দারিদ্র্য সমস্যা : কারণ ও প্রতিকার
২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
মদীনার কল্যাণ রাষ্ট্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ অধিকার লাভের সুযোগ সকলের জন্য সমানভাবে অবারিত করেছিলেন। এর সকল মানুষই দক্ষতা বলে উপার্জন করে বিত্তবান হ’তে পারত। অবশ্য নিজের অক্ষমতার কারণে অনেকে সচ্ছলতা হারাত। কিন্তু তাই বলে কোন লোককেই তার মৌলিক প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত করা হ’ত না। স্বীয় দক্ষতার পরীক্ষায় কেউ ব্যর্থ হ’লে সে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থাদি পাকাপোক্ত দেখতে পেত। ফলে কারুরই দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না।
ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে, ঊফঁপধঃরড়হ রং ঃযব নধপশনড়হব ড়ভ ধ হধঃরড়হ. অর্থাৎ ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। মেরুদন্ডহীন প্রাণী যেমন মাথা উঁচু করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি দারিদ্র্যমুক্ত তথা স্বাবলম্বী হ’তে পারে না। যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশী উন্নত। আর যে জাতি যত বেশী অশিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি দরিদ্র। আর অশিক্ষা দারিদ্র্য সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণও বটে।
ইসলাম যেহেতু স্বাবলম্বী, স্বনির্ভর, উন্নতজাতি হ’তে অনুপ্রেরণা যোগায়, তাই ইসলামের সর্বপ্রথম নির্দেশ হ’ল, ‘পড়’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘শিক্ষার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয’।] ইসলামের বিধান মেনে ১০০% নাগরিক শিক্ষিত হ’লে বাংলাদেশ ১০০% দারিদ্র্যমুক্ত স্বাবলম্বী উন্নত জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে ইনশাআল্লাহ।
অপচয়-অপব্যয়, বিলাসিতা এগুলো দারিদ্র্য সমস্যার কারণ। এদেশের বিত্তশালীগণ অপচয়-অপব্যয় ও বিলাসিতায় যে অর্থ ব্যয় করে তা দিয়ে হাযার হাযার ভুখা-নাঙ্গা বনু আদমের দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। ইসলাম মানুষকে মিতব্যয়ী হ’তে শিক্ষা দেয়। অপচয়-অপব্যয় ও বিলাসিতায় অর্থ ব্যয় না করে নিকটাত্মীয়, ফকীর-মিসকীন ও মুসাফিরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে নির্দেশ দিয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রভুর অবাধ্য’ (বনী ইসরাঈল! ইসলামের উক্ত বিধান মেনে চললে অবশ্যই দারিদ্র্য বিদূরিত হবে ইনশাআল্লাহ।
নানাবিধ খনিজ সম্পদে ভরপুর আমাদের এ বাংলাদেশ। তেল, গ্যাস, কয়লা, ইউরেনিয়াম সহ প্রায় সকল ধরনের খনিজ সম্পদ রয়েছে এ দেশে। কিন্তু দুঃখজনক হ’লেও সত্য যে, এগুলো উত্তোলনের জন্য আমাদের নিজস্ব কোন প্রযুক্তি নেই। দেশের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো বিদেশী কোম্পানীর কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে। এখন তাদের কাছ থেকে নিজেদের গ্যাস আন্তর্জাতিক বাজার দরে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এতে লাভ তো দূরে থাক, প্রতি বছরে ২৫০০ কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। এমন অসম চুক্তিতে গ্যাস-কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে, যাতে এদেশের লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। উদাহরণ স্বরূপ ফুলবাড়ী কয়লাখনি। চুক্তি মোতাবেক এ খনি থেকে বাংলাদেশ পাবে মাত্র ৬% আর বৃটিশ কোম্পানী এশিয়া এনার্জি পাবে ৯৪%। ৬% গ্যাস বাবদ বাংলাদেশ বছরে পাবে ১৫০০ কোটি টাকা। বিপরীতে বছরে ক্ষতি হবে ১৮০০ কোটি টাকা। ফলে ৩০ বছরে ক্ষতি হবে ৯ হাযার কোটি টাকা।
ইসলাম মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, উন্নত প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে এবং দেশের শাসকগোষ্ঠীকে দেশের অভিভাবক হিসাবে তার সমস্ত সম্পদ হেফাযত করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে। যদি ইসলামের উক্ত বিধান পরিপূর্ণভাবে মানা হ’ত তবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হ’ত না এবং অপরিমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র্যের নির্মম কশাঘাতে নিষ্পেষিত হ’তে হ’ত না। বাংলাদেশের দারিদ্র্য সমস্যার জন্য স্বার্থান্ধ প্রতিবেশী কম দায়ী নয়। বাংলাদেশকে তিন দিক দিয়ে বেষ্টন করে আছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। এ দেশটি মরণফাঁদ ফারাক্কা, গজলডোবা ব্যারেজ, টিপাইমুখ বাঁধ, সারি নদীর উজানে বাঁধ ও অন্যান্য সকল নদীতে বাঁধ দিয়ে ভাটির দেশ হিসাবে এ দেশকে শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে ও বর্ষা মৌসুমে ডুবিয়ে মারার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। ফলশ্রুতিতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হ’তে যাচ্ছে। প্রক্রিয়াধীন টিপাইমুখ বাঁধ এটাকে আরও ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া দক্ষিণ তালপট্টি, বেরুবাড়ী, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল, মহুরীর চর প্রভৃতি দখল করে নিয়েছে। প্রতিদিন বিএসএফ-এর মাধ্যমে গড়ে ১ জন করে নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করার ফলে প্রতিদিন একটি করে পরিবার অভিভাবকহীন নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের সীমানায় ভারতীয় নাগরিকরা ঢুকে মূল্যবান সম্পদ পাচার ও চুরি করে নিয়ে গেলেও সীমান্তের অতন্দ্রপ্রহরী বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) গুলি করার অনুমতি পর্যন্ত নেই। তারা যেন সীমান্তের সাক্ষী গোপাল।
পরমতসহিষ্ণুতার ধর্ম। অন্যের অধিকার যথাযথ সংরক্ষণের গ্যারান্টি একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ, দখল, চুরি ইত্যাদির বিরুদ্ধে ইসলাম কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে। অপরের ১ ইঞ্চি ভূমি দখল করে নিলেও সাত স্তবক জমি হাশরের মাঠে দখলকারীর গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। ইসলাম এ অনুশাসন মানলে কিছুতেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হ’ত না।
আলোচিত দারিদ্র্য সমস্যার কারণ ও তার প্রতিকার বিষয়ক পর্যালোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তির গ্যারান্টি একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। ইসলামের প্রতিটি বিধান যথার্থভাবে মেনে চললে কিছুতেই দারিদ্র্য থাকবে না এবং বাংলাদেশ স্বনির্ভর সমৃদ্ধশালী, উন্নত জাতি হিসাবে বিশ্বের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে ইনশাআল্লাহ। (সমাপ্ত)
লেখক-গবেষক, কলামিস্ট, পাঠান পাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভবিষ্যতে পুতিনের সাথে সরাসরি কথা বলতে চান শলৎজ
বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর ২২০০ সহিংসতা নিয়ে ভারতের তথ্য বিভ্রান্তিকর : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
ছিনতাইকারীর হাতে খুন হন হাফেজ কামরুল
ধামরাইয়ে ২টি ড্রেজার মেশিন জব্দ
রাবিতে অপরাধে জড়িত ৬ শিক্ষার্থী স্থায়ী বহিষ্কার, শাস্তি পেল মোট ৩৩ জন
রাণীশংকৈলে ফিল্মি স্টাইলে দোকান চুরি, ১৮ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও চোর ধরতে ব্যর্থ পুলিশ
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন