মহানবির দশটি বৈশিষ্ট্য
২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম
মানব জন্মের সূচনা হতে নিয়ে সমাপ্তি পর্যন্ত যত মানুষ পৃথিবীতে আগমন করেছেন, করছেন ও করবেন তাদের সকলের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব, মাহাত্ম্য, পূর্ণতা, সফলতা, মহানুভবতা, গুণ, বৈশিষ্ট্য ও মান-মর্যাদার বিবেচনায় মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে এমন কতিপয় গুণ ও বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যম-িত করেছিলেন যেগুলোর মাধ্যমে তিনি স্বতন্ত্র মর্যাদায় উন্নীত হয়ে মানবজাতির সকলকে ছাড়িয়ে গিয়ে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ও বিশেষণে বিশেষিত করেছিলেন যেগুলো ইহ ও পরকালে অন্যসব নবি রাসুলের উপর তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের জানান দেয়। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন কতিপয় বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যম-িত করা হয়েছিলো যেগুলোর মাধ্যমে তিনি অন্য সব নবি, রাসুল ও মানুষের উপর স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করেছিলেন। আমরা এখানে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশটি অনন্য বৈশিষ্ট্য তুলে ধরছি।
ঈমান আনয়ন ও সাহায্যের অঙ্গীকার গ্রহণ: হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত যত নবি ও রাসুল পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন তাদের সকলের কাছ থেকে আল্লাহ তাআলা এই মর্মে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তোমাদের জীবদ্দশায় যদি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে আগমন করেন, তাহলে তোমরা তার প্রতি ঈমান আনয়ন করবে ও তাকে সাহায্য করবে। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কোন নবি ও রাসুলের প্রতি ঈমান আনয়ন ও তাকে সাহায্য করণের জন্য নবি-রাসুলগণের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয় নি। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ঈমান আনয়ন ও তাকে সাহায্য করণের প্রতিশ্রুতি গ্রহণের ব্যাপারে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‹আর আল্লাহ যখন নবিগণের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান, অতঃপর তোমাদের নিকট কোন রাসুল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্য বলে দেওয়ার জন্য, তখন সে রাসুলের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে ও তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, ‘তোমার কি অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছো? তারা বললো, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি’। তিনি বললেন, তাহলে এবার সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।› (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮১)
চিরন্তন মুজেজা আলকুরআন প্রদান: মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্বে যত নবি ও রাসুল আগমন করেছিলেন তাদের সকলের মাধ্যমেই মুজেজা (অভ্যাস পরিপন্থী অলৌকিক বিষয়) প্রকাশ পেয়েছিল। তবে সেসব মুজেজা ছিল ক্ষণিকের ও অল্প সময়ের। কিন্তু বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিরন্তন মুজেজা আল কুরআন প্রদান করা হয়েছে। এই মুজেজা চিরকালের ও দীর্ঘ সময়ের। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করে একে সংরক্ষণ করার দায়িত্ব নিজের জিম্মায় নিয়েছেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্বে আগমনকারী নবি ও রাসুলগণের উপর যেসব ধর্মগ্রন্থ অবতীর্ণ হয়েছিল সেগুলো বিকৃত, পরিবর্তিত ও রহিত হয়ে গিয়েছে। মানুষের পক্ষ থেকে সেগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হ্রাস ও বর্ধন ঘটানো হয়েছে। সেসব আসমানি কিতাবে নানা প্রকার বাতিল বিষয় অনুপ্রবেশ করেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেগুলোর আবেদন হারিয়ে গিয়েছে। কার্যকরিতা লোপ পেয়েছে। কেননা সেসব কিতাব সংরক্ষণ করার দায়িত্ব মহান আল্লাহ নিজের জিম্মায় নেন নি। কিন্তু মহাগ্রন্থ আল কুরআনকে সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা নিজের স্কন্ধে নিয়েছেন। এ মর্মে কুরআন শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‹আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।› (সূরা হিজর, আয়াত : ০৯)
বিশ্ববাসীর রাসুল: মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য যত নবি ও রাসুল পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন তারা সবাই নির্দিষ্ট কোন জাতি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে সত্যের পথ প্রদর্শন করার জন্য আগমন করেছিলেন। তাদের নবুয়ত ও রিসালত বিশেষ কোন জাতি ও সম্প্রদায়ের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ধরাপৃষ্ঠে নির্ধারিত কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে ইসলামের পথ প্রদর্শন করার জন্য প্রেরিত হন নি। বরং তার নবুয়তকাল থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত যত জাতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় পৃথিবীতে আগমন করবে, যত মানুষ ও জিন জন্মগ্রহণ করবে তিনি তাদের সকলের নবি ও রাসুল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‹আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।› (সুরা সাবা, আয়াত : ২৮) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‹আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।› (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭) মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কোন নবি বা রাসুল সমগ্র বিশ্বের জিন ও মানুষের নবি ও রাসুল ছিলেন না। একটি হাদিসে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্যের একটি হলো আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদা ও কালো নির্বিশেষে বিশ্ববাসী সকলের রাসুল। হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আল আনসারি রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে এমন পাঁচটি বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে যা অন্য কোন নবিকে প্রদান করা হয়নি। প্রত্যেক নবিকে শুধু তার স্বজাতির জন্য পাঠানো হতো। কিন্তু আমাকে সাদা ও কালো সবার জন্য নবি করে পাঠানো হয়েছে। আমার জন্য যুদ্ধলব্ধ অর্থ-সম্পদ হালাল করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার পূর্বে আর কারো জন্য তা হালাল ছিল না। আমার জন্য গোটা পৃথিবী পাক, পবিত্র ও মসজিদ করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং নামাজের সময় হলে যে কোন লোক যে কোন স্থানে নামাজ আদায় করে নিতে পারে। আমাকে এক মাসের পথের দূরত্ব পর্যন্ত অত্যন্ত শান শওকত সহকারে সাহায্য করা হয়েছে। আর আমাকে শাফাআতের সুযোগ দান করা হয়েছে।› (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৫০)
আল্লাহর দরবারে নিমন্ত্রণ: পৃথিবীতে যত নবি ও রাসুল শুভাগমন করেছেন তাদের মধ্য হতে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহ তাআলা নিজের দরবারে আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মানিত করেন নি। কিন্তু কেবল মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরই অনন্য বৈশিষ্ট্য যে, আল্লাহ তাআলা তাকে আপন দরবারে নিমন্ত্রণ জানিয়ে নিজের নিদর্শনাবলি দেখিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। বড় কোন রাজা, বাদশাহ বা উচ্চতম পদ পদবীর অধিকারী কোন অভিজাত সত্তার দরবারে নিমন্ত্রিত হয়ে গমন করা নিশ্চয়ই সম্মানজনক ও গৌরবপূর্ণ। আর মহাপরাক্রমশালী, শাহানশাহ ও রাজাধিরাজ আল্লাহ তাআলার দরবারে যদি কেউ আহূত হয়, তাহলে তা কত সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ তা ভাবতেও পুলক লাগে। এই মহা গৌরবের শিরোমুকুট কেবল মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই পরিধান করেছিলেন। ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করার প্রাক্কালে তিনি বাইতুল মুকাদ্দাস তথা মসজিদে আকসায় সকল নবি ও রাসুলের ইমামতি করেছিলেন। এরপর ঊর্ধ্বজগৎ ভ্রমণ করার সময় সপ্তাকাশ স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই ঐতিহাসিক ভ্রমণ প্রসঙ্গে আল কুরআনে এসেছে, ‹পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।› (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ০১) বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার মহামহিম দরবারে নিমন্ত্রিত হয়ে জান্নাত, জাহান্নাম, সিদরাতুল মুনতাহা, আরশে আজিম ও লৌহ কলমসহ আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর সব নিদর্শনাবলি অবলোকন করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‹নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল, সিদরাতুল মুন্তাহার নিকটে, যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত। যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার, তদ্দ¡ারা আচ্ছন্ন ছিল। তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি। নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলি অবলোকন করেছে।› (সুরা নাজম, আয়াত : ১৩-১৮) (চলবে)
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা-১২১১।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন