আপনাদের জিজ্ঞাসার জবাব
০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
প্রশ্ন: তাকওয়া কি মুমিনের শ্রেষ্ঠ অর্জন?
উত্তর: মহান আল্লাহ রব্বুল আ’লামিনের নিকট বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের আলাদা করে তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। তিনি আমাদের বাহ্যিকতা ও অন্তরের অবস্থানের একত্রে হিসাব মেলান। আল্লাহ তায়ালা সূরাতুল হাজ্জের ৩৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, “আল্লাহর নিকট কখনোই তোমাদের কুরবানীর পশুর গোস্ত ও রক্ত পৌঁছবে না। কিন্তু আল্লাহর নিকট তোমাদের তাকওয়া বা অন্তুরের অবস্থানই পৌঁছে থাকে”। কেউ যদি টানা ৭০ বছর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেন, সাথে তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল সালাতও আদায় করেন কিন্তু তাঁর হৃদয় যদি আল্লাহর জন্য বিনয়ী না হয়, তিনি যদি আদায়কৃত সালাতে একনিষ্ঠ ও মনোযোগী না হন। তাঁর হৃদয় যদি মহান মনিবের সামনে হাজির না থাকে, তাহলে সিজদার কারণে তাঁর কপালে হয়তো দাগ পড়তে পারে, সালাতের কারণে সামাজিক অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর এই সালাতের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করবেন না। অন্তঃসারশূন্য তাঁর এই ৭০ বছরের সালাত পরকালে তেমন কোনো কাজে আসবে না। বাহ্যিক আচার-আচরণের চেয়ে ইসলাম অন্তরের অবস্থানকেই সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে। আমিরুল মু’মেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: “শুধুমাত্র নিয়্যাত অনুসারেই কর্মের প্রতিফল পাওয়া যাবে”। (বুখারি ও মুসলিম) আপনি যদি এক কোটিবার উচ্চারণ করে বলেন আপনি কাউকে ভালোবাসেন কিন্তু মনে মনে আপনি তাকে পছন্দ করেন না। তাহলে কোটিবার উচ্চারণেরও কোনো মূল্য থাকে না বরং এটা নিশ্চিতভাবে প্রতারণা। মানুষের উপস্থিতিতে আমরা আল্লাহভীরু সাজতে ভালোবাসি, ভালো ভালো কথা শুনিয়ে চোখের অশ্রু ঝরিয়ে আমাদের তাকওয়ার প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু দরজা বন্ধ করে আমরা হাতের মোবাইল সেটের মাধ্যমে অনবরত হারাম কাজে সময় ব্যয় করি। এটাকে মোটেও আল্লাহকে ভয় করা বা তাকওয়া বলে না। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা যদি যিকির করতে থাকেন, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’ এ আমল দিয়ে আপনি আল্লাহর বিচারে তাকওয়াবান প্রমাণিত হবেন না। কিন্তু উক্ত বাক্যটি যিনি একবারের জন্যও বলেন না কিন্তু সর্বদা তিনি মনে প্রাণে এবং বাহ্যিকভাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে যা বর্জন করতে বলেছেন তা বর্জন করে যাচ্ছেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁকে যা করতে বলেছেন তা করে যাচ্ছেন তাহলে তিনিই প্রকৃত তাকওয়াবান। তিনি আল্লাহ তায়ালার বিচার সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। আল্লাহ তায়ালা সূরাতুল হুজরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে বলেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার নিকট তিনি সবচেয়ে বেশি সম্মানিত যিনি তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করেন।” তাকওয়া বা আল্লাহ ভীরুতা মোটেও দেখানো বা শোনানোর বিষয় নয়। তাকওয়া মনে মনে লালন করার বিষয়। তবে অন্তরে স্থায়ী হয়ে যাওয়া তাকওয়ার প্রতিফলন বাহ্যিকভাবে প্রকাশিত হবে। যা হবে একেবারেই স্বাভাবিক। মোটেও কৃত্রিম হবে না। কৃত্রিমভাবে প্রকাশিত তাকওয়া উপকার তো দিবেই না বরং ইহকালে ও পরকালের তা হবে ধ্বংসের অন্যতম কারণ। মানুষের কাছে ভালো সাজা আর মৌলিকভাবে ভালো হওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। মানুষের কাছে সাজানো ভালোমানুষি খুব বেশি ধরা পড়ে না। কিন্তু অন্তর্যামী আল্লাহ রব্বুল আলামিনকে ফাঁকি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই আমাদেরকে সত্যিকারের তাকওয়াবান হওয়া অতীব জরুরী। আমাদের অতি ছোট্ট জীবনে তাকওয়ার চেয়ে মূল্যবান আর কিছু হতে পারে না। আমরা যদি তাকওয়া অবলম্বন করে আমাদের দৈনন্দিন কার্যাবলীকে পরিচালিত করি তাহলে আমাদের সকল কিছুর দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজে নিয়ে নিবেন। আমাদের যে কোনো সমস্যা, যে কোনো ধরনের বিপদাপদ, যে কোনো ধরনের সংকটে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য উত্তরণের পথ খুলে দিবেন। বেঁচে থাকার উপায়-উপকরণসহ নানা রকমের রিযিকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজে গ্রহণ করে নিবেন। আল্লাহ তায়ালা সূরাতুত ত্বলাকের ২ ও ৩ নম্বর আয়াতে বলেন: “আর যে আল্লাহকে ভয় করে সংকটে আল্লাহ তাঁর জন্য উত্তরণের পথ দেখাবেন এবং এমনভাবে তাঁকে রিযিক প্রদান করবেন যার কল্পনাও সে করেনি।” এছাড়া তাকওয়া অবলম্বকারীর জন্য আল্লাহ তায়ালা নিজেই শিক্ষক হয়ে যাবেন। আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া অবলম্বনকারীকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান নিজে শিক্ষা দিবেন। সকল জ্ঞানের উৎসই হলেন আল্লাহ তায়ালা। তিনি তাঁর অসীম জ্ঞানভাণ্ডার থেকে সামান্য কিছু জ্ঞান সৃষ্টিজগতকে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ সূরাতুল ইসরা ৮৫ নম্বর আয়াতে বলেন: “তোমাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দান করা হয়েছে”। আল্লাহ তায়ালার দেয়া উক্ত সামান্য জ্ঞানই কোটি কোটি ভাগে বিভক্ত করে আমরা বিভিন্ন শিরোনামে অর্জন করা চেষ্টা করছি। বিস্ময়ের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি যে, আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত উক্ত সামান্য জ্ঞানের শত শত কোটি ভাগের ক্ষুদ্রতম একটি ভাগ কেউ অর্জন করতে পারলে পৃথিবীজুড়ে তিনি বিরল সম্মানের অধিকারী হন। সুবহানাল্লাহ, চিন্তা করুন! যিনি সকল জ্ঞানের পূর্ণ অংশের মালিক তিনি যদি কারো শিক্ষক নিযুক্ত হয়ে যান তাহলে কতবড় যোগ্য শিক্ষক তার জন্য নিযুক্ত হলো। সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক যদি কাউকে শিক্ষাদান করেন তার সাফলতা লাভ একেবারেই সুনিশ্চিত হয়ে যায়। সকল জ্ঞানের একমাত্র মালিক আল্লাহ রব্বুল আ’লামিন অবশ্যই আমাদের শিক্ষক হবেন তবে একটিমাত্র শর্ত পূরণের মাধ্যমে। আর তা হলো তাঁকে যথাযথভাবে ভয় করা তথা তিনি আমাদের যা কিছু করতে বলেছেন একনিষ্ঠভাবে আমাদেরকে তা করে যাওয়া এবং তিনি আমাদেরকে যা কিছু ছেড়ে দিতে বলেছেন আন্তরিকতার সাথে পূর্ণাঙ্গভাবে তা ছেড়ে দেওয়া। আল্লাহ তায়ালা সূরাতুল বাকারার ২৮২ নম্বর আয়াতে বলেন: “আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ফলে তিনি তোমাদেরকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা দিবেন। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে মহাজ্ঞানী”। আল্লাহ জাল্লা শানুহু আমাদেরকে কাক্সিক্ষত মানে তাকওয়ান হওয়ার তৌফিক দান করুন, আমিন !
উত্তর দিচ্ছেন: মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যক্ষ, কামারগাঁও আল আমিন ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা
শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন