সাহরী : ফাজায়েল ও মাসায়েল
১০ মে ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম | আপডেট: ১১ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম
সাহরী রোযার গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। ইসলামের পরিভাষায় সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্যে রাতের শেষভাগে সুবহে সাদিকের পূর্বে খাবার গ্রহণ করাকে সাহরী বলা হয়। সাহরী একটি বরকতময় আমল, এবং রোযার জন্য সহায়ক। মহানবী (সা.) এর সুন্নাত এবং পবিত্র মাহে রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত; যার মাধ্যমে মুমিন বান্দাগণ রোজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন।
সাহরী খাওয়ার হুকুম: সাহরী খাওয়া সুন্নত। ফরজ বা ওয়াজিব নয়। এই সুন্নত আদায়ের জন্য সাহরীতে পেট ভরে খাওয়া আবশ্যক নয়; এক দুই ঢোক পানি পান করেও এ সুন্নত আদায় করা যায়। কোন কারণে সাহরী খেতে না পারলেও রোযা রাখতে হবে। অনেকে মনে করেন রোযার জন্য সাহরী আবশ্যক, এই ধারণা সঠিক নয়। তবে ইচ্ছাকৃত বিনা ওজরে সাহরি পরিত্যাগ করা উচিত নয়। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সাহরী খাওয়াতে বরকত রয়েছে। অতএব তোমরা তা ছেড়ো না; এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী গ্রহণ কর। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১০৮৬, ১১৩৯৬, তুহফাতুল ফুকাহা-১/৩৬৫]
সাহরী খাওয়ার ফজীলত: সাহরীতে রয়েছে বরকত: হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেনঃ তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে। [সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯২৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৫]
সাহরী গ্রহণকারীর উপর রহমত বর্র্ষিত হয়: অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে,যারা সাহরী গ্রহণ করে তাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সাহরী খাওয়াতে বরকত রয়েছে। অতএব তোমরা তা ছেড়ো না; এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী গ্রহণ কর। কেননা যারা সাহরী খায় আল্লাহ তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য রহমতের দুআ করতে থাকে।
[মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১০৮৬, ১১৩৯৬] অতএব সাহরীর খাবার রোযা রাখতে শক্তি যোগায়। তেমনি এতে খায়র ও বরকত এবং পুণ্য ও কল্যাণও নিহিত রয়েছে। সাহরী আমাদের রোযার স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য: সিয়াম সাধনার এই বিধান আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী উম্মতকেও দিয়েছেন। যেমন পবিত্র কুরআনে মহান অল।লাহ ইরশাদ করেন, ‘ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারা-১৮৩) তবে আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবের রোযার মাঝে সাহরী একটি বিশেষ পার্থক্যরেখা। রোযা রাখার উদ্দেশ্যে সাহরী খাওয়া আমাদের স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট। হযরত আমর ইবনে আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবের রোযার মাঝে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া। [সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৬] অর্থাৎ আমাদের রোযায় সাহরী খাওয়ার যে গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে তা নেই। আমাদের নিকট সাহরী করাটাই একটি স্বতন্ত্র আমল এবং বড় সওয়াবের কাজ।
রাতের শেষ ওয়াক্তে সাহরী গ্রহণ করা উত্তম: সাহরী করা যেমন মুস্তাহাব বা সুন্নত তেমনি তা ওয়াক্তের শেষ দিকে করাও উত্তম। অর্থাৎ সতর্কতামূলক সময় হাতে রেখে সুবহে সাদিকের পূর্ব-নিকটবর্তী সময়ে সাহরী করা ভালো। নবীজী বলেনঃ আমরা নবীগণ এ মর্মে আদিষ্ট হয়েছি যে, সময় হওয়ার সাথে সাথেই ইফতার করব এবং শেষ ওয়াক্তে সাহরী গ্রহণ করব। [আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ১৮৮৪; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ৪৮৮০] তাই সাহাবায়ে কেরামও এর উপর আমল করেছেন, হযরত আমর ইবনে মাইমুন আলআউদী রাহ. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম সময় হওয়ার সাথে সাথেই দ্রুত ইফতার করতেন আর শেষ ওয়াক্তে সাহরী করতেন। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক-৭৫৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৮৯৩২] অন্য বর্ণনায় এসেছে, যায়েদ ইবনে সাবিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে সেহরী খেয়ে নামাযে দাঁড়ালাম। [রাবী আনাস (রাযিঃ) বলেন] আমি যায়েদ ইবনে সাবিত (রাযিঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, সেহরী ও আযানের মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন পঞ্চাশ আয়াত পড়ার মত সময়ের। [সহীহ মুসলিম-১০৯৭] ফুকাহায়ে কেরাম উপরোক্ত হাদীসের আলাকে সাহরীর মুস্তাহাব সময় রাতের শেষভাগ তথা সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়ের ষষ্ঠভাগকে নির্ধারণ করেছেন।
সাহরীর শেষ সময়: সুবহে সাদিক হওয়া মাত্র সাহরীর সময় শেষ হয়ে যায়। মসজিদে আযান দেয়া হোক বা না হোক। তাই সুবহে সাদিকের সময় হওয়া মাত্রই সাহরী খাওয়া বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় রোযা হবে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যতক্ষণ না ভোরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে পৃথক হয়ে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর। (সূরা বাকারা-১৮৭) আয়াতে রাতের অন্ধকারকে কালো রেখা এবং ভোরের আলো ফোটাকে সাদা রেখার সাথে তুলনা করে রোযার শুরু এবং খানাপিনা হারাম হওয়ার সঠিক সময়টি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক হাদীসে রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন যে, বেলালের আযান শুনতেই তোমরা সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দিও না, কেননা, সে কিছুটা রাত থাকতেই (তাহাজ্জুদের) আযান দিয়ে ফেলে। সুতরাং তোমরা বেলালের আযান শোনার পরেও খেতে পার, যে পর্যন্ত না ইবনে উম্মে মাকতুমের আযান শুরু হয়। কেননা, সে ঠিক সুবহে সাদেক হয়ার পরই আযান দিয়ে থাকে। -(বুখারী ও মুসলিম) (চলবে)
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন