বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াতের ফযিলত
২৯ মার্চ ২০২৩, ০৭:২০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১৮ এএম
পবিত্র কুরআনের সহিহ ও বিশুদ্ধ তিলাওয়াত সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া। বিশুদ্ধ তিলাওয়াত না হলে নামাযও শুদ্ধ হবে না। যেমন ইমাম আবু হামিদ আল-গাযালী (রহ.) ইয়াহইয়াউ উলুমিদ্দীন গ্রন্থে উল্লেখ করেন, আনাস বিন মালিক বলেন, হয়তো সে কুরআন অনুসরণ করে এবং কুরআন তাকে অভিশাপ দেয়। ‘অনেক তিলাওয়াতকারী কুরআন তিলাওয়াত করে কিন্তু অশুদ্ধ হওয়ার কারণে রহমতের পরিবর্তে কুরআন তাদেরকে লানত করে।
তাই আমাদের মুরব্বিগণ সারা দেশে বিশুদ্ধ ও সহিহ তিলাওয়াত, আরবী সূরে, মাখরাজ-সিফাত আদায় করে তারতীলের সাথে কুরআনম জীদের হিফয এবং কুরআনের পাঠ-পঠন ব্যাপক করার উদ্দেশ্যই এ তাহফিযুল কুরআন সংস্থা বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। বিগত ৩৯ বছর ধরে হিফযুল কুরআন প্রতিযোগিতা চলে আসছে এবং তিনদিন যাবৎ প্রতিযোগিতা চলেছে এবং অত্যন্ত সুষ্ট ও নিরেপক্ষভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পরীক্ষকগণের মাধ্যমে নম্বর দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরণের পক্ষপাতিত্বের এখানে কোনো সুযোগ নেই।
পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিযোগীদের করণীয় : এখন কেউ পুরস্কার পাবে আর কেউ সনদ পাবে। আবার কেউ হয়ত পুরস্কারও পাবে না, সনদও পাবে না। যারা পুরস্কার পাবে, সনদ পাবে, তারা অহংকার করবে না, শুকরিয়া আদায় করবে। কারণ অংহকার পতনের মূল। অহংকার কেবলমাত্র আল্লাহর চাদর। এ নিয়ে কেউ টানাটানি করলে আল্লাহ তাকে লাঞ্চিত করেন। তাই সদা আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ রাখবে। তিনি যদি দয়া না করতেন তাহলে হাজারো চেষ্টা করলেও কামিয়াব হতে পারতে না। আল্লাহর দয়ার কথা স্মরণ করে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। তাতে আল্লাহ তাআলা নেয়ামত ও অনুগ্রহ আরও বৃদ্ধি করে দেবেন এবং সদা আল্লাহর দরবারে দুআ করতে থাকবে যেন আল্লাহ তাঁর প্রদত্ত এ নেয়ামত কেঁড়ে নিয়ে না যান।
রাসুল (সা.) দুআ করতেন,‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তার অনুগ্রহ আমার থেকে কেড়ে নেবেন না। ‘হে আল্লাহ! আপনি যে কল্যাণ আমাকে দিয়েছেন তা ছিনেয়ে নেবেন না।
যারা পুরস্কার পাবে না তাদের করণীয় : আর যারা পুরস্কারও পাবে না, সনদও পাবে না তাদেরও শিক্ষা লাভ করতে হবে, আমরা ভাই পুরস্কার পেল, সনদ পেল, আমি পেলাম না। আমাকে আরও অনেক বেশি মেহনত করতে হবে। যেন ভবিষ্যতে আমিও পুরস্কার পাই। আল্লাহ কারো মেহনতকে নষ্ট করেন না। তবে মনে রাখবে, পুরস্কার পাওয়া, সনদ পাওয়া বড় জিনিস নয়। তুমি পুরস্কার না পেলেও অন্তত তাহফিযুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছ। এটিই তোমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। কারণ এটাকে উপলক্ষ্য করে তোমার কুরআনের তিলাওয়াত তো সহিহ হয়েছে। এটিই হল প্রতিযোগিতার মুখ্য উদ্দেশ্য।
বিশুদ্ধ তিলাওয়াতের ফযিলত : কুরআন আল্লাহর বাণী। কুরআন শব্দের অর্থ: পাঠ করা বা যা পাঠ করা হয়। আর শরিয়তের ভাষায়: আল্লাহ তাআলা জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে মানবজাতির হেদায়াতের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তার নাম আল-কুরআন। মানুষের মুখ থেকে যা কিছু উচ্চারিত হয় তার মধ্যে কুরআন পাঠই সর্বাধিক উত্তম। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিয্ক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনোক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণপ্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর পাঠ করে , তার বিশটির মতো লাইকের মধ্যে কল্যাণ ও কল্যাণ রয়েছে , এবং আমি বলি না ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কুরআন তিলাওয়াত কর , কেননা কেয়ামতের দিন এটি তার সঙ্গীদের জন্য সুপারিশকারী হয়ে আসবে।” তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ কুরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।
কুরআন মুখস্থ করার ফযিলত : নবী করীম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে এবং তা মুখস্থ করবে এবং (বিধি-বিধানের) প্রতি যতœবান হবে, সে উচ্চ-সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথে অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কুরআন পাঠ করবে এবং তার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবে সে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হবে হবেন ।
অন্যত্র তিনি আরও বলেন, ‘কিয়ামত-দিবসে কুরআন অধ্যয়কারীকে বলা হবে, কুরআন পড় এবং উপরে উঠো। যেভাবে দুনিয়াতে তারতিলের সাথে কুরআন পড়তে সেভাবে পড়। যেখানে তোমার আয়াত পাঠ করা শেষ হবে, জান্নাতের সেই সুউচ্চস্থানে হবে তোমার বাসস্থান।
আল-তিরমিযী এবং আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন, ইমাম খাত্তাবী (রহ.) বলেন, প্রতিবেদনে এসেছে, কুরআনের আয়াত সংখ্যা জান্নাতের সিঁড়ির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তেলাওয়াতকারীকে বলা হবে। সেই অনুযায়ী সিঁড়ি রয়েছে এবং তেলাওয়াত শেষে সর্বোচ্চ সওয়াব পাওয়া যাবে ।
‘হাদীসে এসেছে যে, জান্নাতের সিঁড়ির সংখ্যা হচ্ছে কুআনের আয়াতের সংখ্যাপরিমাণ। কুরআনের পাঠককে বলা হবে, তুমি যতটুকু কুরআন পড়েছ ততটি সিঁড়ি বেয়েউপরে ওঠ। যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছে, সে আখেরাতে জান্নাতের সর্বশেষ সিঁড়ির ধাপে উঠে যাবে। যে ব্যক্তি কুরআনের কিছু অংশ পড়েছে সে ততটুকু উপরে উঠবে। অর্থাৎ যেখানে তার পড়া শেষ হবে সেখানে তার সওয়ারের শেষ সীমানা হবে!
