বাংলাদেশের সাথে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বভাস, বিভিন্ন ইসলামী দলের তীব্র প্রতিবাদ
১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৮ এএম

বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের মধ্য দিয়ে ভারত চিরাচরিত অপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করেছে। নরেন্দ্র মোদি সরকারের এমন অসৌজন্যমূলক আচরণকে বাংলাদেশের সাথে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বভাস। অবিলম্বে ভারত যদি ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পুনর্বহাল না করে, তাহলে বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে তার সকল ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করতে হবে। ভারত কর্তৃক ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক সভা ও বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
খেলাফত মজলিসঃ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগের সাথে বলেন, বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের মধ্য দিয়ে ভারত চিরাচরিত অপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করেছে। ভারতকে মনে রাখতে হবে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা প্রয়োজন। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, অবিলম্বে ভারত যদি ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পুনর্বহাল না করে, তাহলে বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে তার সকল ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করতে হবে।
বৈঠকে আরও বলা হয়, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত উৎসব ‘চৈত্রসংক্রান্তি’ পালনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করার অধিকার সরকারের নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হবে চিরায়ত মুসলিম বাংলার ঐতিহ্যের আলোকে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের নিজস্ব পরিমণ্ডলে ধর্মীয় আচার উদযাপন করতে পারে। সার্বজনীনতার নাম দিয়ে পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন অপসংস্কৃতি মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
আরবের হিজরি সনকে অনুকরণ করে ভারতের মুসলিম সম্রাট ও জ্যোতির্বিদের উদ্ভাবিত বাংলা সন উদযাপনে কোনো প্রকার অনৈসলামিক কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। সরকারকে অবিলম্বে চৈত্রসংক্রান্তি বাধ্যতামূলক পালনের নির্দেশনা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ এর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
বৈঠকে আগামী শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, গাজায় গণহত্যা বন্ধ ও ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বকে তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করা এবং মদদদাতা রাষ্ট্রসমূহের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখতে হবে।
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন অবিলম্বে শুরু করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জোর তৎপরতা দাবি করছি। বুধবার রাতে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাহী বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন আমীরে মজলিস মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ। মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নির্বাহী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, মাওলানা সৈয়দ ফেরদাউস বিন ইসহাক, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক আবদুল জলিল, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, আলহাজ্ব আবু সালেহীন, আমিনুর রহমান ফিরোজ, জহিরুল ইসলাম, প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, ডা. রিফাত হোসেন মালিক, অধ্যাপক আবদুল করিম, আহমদ খন্দকার, আলহাজ্ব নুর হোসেন, মাওলানা নুরুল হক, মাওলানা নুরুল আমিন, আমির আলী হাওলাদার, আবুল হোসেন, প্রিন্সিপাল মাওলানা আজিজুল হক।
ইসলামী ঐক্য জোটঃ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতের মোদি সরকার বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে ফ্যাসিস্ট পতিত হাসিনাকে খুশি করতেই বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার অসৎ উদ্দেশ্যেই মোদি সরকার বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করেছে।
ইসলামবিদ্বেষী মোদি সরকারকে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশের জনগণ আল্লাহ ব্যতীত কারো কাছে মাথা নত করে না। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে বাংলাদেশের জনগণকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। মোদি সরকার বাংলাদেশের সাথে যেরূপ আচরণ করবে বাংলাদেশ সরকারও সেরূপ আচরণ করবে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের ট্রানজিট সুবিধাও বাতিলের চিন্তাভাবনা করতে হবে।
ভারত সরকার যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। মাওলানা আব্দুর রকীব ভারতীয় আগ্রাসনের কালো থাবা ও গভীর ষড়যন্ত্র থেকে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদঃ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের জন্য ভারতীয় স্থলবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পাঠানোর ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় শুল্ক বোর্ড সিবিআইসি। নরেন্দ্র মোদি সরকারের এমন অসৌজন্যমূলক আচরণকে বাংলাদেশের সাথে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বভাস বলে মনে করছে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ। আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংগঠনটি।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মো. মোস্তফা আল ইহযায এক বিবৃতিতে বলেন, এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় সিবিআইসি জানায়, ২০২০ সালের ২৯ জুনে বাংলাদেশকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে যে সার্কুলার প্রকাশ করা হয়েছিল—তা বাতিল করা হয়েছে। যা ২০২০ সালের সার্কুলারের মাধ্যমে বাংলাদেশের রফতানি পণ্য ভারতের স্থল কাস্টমস স্টেশন এলসিএস ব্যবহার করে ভারতের সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর হয়ে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের মতো তৃতীয় দেশে পাঠাতে পারত। এতে বাংলাদেশি রফতানিকারকদের খরচ ও সময় অনেক কমে আসত।
ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ফলে বাংলাদেশের রফতানিকারকদের খরচ ও সময় বৃদ্ধি পাবে। যা আমাদের দেশের রফতানিকারকদের জন্য চরম অসুবিধায় পড়তে হবে। বিশেষ করে ভুটান ও নেপালের মতো ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। ফলে বাংলাদেশের রফতানি কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হবে।
১৯৯৪ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) জারি করা জেনারেল অ্যাগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফস অ্যান্ড ট্রেড (জিএটিটি) এর অনুচ্ছেদ পাঁচ অনুসারে, সব সদস্যকে স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট প্রদান করতে হবে। এতে কোনো নির্দিষ্ট সীমা দেওয়া যাবে না এবং পরিবহন শুল্কের আওতায় ফেলা যাবে না। ফলে ভারতের এই সিদ্ধান্ত ডব্লিউটিও’র নিয়মাবলীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকার প্রধান পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই দেশটি বাংলাদেশের সাথে সাম্রাজ্যবাদী ও আগ্রাসী চরিত্র দেখাতে শুরু করে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত সরকার প্রতিনিয়ত প্রচার করতো ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। বাস্তবে ভারত বহু পূর্বেই সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র অর্জন করেছে।
ভারত একসময় আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদের ‘জুনিয়র পার্টনার’ থাকলেও বর্তমানে তারা নিজস্ব সাম্রাজ্যবাদী অভিলিপ্সায় মত্ত এবং একক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠায় নিজের মতো করে এগোচ্ছে। ভারতের এই সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশের অর্থনীতি ও জনগণ ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।
বিভাগ : রাজনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ছাত্রলীগ নেতাদের পুনর্বাসনের অভিযোগ ছাত্রদল নেতা সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে

আজিজুলের অলরাউন্ডার নৈপুণ্যে এগিয়ে গেল যুবারা

জামিন পেলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব সালাহ উদ্দিন মিয়াজী

মানবিক করিডর ভবিষ্যতে সামরিক করিডরে পরিণত হতে পারে: সাইফুল হক

নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি

রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান এটলাস ও হোন্ডার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে সিলেটে মাঠে নামলো বিএনপি

হাসান-উজ-জামানকে পুলিশি তলবের ঘটনায় বরিশাল বিভাগ সাংবাদিক সমিতির নিন্দা

রাউজানে আওয়ামীলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাস চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তারের দাবীতে প্রতিবাদ সমাবেশ

ভাঙ্গা-কুয়াকাটা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার দাবি

রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া, রিজার্ভ বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার

প্রাক-প্রাথমিকের ১৫০০ বিদ্যালয়ে স্মার্ট টিভি-ল্যাপটপ দেবে সরকার

কাপাসিয়ায় সিভিল সার্জনকে বাঁচাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টাফদের ফরমায়েশি মানববন্ধন

নির্বাচিত সরকার ছাড়া রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কোন সংস্কারই সম্ভব নয়

ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

জিআই পণ্য বাণিজ্যিকভাবে বিকশিত করতে হবে : শিল্প উপদেষ্টা

সকল পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে সোচ্চার সিলেটের ব্যবসায়ীরা

আশুলিয়ায় রোকসানা হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা সোহাগকে গ্রেফতার

জকিগঞ্জের হাজীগঞ্জে ফ্রি খতনা কার্যক্রম সম্পন্ন