রমযানে ভাষা ব্যবহারে শালীনতা
১৭ মে ২০২৩, ০৮:২৮ পিএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
মানুষ মনের ভাব বিনিময়ে ‘কথা’ বলে থাকে। এ ভাব বিনিময়ের সময় মানুষ অনেক সময় বাকশক্তির অপব্যবহার করে। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। মাধুর্যপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করে মুহূর্তেই অন্য কারো মন জয় করা যায়। আবার এ ভাষার ভিন্নতায় কর্কশ শব্দ দিয়ে অন্যের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করা যায়। রমযান মাসে প্রত্যেকের আচরণ মার্জিত থাকা উচিত। কারো সাথে হুট করে বাক বিত-ায় জড়িয়ে পড়া উচিত নয় একেবারেই। নিজের মেজাজকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য রমযান মাসই হলো সর্ব শ্রেষ্ঠ সময়। অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার, কুরূচিপূর্ণ ও অহেতুক বাচালতা যেকোনো সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং আদর্শ ও নীতিবানদের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। মুমিনরা অযথা ও অহেতুক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকেন। এটা তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
মানুষ যাতে কথা বলার সময় সংযত ও শালীন থাকে, ভালো ও উত্তম কথা বলে; সে কারণেই আল্লাহ তা‘আলা নামায-রোযার মতো কথা বলার ক্ষেত্রেও কুরআনুল কারীমে আয়াত নাযিল করে বলেছেন, কথা বলার সময় যেন মানুষ উত্তম ভাষায় কথা বলে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়ী, যারা অসার কার্যকলাপ বা অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে।’’ [সূরা মুমিনুন : ১-৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কথা বলার ক্ষেত্রে এর সঠিক ব্যবহারকারীর জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমাকে তার জিহ্বা ও লজ্জা স্থানের নিশ্চয়তা দিতে পারবে, আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিতে পারব।’’ [বুখারি : ৪০৩৮]
কথা বলা মানুষের জীবনের অপরিহার্য অনুসঙ্গ। মুখ তালাবদ্ধ করে রাখতে বলেনি ইসলাম। বরং ন¤্রভাবে, বিনয়ের সঙ্গে কথা বলতে আদেশ দিয়েছে। আল্লাহর রাসূলের বিনয় ও ন¤্রতার কথা কুরআনে উল্লেখ হয়েছে এভাবে, ‘‘আল্লাহর অনুগ্রহে আপনি তাদের প্রতি কোমলহৃদয় হয়েছিলেন। আপনি যদি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন, তবে তারা আপনার কাছ থেকে সরে পড়তো।’’ [সূরা আলে ইমরান : ১৫৯]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘ব্যক্তির জীবনে ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশ পায় তার অহেতুক কথা ও কাজ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে।’’ ব্যক্তিত্বের স্তর বোঝা যায়, আচরণ-উচ্চারণে। মান-মর্যাদাও চিহ্নিত হয় ব্যবহার-শিল্পে। অহেতুক কথা কখনো মানুষের জন্যে বিপদ টেনে আনে। তাই ইসলামে বাকসংযমের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা সংরক্ষণের জন্য তার কাছেই (অদৃশ্য) তৎপর প্রহরী রয়েছে।’’ [সূরা ক্বাফ : ১৮]
মাহে রমযান মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাস আখেরাতের পাথেয় গোছানোর মাস। এই মাসে বর্ষিত হয় রহমতের বারিধারা। গুনাহ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য পবিত্র রমযান একটি চমৎকার সময়। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় রমযানের রোযা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায) আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।’’ [সহিহ বুখারি : ১৮৮৭]
এমন অনেক মুসলমান আছে যারা রোযা রাখে ঠিকই, কিন্তু তাদের রোযার অর্থ শুধুই ক্ষুধার্ত থাকা। অন্য কোনো উপকার তাদের হয় না। হাদীসে এসেছে, ‘অনেক রোযাদার এমন আছে, যাদের রোযা পালনের সার হলো তৃষ্ণার্ত আর ক্ষুধার্ত থাকা।’’ [তিবরানি : ৫৬৩৬] বিভিন্ন গুনাহে জড়িত থাকার কারণে অনেক রোযাদার কল্যাণপ্রাপ্ত হয় না। যে গুনাহগুলো রোযার মান কমিয়ে দেয় তা হলো :
রমযানে রোযা রেখে অশালীন কথা বলা, গালি দেওয়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখে তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা না বলে ও হৈ চৈ না করে।’’ [বুখারি : ১৯০৪]
রাসূলুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও তদনুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি, তার এই পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’’ [সহীহ বুখারি : ১৮০৪]
রাসূলুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন, ‘‘রোযা হলো (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার) ঢাল, যে পর্যন্ত না তাকে বিদীর্ণ করা হয়। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কিভাবে রোযা বিদীর্ণ হয়ে যায়? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মিথ্যা বলার দ্বারা অথবা গিবত করার দ্বারা।’’ [আলমুজামুল আওসাত, তাবারানি : ৭৮১০; নাসায়ি : ২২৩৫]
মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘‘দু’টি অভ্যাস এমন রয়েছে, এ দু’টি থেকে যে বেঁচে থাকবে তার রোযা নিরাপদ থাকবে-গিবত ও মিথ্যা।’’ [মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৮৯৮০]
গিবত শুধু মুখে বলার দ্বারা হয় তা নয়, বরং ইশারা-ইঙ্গিত ও অঙ্গভঙ্গির দ্বারাও গিবত হয়। গিবত করা ও শোনা দু’টিই সমান অপরাধ। কাজেকর্মে হয়তো বাকবিত-ার মুখোমুখি হতে হয়। ফলে যুক্তিতর্ক ও বিবাদ কখনো জীবনের গতি ব্যাহত করে। তাই বলে শালীনতার সীমা অতিক্রম করা যাবে না কখনোই। বরং বাক সংযমের পাশাপাশি মার্জিতভাব রক্ষা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তোমরা উত্তম পন্থায় আহলে কিতাবের সঙ্গে যুক্তিতর্ক করবে।’’ [সূরা আনকাবুত : ৪৬]
কাউকে কটাক্ষ করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করা এবং মন্দ বিশেষণে ভূষিত করা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। তাই রমযান মাসে রোযা রেখে মিথ্যা বলা, অশালীন কথা বলা ও গিবত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের প্রতিটি কর্মের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সাহাবি মুআজ ইবনে জাবাল রাদিঅল্লাহু আনহু একবার রাসূলের কাছে জানতে চাইলেন, ‘আমরা কি নিজেদের কথার জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হব?’ রাসূলুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, ‘ওহে ইবনুল জাবাল! তোমার কথায় অবাক হতে হয়, জিহ্বার কারণেই তো (বহু) মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’’ [তিরমিজি : ২৬১৬]
লেখক : প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন