‘রমযান মাস তো সে মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে’
২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম
রমযার মাস,আল কোরআন নাজিলের মাস। এ মাস তাকওয়ার মাস।এরশাদ হচ্ছে-‘হে ইমাদারগণ!তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে,যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পুর্ববতী নবীর উম্মতের উপর। আশা করা যায় তোমাদের মাঝে তাকওয়ার গুন ও বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হবে’। (সুরা বাকারা-১৮৩)। রোজা একটি ফরজ ইবাদত।ইহা পালন করা ফরজ। এরশাদ হচ্ছে,‘ যাদের কাছে রোজার মাস উপস্থিত হবে,তারাই রোজা পালন করবে’।রোজাকে অস্বীকার বা অবহেলা কারী কাফের।একজন মুসলমানের ইমানী দায়ীত্ব হচ্ছে রমজান মাসে রোজা পালন করা। রোজা পালন করলেই তাকওয়ার গুন অর্জন করা না। তাকওয়া অর্জনের জন্য খোদা ভীতি,মহান আল্লাহ তাআলার নাফরমানি,অবাধ্যতা থেকে নিজেকে বেঁচে রাখ।অন্তরে আল্লাহ ভীতি জাগ্রত রাখা। যা মোমেন বান্দার জন্য একান্ত ভাবে কাম্য।
মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে সর্ব শ্রেষ্ঠ্য জাতি হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরন করেন। মানুষকে পরিচালনার জন্য মহা গ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করেন। কোরআন হচ্ছে, সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।পার্থক্যে পরিমাপের মাপ কাটি । এরশাদ হচ্ছে- ‘রমযান মাস তো সে মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। আর এ কোরআন হচ্ছে মানব জাতির জন্য পথের দিশা। মানুষের জন্য সত্য মিথ্যার পার্থক্য কারী’।(সুরা বাকারাহ-১৮৫)। মহান আল্লাহ তাআলা সব সহিফা এবং বড় বড় চারি খানা আসমানি কিতাব রমজান মাসে নাজিল করেন। পবিত্র হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে,‘হযরত ইব্রাহিম (আ) এর উপর সহিফা রমজানের ১লা তারিখে,হযরত মুসা (আ) এর উপর তাওরাত শরীফ রমজানের ৬ তারিখে,হযরত দাউদ (আ) এর উপন যাবুর শরীফ রমজানের ১২ তারিখে, হযরত ঈসা (আ) এর উপর ইজ্ঞিল শরীফ রমজানের ১৮ তারিখে এবং সব শেষ মহা গ্রন্থ আল কোরআন শরীফ বিশ^ নবী (দ) এর উপর রমযান মাসের কদরের রাতে নাজিল করা হয়েছে’। প্রত্যেক বনি আদমের ভালো কাজের প্রতিদান দশগুন থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়।এরশাদ হচ্ছে,‘আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত রাসুল (দ) বলেছেন,বনী আদমের প্রত্যোক ভালো কাজের প্রতিদান দশগুন থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,তবে সওম ছাড়্ াযেহেতু তা কেমল আমার জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।কেননা একজন সওমকারী তার প্রবৃত্তিকে আমার জন্য নিবৃদ্ধ রেখেছে এবং খানাপিনা থেকেও বিরত থেকেছে। রোজাদারের জন্য রয়েছে দু’টো মুহুত। ১.যখন সে ইফতার করে। ২. যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাত করেবে। রোজাদারের মুখের গন্ধ মহান আল্লাহর নিকট মিশকে আম্বরের চেয়েও অধিক সুগন্ধি যুক্ত। প্রকৃতপক্ষে সিয়াম ঢাল স্বরুপ। সুতুরায় তোমাদের কেউ যখন রোজার দিনে সওম রাখবে তখন যেন যৌন মিলন না করে,অশ্লীল বাক্যলাপও না করে। তবে যদি কেউ তোমাদের কোন রেজাদারের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয় বা ঝগড়া বাধিয়ে দেয়,তখন যেন বলে দেয় যে,আমি একজন রোজাদার’।(বুখারী)।
রমযান মাস, মোমেন বান্দার জন্য মহা নিয়ামত।তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন.হে আল্লাহ,বাতিল ছেড়ে সত্য পথের দিশা দেখাও। এরশাদ হচ্ছে-‘হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে সরল সঠিক পথের দিশা দাও’। (সুরা ফাতিহা)্।তার জবাবে আল্লাহ বলেন,‘আলিফ লাম মিম!এটা সেই কিতাব,তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এটি মুত্তাকি লোকদের পথ দেখাবে’।(সুরা বাকারা১-২)। মহান আল্লাহ তাআলা আল কোরআনের মাধ্যমে মুত্তাকি বান্দার পুরুস্কার ঘোষনা করেন।এরশাদ হচ্ছে,‘নিশ্চয় যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং যারা সৎকর্ম পরায়ন,আল্লাহ তাদের সঙ্গে রয়েছেন’।‘নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদেরকে ভালোবাসেন’। ‘যে আল্লাহকে ভয় করে,আল্লাহ তার পাপ মার্জন করবেন এবং তাকে দেবেন মহা পুরুস্কার’।‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারনাতীত উৎস থেকে জীবিকা দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’।‘যদি তোমরা ধৈর্য ধারন করো এবং আল্লাহকে ভয় করো। তাদের ষড় যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করতো তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে,তার দরজা গুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদের বলবে,তোমাদের প্রতি সালাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করো, স্থায়ী ভাবে অবস্থানের জন্য”। হাদীসে কুরসিতে আল্লাহ বলেন,‘রোজা আমার জন্য,আমি নিজে তার পুরুস্কার দিব’। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্নিত হযরত রাসুল (দ) বলেন, সিয়াম এবং কোরআন বান্দার জন্য কিয়ামতের দিবসে সুপারিশকারী হবে,সিয়াম বলবে,হে প্রভু আমি তাকে দিনের বেলা খাওয়া এবং প্রবৃত্তির তাড়না থেকে নিবৃত্ত রেখেছি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহন করুন। কোরআন বলবে,আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি,তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন,আল্লাহ বলবেন,তাদের সুপারিশ গ্রহন করা হলো’।‘যে রমজানের ইমান এবং এহতেসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে,আল্লাহ তার পুর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন’।(বুখারী-মুসলিম)।
রোজা মানুষের পাপ রাশিেেক জ¦ালিয়ে একজন খাটি মানুষ হিসাবে তৈরী করে। রাত জেগে আল কোরআন তেলাওয়াত,আল্লাহর নিয়ামত ও অসংখ্য নেকী অর্জন করার মাস। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘আর এ কুরআন হচ্ছে মানব জাতির জন্য পথের দিশা। মানুষের জন্য হক-বাতিলে পার্থক্য কারী’। আধুনিক সভ্যতা,সংস্কৃতিকে আকড়ে ধরেছি। যা দুনিয়ার জীবনে শেষ। পরকালের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আল্লাহ তাআলা কোরআনের প্রতিষ্ঠানিক রুপদানেবান্দার প্রতি রোজা ফরজ করেন। আমরা নামাজ,রোজা,যাকাত,হজ্জ ইত্যাদি ইবাদত করি।এরশাদ হচ্ছে,‘নিশ্চয় নামাজ খারাপ ও অশ্লুীল কাজ থেকে বিরত রাখে’। আমরা,সঠিক পথের সন্ধ্যান পাচ্ছি না। আল কোরআন অধ্যায়ন ও রোজা পালনের মাধ্যমে মুত্তাকি হতে পারছি না।আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত হযরত রাসুল (দ) বলেন,যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুয়ায়ী আমল বর্জন করতে পারে নি,তার খাওয়া ও পান করা পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজনে নেই। (বুখারী)। হযরত রাসুল (দ) বলেন,কত রোজাদার আছে,যাদের সওমের বিনিময়ে ক্ষুদা ছাড়া আর কিছুই জোটে না।(মসনদে আহমদ)।মোট কথা আমাদেরকে মিথ্যা কথা,গীবত,অপবাদ,পাপাচার,পরনিন্দা এবং অন্যায় কাজ কর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। সওমের মাধ্যমে ক্ষমা পেতে হলে,সওম হতে হবে পাপমুক্ত। শুধু মাত্র পানাহার ত্যাগ আর গুনাহের কাজ না ছাড়লে কোন ভাবেই সওম পালন কওে মুক্তাকি হওয়া যাবে না।
মাহে রমযান বরকত,রহমত ও নাজাতের মাস। আমরা হালাল,হারাম,ন্যায়-অন্যায়,সত্য-মিথ্যাসহ যাবতীয় বিধানাবলি যথাযথ ভাবে পালন করি। বিশ^ নবী (দ) অন্ধকার যুগে জাহিলিয়াত,পাশবিকতা ও হিং¯্রতা,শিরক, পৌত্তলিকতা ও অমানবিকতায় ভরা অন্ধাকার সমাজকে দুর করে সোনালি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেন। সে সমাজে উদয়মান সুর্য্যরে দীপ্ত আলোয় বিশ^ হলো আলোকিত।বিশ^ নবী (দ) বলেন,‘সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ হলো আমার যুগ’। এরশাদ হচ্ছে,‘আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্ব্বত মালার সামনে এ আমানত(আল কোরআনের তথা খেলাফতের দায়ীত্ব)পেশ করলাম। কিন্তু তারা তা গ্রহন করতে প্রস্তুত হলো না। তারা ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু মানুষ তার স্কন্ধে তুলে নিল।’(সুরা আহযাব)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,‘ইয়াসিন,জ্ঞান গর্বময় কোরআনের শপথ,তুমি অবশ্যই রাসুলদের একজন।নিঃসন্দেহে তুমি সরল পথের উপর (প্রতিষ্ঠিত) রয়েছ। পরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকেই কোরআন অবর্তীনা’।(সুরা ইয়াসিন)। আল কোরআনের জ¦লন্ত আগুন,মানুষকে পুড়িয়ে সোনার মানুষে পরিনত করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহনের পুর্বে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) বিশ^ নবী (দ) কে হত্যা করার জন্য ঝড়ের বেগে ছুটছে। কিন্তু আল কোরানের র্স্পশে ওমরের হৃদয়ে পরিবর্তন আসে। তারপর,তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হলেন।আসুন,আমরা রোজার তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করি। আল কোরআনের জ্ঞানে নিজেকে আকড়ে ধরি। এই হোক সবার প্রত্যাশা।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গ্রন্থকার, পঞ্চগড় নুরুন আলা নুর কামিল মাত্রাসা, পঞ্চগড় ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন