তারেক রহমান: নতুন প্রজন্মের জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের প্রতীক - ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. একেএম শামছুল ইসলাম, পিএসসি, জি (অব.)
১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কিছু নাম যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে—তাদের আদর্শ, নেতৃত্বগুণ ও অবদান জাতির ইতিহাসে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। এই নামগুলোর মধ্যে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হলেন তারেক রহমান। তিনি কেবল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নন, বরং একজন ভাবনার নেতা, একজন সংগ্রামী রাজনীতিবিদ এবং সর্বোপরি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের অদম্য প্রতীক। তাঁর রাজনৈতিক অভিযাত্রা যেমন সংগ্রামময়, তেমনি তিনি সময়ের পরীক্ষায় সত্য ও আদর্শের বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৮৮ সালে, যখন তিনি তরুণ বয়সেই রাজনৈতিক সচেতনতা, দলীয় আদর্শ ও জনসেবার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি এমন এক সময়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন যখন দেশে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছিল। তার পিতা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া আদর্শ—বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় সংকল্প—তার রাজনৈতিক চেতনাকে গঠন করে।
এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ় ভূমিকা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদত বরনের পর, তিনি সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হয়ে ওঠেন। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান এবং সাধারণ মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে তাঁর অবদান বিএনপির রাজনৈতিক ভিত্তিকে দৃঢ় করে তোলে। তারেক রহমানের রাজনৈতিক পরিপক্বতা গঠনে বেগম খালেদা জিয়ার অনুপ্রেরণা, শিক্ষণ ও মমত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অভিভাবকত্ব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তার রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও কৌশলী নেতৃত্ব দক্ষতা বিশেষভাবে প্রকাশ পেতে থাকে ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে। বিএনপি সরকার গঠনের পর, তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে এক নতুন ধারা প্রবর্তন করেন—'নতুন প্রজন্মের রাজনীতি' নামে পরিচিত এই উদ্যোগটি যুব সমাজের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরো বেগবান করে।
২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করার পর থেকেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একটি মহল তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত চরিত্রহননের রাজনীতি শুরু করে। তারা তাকে দুর্নীতি, ষড়যন্ত্র ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। এই অপচেষ্টার পেছনে মূলত ছিল একটি গভীর ষড়যন্ত্র: বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শকে নির্মূল করা এবং বিদেশী প্রভুভক্ত সুবিধাভোগী রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখা। এই চক্রান্তকারীরা জানত, তারেক রহমান যতদিন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবেন, ততদিন বাংলাদেশের স্বাধীন ও সার্বভৌম চেতনার উপর সরাসরি আঘাত হানা সম্ভব নয়।
বিশেষ করে বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই অপপ্রচারের মাত্রা অতিক্রম করেছে সকল সীমা। প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির অংশ হিসেবে তাকে উদ্দেশ্যমূলক মামলায় জড়ানো হয়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং বিচার ব্যবস্থার রাজনৈতিক ব্যবহার বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।
যদিও এসব মামলা এবং অপপ্রচারে তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো—এই সকল অভিযোগের একটি প্রতিও আজ পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করা যায়নি। বিদেশি গণমাধ্যম, স্বাধীন মানবাধিকার সংস্থা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও একাধিকবার এসব অভিযোগকে প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যুক্তরাজ্যে তাঁর অবস্থানকালীন সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেও এসব মিথ্যাচার প্রতিষ্ঠা পায়নি। এতে পরিষ্কার হয়েছে যে, তাকে রাজনৈতিকভাবে দমন করাই ছিল আসল উদ্দেশ্য।
তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা কোনো কৃত্রিম প্রচারণার ফসল নয়। বরং, তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তার রাজনৈতিক চিন্তাধারা, স্বচ্ছ নেতৃত্ব এবং নির্লোভ মনোভাবের কারণে। তার অন্যতম কৃতিত্ব হলো—দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন ও দলীয় কাঠামোকে পুনর্গঠিত করার চেষ্টা। তিনি দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সফর করে দলকে নতুনভাবে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কেবল একটি রাজনৈতিক মতবাদ নয়; এটি একটি জাতীয় পরিচয়, একটি আত্মমর্যাদার ভাবনা, একটি রাষ্ট্রভাষা-নির্ভর সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই চেতনার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, আর তারেক রহমান সেই চেতনাকে যুগোপযোগী রূপে ধারণ করেছেন এবং সম্প্রসারিত করেছেন। তাঁর বক্তৃতা, কর্মসূচি ও রাজনৈতিক অবস্থান সবই প্রমাণ করে যে, তিনি একটি গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি এমন এক সময়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছেন, যখন রাজনৈতিক শিষ্টাচার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা হুমকির মুখে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভদ্রতা, নৈতিকতা ও সৌজন্যবোধ ফিরিয়ে আনার এক নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোর একটি বড় অংশ আন্তর্জাতিক অপশক্তির ইন্ধনে প্ররোচিত। বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু বিশেষ মহল তাকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে বাধা হিসেবে দেখে। কারণ, তিনি ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত সম্পদে রূপান্তর না করে রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে ব্যবহারের আদর্শে বিশ্বাসী। তাই তাকে হেয় করতে তারা বিভিন্ন সময়ে 'মিডিয়া ট্রায়াল' ও 'স্মিয়ার ক্যাম্পেইন' পরিচালনা করেছে।
আজ তারেক রহমান বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে শুধু একজন রাজনীতিক নন, বরং এক প্রেরণার নাম। যিনি বিশ্বাস করেন—নৈতিকতা, আদর্শ ও গণতন্ত্র দীর্ঘমেয়াদে সব অপপ্রচারের জয় করে। তার নেতৃত্বে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠতে পারে—যেখানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং সুশাসন, জবাবদিহিতা ও মানবিক মর্যাদা স্থান পাবে।
তিনি ভবিষ্যতের সেই নেতা, যিনি দেশের স্বার্থে বৈশ্বিক রাজনীতির চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস রাখেন। তাঁর আদর্শিক নেতৃত্ব যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে বাংলাদেশ আবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতীয়তাবাদের পথে ফিরতে পারবে।
তারেক রহমান আজকের বাংলাদেশে একটি আদর্শ, একটি নৈতিক অবস্থান এবং একটি রাজনৈতিক দর্শনের প্রতীক। সকল অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মাঝেও তিনি তাঁর নৈতিক অবস্থানে অটল থেকেছেন—এটাই প্রমাণ করে যে, সত্য শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, জাতির সংকটকালে যারা সত্য, আদর্শ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন—তাদের নামই অমর হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমান কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি হচ্ছেন সেই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের অদম্য আলোকবর্তিকা, যিনি অন্ধকারে আলো দেখান, বিভ্রান্তির মাঝে দেন দিকনির্দেশনা, এবং অপপ্রচারের বিপরীতে প্রতিষ্ঠা করেন ন্যায় ও সত্য।
বিভাগ : রাজনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান দেখে পালাল ভারতের ৪টি রাফাল যুদ্ধবিমান

শ্রমিক-মালিক স্বার্থে শিগগিরই শ্রম আইন সংশোধন করা হবে : শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা

শেরপুরে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ সমাবেশ

জুলাই যোদ্ধা অনুদানের লাখ টাকা উপহার দিলেন অসহায় পরিবারকে

শেরপুরে ভারতীয় রুপিসহ আটক ২

গণহত্যায় অভিযুক্ত ফ্যাসিস্ট দীপু মনি প্যারোল চায়

ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর সেচ প্রকল্পে নিম্নমানের স্থাপনা ভাঙলো বিএডিসি

নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে ট্রাইব্যুনালে রাশেদ খান

ঝিনাইদহে সামাজিক দ্বন্দ্বে একজনকে কুপিয়ে হত্যা

অর্ধেক ব্যয়ে ঘর নির্মাণের দক্ষতায় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করলেন প্রধান উপদেষ্টা

পাকিস্তানকে সমর্থন করে পোস্ট : ভারতের আসামে গ্রেপ্তার ৩০

চট্টগ্রামে কিশোর ক্রিকেটারের ভাসমান লাশ উদ্ধার

ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক, কারখানা মালিকদের স্বস্তি প্রকাশ

সিরিয়ায় হাফিজ আল আসাদের সমাধি থেকে লাশ হঠাৎ গায়েব, রহস্য ঘনীভূত

করিডোর কি দেবেই সরকার? যা বললেন ডা. জাহেদ উর রহমান

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে আসা-যাওয়ার সময় বেড়ে গেছে ৪ ঘণ্টা

পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, সহজে কেউ হামলা করবে না: মরিয়ম নওয়াজ

কুলাউড়ার রাউৎগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেলেন লিটন হোসাইন

ঝিনাইদহে চাকরী মেলায় ১২ হাজার বেকার যুবকের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের