বাধ্যতামূলক র্যালির নির্দেশে ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা
১০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৮ পিএম
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকেই। ছুটি পেয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অনেকেই চলে গেছেন নিজ নিজ বাড়িতে। বাকীরাও ছুটছেন স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। কিন্তু এই ছুটির মধ্যেই পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক উপস্থিত হয়ে র্যালি করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।
জানা যায়, আগামী ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে নববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিন সকালে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে র্যালি করতে হবে। গত ২৮ মার্চ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।
এরপরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে একটি নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। গত রোববার আদেশটি প্রকাশ করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। গত ৪ এপ্রিল যুগ্মসচিব ড. মো. আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, বাংলা নববর্ষয় উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসব মুখর পরিবেশ যথাযথ আড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে। ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অপরিমেয় বিশ্ব সংস্কৃতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রচার করতে হবে। সকালে অবশ্যিকভাবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে র্যালি করতে হবে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশনা দিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলেছে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ।
জানা গেছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আদেশটি সব মাদরাসার অধ্যক্ষ, সুপার ও ইবতেদায়ি প্রধানদের পাঠানো হয়েছে। একই রকম আদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও দেয়া হয়েছে।
এদিকে এই আদেশ প্রকাশের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। তারা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হয়ে গেছে মধ্য রজমানে। এর মধ্যে অনেকেই ঈদ উদযাপন করতে যার যার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। বাকীরাও চলতি সপ্তাহের মধ্যেই চলে যাবেন। এমন অবস্থায় ১৪ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক উপস্থিত হয়ে র্যালি করা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কি শিক্ষার্থীরা সেই র্যালির জন্য আবার ফিরে আসবেন?
মাদারাসার একাধিক শিক্ষক বলেন, দেশের বেশিরভাগ মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা দূর-দূরান্ত থেকে পড়তে আসে। মাদরাসার হোস্টেল, বোডিং কিংবা আশপাশে ভাড়া বাসায় থেকে তারা ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। রমজানে ছুটি ঘোষণার পর তারা সকলেই বাড়িতে চলে গেছে। এখন বাধ্যতামূলক র্যালি করার সিদ্ধান্তে তারা বিপাকে পড়েছেন। একদিকে শিক্ষার্থীরা নেই, অন্যদিকে র্যালি না করলে মাদরাসা নিয়ে নানারকম বিরূপ মন্তব্য করা হবে।
র্যালির সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমেদকে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, পহেলা বৈশাখে র্যালি করার নির্দেশনা দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে এরকম কোন চিঠি আসেনি। আমরা এরকম কোন নির্দেশনাও দেইনি।
রমজান মাসে মাদরাসার ছাত্রদেরকে পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার র্যালি করার নির্দেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের ২ শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসার ছাত্রদেরকে পহেলা বৈশাখের দিনে মঙ্গল শোভাযাত্রার র্যালি আয়োজনের নির্দেশ চরম দৃষ্টতার শামিল।
তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইসলাম সমর্থন না করলেও সেই মঙ্গল শোভাযাত্রার র্যালি আয়োজনের নির্দেশনা ইসলাম বিরোধী কর্মকাÐ করতে বাধ্য করার নির্দেশ দুঃখজনক। বঙ্গবন্ধুর নামে এহেন নির্দেশনা কিসের ইঙ্গিত বহন করে? শহিদুল ইসলাম বলেন, শাহজালাল ইয়ামেনী রহঃ এর বাংলায় দেশের জনগণ এগুলো কখনো মেনে নিবে না। সরকার এই নির্দেশ প্রত্যাহার না করলে জনবিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিশ্বাস ও বাঙালি সংস্কৃতি পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ বলেন, বাংলা বর্ষপঞ্জি ষোড়শ শতকে মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে ফসল রোপণ ও কর আদায় সহজ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। হালখাতা, পিঠাপুলি উৎসবের মাধ্যমে আবহমানকাল থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়ে আসছে। মাত্র তিন দশক থেকে একটি মহল মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে মনগড়া ও নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতীক ব্যবহার করে সার্বজনীন বাঙালি সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য উৎসব ও জাতিসত্তার ধর্মীয় বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বোধ-বিশ্বাসকে উপেক্ষিত করে বাঙালি সংস্কৃতির নামে ব্রা²ন্যবাদী সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার নীল নকশা অংকন করা হচ্ছে। মঙ্গল শোভাযাত্রার আশ্রয়ে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতির স্বকীয়তা নষ্ট করে দেওয়ার চক্রান্ত স্পষ্ট। মঙ্গল শোভাযাত্রার বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই।
পবিত্র রমজানের ভাবগাম্ভীর্যতা ও সম্মান রক্ষার্থে মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে বিরত থেকে দেশবাসী ও সচেতন শিক্ষার্থীদের প্রতি ইসলাম বিধৌত বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশে ভ‚মিকা রাখতে সকলের প্রতি আহŸান জানান।
বিভাগ : রাজনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
উত্তরা ক্লাবের নতুন সভাপতি ফয়সল তাহের
গজারিয়ায় বিএনপি নেতার শীত বস্ত্র বিতরণ
টাঙ্গাইলে মহাসড়কে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার
ভোটার তালিকা হালনাগাদে ইসির প্রস্তুতি
গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু নিহত
দোয়ারাবাজারে স্ত্রীর যৌতুক মামলায় যুবক গ্রেপ্তার
সচিবালয়ে আগুন পরিকল্পিত: প্রকৌশলী ইকরামুল খান
সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে আটকা পড়েছেন ৭১ পর্যটক
জকিগঞ্জে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু
বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের অগ্রগতির লক্ষে ইসিফোরজে’র প্রি-ওয়ার্কশপ
উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন
ব্রাহ্মণপাড়ায় ছুরিকাঘাতে এক যুবককে হত্যা
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন
হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট
শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি