ইসলামে নামাজ কায়েমের ফজিলত
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সালাত হচ্ছে দ্বিতীয়। পবিত্র কুরআনের পরিভাষায় সালাতের স্থলে নামাজ কথাটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আভিধানিক ভাবে দোয়া, দুরুদ, প্রতিদান, কারো দিকে মুখ করা, নিকটবর্তী হওয়া, অগ্রসর হওয়া ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। ‘সালাত’ কুরআন, হাদীস, ইজমা দ্বারা প্রমাণিত ফরজ। রাসুল (সা:) এর আমল থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সব মুসলিম কোনো মতবিরোধ ছাড়াই এর ফরজিয়াত, গুরুত্ব, তাৎপর্য, প্রয়োজনীয়তা, বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদ স্বীকার করে আসছেন। রাসুল (সা:) এর মক্কি জীবনে মিরাজের সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। ঈমানের পরই এর স্থান। একজন লোকের ঈমানের প্রমাণ ও বাস্তব রূপ প্রকাশ পায় তার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশ পালন করা হয় এবং সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টের মধ্যে একটা গভীর সর্ম্পক সৃষ্টি হয়, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ এনে দেয়। রাসুল (সা:) বলেছেন- বান্দা সিজদারত অবস্থায় তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। (মুসলিম)। পৃথিবীতে প্রত্যেক নবী-রাসুলের ওপরই সালাত ফরজ ছিল। হযরত আদম (আঃ) ও তার বংশধর হযরত নুহ (আঃ) ও হজরত ইব্রাহীম (আঃ) কে নামাজের আদেশ দেয়া হয়েছিল এবং তারা নামাজ পড়ত; এর প্রমাণ মিলে সূরা মরিয়মের ৫৮ নাম্বার আয়াতে। বলা হয়েছে, নবীদের মধ্যে যাদের আল্লাহ পুরস্কৃত করেছেন এরাই তারা, আদমের ও যাদের তিনি নূহের সথে নৌকায় আরোহন করিয়েছিলেন তাদের বংশোদ্ভুত, ইব্রাহীম ও ইসরাইলের বংশোদ্ভুত এবং যাদের তিনি পথনির্দেশ করেছিলেন তাদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের নিকট করুনাময় আল্লাহর আয়াত আবৃত্তি হলে তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ত ও রোদন করত। সূরা ইব্রাহীমের ৪০ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে আমার রব, আমাকে এবং আমার বংশধরকে যথাযত নামাজ প্রতিষ্টাকারী কর। ‘সূরা লোকমানের ১৭ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, হে বৎস! নামাজ কায়েম করবে, সৎ কাজের নির্দেশ দেবে, অসৎ কাজ প্রতিরোধ করবে এবং বিপদে ধৈর্য ধারণ করবে। অনুরূপ ভাবে কুরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবী রাসুলের ব্যাপারেই স্পষ্ট আয়াত রয়েছে, যাদেরকে সালাতের তাকিদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কালামে পাকে নামাজের আদেশ, গুরুত্ব,তাৎপর্য ও সফলতা সংক্রান্ত যে আয়াতগুলো রয়েছে, এগুলোর মধ্যে কিছু আয়াত সুরার নাম সহ উল্লেখ করা হলো: বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা:) কে উদ্দেশ্য করে সূরা ইব্রাহীম বলা হয়।- ‘আমার বান্দাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদের নামাজ কায়েম করতে বলুন’। (১৪:৩১)। সূরা আল হজের ৭৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ওহে যারা ঈমান এনেছে তোমরা রুকু করো, সিজদা করো ও তোমাদের রবের ইবাদত করো এবং সৎ কাজ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (২২:৭৭) সুরা ত্বহার ১৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, আর আপনার পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ দিন এবং আপনি নিজেও এতে অবিচলিত থাকুন। সুরা বাকারার ৪৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত প্রদান এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো। (২:৪৩)। একই সুরার ২৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা নামাজ সমূহকে হেফাজত করো। বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজকে আর আল্লাহর সামনে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াও।’ (২:২৩৮)। এ আয়াতের মধ্যবর্তী সালাত বলতে আসরের নামাজের কথা বলা হয়েছে। কারণ এই সময়ে মানুষের মধ্যে ব্যস্ততা বেশি থাকার দরুন নামাজটি ফউত(কাজা) হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সে জন্য এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে । সহি বুখারি শরিফের ১/৫৫২ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আসরের নামাজ ছেড়ে দিল, সে যেন তার পরিবার ও ধনসম্পদ হারাল। একই গ্রন্থের ১/৫৫৩ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে আসরের নামাজ ছেড়ে দিয়ে পরে তা আদায় করলে আদায় হবে না। নামাজের সফলতার বাণী ও প্রচারিত হয়েছে আল কুরআনের অনেক জায়গায়। ‘ঈমানদারেরা অব্যশই সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী ও নম্র।’ (২৩:১-২)। সফলকাম ব্যক্তি সেই যে পবিত্রতা অর্জন করেছে। আপন প্রতিপালকের নাম স্বরণ করেছে এবং নামাজ আদায় করেছে।’ সুরা: আল আলাক, আয়াত ১৪-১৫। নামাজ না পড়ার জন্য যে শাস্তির কথা আল কুরআনে বলা হয়েছে তা নিুরূপ: সূরা আল মুদাসসিরে দোজখের কটিন শাস্তিতে নিক্ষিপ্তদের সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘ কী অপরাধে তোমাদের দোজখে টেনে আনা হলো? তারা উত্তরে বলবে, আমরা মুসলিমদের অর্ন্তভূক্ত ছিলাম না তথা সালাত আদায় করিতাম না। (আয়াত ৪২:৪৩)। যারা নামাজ আদায় করে না, হাদিস শরিফে তাদের সর্ম্পেক অনেক সর্তকবাণী উচ্চারিত হয়েছে। যেমন- রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, বান্দা ও কুফরির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ আদায় না করা। (মুসলিম)। নামাজ সম্পর্কে সুরা আল আনকাবুতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।‘ (আয়াত ৪৫)। নামাজ মানুষকে চিন্তামুক্ত রাখে তাই রাসুল (সাঃ) কোনো ব্যাপারে পেরেশান হলে নামাজ আদায় করতেন। সূরা বাকারার ১৫৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো।’ এ ছাড়াও কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে নামাজ আদায় করার আদেশ, এর সুফল ও আদায় না করার কুফল সম্পর্কে অসংখ্য উদ্ধৃতি রয়েছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো নামাজের স্বরূপ নিয়ে। নামাজের স্বরূপ হলো দু’টি-ফরজিয়াত (গধহফধঃড়ৎু): ফরজিয়াত সালাতগুলো হচ্ছে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ১৭ রাকাত ফরজ নামাজ এবং এর সাথে আনুষাঙ্গিক কিছু সুন্নত ও নফল নামাজও রয়েছে। এই ফরজ নামাজগুলো ১০ বছর বয়স থেকে শরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত (যতক্ষণ জ্ঞান থাকবে) ফকির, বাদশা, আমির ওমরাহ সুস্থ-অসুস্থ, শাসক-শাসিত, মনিব-গোলাম, মুকিম-মুছাফির সবার জন্য ফরজ। জাকাত, রোজা ও হজের ফরজিয়াতের বেলায় পূর্বশর্ত ও অবস্থার সাথে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নামাজ এমনই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবাদত, যা সব সময় সব অবস্থায় ফরজ। এই ফরজিয়াত নামাজ পরিত্যাগ করলে, কায়েম না করলে বান্দাকে শাস্তি পেতে হবে। ফরজ নামাজের বিনিময়ে কোনো সওয়াব বা প্রতিদানের প্রত্যাশা করা যাবে না। ফরজ নামাজ আদায়ের পর ব্যক্তির জন্য আরো ফরজ কাজ রয়েছে, যেমন- হালাল রিজিক অর্জন, সদাচরণ, নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন ইত্যাদি। (গধহফধঃড়ৎু) এই ফরজ নামাজগুলো আদায় করতে হবে কেন? এর উত্তরে বলা যেতে পারে মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন অত্যন্ত শখ করে অন্য প্রাণিকুলের মধ্যে অতি উত্তম ও সুন্দর আকৃতিতে। সূরা আতত্বিনে বলা হয়েছে, ‘আমি মানুষকে অতি উত্তম ও সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। (আয়াত-৪)।
লেখক: চিকিৎসক-শিক্ষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি
ঘনকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে: ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর