আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গাড়িতে পুলিশের ছাড়, অন্য গাড়িতে কঠোর
২৮ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৮ পিএম | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলো থেকে আওয়ামী লীগের সমাবেশে অংশ নিতে আসা নেতা-কর্মীদের গাড়িগুলো পুলিশের তল্লাশি ছাড়াই ঢাকায় প্রবেশ করেছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গাড়ির বাইরে সব গণপরিবহনকে তল্লাশিচৌকিতে থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করে পুলিশ। এতে ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ যাত্রীরা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, গাবতলি, উত্তরা ও কেরানীগঞ্জসহ সবগুলো প্রবেশ পথেই গতকাল শুক্রবার এ চিত্র দেখা গেছে। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে বুড়িগঙ্গা নদীর বেশ কয়েকটি খেয়াঘাটে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা নৌচলাচল বন্ধ করে দেয়।
অন্যদিকে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় দিনের মতো গত বৃহস্পতিবার রাতেও পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫০০ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের মধ্যে ১ ৯০ জন পলিটিক্যাল অ্যারেস্ট (রাজনৈতিক গ্রেপ্তার)।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা তাদের নেতা-কর্মী। শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে তারা যাতে যোগ দিতে না পারেন, সে জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে পুলিশ বলেছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশ বিভিন্ন মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। অন্যদের ‘রাজনৈতিক’ কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে তৎপর ছিল। এর আগে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার রাত থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ৪৪৭ ‘বিএনপির নেতা-কর্মী’কে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থান করে দেখা গেছে, সকাল থেকে এখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা অবস্থান নেন। তারা ঢাকাগামী সব গণপরিবহনে তল্লাশি চালান এবং গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সাইনবোর্ড থেকে কোনো যাত্রী যেন রাজধানীর উদ্দেশে গাড়িতে উঠতে না পারেন, এ কারণে পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে।
সাইনবোর্ড মোড়ে দায়িত্ব পালনরত পুলিশের এসআই সামাদ দাবি করেন, তারা সন্দেহভাজন গাড়িগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছেন। কাউকে বাধা দেয়া হচ্ছে না।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের বহনকারী গাড়ি পুলিশ চেকপোস্টে আটক করছে ও হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, তাদের নেতা-কর্মীদের গাড়ি পুলিশ আটক করলেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গাড়ি বাধা ছাড়াই ঢাকায় প্রবেশ করছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করছে। তিনি বলেন, ফতুল্লায় তাদের নেতা-কর্মীদের বাধা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের লোকজন। সাইনবোর্ডে তাদের সাতজনকে আটক করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) চাইলাউ মারমা বলেন, মহাসড়কের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ কাজ করছে। বিএনপির তিন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বুড়িগঙ্গায় নৌ-চলাচল বন্ধের অভিযোগ: বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বুড়িগঙ্গা নদীর বেশ কয়েকটি খেয়াঘাটে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা নৌচলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। নৌ চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ রাখতে নেতাকর্মী ও পুলিশ ভোর থেকে অবস্থান করছেন। শুক্রবার ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার খেয়াঘাটের নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ। এ কারণে নদী পারাপার হতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে লোকজনকে। বিশেষ করে অসুস্থ রোগী ও রোগীর স্বজনদের পারাপারে বিঘœ ঘটে। অনেক অনুনয় বিনয় করার পরেও এসব নেতা অনুমতি দেরনি খেয়াঘাটের নোকাগুলোর।
তবে ঢাকা জেলা সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন পুলিশের পক্ষ থেকে নৌকা চলাচলে বাধা দেয়ার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রাজধানীতে সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যেন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- না চালাতে পারে, সে জন্য পুলিশ ঢাকাগামী যানবাহনগুলোতে সন্দেহজনক লোকজনকে তল্লাশি করছে। সকালে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে সরজমিনে সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর তিনটি প্রবেশমুখ কেরানীগঞ্জের বছিলা সেতুর কাছে ঘাটারচর এলাকায়, বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর কাছে কদমতলী এলাকায় এবং ঢাকা-মাওয়া সড়কের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী যানবাহনগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এ সময় বছিলা সেতুর কাছ থেকে ১৩ জন এবং বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু এলাকা ও বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ৭২ জনকে আটক করা হয়েছে। সাভারের আমিনবাজারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে পুলিশ সন্দেহজনক যাত্রীদের মুঠোফোনে তথ্য খুঁজছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজার এলাকার বাসিন্দা জনি মন্ডল বলেন, আমি পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় ইস্ট বেঙ্গল মার্কেটে চাকরি করি। শুক্রবার ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও মালিক বলেছেন, সকাল সকাল দোকানে যেতে হবে। সকাল সাড়ে আটটায় পূর্ব আগানগর এলাকার আলম মার্কেট এলাকায় বুড়িগঙ্গার খেয়াঘাটে এসে দেখি নৌকা চলাচল বন্ধ। ঘাটে পুলিশ বসে আছে। তেলঘাট এলাকার খেয়ানৌকার মাঝি বাদল মিয়া বলেন, সকাল সাতটার দিকে তিনি ঘাটে এসে দেখেন পুলিশ বসে আছে। তিনি যাত্রী নিতে গেলে পুলিশ এসে জানায়, আজ এখানে নৌকা চালানো যাবে না। এরপর থেকে তিনি তীরে বসে ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাবুবাজার ব্রিজের সামনে অনেক পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। যাত্রীবাহী বাস বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা আসতেই তা থামানো হচ্ছে। এরপর গাড়িতে ওঠে তা চেক করছেন পুলিশ সদস্যরা। বিএনপি কোনো ধরনের পোস্ট শেয়ার করছেন কি না তা দেখা হচ্ছে। যাদের মোবাইল ফোনে বিএনপির পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে তাদের আটক করা হচ্ছে। আবার যেসব গাড়ি থেকে জয় বাংলার স্লোগান দেওয়া হচ্ছে তা চেক করা ছাড়া ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
আবদুল্লাহপুরে ৩০ জনকে আটক: ভোর থেকেই আবদুল্লাহপুরে বসে পুলিশের বিশেষ তল্লাশিচৌকি। যাত্রীবাহী বাস, মোটরসাইকেল বা কোনো যানবাহন এলেই গতি রোধ করে তল্লাশি করে পুলিশ। এ সময় মুঠোফোন ঘেঁটে অনেক যাত্রীকে আটক করতে দেখা যায়। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৩০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক এসে যুক্ত হয়েছে আবদুল্লাহপুর মোড়ে। এর মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ঢাকায় প্রবেশ করেন মানুষ। ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক হয়ে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ রাজশাহী বিভাগের একাধিক জেলার লোকজন রাজধানীতে প্রবেশ করেন। এখানে দুটি সড়ক ঘিরেই বসেছে পুলিশের তল্লাশিচৌকি।
টেকনিক্যাল, মাজার রোড, গাবতলী ও আমিনবাজার কঠোর তল্লাশি পুলিশের: শুক্রবার রাজধানীর টেকনিক্যাল, মাজার রোড, গাবতলী ও আমিনবাজার ঘুরে দেখা গেছে, টেকনিক্যাল, মাজার রোড বা গাবতলীতে সেভাবে চেকপোস্টের মাধ্যমে তল্লাশি না হলেও আমিনবাজারে রাজধানীগামী বাসে কঠোর তল্লাশি করছেন পুলিশ সদস্যরা। রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে প্রত্যেক গাড়িতে ঢুকে তল্লাশি করে ছাড়া হচ্ছে।
আমিনবাজারে জেলা পুলিশের পাশাপাশি জেলা ডিবি পুলিশও কঠোর নজরদারিতে দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া, আমিনবাজার ব্রিজ পার হয়ে গাবতলীতে ঢোকার মুখেই পুলিশের নজরদারি থাকলেও তল্লাশি করা হচ্ছে না। তবে কোনো গাড়িকে সন্দেহ হলেই গাবলতীতে তল্লাশীসহ গাড়ির কাগজপত্র দেখছেন পুলিশের সার্জেন্ট।
গাবতলীতে কুদ্দুস নামের এক রিকসা চালক বলেন, ভোর থেকেই গাবতলীতে আছি। কিন্তু আজ সেরকম কোনো যাত্রী নেই। আজ গাড়িও খুব কম ঢুকছে। ঢাকার বাইরে থেকে গাড়ি কম এলে, যাত্রীও কম হয়। তাছাড়া, আজকে অন্যান্য যাত্রীও সেরকম নেই। রাস্তা একদম ফাঁকা। সমাবেশের কারনে নাকি আজকে গাড়ি ও যাত্রী কম।
রাশেদ নামের পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আজকে রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ আছে। এই সমাবেশে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ সচেষ্ট আছে। আমরা কোনো গাড়িই আটকাচ্ছি না। তবে প্রত্যেক গাড়িতে আমরা তল্লাশি করছি। সাধারণ জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।
বিভাগ : রাজনীতি
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার