প্রশ্ন: রোজা ও মাসআলা সম্পর্কে জানতে চাই?

Daily Inqilab ইনকিলাব

২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম

উত্তর: যেসব কারণে রামাদানে রোযা না রাখার অনুমতি আছে :
(১) রোগের কারণে রোযা পালনের শক্তি না থাকলে, অথবা রোগ বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা হলে রোযা না রাখা জায়েয; তবে পরবর্তিতে কাযা করা জরুরী হবে।
(২) যে নারী গর্ভধারন অবস্থায় আছে এবং রোযা রাখতে গেলে গর্ভস্থিত শিশুর বা নিজের প্রাণের ক্ষতির প্রবল আশঙ্কা থাকে; সেক্ষেত্রে রোযা না রেখে পরবর্তিতে কাযা করে নিতে পারবে।
(৩) যে নারী নিজের বা অন্য কারও শিশুকে দুধ পান করায়; এমতাবস্থায় যদি রোযার কারণে শিশু দুধ না পায়, কষ্ট হয়; তা হলে সেক্ষেত্রে রোযা না রেখে পরে কাযা করে নিবে।
(৪) শরীয়তসম্মত মুসাফির যিনি নূন্যতম ৮৮ কিলোমিটার দূরত্ব সফরের নিয়তে বের হবেন তাঁর জন্যও রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তারপরও, সফর যদি কষ্টের না হয় তা হলে সেক্ষেত্রে রোযা রাখাই তাঁর জন্য উত্তম। কিন্তু যেক্ষেত্রে নিজের বা সফরসঙ্গীদের কষ্ট হতে পারে, সেক্ষেত্রে রোযা না রাখাই উত্তম।
(৫) রোযা রেখে সফর শুরু করলে, সেক্ষেত্রে রোযাটি পূর্ণ করাই জরুরী। সফররত অবস্থায় পানাহার করে দিনের বেলায় বাড়িতে বা নিজ ঠিকানায় পৌঁছলে, দিনের অবশিষ্ট সময় পানাহার না করাই সমীচীন। যদি এমন হয় যে, এখনও কোন কিছু পানাহার করা হয়নি; আর এমতাবস্থায় বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে যে, তখনও রোযার নিয়তের সময় বাকী থাকে; সেক্ষেত্রে তাঁর জন্য রোযার নিয়ত করে নেয়া জরুরী।
(৬) কাউকে যদি হত্যা করার হুমকি দিয়ে রোযা ভাঙ্গতে বাধ্য করা হয়; তার পক্ষে রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয ; তবে পরে তা কাযা করে নেবে।
(৭) কোন রোগের কারণে বা ক্ষুৎ-পিপাসার প্রাধান্য যদি এমন পর্যায়ের হয় যে, একজন বিজ্ঞ ও ধার্মিক মুসলমান চিকিৎসকের মতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রাণের আশঙ্কা দেখা দেয়; সেক্ষেত্রে রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয ; এমনকি জরুরীও বটে। অবশ্য পরে তা কাযা করে নেবে।
(৮) নারীদের জন্য মাসিক ঋতু¯্রাব চলাকালীন এবং সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর প্রসূতি অবস্থায় রোযা রাখা জায়েয নয়; পরবর্তিতে তা কাযা করে নিতে হবে। রোগী, মুসাফির, হায়েয ও নেফাসগ্রস্ত নারী, যাদের জন্য রামাদানে রোযা না রাখা ও পানাহার করা জায়েয; তাদের পক্ষেও মাহে রামাদানের সম্মান বজায় রাখা আবশ্যক। যে কারণে তাঁরাও প্রকাশ্যে সবার সামনে পানাহার করতে যাবেন না।
রোযার কাযা : (১) কোন ওযরবশত রোযা কাযা হয়ে গেলে, যখন ওযর দফা হয়ে যায় তখন আর বিলম্ব না করে ওই রোযা কাযা করে নেয়া চাই। জীবনের যেমন কোন ভরসা নেই, তেমনি শক্তি-সামর্থ ও সুস্থতারও কোন বিশ্বাস নেই। কাযা রোযার ক্ষেত্রে যেমন একাধারে তা পালনের এখতিয়ার থাকে, তেমনি ২/১টি করে পৃথক পৃথকও রাখার এখতিয়ার আছে। (২) মুসাফির সফর থেকে ফিরে আসার পর অথবা অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর যদি এটুকু সময় না পায়, যাতে কাযা রোযাগুলো আদায় করতে পারে; সেক্ষেত্রে ওই রোযার কাযা তার ওপর আবশ্যক হয় না। অর্থাৎ ফিদিয়া আদায় জরুরী হয় না। তবে সফর থেকে ফিরে আসার পর অথবা সুস্থ হওয়ার পর যে কয়দিন সুযোগ পেয়েছিলেন অথচ কাযা আদায় করেননি, সে কয়দিনের কাযা তাঁর ওপর আবশ্যক হিসাবে বর্তাবে এবং ইতোমধ্যে মারা গেলে ওই কয়দিনের ফিদিয়াও তাঁর ওপর আবশ্যক হবে।
সাহরী : রোযা পালনকারীর জন্য শেষরাতে সুবহে সাদেকের পূর্বে সাহরী খাওয়া একটি সুন্নাত আমল, সওয়াব প্রাপ্তির উপায় ও বরকতপূর্ণ কাজ। অর্ধ-রাতের পরে যখনই কিছু খেয়ে নিবে, সাহরির সুন্নাত পালিত হয়ে যাবে। তবে একেবারে শেষরাতের দিকে সাহরী খাওয়া অধিক উত্তম। মুয়াযযিন যদি ভুলবশত সাহরির শেষ সময়ের পূর্বে আযান দিয়ে বসেন, তাতে সাহরী খাওয়া নিষেধ হয়ে যায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত সুবহে সাদেক না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সাহরী খেয়ে মনে মনে রোযার নিয়ত করে নিলেই, রোযা সহীহ হওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। আর তার পাশাপাশি মুখেও যদি এমন কোন বাক্য উচ্চারণ করে যাতে রোযার নিয়ত বোঝা যায় ; তা-ও ভালো।

উত্তর দিচ্ছেন: মুফতী মো: আবদুল্লাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন (গবেষণা বিভাগ)।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আজ আদালতে যাবেন ড. ইউনূস

আজ আদালতে যাবেন ড. ইউনূস

জেড এ খাঁনের দাফন আজ বাদ জোহর

জেড এ খাঁনের দাফন আজ বাদ জোহর

পঞ্চগড়ে পরপর দু'দিন একই গ্রামে গরু চুরি- আতঙ্কে এলাকাবাসী

পঞ্চগড়ে পরপর দু'দিন একই গ্রামে গরু চুরি- আতঙ্কে এলাকাবাসী

রাজবাড়ীতে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত, ট্রেন চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ীতে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত, ট্রেন চলাচল বন্ধ

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার সতর্কতা

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার সতর্কতা

চীনের বিশাল ঋণের বোঝা বিশ্বের ২০ দেশের মাথায়

চীনের বিশাল ঋণের বোঝা বিশ্বের ২০ দেশের মাথায়

বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন

বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন

প্রবাসীকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল ৫ জনের

প্রবাসীকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে প্রাণ গেল ৫ জনের

যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ, ‘ভয়াবহ’ সহিংসতা

যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ, ‘ভয়াবহ’ সহিংসতা

বিশ্বকাপে নতুন নেতৃত্বে খেলবে ওমান

বিশ্বকাপে নতুন নেতৃত্বে খেলবে ওমান

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের সময় পেছাল

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের সময় পেছাল

এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা আজ

এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা আজ

এবার চাঁদে যাচ্ছে পাকিস্তানও, যাত্রা শুরু শুক্রবার

এবার চাঁদে যাচ্ছে পাকিস্তানও, যাত্রা শুরু শুক্রবার

গ্রেপ্তার ও সহিংসতার মাঝেই চলছে যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ

গ্রেপ্তার ও সহিংসতার মাঝেই চলছে যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ

এবার রেলমন্ত্রীর ছেলেকে সতর্ক করে চিঠি দিলো ইসি

এবার রেলমন্ত্রীর ছেলেকে সতর্ক করে চিঠি দিলো ইসি

চাঁদপুরে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের আমদানি বেড়েছে : দাম নাগালের বাইরে

চাঁদপুরে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের আমদানি বেড়েছে : দাম নাগালের বাইরে

অভিজ্ঞদের নিয়েই নেপালের বিশ্বকাপ দল

অভিজ্ঞদের নিয়েই নেপালের বিশ্বকাপ দল

মহাকাশে ধুন্ধুমার, দুই ছায়াপথের লাখ লাখ সূর্যের সংঘর্ষে বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

মহাকাশে ধুন্ধুমার, দুই ছায়াপথের লাখ লাখ সূর্যের সংঘর্ষে বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

ইউরোয় কোর্তোয়াকে দেখছেন না বেলজিয়ান কোচ

ইউরোয় কোর্তোয়াকে দেখছেন না বেলজিয়ান কোচ

নিলামে উঠছে বিখ্যাত ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’

নিলামে উঠছে বিখ্যাত ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’