নির্বাচন বিলম্বিত হলে কারা সুবিধাপ্রাপ্ত হবে এটা দেখার বিষয় : তারেক রহমান
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জনমনে নানারকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নির্বাচন বিলম্বিত হলে কারা সুবিধাপ্রাপ্ত হবে এটা দেখার বিষয়। বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণই রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস৷ বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখা যায়, তবে বাংলাদেশের মানুষকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে পারবো। দেশে যদি ভোটের অধিকার নিশ্চিত থাকে, তাহলে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করলেই হবে না, যে ভোটের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে সেটা অধিকারও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে৷আরেকটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্যকে কোনভাবেই বিরোধীতা ও বিভেদের জায়গায় নেওয়া যাবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ। তাই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে৷ আমরা যত বেশি ঐক্যবদ্ধ থাকব, গণতন্ত্র নিয়ে বিরোধীতাকারিদের ষড়যন্ত্র তত বেশি ভেস্তে যাবে।’
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঐতিহাসিক টাউনহল মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্যের শুরুর দিকে ১৯৭২ সালের প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান তার ছোটবেলার স্মৃতিরোমন্থন করেন কুমিল্লা শহরকে নিয়ে। ওই সময় তাঁর পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বপরিবারে কুমিল্লা সেনানিবাসে ছিলেন বলেও তারেক রহমান স্মৃতিচারণ করেন।
অর্ন্তবর্তী সরকারের ভেতরেই কিছু ব্যক্তি বিভিন্নরকম কথা বলছেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন ‘এই সরকার গঠনের পর থেকে আমরা পরিস্কারভাবে বলে এসেছি, তারা সফল হোক। এই সরকার এদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় যা যা প্রয়োজন, তা করবেন। যে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এদেশের মানুষ জীবন দিয়েছে, গুম হয়েছে সেই ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিবেন এবং নিরাপদ ভোটের ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন বলে আশা করছি। কিন্তু আমরা কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি, অর্ন্তবর্তী সরকারের ভেতরেই কিছু বক্তি বিভিন্নরকম কথা বলছেন, তাতে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এদেশে অস্থিরতা দেখতে চাই না। দেশে বহু অসস্থিরতা হয়েছে, আর অস্থিরতা দেখতে চাই না।’
পতিত আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সকল সেক্টর ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের মানুষের ভাগ্য ফিরিয়ে আনতে হলে দেশে স্থিতিশীলতা আনা প্রয়োজন। কিন্তু এই অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু লোকের বক্তব্যে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে৷ আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা এখনো এই সরকারকে সাহায্য করবো। আমরা আশা করবো, অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে মানুষ যে নিরপেক্ষতা আশা করে, তারা সেই নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ছয়টি নির্বাচন ও বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, গায়েবী ও মিথ্যা মামলার মধ্য দিয়ে বিএনপি আজ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে৷ কোনো নির্বাচনে বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল, কোনো নির্বাচনে বিএনপি বিরোধীদলে ছিল। এমনিভাবে গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যদিয়ে বিএনপি আজ জনগণের রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তবে আরও বেশি কীভাবে জনগণের প্রত্যাশা লাভ করা যায়, সেই চেষ্টা আগামীতে আমাদের থাকবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘কোন কোন রাজনৈতিক দল ইদানিং শুধু থাকে বিএনপি কেবল নির্বাচন চায়, এ প্রসঙ্গে আমি বলবো একটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হলো কীভাবে জনগণকে নিজের দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা যায়, পরিকল্পনা থাকে, কীভাবে সরকার গঠন করবে। এর একমাত্র উপায় হচ্ছে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করা। আর ভোট মানেই তো নির্বাচন। আমরা যেহেতু জনগণের শাসনে বিশ্বাস করি, আমরা যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারে বিশ্বাস করি, ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, তাই আমরা ভোট চাইবো, নির্বাচন চাইবো, এটিই তো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই স্বাভাবিক বিষয়টিই অনেকে সহজভাবে নিতে পারছেন না।’
সম্মেলনে উপস্থিত সকল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রের সপক্ষের শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সবাইকে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করতে হবে, যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র যাতে ফিরে আসে। যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদেরকে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন পরিকল্পনা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। অন্যান্য দলও একই কাজ করবে। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবেন, কাকে দায়িত্ব দেবেন আগামীর দেশ পরিচালনা করার। এখন হচ্ছে দেশ গড়ার পালা। দেশের রাস্ট্র কাঠামোকে গড়ে তুলতে আমাদের চেষ্টা অব্যহত থাকতে হবে।’
এর আগে বেলা ৩টার দিকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সম্মেলনে কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট আলী আক্কাস তিনটি পদে একক প্রার্থী থাকায় কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে উৎবাতুল বারি আবু, সাধারণ সম্পাদক উইসুফ মোল্লা টিপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাজিউর রহমান রাজিবের নাম প্রস্তাব করে উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিডেটদের সমর্থনে উল্লেখিত পদে ওই তিনজনের নাম চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করেন।
এদিকে সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বরকত উল্যাহ বুলু বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা ‘নাবালক’ উপদেষ্টারা শহীদ জিয়া ও তারেক সম্পর্কে কথা বলা আগে ভেবেচিন্তে কথা বলবেন। কথাবার্তায় শালীনতা, ভদ্রতা বজায় রাখুন। তাদের সম্মান দিয়ে থা বলবেন। গত ১৭ বছর তারেক রহমানের দিক নির্দেশনায় বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করেছে। এই ১৭ বছর জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিন্তু মনোবল ভাঙ্গেনি, কারণ তারেক রহমান দূর থেকে সাহস যুগিয়েছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশনা ও পরামর্শে যে রোডম্যাপ তৈরি হয়েছিল এটিতেই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড দাবিদার একমাত্র তারেক রহমান। শেখ হাসিনার ১৭ বছরের অত্যাচারে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের পরীক্ষিত সৈনিকে পরিণত হয়েছে।’
তিনি নিরপেক্ষ নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নতি করা যায় না। দ্রæত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোড ম্যাপ দিন।’
সম্মেলনে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নজরুল ইসলাম। সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু।
সম্মেলনে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারি আবুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন-উর-রশীদ ইয়াছিন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম ও কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সাবেরা আলাউদ্দিন, সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আমিরুজ্জামান আমির, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ভিপি জসিম উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ভিপি আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব হাজী জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
বিভাগ : রাজনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

দুদকের মামলা : আমানউল্লাহ আমান ও তার স্ত্রীর দন্ডাদেশ বাতিল

অন্তর্বর্তী সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে অর্থনীতি আরো সঙ্কটে পড়েছে : রিজভী

বাংলাদেশ-মিয়ানমার একমত হলে করিডোর চালু করতে পারে জাতিসংঘ

কলকাতায় হোটেলে আগুন নিহত ১৪

ইউক্রেন খুব শিগগিরই ‘ধ্বংস’ হবে: ট্রাম্প

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়কে অবরোধ

প্রশ্ন : ঈদের বাজারে জীনদের বাজার করা প্রসঙ্গে।

ভ্যান চালক হত্যাচেষ্টা: অভিনেতা সিদ্দিকের ৭ দিনের রিমান্ডে

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা ছাড়া রাখাইনে মানবিক করিডোর দেয়া থেকে বিরত থাকুন

প্রোটন বাজারে আনল দেশীয় অ্যাসেম্বল এক্স৭০ এসইউভি গাড়ি

হজযাত্রীদের জন্য বাংলাদেশি টাকায় রবির রোমিং প্যাকেজ

উত্তরপ্রদেশে মুসলিম ছাত্রের উপর অমানবিক অত্যাচার

দেশের স্থিতিশীলতার জন্য দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি: কাজী শিপন

ফেনীতে প্রধান উপদেষ্টার আবাসন পেল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ পরিবার

বিএনপির তৃণমূলের কর্মীদের কাছে পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া কেউ নেতা হওয়ার সুযোগ নাই: আবুল কালাম

বিরামপুর হাসপাতালে দুদকের অভিযান, পেয়েছে নানা অনিয়ম

মাছ রক্ত,স্মৃতি ও দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়

এই গরমে ত্বকের রোগ

ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে চাই সচেতনতা

পান সুপারি ক্ষতিকর