ঈমানের গুরুত্ব
০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম
ঈমান মানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন। আল্লাহ সঙ্গে বান্দার সংযোগস্থাপনের একমাত্র সেতুবন্ধন এটি। এ বন্ধনটি যত নিখুঁত, মজবুত ও সুন্দর হবে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক তত শক্তিশালী, ত্রুটিহীন ও নিগূঢ় হবে। এর মাধ্যমে সহজেই তথ্যের আদান-প্রদান করা যাবে রবের সঙ্গে। যখন যা বলার প্রয়োজন বলা যাবে প্রাণ খুলে। তিনিও বান্দার কথা শুনবেন শোনার মতো করে। বান্দাকে ইচ্ছেমতো উদার হস্তে প্রয়োজনীয় সাহায্যও পৌঁছে দেবেন যখন-তখন। ঈমান ছাড়া বান্দার জীবন বিক্ষিপ্ত ও অরক্ষিত। যেমন অরক্ষিত ও বিক্ষিপ্ত অবাধ্য গোলামের জীবন। মনিবের প্রভুত্ব স্বীকার না করে ভৃত্য যেমন ঔদ্ধত্যের পরিচয় দেয়, জীবনকে হুমকি ও সংকটময় করে তুলে; ঠিক তেমন বান্দাও আল্লাহর কর্তৃত্ব স্বীকার না করে স্বাধীনচেতা হলে তার জীবনকেও সে হুমকি ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। জীবনের তখন কোনো সিকিউরিটি থাকে না। সেই বান্দার দায়িত্বভারও আল্লাহ তখন গ্রহণ করেন না। কান্ডারীহীন নৌকার মতো সাগরে ভাসতে থাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। ভয়-উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে সারাক্ষণ। অবাধ্য হয়ে দূরে যেতে যেতে একসময় এমন স্থানে গিয়ে পৌঁছায় যেখান থেকে ফিরে আসা আর সম্ভব হয় না। এভাবেই এক সময় জীবনবাতি নিভে যায়। আর পৌঁছে যায় অনন্তকালের জীবনে। যেখানে তার জন্য প্রস্তুত করা হয় শাস্তি ও তিরস্কারের স্থান। চির অশান্তির ঠিকানা জাহান্নাম।
পক্ষান্তরে যে মালিকের প্রভুত্ব স্বীকার করে তার আজ্ঞাবহ হয়ে জীবনযাপন করে, সে থাকে মনিবের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে। তার জীবন থাকে সুরক্ষিত। তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মনিব নিজে। পরিচালিত করেন সুপথে। ফলে সে দৃশ্যত দূরে হয়েও থাকে মনিবের দৃষ্টির আঙিনায়। মনিব থাকেন তার সঙ্গে। তার জীবন হয় সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যের। কোনো অপশক্তির ভয় থাকে না হৃদয়ে। কারণ সে হয় তখন সীমাহীন শক্তিধরের বন্ধু। তার জন্য প্রস্তুত করা হয় পরজগতের পুরস্কারের মঞ্চ। সাজানো হতে থাকে অফুরন্ত নেয়ামতের স্থান জান্নাত।
তাই ঈমানের গুরুত্ব মানব জীবনে অপরিসীম। জন্মের স্বার্থকতা এতেই নিহিত। জন্মের পরম লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এটিই। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন, ‘আমি মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত তথা গোলামি করার জন্য।’ (সুরা জারিয়াত : ৫৬) ‘এবং বিশ্ব চরাচরে অপরাপর যা আছে সব সৃষ্টি করেছি তাদের গোলামি করার জন্য।’ (সুরা জাসিয়া : ১৩) মানে ভোগ, সেবা ও কল্যাণের জন্য। আর ইবাদতের অর্থ হলো আল্লাহর আনুগত্য করা। তার বশ্যতা স্বীকার করা। তার কাছে আত্মসমর্পণ করা। এসবের মূল হলো ঈমান। আল্লাহর প্রতি ঈমান থাকলেই বান্দার পক্ষে তার হুকুমের কাছে মাথা নত করা সম্ভম। তার দীন মানা সম্ভব। তার রাসুল মানা সম্ভব। পরকাল, হাশর-নাশর, ইত্যাদির স্বীকারোক্তি দেয়া সম্ভব। নতুবা সব কিছুই বান্দার কাছে অগ্রাহ্য হবে। তাই আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে যত নবী-রাসুল পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সবার প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি মানুষকে আহ্বান জানাতে। তাদের সকলের কালেমা বা দাওয়াতবাক্য একই ছিল। তারা এসে লোকদের বলতেন, ‘হে লোকসকল তোমরা বলোÑ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেইÑ তাহলেই তোমরা দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হবে।’ কারণ ঈমান ছাড়া পরকালে কোনো মানুষের মুক্তি মিলবে না। কোনো মানুষ যতই ভালোকাজ করুক পরকালে সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাবে না।
ঈমান হলো নেক আমলের মূলভিত্তি। আল্লাহর কাছে বান্দার ভালো কর্মগুলো এর ওপর ভিত্তি করেই পৌঁছায়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘পরকালে শুধু অণু পরিমাণ ঈমান দিয়েও অসংখ্য মানুষ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।’ (তিরমিজি : ২৫৯৩) অথচ দেখা যাবে, তাদের আমলনামায় না আছে নামাজের সওয়াব, না আছে রোজার সওয়াব। না আছে হজ, জাকাত কিংবা অন্য কোনো ভালোকাজের সওয়াব। এরপরও তারা জান্নাতে যাবে। ঈমানের ছিটেফোঁটা, ক্ষীণ আলোকবিন্দুও যদি কোনো মানুষের দিলে থাকে সেও পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে জাহান্নাম থেকে একসময় মুক্তি পাবে। দশ দুনিয়ার সমপরিমান জান্নাতে অংশ পাবে। প্রিয়নবী (সা.) তাই বলেন, ‘যার শেষ কথা ‘লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ’ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ : ৩১১৮)
হজরত আবু জর গিফারি (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে বলবেÑ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আর এ বিশ^াসের ওপরই তার মৃত্যু হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ আবু জর গিফারি বলেন, ‘আমি নবীজিকে বলেছিলাম, ‘যে লোক চুরি ও ব্যভিচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করে সেও কি জান্নাতে যাবে?’ উত্তরে আল্লাহর রাসুল বলেন, ‘হ্যাঁ সেও জান্নাতে যাবে!’ বর্ণানাকারী বলেন’ আমি একই কথা পুনরায় জিজ্ঞেস করি। উত্তরে নবীজিও একই কথা বলেন এবং এর সঙ্গে আরও বলেন, ‘তোমার নাকমুখ ধুলোমলিন হলেও!’ (সহিহ বোখারি : ৫৮২৭)
কিন্তু ঈমান না থাকলে দুনিয়ার যত নেকআমল সব বৃথা যাবে। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। কোরআনের ভাষায় সে লোকটি হবে কাফের কিংবা মুশরিক। কাফেরের আমল হবে পরকালে মূল্যহীন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা কুফুরি করে এবং কাফের অবস্থায় মারা যায় তাদের কেউ পৃথিবী ভর্তি স্বর্ণ বিনিময়স্বরূপ প্রদান করলেও তা গ্রহণ করা হবে না, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আল ইমরান : ৯১) মুশরিকদের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ মুশরিকদের কখনো ক্ষমা করবেন না।’ (সুরা নিসা : ৪৮) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ ঈমান অমান্য করলে, তার আমলগুলো নিষ্ফল হবে। আর সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা মায়েদা : ৫) সুরা ফুরকানের ২৩ নম্বর আয়াতে তাদের আমলের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘আর তারা যে আমল করেছিল আমি তার কাছে যাব এবং তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।’ অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘যারা তাদের রবের সঙ্গে কুফুরি করে তাদের আমলসমূহের দৃষ্টান্ত হলো, এমন ছাইয়ের মতো যা ঘুর্ণিঝড়ের দিনে প্রচন্ড বাতাস বহন করে নিয়ে যায়। তাদের আমল (পরকালে) কোনো উপকারে আসবে না।’ (সুরা ইবরাহিম : ১৮) সুরা নুরের ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা কুফুরি করে তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরীচিকার মতো, পিপাসাকাতর ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে, কিন্তু যখন কাছে যায় তখন দেখে সেটা কিছুই নয়...।’ তবে কাফেরদের মধ্যে যারা দুনিয়ায় টুকটাক ভালো কাজ করে তার বিনিময়ে তারা দুনিয়ায় সাময়িক আরামের জীবন পায়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় কোনো কাফের ভালো কাজ করলে তাকে দুনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্য দান করা হয়।’ (সহিহ মুসলিম : ২৮০৮)
এতক্ষণের আলোচনায় স্পষ্ট হলো যে, ঈমান ছাড়া ব্যক্তির আমলের কোনো মূল্য নেই। ঈমান থাকলে আমলের মূল্য আছে। আমলের ওজনও আছে। ঈমানসহ কোনো ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’-এর মতো অতি সহজ তাসবিহগুলোও যদি উচ্চারণ করে তাহলেও মিজানের পাল্লা সওয়াবে ভরপুর হয়ে যাবে।’ (সহিহ বোখারি : ৭৫৬৩) এমনকি ঈমানদার বান্দার উঠা-বাসা, খাওয়া-পরা, ঘুম-গোসল, অজু-এস্তেঞ্জা পর্যন্ত সওয়াবের লিস্টে এসে যাবে। কারণ তারা সবকিছু আল্লাহর হুকুম জেনে, নির্দেশ মেনে করে থাকে। শুধু তাই নয়, পরকালে ঈমানদারের একেকটি নেকআমল বহু আমলের রূপ ধারণ করবে। একটি নেকআমল সর্বনি¤œ দশটি নেকআমলের সমান হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে আমার কাছে একটি ‘হাসানাহ’ (নেকআমল) নিয়ে উপস্থিত হবে তার জন্য অনুরূপ দশটি হবে।’ (সুরা আনয়াম : ১৬০) হাদিস শরিফে এসেছে, ‘কেউ নেক কাজের নিয়ত করলেই ১টি নেকি মিলবে। কাজটি করলে ১০টি নেকি মিলবে। সেটাকে আল্লাহ তায়ালা বাড়িয়ে ৭০০ গুণ করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম : ২৩৩) এছাড়াও ঈমানদারে বিভিন্ন আমলের বিভিন্ন ফজিলতের কথা কোরআন-হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। তাই একজন মানুষকে জীবনে চিন্তাভাবনা করা দরকারÑ সে কি সৃষ্টিকর্তায় বিশ^াসী হবে না অবিশ^াসী। একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর ইবাদত করবে নাকি ভিন্ন কোনো সত্তা বা বস্তুর পূজা করবে। তাকে ভাবা উচিৎÑ যদি ¯্রষ্টা থেকে থাকেন, যদি পরকালে বিচার-আচার হয়, যদি জান্নাত-জাহান্নাম অবশ্যই থাকে। (আমরা সবই বিশ^াস করি) তাহলে তার উপায় কী হবে! আর যদি না থাকে (আমরা মানি অবশ্যই আছে) তাহলে তো ঈমানদারদের যে অবস্থা তাদেরও একই অবস্থা। সুতরাং বুদ্ধিমানের কাজ হলো পরিণতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন!
লেখক: কবি ও কলামিস্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৭ উইকেট ছেলেকে দিলেন তাসকিন
প্রধান উপদেষ্টার রাজবাড়ী সফর স্থগিত
ভিসা সত্যায়নের বেড়াজালে বিপুল সংখ্যক সউদীগামী কর্মী বায়রা নেতৃবৃন্দের সাথে বিএমইটির ডিজি
মোবাইলের ব্যাককভারে প্রিন্ট করা ছবি লাগানো প্রসঙ্গে
প্রেমিকাকে বিয়ে করলেন জনপ্রিয় গায়ক আরমান মালিক
সরকারি দপ্তরে তদবির বন্ধে সচিবদের উদ্দেশে পত্র দিয়ে তথ্য উপদেষ্টার অনন্য দৃষ্টান্ত
ফুলপুরে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, ৫ পরিবহনকে জরিমানা
গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতায় উৎসবের আমেজ
সাইবার আক্রমণ: আসিফ-সাদিক-হান্নানের ফেসবুক আইডি সচল
গোয়ালন্দে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ব্যাগ উপহার
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ২৩৪ অবৈধ অভিবাসী আটক
১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
উষ্ণতম বছর, উষ্ণতম দশক! আশঙ্কার বর্ষবরণ বিশ্বজুড়ে
মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি. এর সাথে শিপ ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল লি. এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর