তাকওয়ার হালচাল
০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আমরা আজ আমাদের রিজিক নিয়ে ভাবি না। কোথা থেকে রিজিক আসল, কিভাবে আসল। আমার জন্য হালাল কি না। এসব ভাবার আজ সময় নেই। যে কোন ভাবেই আসুক টাকার আমার প্রয়োজন। আর কোন কিছু দেখার আমার প্রয়োজন নেই। একটি ছোট শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত সবার কাছে টাকাই যেন জীবনের মূল। ছোটকে বলি, উপদেশ, উৎসাহ দেই তোমাকে টাকা কামাই করতে হবে। ছাত্রকে বলি তোমাকে পড়ালেখা করে টাকা কামাই করতে হবে। সন্তানকে বলি তোমাকে বড় হয়ে বেশি টাকা কামাই করতে হবে। স্ত্রী স্বামীকে বলে তোমাকে বেশি টাকা কামাই করতে হবে। বন্ধু বন্ধুর সাথে আড্ডায় বসলে আলোচনার মূল বিষয় টাকা। এই সব খানে বেশি টাকা চাওয়া, দেমাগ নামক মেমোরীতে টাকা কামাইয়ের স্বপ্ন ছাড়া আর কোন কিছু নেই। এখানে ভাল মন্দ, সৎ অসৎ, হালাল হারামের প্রশ্ন অবান্তর। এই যখন সামাজিক অবস্থা তখন ইমান আমল তাকওয়ার বারোটা বাজতে আর বাকি থাকে কি করে?
আমল কবুলের মূল হল হালাল রিজিক। আমি ব্যবসা করি। শুধু টাকা মাথায় থাকার কারনে ব্যবসা হালাল না হারাম হচ্ছে চিন্তা মাথায় আসে না। মাথায় আসে কিভাবে দুই টাকা বেশি লাভ করা যায়। এটা ওজনে কম দিয়ে হোক, মালে ভেজাল দিয়ে হোক, ইচ্ছাকৃত দাম বাড়িয়ে হোক, মিথ্যা আর প্রতারণা করে হোক, দাম নিয়ে মিথ্যা কসম খেয়ে হোক। আমি চাকুরী করি। আমি চাই বেতনের পর আরো বেশি টাকা কেমনে কামাই করা যায়। এর জন্য ঘুষের পথ খুঁজি। ঘুষ না হলেও চাকুরীর পাশাপাশি আর কোন ব্যবসা বা অন্য কিছু করা যায় কি না খুঁজতে থাকি। এতে চাকুরীর হক পুরাপুরি আদায় হল কি না, আমার সেবা গ্রহনকারীগন পুরোপুরি সেবা পেল কি না। আমার চাকুরী দাতার হক আদায় করতে পারলাম কি না এই চিন্তা মাথায় আসে না। কারন আমি আমার বেতনে সন্তুষ্ট নই। আমার আরো চাই ই চাই। অথবা চাকুরীতে আমি আরো প্রমোশন চাই। অনেক বড় কর্মকর্তা হতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন আরো যোগ্যতা। এই যোগ্যতা অর্জন করতে গিয়ে অফিস সময়ে লেখা পড়ায় ব্যস্ত থাকি। অফিস ফাঁকি দেই। কাজে ফাঁকি দেই। নিশ্চয় এতে আমার দায়িত্ব যথাযথ পালন হয় না। এই রিজিক আমি খাই ইবাদত করি।
আমি সরকারী চাকুরে। বড় কর্মকর্তা। আমি চাকুরীতে এক্কেবারে স্বাধীন। আমাকে বলার কে আছে? আমি যখন খুশি অফিসে আসব যাব। প্রয়োজনে কোন দিন আসব অথবা আসব না। কোন কাজ মাসের পর মাস আটকিয়ে রাখব। আমাকে জবাবদিহিতা করতে হয় না। আমাকে জিজ্ঞাসা করার কেউ নেই। আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি না। আবার এই মাসোয়ারা নিয়ে আমি চলছি, ইবাদত করছি।
আমি লেখক। আমি চাই আরো বেশি বেশি লিখতে, সাথে আমি চাকুরী করি। আমি লিখতে গিয়ে আমার কাজে অবহেলা করি। অফিস সময়ে লিখায় ব্যস্ত হই। আমার হাতে সময় নেই আজই যে আমার পত্রিকায় লেখা পাঠানোর দরকার। সামনে গ্রাহক বসা। আর আমি লেখায় ব্যস্ত। অথবা লেখার কাজে কবি সাহিত্যিকদের আড্ডায় কোথাও যেতে হয়। আমি অফিস ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে যাই। আমি লেখায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টি কোন কিছুই তোয়াক্কা করি না। মনে যা আসে তাই লিখি। আমি বড় কবি সাহিত্যিক হই। এই লেখা থেকে সম্মানী পাই। চাকুরীর মাসোয়ারা নিয়ে আমি খাই ইবাদত করি।
আমি ডাক্তার। রোগী আমার চেম্বারে আসে। আমি রোগীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট একটি টাকা নেই। আমি তাকে রোগের কথা বলবার সময় দেই না। একটু দেখেই দু চারটি ঔষধ লিখে দেই। আমার যে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমাকে অনেক রুগী দেখতে হবে। রোগীকে সময় দেওয়ার সময় কোথায়। আমি মস্ত বড় ডাক্তার। সে যে আমাকে দেখাতে পেরেছে এটাইতো রোগীর সুভাগ্য। সাথে অনেক টেস্টের ফর্দ লিখে দিলাম। আমাকে টেস্টের কমিশনও তো খেতে হবে। গাড়ি বাড়ি অনেক কিছুরতো আমার প্রয়োজন।
আমি শিক্ষক। পড়ানো আমার পেশা। আমার বেতন কম। বাড়তি কিছু কামাই আমাকে করতেই হবে। তাহলে আমাকে টিউশনী করাতে হবে। ব্যাচে ছাত্র ছাত্রী পড়াতে হবে। তাই ক্লাসের সকল ছাত্র ছাত্রী থেকে আমার ব্যাচের ছাত্র ছাত্রীদের আলাদা গুরত্ব দিতে হবে। ঠিক ভাবে ক্লাস নেওয়া যাবে না। ক্লাসে ভাল ভাবে পড়ানো যাবে না। তাহলেতো ওরা আমার কাছে পড়তে আসবে না। এভাবেই আমার রিজিক তালাশের পথ করে নিচ্ছি। আমি বক্তা। মানুষকে দ্বীনের পথে ডাকা আমার কাজ। আমি ওয়াজ মাহফিলে বয়ান রাখি। মানুষ খুশি মনে আমাকে যেই সম্মানী দেয়, তাতে আমি সন্তুষ্ট নই। আমার অনেক টাকার প্রয়োজন। আমাকে মাহফিল শেষে প্রয়োজনে রুঢ় আচরন করে হলেও বেশি টাকা নিতে হবে। তাদের সাথে ওয়াজের আগেই আমাকে টাকার চুক্তি করে যেতে হবে। এমন ভাবে প্রত্যেক পেশায় ই আজ একই দুরবস্থা। সব খানেই রিজিক আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই রিজিক হালালের মানে বা সন্দেহ মুক্তের মানে উত্তীর্ণ হয় না। এই রিজিক খেয়ে আমি নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, তাসবীহ তাহলীল পড়ি। এই রিজিক দিয়ে হজ্জ করি, যাকাত দেই, দান সাদাকা করি। কিন্তু একটুও ভাবি না যে, আমার রিজিক হালাল করার, সন্দেহ মুক্ত করার জন্য আমার করণীয় আছে কি না? তাই আমি যে পেশায় থাকি না কেন, আমাকে চিন্তা করতে হবে। আমাকে যাচাই করে দেখতে হবে। আমার মধ্যে কোন ত্রুটি আছে কি না। হালাল রিজিকের সাথেইতো ইমান আমল তাকওয়া বেশি নির্ভরশীল। হালাল নিয়ে না ভাবলে আমল ঠিক হবে না। আমল ঠিক না হলে আসল কাজের কিছুই হবে না।
আসুন আমার তাকওয়া নিয়ে আমি ভাবি, আমার ইলম, আমার আমল আমি ঠিক করি। আমি হালাল রিজিক অন্নেষন করি। মহান প্রভুর প্রিয় হবার চেষ্টা করি। (সমাপ্ত)
লেখক: শিক্ষাবিদ, গবেষক, কলামিষ্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন