ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সরকারকে রক্ষায় গঠন করা হয়েছে বিশেষ বাহিনী: রিজভী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১২ মে ২০২৪, ০৫:৩৯ পিএম | আপডেট: ১২ মে ২০২৪, ০৫:৩৯ পিএম

শেখ হাসিনার মসনদ রক্ষার প্রভু ভারতের মদদে গত ৭ জানুয়ারির একদলীয় ভোটারবিহীন ডামি নির্বাচনের পরে বায়বীয় সরকারকে রক্ষার জন্য বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখলেই তা ছিন্নভিন্ন করার জন্য হামলে পড়াই শেখ হাসিনার দমন বাহিনীর কাজ। তারা নানা মিথ্যা অজুহাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, গ্রেফতার, দমন-নিপীড়ণ-সাঁড়াশি আক্রমণ চালাচ্ছে। নিপীড়ণ-নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দলকে নির্মমভাবে দমন করবার জন্য, নিজেরাই নৈরাজ্য-সন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত অরাজকতা সৃষ্টি করছে জনবিচ্ছিন্ন সরকার। রোববার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকার দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে দিনে দিনে অস্থির বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগ ভার্সেস আওয়ামী লীগ” উপজেলা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র বর্জনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা মার্কা হাস্যকর তামাশার নির্বাচনী প্রহসনে দেশের জনগণ শেষ পেরেক ঠুকে দেয়ার পর সরকার আরো উদ্ভ্রান্ত হয়ে গেছে। উপজেলার মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে একেবারেই জনপ্রিয়তা শুণ্য হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। একটি দল নিজের কর্মদোষে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হওয়ার এটা বড় লক্ষণ। এখন তাদের সাথে কিছু লুটেরা আর ভারত ছাড়া কেউই নেই। দেশজুড়েই একদলীয় ভোটারবিহীন ডামি সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে জনগণের পদধ্বনি বাড়ছে। সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবীতে জনগণের সুদৃঢ় ইস্পাত কঠিন ঐক্য অবলোকন করে ভীত সন্ত্রস্ত শেখ হাসিনা আবারো নতুন করে বিএনপিসহ বিরোধীদল নিশ্চিহ্ন করতে ভয়ংকর ক্র্যাকডাউনের পরিকল্পনা করেছেন।

তিনি বলেন, গত ২৮ অক্টোবর জনগণের মহাসমাবেশ ল-ভ-ের মাধ্যমে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে সংঘাত সৃষ্টি করে বিরোধীদলের ওপর দমনাভিযান চালিয়েছে, একই কায়দায় শনিবার যুবদলের সমাবেশের দিনে গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণের নাটক সাজানো হয়েছে।

রিজভী বলেন, শুক্রবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে নয়াপল্টনে জনজোয়ার দেখে হিতাহিত জ্ঞানশুণ্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, “বিএনপি আবার নৈরাজ্য করলে আগে তো একটা শিক্ষা দিয়েছি, এবার ডাবল শিক্ষা দিবো। আমরা বসে নেই।” ওবায়দুল কাদের সাহেবের ডাবল শিক্ষা দেয়ার ঘোষণার পরেই আওয়ামী নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও অরাজকতা করার এজেন্টরা মাঠে নেমেছে। তারাই নয়াপল্টনে পলিথিনের ভেতর ককটেল রেখে এক ভবঘুরে কিশোরকে আহত করেছে। তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। তারা পরিকল্পিতভাবে আরো নৈরাজ্য সহিংসতা করতে পারে বলে জনগণ সন্দেহ করছে।

এসবের উদ্দেশ্যে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতির ফায়দা লুটে, বিএনপি তথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির ওপর হামলা-মামলা ও গণগ্রেফতার অব্যাহত রাখা। অতীতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজেরাই নৈরাজ্য, নাশকতা, সন্ত্রাস, ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও করে তার দায় আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করার পর সব গোমর দেশের জনগণ এবং বিদেশীদের সামনে ইতোমধ্যেই ফাঁস হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নানা কারসাজি করে যাচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর সমাবেশের প্রাক্কালে ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছিলেন, বিএনপি সমাবেশ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হেফাজতের পরিণতি হবে, অর্থাৎ হেফাজতের আলেম-ওলামাদের রক্তে ঢাকার রাস্তা যেমন ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল, ঠিক তেমনি পরিণতি করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। আর দেশবাসী সেটি স্বচক্ষে দেখলো যে কি ভয়ংকর পরিণতি ঘটানো হয়েছিল ওবায়দুল কাদের এবং তাদের সাজানো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তারা বিএনপি’র ২৮ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে রক্তাক্ত হামলা করে বানচাল করেছে। বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ গণতন্ত্রের শক্তির কর্মসূচিকে রক্তাক্ত হামলায় বানচাল করার ঘোষণা তারা এখন আগাম দিচ্ছেন এবং সেটা বাস্তবায়নও করছেন। লুটপাটের রাজত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিবেকহীন বিকৃত মানসিকতা নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন। যুবদলের সমাবেশস্থলের পাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে সরকারী গোয়েন্দাদের দ্বারা সৃষ্ট।

শেখ হাসিনা তাঁর আপন প্রতিহিংসাপরায়ণতার বন্য হিংস্রতায় দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং বিশে^র বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার রিপোর্টেও এই তথ্য উঠে এসেছে। আজ আমাদের হৃদয় বিদীর্ন হচ্ছে কষ্টে। অবর্ণনীয় কষ্টে আছেন ‘গণতন্ত্রের মা’। উপযুক্ত চিকিৎসা বঞ্চিত মা-কে অতি জরুরী সুচিকিৎসার জন্য বিদেশেও যেতে দিচ্ছেন না শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য ৭৮ বছরের একজন প্রৌঢ় মহীয়সী নারী, যিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়ে যাচ্ছেন, তাঁকে অন্যায়ভাবে ফরমায়েশী রায়ে বন্দী রেখে চরমতম মানসিক ও শারীরিক শাস্তি দিচ্ছে। আজ সর্ববিদিত যে, তাঁকে হত্যা করতে চান শেখ হাসিনা। আজ ‘বিশ্ব মা দিবসে’ শেখ হাসিনাকে বলবো-বারবার সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শুধু প্রতিহিংসাবশত: এমন নিষ্ঠুর বর্বরতম আচরণের অবসান ঘটান। তাঁকে মুক্তি দিন। সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বাধা দিবেন না। পাকিস্তান আমল বা বৃটিশ শাসনেও এই দেশের রাজনৈতিক বন্দীদের প্রতি এমন বর্বর আচরণ করা হয়নি। আপনার চাইতে বৃটিশরাও অনেক মানবিক ছিল। অবৈধ ক্ষমতা দখলে রাখতে গিয়ে মানবিকতা, সভ্যতা, ভদ্রতা, ন্যায়নীতি আর বিসর্জন দিবেন না। ক্ষমতা, মানুষের জীবন স্থায়ী নয়। সময় অসময় হতে সময় নেয়না! প্রকৃতির বিচার খুবই মারাত্মক এবং অনিবার্য।


বিভাগ : রাজনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা