ভোটের দোয়া, এখন ভোটের মাঠে, সিলেটে-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রাথী হুছামুদ্দীন চৌধুরী
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২৯ পিএম | আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২৯ পিএম
আল্লামা মোঃ আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব (রহ.) কিবলাহ আমাদের দেশে এক সুপরিচিত ওলী-আল্লাহর নাম। সুদীর্ঘ প্রায় সত্তর বছরকাল যাবত আন্জাম দেয়া দ্বীনের বহুমুখী খিদমতই তাঁর ব্যাপক পরিচিতির অন্যতম কারণ। তাঁকে একটি নির্দিষ্ট পরিচয়ে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। আমৃত্যু তিনি ছিলেন সুললিত কন্ঠের অধিকারী দাঈ-ইলাল্লাহ, পাশাপাশি একজন সুলেখক ও সমাজ সংস্কারক। সেই সাথে ছিলেন মহান এক আধ্যাত্মিক রাহবার। ছিলেন আলেম সমাজেরও শীর্ষস্থানীয় এক ব্যক্তিত্ব। ছিলেন এ জাতির প্রতিটি সংকট সন্ধিক্ষণে সাহসসঞ্চারী এক বিবেকী কণ্ঠস্বর। সত্য প্রকাশে ছিলেন বরাবরই অকুতোভয়। ক্ষমতা, প্রভাব প্রতিপত্তি কোন কিছুই তাঁকে নীতি আদর্শ থেকে করতে পারেনি বিচ্যুত। পরীক্ষিত কর্মগুনে ফুলতলী দরবার এর সার্বজননিতা অতুলনীয়। দলমত নির্বিশেষ সব শ্রেনী পেশার মানুষের ভক্তি ভালোবাসার স্থল আজ ‘ফুলতলী দরবার’। এখন সেই দরবারের অন্যতম রাহবার ছোট সাহেবজাদা মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। প্রস্তুতিও চুড়ান্ত। তার বিপরীতে আ্ওয়ামীলীগের নৌকার প্রতীক মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। মাসুক উদ্দিন আহমদ ব্যক্তি জীবনে ফুলতলী দরবারের একজন ভক্ত-অনুরাগী-সহযোগী। অথচ এ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে এই দরবারের ছোট সাহেব জাদার সাথে। বাস্তবিক অর্থে এ পরিস্থিতি বিব্রতকর। নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও তাদের মধ্যেকর সর্ম্পক কখনো হয় না সুখকর। কাঁদা ছোড়াছুড়িসহ বর্তমান ও ভবিষ্যতে জন্য সৃষ্টি হয় হিংসা প্রতিহিংসার অমোচনীয় ক্ষত। নির্বাচনী মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী হ্ওয়ার পর আ’লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এক সাক্ষাতে মিলিত হয়েছেন তিনি মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী। গত মঙ্গলবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে ছড়িয়েছে সর্বত্র। বৈঠকের পর থেকেই হুছামুদ্দীন চৌধুরীর অনুসারীরা বিষয়টিকে বিবেচনা করেছেন ‘শুভ ইঙ্গিত’ হিসেবে। বিপরীতে ব্যক্তিসহ নানা মহল এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। ইংগিতপূর্ণ কথা তুলে ধরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী জামেয়া কাজীর বাজার মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন ( হুবহু তুলে ধরা হলো), ‘‘ইতিহাস খ্যাত সম্রাট তৈমুর লং। পায়ে সমস্যা থাকায় দরবারের চেয়ারে বসার সময় এক পা সামনের লোকদের দিকে ছড়িয়ে বসত। সে যুগের শ্রেষ্ঠ আলেম সাদ উদ্দিন তাফতাযানি (রহ:)। একবার সম্রাটের দরবারে যেতে বাধ্য হলেন। তিনি এক পা সম্রাটের দিকে ছড়িয়ে বসলেন। জিজ্ঞাসা করা হল,সম্রাট তো পায়ে সমস্যা থাকায় এভাবে বসেন থাকেন। আপনি কেন এভাবে বসলেন ? তিনি বললেন,আলেমদের মর্যাদা রক্ষায় আমি সম্রাটের দিকে পা ছড়িয়ে বসেছি। কেননা যে ব্যক্তি সম্রাটের সমস্যার কথা জানেনা, সে ভাববে সম্রাট আলেমের সামনে দম্ভ করে বসতেন, ইতিহাস এভাবে লেখা হবে। আজকাল শাসকের সামনে দরবারি আলেমদের মাথা নীচু করে বসে থাকতে দেখা যায় আবার কাউকে দেখা যায় হাত জোর করে দাড়িয়ে থাকতে। শত ধিক! এমন দরবারি আলেমদের প্রতি। আল্লাহ এমন বেগায়রাত (আত্মমর্যাদাহীন) আলেমদের খপ্পর হতে জাতিকে রক্ষা করুন।’’ এ ব্যাপারে মাওলানা শাহ মমশাদ ইনকিলাবকে বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সিলেটের কতিপয় আলেমের বৈঠক মিডিয়ার কল্যানে আমাদের চোখে পড়েছে। বৈঠকের ছবিতে আলেমদের বসার জড়োসড়ো ভংগিতে আমরা হতবাক, বিস্মিৃত !
কানাইঘাটের কওমীপন্থি এক শীর্ষ আলেম (আপাতত নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, দেশ ও আন্তর্জতিকভাবে এই নির্বাচনের তফসিল ও আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। নির্বাচনে দেশের সিংহভাগ স্বীকৃত রাজনীতিক দল অংশগ্রহন না করায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এহেন পরিস্থিতিতে ডামি প্রার্থী প্রত্যাশা করছেন। সেকারনে এই নির্বাচনে ডামি প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী সবই সরকারী দলের পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট ও অনুগত। যেখানে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ, হাজার হাজার আলেম জেলবন্দি। এই অবস্থায় এই নির্বাচনে অংশ গ্রহনকারী কেউই আলাদা ইমেজ বা শ্রদ্ধা সম্মানের দাবীতে কেন্দ্রে নিতে পারবেন না ভোটারদের। তবে অনেকে অংশ্রগ্রহন করছেন, প্রার্থী হচ্ছেন, এর কারন তাদের কর্মফল। গোপনে প্রকাশ্যে সরকারের নানা সুবিধা নিয়েছেন, উপহার গ্রহন করেছেন মুখ লুকিয়ে, এখন সময় সরকারকে প্রতিদান দেয়ার। সেই প্রতিদান দিতে যেয়ে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের মুখ ও মুখোশ উম্মোচনে এই নির্বাচন যথেষ্ট।
এছাড়া তিনি বলেন, সাহেবজাদা হুছামুদ্দীন চৌধুরী সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সেখানে আনজুমানে আল ইসলাহের অসংখ্য ভক্ত রয়েছেন, সেই বিবেচনায় ফুলতলী অনুসারীদের সিলেট-৫ আসনে একটা ‘ভোট ব্যাংক’ আছে। সেই ভোট পক্ষে নিতে বিগত নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ফুলতলী দরবারের আনুকূল্য নেয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো সেই ভোট নিজেদের বাক্সে নিতে চাইবেন হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। এখানে কতটা সফল হন, তার প্রমান হবে আগামী ৭ জানুয়ারী নির্বাচনে।
এদিকে সিলেট-৫ আসনে হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রার্থীতা প্রসঙ্গে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ফুলতলী দরবারের প্রতি আমার শ্রদ্ধা, সম্মান ্ও ভক্তি রয়েছে। কিন্তু এই দরবারের কেউ যখন নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবেন তখন ভোট সংস্কৃতির আলোকেই তার মোকাবেলা করা হবে। তিনি বলেন মরহুম পীর সাহেবের সাথে আমার সম্পর্কের গভীরতা ছিল খুবই শক্তিশালী । যুদ্ধের পর তাকে সিলেট নগরীর তাঁতিপাড়া থেকে নিজে বের করে ( আতœগোপন থেকে ) নিরাপত্তার জন্য জেলে নিয়ে যাই আমি। তখন তার জন্য উপযুক্ত ছিল ‘সেইফ কাস্টডি’। তাকে আমি ‘নানা’ নামে সম্বোধন করতাম। তিনি বলেন, সম্প্রতি ফুলতলী দরবারের বড় সাহেব জাদা ও বর্তমান পীর ইমাদ উদ্দিন চৌধুরীর সাথে সাক্ষাত করেছি, সেই সাথে নির্বাচনের কথা বলে এসেছি। দোয়াও করেছেন আমার জন্য। এখন হুছামুদ্দীন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রাথী হচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেছেন বলে শুনেছি। এটার তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, দলের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নৌকার বিজয় উপহার দিতে সর্বাতœক চেষ্টা করবো আমি।
অপরদিকে, মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী ইনকিলাবকে বলেন, আমার মতো একাধিক ব্যক্তির সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।’ সম্প্রতি তার সাথে এক বৈঠকে হয়েছে উল্লেখ করে হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী বলেন‘ বৈঠকের এক ফাঁকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার প্রার্থিতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সাধুবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে কেবল আমার আসনের প্রতিনিধিত্ব করবো না, গোটা জাতির মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা রাখার চেস্টা করবো। নৌকার প্রার্থী প্রসঙ্গে বলেন, তিনি আমাদের দরবারের একজন শুভাকাংখি। কিন্তু নীতির প্রশ্নের কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই, নির্বাচনে তার উদ্দেশ্য ও আমার উদ্দেশ্য ভিন্ন। আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আলেম উলামাদের অনুরোধ ও চাপে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছি, বলতে গেলে এছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না। সেই সাথে আমার ত্যাগও বটে। কারন আমি ব্যক্তিগতভাবে এমপি হতে চাইনি। তিনি বলেন, বিগত ৩ টার্ম আ’লীগকে সাহায্য করেছি। এর বিনিময় অবশ্যই আশা করতে পারি আমি। আমি ভরসা পেয়েছি, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, প্রধানমন্ত্রী সেই কথা বলেছেন। নির্বাচনী এলাকায় আমার লোকজন সংগঠিত ও শক্তিশালী। তিনি বলেন, কোন দলের লেজুড়বৃত্তি নয়, সেকারনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি আমি। সংসদের যেয়ে সারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করবো আমি।
বিভাগ : রাজনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোনালাপ
অযোগ্য হবেন হাসিনা?
দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সচিব ইসমাইল হোসেন
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ
অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু
১১ ইউনিটে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা