Header Ad

অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রহ.)

Daily Inqilab ড. এ. এইচ. এম ইয়াহইয়ার রহমান

২৪ মে ২০২৩, ০৯:৪০ পিএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম

 পৃথিবীতে বহু গুনীজন অতীত হয়ে গেছেন। শুধু তাদেও কীর্তি রয়ে গেছে। ইতিহাসে তারা প্রসিদ্ধ অর্জন করেছেন। পরবর্তী প্রজন্ম তাদেও গুনগান করে এবং তাদের রেখে যাওয়া অণুকরণীয় দিকসমূহ মেনে চলার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে থাকে। এমনিভাবে বাংলাদেশে একজন ক্ষণজন্মা বিদগ্ধ আলিম ছিলেন অধ্যক্ষা আল্লামা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রহ.)। তিনি প্রখর মেধা ও স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি চট্রগ্রামের চান্দনাইগে ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১১ সালে ইন্তিকাল করেন। তিনি সর্বমোট ৬২ বছর জীবিত ছিলেন।

তিনি অদম্য জ্ঞানপিপাসু ছিলেন। তিনি জীবনের বিভিন্ন স্তওে প্রখর মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তার পিতা ছিলেন খ্যাতনামা আলিম মুফতী শফিউর রহমান (রহ.)। শিক্ষাজীবনে তিনি ১৯৫৬ সালে দাখিল, ১৯৬০ সালে আলিম, ১৯৬২ সালে ফাজিল এবং ১৯৬৪ সালে কামিল (হাদীস) প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এর পরেও ১৯৬৬ সালে কামিল (ফিকহ) প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৭ সালে ডিপ্লোমা ইন-আদিব প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং ১৯৬৮ সালে ডিপ্লোমা ইন-আদিব-ই-কামিলেও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

১৯৬৮ সালে ঢাকা আলিয়ার স্কলারশিপ নিয়ে আল্লামা আব্দুর রহমান কাশগড়ী (রহ.) এর তত্ত্বাবধানে “ফোকাহায়ে ইস্ট পাকিস্তান কে ফিকহী কারনামে” গবেষণা সম্পন্ন করে থিথিস রচনা করে “রিসার্চ স্কলার” সনদ লাভ করেছিলেন। আল্লামা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রহ.) ছিলেন একাডেমেশিয়ান ও গবেষক। ইলমে হাদীস ও ফিকহী ইসলামী পাঠদান করার সময় তিনি আধুনিক বিষয় নিয়ে উপমা দিতেন, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজেই কথা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। কোন রাজনৈতিক দলের সাথে তিনি সংযুক্ত ছিলেন না; তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির খবরাখবর রাখতেন। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা অধ্যায়ন করা মরহুমের অব্যাস ছিল। ছাত্র-শিক্ষকের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ইলমি আলোচনা করতেও ক্লান্তি অনুভব করতেন না। অনেক সময় রাতের বেলায়ও হাদীসের অতিরিক্ত দরস দিতেন।
অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রহ.) এর বর্নাঢ্য কর্মজীবন রয়েছে। তিনি প্রথমে ঢাকার মাদরাসা-ই-আলীয়ার মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন। তদুপরি হোস্টেল সুপার হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। সিলেট সরকারী আলীয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে বহুদিন কর্মরত ছিলেন। তিনি সরকারী গতে অবসর নেয়ার পর চট্রগ্রাম চুনতী হাকিমিয়া আলীয়া মাদরাসায় শায়খুল হাদীন হিসেবে যোগদান করেন। খ্যাতিমান শিক্ষাবিদও সুযোগ্য প্রশাসক হিসেবে তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হন। তাঁর ভাষাদক্ষতা, সুন্দও বাচনভঙ্গি, দুরদর্শিতা, সুনির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা এবং আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা মুগ্ধ হতো।

অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রহ.) এর সাথে আমার পরিচয়:
উনি যখন ঢাকা আলীয়া মাদরাসায় অধ্যপনা করতো তখন আমি ঢাকা আলীয়া মাদরাসায় মরহুম মাওলানা আলাউদ্দীন আযাহারী (রহ.) এর তত্বাবধানে রিসার্চ স্কলার ছিলাম। আমার গবেষণার শিরোনাম ছিল “আরবী ভাষা ও সাহিত্যে বাংলাদেশের অবদান”। আমি ১৯৭৪ সালে অভিসন্দর্ভ জমা দেই। এই সুবাদে আমি বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সাথে আলোচনা করতাম, প্রত্যেক বিষয়ে তিনি আমাকে সন্তোষজনক জবাব দিতেন। আমি তাঁর ব্যবহাওে গুণমুগ্ধ ছিলাম, যদিও আমি তার সরাসরি ছাত্র ছিলাম না। তিনি ছিলেন নিরাহংকার, অমায়িক আচরনের অধিকারী ও ব্যতিক্রমধর্মী স্বভাবসম্পন্ন। তিনি কম কথা বলতেনম হাসিমুখে কথা বলতেন।
ঈওে আমি যখন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, তখন দেখতাম , ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাপগের প্রফেসর মরহুম মুহাম্মদ আব্দুল মালেক প্রায়ই ঢাকা আলীয়া মাদরাসায় যেতেন মরহুমের ফখরুদ্দীন (রহ.)- এর সাথে সাক্ষাতের জন্য। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে তার সাথে দীর্ঘ আলোচনায় লিপ্ত হতেন। অনেক সময় মরহুম অধ্যাপক আব্দুল মালেক সাহেব তার সাথে নিয়ে তাঁর থাকার বাসাতে নিয়ে যেতেন। একবার আমাকেও সাথে নিয়ে তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন। আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.) এবং মরহুম প্রফেসর মুহাম্মদ আব্দুল মালেক সাহেব উভয়েই ছিলেন ইলমের পোকা। সুক্ষ থেকে সুক্ষ বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করতেন। মানিকে মানিক চেনে।

“কুনদ হাম জেন্স বা হামজেস পরোয়াজ
কবুতর বা কবুতর বা যেবা বাজ।”
নীতির প্রশ্নে আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.) ছিলেন অটল। অন্যায় ও অসত্যেও কাছে তিনি মাথা নত করেন নি । ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন সরল, বন্ধুবৎসলম উদার, বিনয়ী, কষ্টসহিঞ্চু ও অনুপম চরিত্রের অধিকারী। মানুষকে সহজে আপন কওে নেয়ার মহৎ গুন ছিল তাঁর। তাকওয়া, পরহেজগারী ও অথিতিয়তা ছিল তাঁর জীবনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। জীবনের কোন মুহূর্ত তিনি হেলা ও অবহেলায় নষ্ট করেন নি। প্রায় সময় তিনি কিতাব পড়তে পড়তে ঘুমাতেন। দু’আ করি, মহান আল্লাহ তা’য়ালা এই মনীষীকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন। আমিন।

লেখক : প্রাক্তন ডীন, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিদায়ী ম্যাচ গোলে রাঙালেন বেনজেমা,গোলরক্ষক বীরত্বে হার এড়াল রিয়াল

বিদায়ী ম্যাচ গোলে রাঙালেন বেনজেমা,গোলরক্ষক বীরত্বে হার এড়াল রিয়াল

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট রিজিওনাল কনফারেন্স (পিএমআরসি) অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট রিজিওনাল কনফারেন্স (পিএমআরসি) অনুষ্ঠিত

এডিস মশা কামড় দেয়ার সময় চিনবেনা কে মেয়র-কাউন্সিলর ইমাম-খতিব: ডিএনসিসি মেয়র

এডিস মশা কামড় দেয়ার সময় চিনবেনা কে মেয়র-কাউন্সিলর ইমাম-খতিব: ডিএনসিসি মেয়র

প্রাচীন ধর্ম সনাতকে শুধু শ্রদ্ধা নয় এ সম্পর্কে জানতে হবে, ইসকনের অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী

প্রাচীন ধর্ম সনাতকে শুধু শ্রদ্ধা নয় এ সম্পর্কে জানতে হবে, ইসকনের অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান

সাংহাই উৎসবে লড়বে যেসব ইরানি ছবি

সাংহাই উৎসবে লড়বে যেসব ইরানি ছবি

এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মেধাস্বত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : শাহরিয়ার

এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মেধাস্বত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : শাহরিয়ার

১০-১৫ দিনের মধ্যে বর্তমান বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা চলছে : নসরুল

১০-১৫ দিনের মধ্যে বর্তমান বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা চলছে : নসরুল

Header Ad
গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে আজমত উল্লা খান

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে আজমত উল্লা খান

আগামীকাল থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি দেয়া হবে

আগামীকাল থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি দেয়া হবে

বাজেট সম্পর্কে আলোচনায় ডিব্রিফিং সেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে : স্পিকার

বাজেট সম্পর্কে আলোচনায় ডিব্রিফিং সেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে : স্পিকার

প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য : প্রধানমন্ত্রী

প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য : প্রধানমন্ত্রী

দুর্বিষহ জনজীবন

দুর্বিষহ জনজীবন

পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

গত অর্থবছরে বিমান লাভ করেছে ৪৩৬ কোটি টাকা : বিমান প্রতিমন্ত্রী

গত অর্থবছরে বিমান লাভ করেছে ৪৩৬ কোটি টাকা : বিমান প্রতিমন্ত্রী

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ইওয়ামা কিমিনোরি ও জিএম কাদেরের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ইওয়ামা কিমিনোরি ও জিএম কাদেরের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক

নালিতাবাড়ীতে বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

নালিতাবাড়ীতে বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন করবেন : আইনমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন করবেন : আইনমন্ত্রী

লোডশেডিং আরো দুই সপ্তাহ

লোডশেডিং আরো দুই সপ্তাহ

সাগরে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা ঠেকাবে

সাগরে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা ঠেকাবে