তাবলিগ জামাত ও বিশ্ব ইজতিমার ইতিকথা

Daily Inqilab মুফতী পিয়ার মাহমুদ

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম

তাবলিগ জামাতের ইতিকথা: পুরো পৃথিবীতে সফল, কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য দাওয়াতি কাফেলার নাম ‘তাবলিগ জামাত’। এই জামাতের নিবেদিতপ্রাণ সাথীরা নিঃস্বার্থভাবে প্রতিনিয়ত মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করে যাচ্ছেন। ইসলামের ছয়টি মৌলিক বিষয়কে সামনে রেখে তাবলিগ জামাত তার দাওয়াতি কার্যক্রম গোটা বিশ্বে পরিচালনা করে আসছে দুর্বার গতিতে। ছয়টি মৌলিক বিষয় হচ্ছে- ১. কালিমা; ২. নামায; ৩. ইলেম ও জিকির; ৪. ইকরামুল মুসলিমিন; ৫. সহিহ নিয়ত; ৬. দাওয়াত ও তাবলিগ। তাদের বলিষ্ঠ পদচারণায় সারা দুনিয়ার দিকদিগন্ত মুখরিত। তাদের এই সাধনার বদৌলতে আজ পৃথিবীর দিকদিগন্তে হেদায়েতের শাশ্বত জ্যোতি পৌঁছে গেছে কোটি প্রাণে। আল্লাহকে ভুলে থাকা মানুষ চিনেছে আল্লাহকে নতুনভাবে। গড়ে তুলেছে মজবুত আমলী জিন্দেগী। যুগান্তকারী এ দাওয়াতি কাজের সূচনা করেছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত সাধক, দারুল উলুম দেওবন্দের কৃতী সন্তান মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভি রাহ.। যিনি ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র ও শায়খুল হিন্দ আলামা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি রাহ.এর স্নেহধন্য শিষ্য। ১৩২৬ হিজরিতে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন এবং এক পর্যায়ে শায়খুল হিন্দ রাহ.এর কাছে বুখারি শরিফ ও তিরমিজি শরিফ অধ্যয়ন করেন। ১৯১০ সালে ভারতের রাজস্থানের মেওয়াতে মাওলানা ইলিয়াস রাহ. তাবলিগ জামাতের গোড়াপত্তন করেন। ১৯২০ সালে তৎকালীন দেওবন্দ মাদরাসার সব আকাবির ও আসলাফের পরামর্শ মোতাবেক মাওলানা ইলিয়াস রাহ. দিল্লির নিজামুদ্দীনে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৪৪ সালে মাওলানা ইলিয়াস রাহ.এর ইন্তেকালের পর তাবলিগ জামাতের দায়িত্ব দেয়া হয় তার সন্তান মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি রাহ.কে। মাওলানা ইউসুফ রাহ.এর ইন্তেকালের পর তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব দেয়া হয় মাওলানা ইনামুল হাসান রাহ.কে। মাওলানা ইনামুল হাসান রাহ.এর ইন্তেকালের আগে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত সুচারুরূপে পরিচালনার লক্ষ্যে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি আলমি শূরা গঠন করা হয়।

বিশ্ব ইজতিমার ইতিকথা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে শিল্পনগরী টঙ্গীর সুবিশাল ময়দানে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতিমা। বিশ্ব ইজতিমা বিশ্ব তাবলিগ জামাতের সর্ববৃহৎ সমাবেশ। বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের প্রধান মার্কাজ হলো ঢাকার কাকরাইল মসজিদ। এই কাকরাইল মসজিদেই ১৯৪৬ সালে প্রথম বিশ্ব ইজতিমা শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে। এরপর নারায়ণগঞ্জে ১৯৫৮ সালে ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর টঙ্গীর পাগার নামক স্থানে ইজতিমা হয় ১৯৬৬ সালে। ১৯৬৭ সাল থেকে তুরাগ নদীর পূর্ব তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশ্ব ইজতিমা। মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পাকিস্তান, ভারত ও ইউরোপীয় দেশগুলোসহ বিশ্বের প্রায় ৫০এর অধিক দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিশ্ব ইজতিমায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। আখেরি মুনাজাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। বর্তমান বিশ্ব ইজতিমা ময়দান ১৯৯৫ সালে সরকারিভাবে স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়।

তাবলিগ জামাতে উলামায়ে কিরামের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
তাবলিগ জামাতের এই কাফেলা শুরু থেকে আজ অবদি উলামায়ে কিরামের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে এবং এর উসুল ও মূলনীতি কুরআন হাদিসের আলোকে উলামায়ে কিরামের মাধ্যমেই প্রণীত ও সুবিন্যস্ত। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, দাওয়াত ও তাবলীগের সহিহ মেহনত বজায় রাখতে উলামায়ে কিরামের নেতৃত্ব ও নির্দেশনার বিকল্প নেই। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম নিজেই উলামায়ে কিরামের হাতে দাওয়াত ও তাবলিগের এ মহান দায়িত্ব অর্পণ করে গেছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘উলামায়ে কিরাম নবীদের ওয়ারিশ, আর নবীরা কাউকে স্বর্ণ-রুপার ওয়ারিশ বানাননি। তাঁরা ইলমের ওয়ারিশ বানিয়েছেন।’ সুতরাং ওহির শাশ্বত জ্ঞান নবীদের কাছে আসার পর তাঁদের যে দায়িত্ব ছিল, কিয়ামত পর্যন্ত আলেমদের ওপর সেই একই দায়িত্ব অর্পিত। আম্বিয়ায়ে কেরাম যেভাবে মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছেন, উলামায়ে কিরামের ও একইভাবে মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেবেন।

হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের কাছ থেকে ইলম ছিনিয়ে নেবেন না; কিন্তু তিনি ওলামায়ে কেরামকে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ইলমও উঠিয়ে নেবেন। এভাবে যখন কোনো আলেম অবশিষ্ট থাকবে না তখন মানুষ কিছু মূর্খ লোকের শরণাপন্ন হবে। অতঃপর ধর্মীয় বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করা হবে, তারা ইলম ছাড়াই ফতোয়া দেবে। এর ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে এবং মানুষকেও গোমরাহ করবে। (সহিহ বুখারি ১/২০; সহিহ মুসলিম ২/৩৪০; জামে তিরমিজি ২/৯৩-৯৪) সুতরাং তাবলিগ জামাতের নেতৃত্বে ওলামায়ে কেরামের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব কতটুকু তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রব্বে কারিম আমাদের সকলকে উলামায়ে কিরামের দিক নির্দেশনায় হিদায়াতের পথে নিজে চলে, অন্যকেও আহ্বান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলূম, তালতলা মোমেনশাহী।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শুক্রবার হজে যাচ্ছেন ৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশি
ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নেপথ্যকথা
মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর বর্ণাঢ্য জীবন
‘মহান আল্লাহর নিদর্শন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য’
রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর আখলাক
আরও
X
  

আরও পড়ুন

ফরিদপুরে পদ্মার বিশ কেজি ওজনের কাতলা মাছ বিশ হাজার টাকায় বিক্রি

ফরিদপুরে পদ্মার বিশ কেজি ওজনের কাতলা মাছ বিশ হাজার টাকায় বিক্রি

অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে: আসিফ নজরুল

অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে: আসিফ নজরুল

ঈদুল আজহায় যে শর্তে ১০ দিনের ছুটি, জানালেন প্রেসসচিব

ঈদুল আজহায় যে শর্তে ১০ দিনের ছুটি, জানালেন প্রেসসচিব

দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানালেন খালেদা জিয়া

দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানালেন খালেদা জিয়া

টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একজন নিহত

টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একজন নিহত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা একাডেমিক শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা একাডেমিক শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

সাকিব-তামিমকে চেনেন নেইমার!

সাকিব-তামিমকে চেনেন নেইমার!

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ভুট্টা চাষে চাষীদের সাফল্য ১৪০ কোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ভুট্টা চাষে চাষীদের সাফল্য ১৪০ কোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদন

একইদিনে চারদেশে হামলা ইহুদীদের

একইদিনে চারদেশে হামলা ইহুদীদের

কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে দুই ছাত্রীসহ তিনজনের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে দুই ছাত্রীসহ তিনজনের মৃত্যু

বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধানের সম্পদ জব্দের নির্দেশ, ৬ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধানের সম্পদ জব্দের নির্দেশ, ৬ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল ৩৭% পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল ৩৭% পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

লক্ষ্মীপুর শহরে ওভারব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার

লক্ষ্মীপুর শহরে ওভারব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নষ্ট হচ্ছে ১৫৩কোটি টাকার মেশিনারি

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নষ্ট হচ্ছে ১৫৩কোটি টাকার মেশিনারি

খালেদা জিয়া কখনো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোস করেননি: কাদের গনি

খালেদা জিয়া কখনো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোস করেননি: কাদের গনি

পাকুন্দিয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ২ ছাত্রী নিহত,  ১জন আহত

পাকুন্দিয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ২ ছাত্রী নিহত, ১জন আহত

ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকাল নাটোর পৌরবাসি

ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকাল নাটোর পৌরবাসি

গোয়ালন্দে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা

গোয়ালন্দে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা

চান্দিনায় ন্যায্যমূল্যের  পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে   কে এম জামাল হোসেন এর বিরুদ্ধে

চান্দিনায় ন্যায্যমূল্যের  পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে   কে এম জামাল হোসেন এর বিরুদ্ধে

পাবিপ্রবির ছাত্র হল-১ এর প্রভোস্ট হলেন ড. শাহজাহান আলী

পাবিপ্রবির ছাত্র হল-১ এর প্রভোস্ট হলেন ড. শাহজাহান আলী