বাংলাদেশকে নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র ও হুমকি বরদাস্ত করা হবে না : ১২ দলীয় জোট
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম
বাংলাদেশ নিয়ে কোনো রকম ষড়যন্ত্র ও হুমকি বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন সেজন্য ক্ষমা চাইতে হবে। তারা বলেন, ভারতের আগ্রাসীনীতির ফলে প্রতিবেশি সবগুলো দেশের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান-নেপাল-শ্রীলংকা-মালদ্বীপ-আফগানিস্তান কেউই ভারতকে বিশ্বাস করে না। সবাই এখন ভারতের অবিবেচক ও নেতিবাচক আচরণে অতিষ্ঠ। ভারতের পুতুল শেখ হাসিনা সরকারের কারণে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাংলাদেশের জনগণ ভারতের উৎপীড়নে ক্ষুব্ধ ছিল। খুনি হাসিনা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ভারত আরো দৃঢ়ভাবে বৈরী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ভারতের আগ্রাসী মনোভাব এবং কর্তৃত্বশীল আচরণকে বাংলাদেশের জনগণ কখনোই মেনে নেবে না।
মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১২ দলের উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এর আগ্রাসী হুমকির প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাব চত্বরে একটি সংক্ষিপ্ত মিছিল বের করেন নেতারা।
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক উইপ জয়নুল আবদীন ফারুক। আরও বক্তব্য রাখেন ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহ সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্য জোটের সিনিয়র সহ-সভাপতি শওকত আমীন, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি পিএনপি'র চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন ও নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি মাস্টার এম এ মান্নান। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিহার করে নতুন শক্তভাবে পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করেছে। তাদেরকে ধন্যবাদ। ভারতের কাছ থেকে অবন্ধু সুলভ আচরণ মানতে পারিনা। আমরা তাদেরকে বন্ধু ভেবে থাকি। বাংলাদেশের চারদিকে অশান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আসাম, মনিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে। ভারত যদি তার নীতি সংশোধন না করে তাহলে আল্লাহ জানেন তাদের ভাগ্যে কী হবে? ইতিমধ্যে ভারতের ৬০ মাইল এলাকা বিদেশি দেশের দখলে চলে গেছে। আমরা বাংলাদেশে শান্তি চাই। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অটুট রেখে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে দেশ পরিচালনা করতে চাই। ভারতের উচিত হবে বাংলাদেশের জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতি সমর্থন জানানো এবং বাংলাদেশের বিতারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়া।
প্রধান বক্তা বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নানারকম সংকটে পড়েছে। তবুও সেখানকার মানুষ বলে এখনো কেনো শেখ হাসিনার বিচার হচ্ছে না। এই একমাস ৫ দিনে শেখ পরিবারের কাউকে বিচারের আওতায় আনলে মানুষ বিশ্বাস করতো। আমরা আপনাকে বিশ্বাস করি। জনগণ বিশ্বাস করে। কিন্তু তারা প্রশ্ন তুলছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলবো অপরাধীরা কোথায়?
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে বলবো- আপনারা মন্ত্রী আমিও কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। আপনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেজন্য আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের মন বড়। তারা ক্ষমা করতে জানে। সুতরাং বাংলাদেশ নিয়ে তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দিবেনা সেটা কেউ মেনে নেবে না।
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা একটা নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিন। আজকে দেশবাসী সবাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা যাতে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে না পারে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রুপরেখা নিয়ে আগামীতে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ।
শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যেভাবে চোখ রাঙিয়ে সবক্তব্য দিয়েছেন তা আমরা সহ্য করবোনা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান অবিলম্বে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে ব্যাখা নেন। আমরা কিন্তু সহ্য করবোনা। আমাদের চোখ রাঙানি দেখিয়ে লাভ নেই। শেখ হাসিনার দু:শাসনের কথা তুলে ধরে সেলিম বলেন, বিএনপি আগামীতে আন্দোলনকরা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো আপনারা আরও কঠোর হোন এবং কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করুন।
সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আমরা বরদাশত করবোনা। ভারতের আগ্রাসনের দিন শেষ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। সুতরাং বাংলাদেশের দিকে নজর না দিয়ে নিজের ঘর সামলান। মনিপুরে কিন্তু সাত রং এর পতাকা উড্ডীন হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ নিয়ে সাবধান। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খুনি, দুর্নীতিবাজ এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার ভিত্তিতে আগামীতে বাংলাদেশ সংস্কার হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মুহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, মনিপুর কিন্তু ইতিমধ্যে ভারতের পতাকা ছিড়ে ফেলেছে। তারা নিজেদের পতাকা উড্ডীন রেখেছে। সুতরাং ভারতকে বলবো- আগে নিজেদের ঘর সামলান। বাংলাদেশ নিয়ে কোনো চক্রান্ত মেনে নেওয়া হবে না। এটা ওলি আউলিয়াদের দেশ। এটা সম্প্রীতির দেশ। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন সেটা বাস্তবায়ন করুন। আমরা সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ চাই না। অবিলম্বে আপনারা রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।
লায়ন ফারুক বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিদায় হয়েছে তবে তাদের দোসররা ষড়যন্ত্র অবঅব্যাহত রেখেছে। তারা বিভিন্নভাবে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে না। এখন সময় এসেছে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ করার। বিএনপি সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে যে ৩১ দফা রুপরেখা ঘোষণা করেছে সেই মোতাবেক রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। না হলে শেখ হাসিনার মতোই বাংলাদেশ রয়ে যাবে।
অন্য বক্তারা বলেন, দেশের মালিক জনগণ অথচ ভারত বরাবরই জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে ছলে বলে কৌশলে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারকে রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কবর দিতে দ্বিধা করেনি।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ভারতকে আগ্রাসী নীতি ও ভূমিকা ত্যাগ করে প্রতিবেশি দেশগুলোর প্রতি ন্যায়সংগত ও বন্ধুসুলভ আচরণে অভ্যস্ত হতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের আস্থা লাভ করতে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে, ৫৪ টি অভিন্ন নদীর ন্যায় সঙ্গত পানি বন্টনের চুক্তি করতে হবে এবং খুনি হাসিনা এবং পলাতক অপরাধীদের বাংলাদেশের কাছে প্রত্যার্পণ করতে হবে। হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে বন্ধু হিসেবে পাওয়ার চেষ্টাই ভারতের বিচ্যুত পররাষ্ট্রনীতিকে যৌক্তিক কক্ষপথে ফিরিয়ে আনবে এবং সেটাই হবে ভারতের জন্য উত্তম পন্থা।
বিভাগ : রাজনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যার সমর্থক-জড়িত সাংবাদিকদের বিচার হবে : ঢামেকে নাহিদ ইসলাম
‘যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত’
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে সরকার পরিবর্তন ছাড়া ‘অন্য কিছুই’ বদলায়নি : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
দেশের সামগ্রিক কল্যাণে জামায়াত ও জনতার ঐক্য সময়ের দাবী ; নোয়াখালীতে জামায়াতের রুকন সম্মেলনে এটিএম মাসুম
"ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের পর জামায়াতের পক্ষে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে"-মতিউর রহমান আকন্দ
ভোটার আবেদনের তিন মাসের মধ্যে দিতে হবে আঙুলের ছাপ, নইলে আবেদন বাতিল
কুমিল্লার ভাষাসৈনিক তাজুল ইসলাম শিকারপুরির ইন্তেকাল
নেট দুনিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় : আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনে ইন্দো-আমেরিকান পন্থীদের 'ফর্মুলা' ষড়যন্ত্র
জকিগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জন : ভারত-বাংলার দুই তীরে সম্প্রীতির মিলনমেলা
পাকিস্তান দল থেকে বাবর-আফ্রিদি-নাসিম বাদ
সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ফেলতে হবে_ইসলামী আন্দোলন নেতৃবৃন্দ
চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধার নিয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটন আলোচনা
বরিশালে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্যে দুর্গাপূজা সম্পন্ন বিসর্জন শুরু
জোকোভিচের অপেক্ষা বাড়িয়ে সাংহাই চ্যাম্পিয়ন সিনার
গভর্নর মোনায়েম খানের সময়ে যে উন্নয়ন হয়েছে তা আজও স্মরণ করার মত-বাংলাদেশ মুসলিম লীগ
স্বৈরাচারী হাসিনা ছাত্র -জনতার আন্দোলনে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে
দেশ ও জাতির কল্যাণে -মুসলমান নাগরিক সমাজের আট দফা দাবিতে সমাবেশ
স্বাধীনতার পরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ও ব্যাপক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গোৎসব
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৬৬০
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়ে দুই নৌকা সংঘর্ষে এক কিশোর নিহত