্তা

২০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি, এআই প্রযুক্তিতেও আমিরাতের পাশে যুক্তরাষ্ট্র!

২০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি, এআই প্রযুক্তিতেও আমিরাতের পাশে যুক্তরাষ্ট্র!

মোরেলগঞ্জে পানি তালের কদর সারাদেশে

মোরেলগঞ্জে পানি তালের কদর সারাদেশে

দুর্দান্ত ইয়ামালে বার্সার লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার

দুর্দান্ত ইয়ামালে বার্সার লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার

ফিলিস্তিনিদের ৬০০ ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ইসরাইল

ফিলিস্তিনিদের ৬০০ ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ইসরাইল

গোপালগঞ্জে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ২৮

গোপালগঞ্জে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ২৮

লাইভ চলাকালীন জনপ্রিয় টিকটকারকে গুলি করে হত্যা

লাইভ চলাকালীন জনপ্রিয় টিকটকারকে গুলি করে হত্যা

পটুয়াখালীতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এর উদ্যোগে অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

পটুয়াখালীতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এর উদ্যোগে অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ভারতে সন্দেহভাজন ‘১৪৮ বাংলাদেশিকে’ ত্রিপুরায় স্থানান্তর, হতে পারে পুশ ব্যাক

ভারতে সন্দেহভাজন ‘১৪৮ বাংলাদেশিকে’ ত্রিপুরায় স্থানান্তর, হতে পারে পুশ ব্যাক

বাড়ল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির সময়সীমা

বাড়ল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির সময়সীমা

কৃষ্ণচূড়ার নান্দনিক সাজ এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না শেরপুর গারো পাহাড়ে!

কৃষ্ণচূড়ার নান্দনিক সাজ এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না শেরপুর গারো পাহাড়ে!

ভারতের আরও একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

ভারতের আরও একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

পাকিস্তানের জন্য স্থগিতই থাকছে সিন্ধু পানি চুক্তি, জানাল ভারত

পাকিস্তানের জন্য স্থগিতই থাকছে সিন্ধু পানি চুক্তি, জানাল ভারত

আটঘরিয়ায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ; মোটরসাইকেল ও অফিস ভাঙচুর, আহত ৫

আটঘরিয়ায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ; মোটরসাইকেল ও অফিস ভাঙচুর, আহত ৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমাবেশ আজ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমাবেশ আজ

গরু নিয়ে যাওয়া সেই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে বহিষ্কার

গরু নিয়ে যাওয়া সেই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে বহিষ্কার

ট্রাম্প-পুতিন সরাসরি বৈঠক ছাড়া ইউক্রেন সংকটের সমাধান অসম্ভব: রুবিও

ট্রাম্প-পুতিন সরাসরি বৈঠক ছাড়া ইউক্রেন সংকটের সমাধান অসম্ভব: রুবিও

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় একদিনেই  নিহত ১৪৩ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় একদিনেই নিহত ১৪৩ ফিলিস্তিনি

স্থূলতা কেবল একটি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার চেয়ে অনেক বেশি কিছু

স্থূলতা কেবল একটি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার চেয়ে অনেক বেশি কিছু