সন্তানকে পবিত্র কুরআন শিক্ষা দেওয়ার প্রতিদান : নবী করীম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে, শিক্ষা করবে ও সে অনুযায়ী আমল করবে তার পিতা-মাতাকে দুটি পোশাক পরিধান করানো হবে যা দুনিয়ার সকল বস্তুর চেয়ে অধিক মূল্যবান। তারা বলবে, কোন আমলের কারণে আমাদেরকে এত মূল্যবান পোশাক পরানো হয়েছে? বলা হবে, তোমাদের সন্তানের কুরআন গ্রহণ করার কারণে।
আবু দাউদ এবং আল-হাকাম বর্ণনা করেছেন: সাহল বিন মুআয আল- জুহানী তার পিতার সূত্রে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “ যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়ত তিনি এই কাজ করেছেন? অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে! তিনি বললেনঃ তাহলে তারা সুপারিশ করবে।
কুরআন পড়া বা শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকা উত্তম সম্পদ অর্জন করারঅন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কে প্রতিদিন বুথান বা আল - আকিক- এ যেতে চায় এবং তার কাছে মাংসের বস্তা ছাড়া দুটি বড় উট আনতে চায় ? ঈশ্বর খ , আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসুল , আমরা এটা পছন্দ করি, তিনি বললেন: তোমাদের কেউ কি মসজিদে গিয়ে শিখবে না বা আল্লাহর কিতাবের দুটি আয়াত পড়বে না? তার জন্য দুটি উটের চেয়ে উত্তম এবং তিনটি তার জন্য তিনটির চেয়ে উত্তম এবং চারটি তার জন্য চারটির চেয়ে উত্তম!
‘তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কুরআন হতে দুটি আয়াত পড়ে নাবা শিক্ষা দেয় না? তাহলে সেটি তার জন্য দুটি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়ত চার উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম।
কুরআন পাঠ করার পদ্ধতি : ‘হযরত আনাস ইবন মালিক (রাযি.)-কে রাসুল (সা.)-এর কুরআনপাঠের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, তিনি টেনে টেনে পড়তেন। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম‘ পাঠ করার সময় বিসমিল্লাহ‘ টেনে পড়তেন, একইভাবে আর-রাহমান টেনে পড়তেন, আর-রাহীম টেনে পড়তেন। আল-বুখারী বর্ণনা করেছেন: কাতাদা থেকে, তিনি বলেন : আনাসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে , নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাঠ কেমন ছিল ? তিনি বললেন : “এটি দীর্ঘ সময় ছিল।” তারপর তিনি পাঠ করলেন, পরম করুণাময়, পরম করুণাময় আল্লাহর নামে।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করার তাওফিক দান করুণ!
লেখক- গবেষক, কলামিস্ট, পাঠান পাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদারীপুরে গুড়ি বৃষ্টি আর হিমেল বাতাসে জনজীবন স্থবির
দুমকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে বাঁধা
দুবাই মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীর অ্যাওয়ার্ড লাভ
'বরবাদ' সিনেমা শতকোটির গন্ডি পেরিয়ে যাবে! কি বললেন শাকিব?
রাজশাহীর পুঠিয়ায় বাস চাপায় মা ছেলেসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত
দোয়ারাবাজারে ভারতেীয় সীমান্তে ৩০০ বস্তা রশুন আটক করেছে টাস্কফোর্স
রাজশাহীতে নেসকোর ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানারকম হয়রানীর প্রতিবাদে বিক্ষোভ
শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার
যুবদলের উদ্যোগে ৩১ দফা অবহিতকরণে আলোচনা সভা
এমাজউদ্দীন আহমদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বজনীন
বাংলাদেশে সা'দ পন্থিদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: হাটহাজারীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা
ভারত বাধা পেরিয়ে শিরোপা জিততে মরিয়া বাংলাদেশ
দোয়ারাবাজারে ভ্যানের ধাক্কায় শিশু নিহত
গারো পাহাড়ের পানি হাতায় ঘুরতে এসে ভোগা নদীতে ডুবে ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
সিলেট-তামাবিল চার লেন উন্নতিকরণে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ
১০ বছর আগে উধাও মালয়েশিয়া বিমানের নতুন করে খোঁজ শুরু
৯/১১-র ধাঁচে রাশিয়ায় ড্রোন হামলা ইউক্রেনের, বন্ধ বিমানবন্দর
আজ ঐতিহ্যবাদী লেখক হোসেন মাহমুদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী
দ. আফ্রিকাকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের অভিযানে পাকিস্তান
পাকিস্তানে তল্লাশিচৌকিতে সশস্ত্র হামলা, নিহত ১৬ সেনা