প্রশ্ন: রোজা ও মাসআলা সম্পর্কে জানতে চাই?
২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম
উত্তর: ইফতারী : সূর্য ডুবে গেছে মর্মে নিশ্চিতভাবে জানার পরও ইফতার করতে বিলম্ব করা মাকরূহ। তবে হ্যাঁ, মেঘ-বৃষ্টি ইত্যাদির দরুন যদি সংশয় জাগে, সেক্ষেত্রে ২/৪ মিনিট বিলম্ব করাই উত্তম। তা ছাড়া, সাহরী, ইফতার ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিন মিনিটের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ সর্বক্ষেত্রেই থাকা চাই।
খেজুর ও খোরমা দ্বারা ইফতর করা উত্তম। অন্য কিছু দ্বারা ইফতার করলে তাতেও কোন ক্ষতি বা মাকরূহ হওয়ার কিছু নেই। ইফতারকালীন এই দু‘আ পাঠ করা সুন্নাতÑ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ্ আপনারই জন্যে রোযা পালন করেছি এবং আপনারই প্রদত্ত রিযিক দ্বারা ইফতার করছি’ ; এবং ইফতার শেষে এই দু‘আ পড়া ভালোÑঅর্থাৎ ‘বিদূরিত হল পিপাসা, রগ-রেশা সব সজীব-সতেজ হল এবং ইনশাআল্লাহ্ আজর-সওয়াব নিশ্চিত হল’।
তা ছাড়া, ইফতার পূর্ববর্তী সময়ে যখন একাকী বা যৌথ দু‘আ, দুরূদ ও ইস্তেগফার ইত্যাদি পাঠ করা হয় তখন এই দু’টি দু‘আও বেশী বেশী পাঠ করা যেতে পারেÑ অর্থাৎ ‘হে বিশাল অনুগ্রহ-দয়া’র মালিক! আমায় ক্ষমা করে দিন!’ অথবা এটিও পাঠ করা যেতে পারেÑ
‘অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার পাপের পরিধির চেয়ে আপনার ক্ষমার পরিধি অনেক বেশী প্রশস্ত-সীমাহীন এবং আমার আমলের চেয়ে আমি আপনার রহমতের অনেক বেশী প্রত্যাশী’।
তারাবীহ : (১) মাহে রামাদানে এশা’র সালাতের ফরয ও দু’রাকাত সুন্নাতের পর বিশ (২০) রাকাত তারাবীহ নামায আদায় করা ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদা’।
(২) জামা‘আতের সঙ্গে তারাবীহ নামায আদায় করা ‘সুন্নাতে কিফায়া’। পাড়া- মহল্লার মসজিদে যদি জামাতের সঙ্গে তারাবীর জামাত হয় আর কোন ব্যক্তি নিজগৃহে একাকী তারাবীহ পড়ে নেয়, তাতেও তার তরাবরি সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে; তবে সে জামাতে পড়ার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। কিন্তু যদি মহল্লায় জামাত না হয় তা হলে সকলেই সুন্নাত পরিহারের পাপে পাপী বলে গণ্য হবেন।
(৩) তারাবীর মধ্যে পুরো ত্রিশ পারা কুরআন পাঠ করাও আরেকটি পৃথক সুন্নাত। কোন পাড়া-মহল্লায় যদি হাফেয পাওয়া না যায়; অথবা পাওয়া গেলেও সেই হাফেয শর্ত-সাপেক্ষে ও সুনির্দিষ্ট পারিশ্রমিক ব্যতীত তারাবীহ পড়াতে সম্মত না হলে, সেক্ষেত্রে ছোট ছোট সূরা দ্বারাই তারাবীহ নামায আদায় করে নিতে হবে। খতমে তারাবীহ প্রশ্নে পারিশ্রমিক বা হাদিয়া ইত্যাদি বিতর্কের বাড়াবাড়িমুক্ত সমাধানকেন্দ্রিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতির পৃথক গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনে সেটি দেখা যেতে পারে।
(৪) কোন হাফেয যদি এক মসজিদে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়িয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে একই রাতে অন্য মসজিদে আবার তারাবীহ পড়ানো জায়েয নেই।
(৫) কারও যদি ২/৪ রাকাত তারাবীহ ছুটে যায়, সেক্ষেত্রে ইমাম যখন বিতির এর জামাত পড়ান তখন ওই ব্যক্তিরও ইমামের সঙ্গে বিতির পড়া চাই। নিজের বকেয়া ওই কয় রাকাত পরে পড়ে নিতে পারবেন।
(৬) পবিত্র কুরআনকে এত দ্রুত পাঠ করা, যে কারণে কোন শব্দ বা হরফ বাদ পড়ে যায় Ñতা পাপের মধ্যে গণ্য। সেক্ষেত্রে ইমাম ও মুক্তাদী উভয়েই সওয়াব হতে বঞ্চিত হবেন।
(৭) জুমহুর আলেমগণের গবেষণামূলক চূড়ান্ত ফাতওয়া হল, নাবালককে তারাবীর জামাতের ইমাম বানানো জায়েয নয়।
ই‘তিকাফ : (১) ই‘তিকাফ মানে অবস্থান করা। ইবাদতের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করাকেই ‘ই‘তিকাফ’ বলা হয়। ই‘তিকাফরত অবস্থায় এমন সব প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে বাইরে বের হওয়া জায়েয নয়, যা মসজিদে সম্পাদন করা যায় না। যেমন মল-মুত্র ত্যাগ করার প্রয়োজন বা ওয়াজিব গোসলের প্রয়োজন বা উযূ ইত্যাদির প্রয়োজনে। অর্থাৎ কেবল এসব প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বাইরে বের হওয়া যাবে এবং প্রয়োজন শেষ করে তাৎক্ষণিক মসজিদে প্রবেশ করবে।
(২) মাহে রামাদানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করা ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া’ । অর্থাৎ শহরের পাড়া-মহল্লার বা গ্রামের কোন একজনও যদি ই‘তিকাফ না করে তা হলে সকলেই সুন্নাত পরিহারের পাপে গোনাহগার হবে। আর যদি কোন একজনে ই‘তিকাফ করে নেয় তা হলে সকলের পক্ষ থেকেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
(৩) ই‘তিকাফ অবস্থায় একেবারে চুপচাপ থাকা জরুরী নয় বরং তেমনটি মাকরূহ। অবশ্য বিভিন্ন নেক আমলের পাশাপাশি অবসর সময়ে ভালো কথা, সওয়াবের আলোচনা করা, নবী-রাসূল ও ওলী-আউলিয়াদের জীবনী বিষয়ে পরস্পর আলোচনা এবং তা‘লীমের মাধ্যমে সময় পার করা উচিত। তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া-বিবাদ ও অনর্থক বাক্যালাপ থেকে বেঁচে থাকা চাই।
(৪) ই‘তিকাফ অবস্থায় বিশেষ কোন ইবাদত করা শর্ত নয়; নামায, তিলাওয়াত বা ধর্মীয় বই-পুস্তক পাঠ, পড়ানো অথবা মনের চাহিদা মোতাবেক যে কোন ইবাদতই করা যেতে পারে।
(৫) যে মসজিদে ই‘তিকাফ করা হচ্ছে, তাতে যদি জুমু‘আর সালাত না হয়, তা হলে পার্শ্ববর্তী জামে মসজিদে জুমু‘আর উদ্দেশ্যে এমনভাবে অনুমান করে বের হবে যেন সেখানে গিয়ে সুন্নাত পড়া শেষ করে খোৎবা শোনা যায় । অবশ্য সেই জামে মসজিদে যদি কিছুটা বেশী সময় কেটে যায়, তাতেও ই‘তিকাফের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু পথিমধ্যে বা মসজিদের বাইরে যদি অনুমেদিত প্রয়োজন ছাড়া সামান্য সময়ও বিলম্ব করে তা হলে ই‘তিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
(৬) স্বভাবজাত প্রয়োজন ও শরীয়তসম্মত কোন প্রয়োজন ব্যতীত যদি সামান্য সময়ের জন্যও মসজিদ থেকে বাইরে চলে যায় অথবা প্রয়োজনে গিয়ে অপ্রয়োজনে বাইরে অবস্থান করে; তা হলে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে; হোক তা ভুলবশত বা ইচ্ছাকৃত। তেমনটি করলে ওই ই‘তিকাফ পরবর্তিতে কাযা করতে হবে।
(৭) মাহে রামাদান এর শেষ দশকের ই‘তিকাফ করতে চাইলে, সেক্ষেত্রে বিশ রামাদান দিনের শেষে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পূর্বেই মসজিদে ঢুকে পড়বে এবং যখন ঈদের চাঁদ দেখে নিবে বা বিধি মোতাবেক চাঁদ দেখার সংবাদ শুনবে, তখন ই‘তিকাফ থেকে বের হয়ে যাবে।
(৮) মূল বিধান মতে, জুমু‘আর গোসলের জন্য অথবা কেবল শীতলতা অর্জনের জন্য গোসল করলেও ই‘তিকাফ নষ্ট হয়ে যায়; তবে ব্যতিক্রম হিসাবে যদি গোসল না করলে, স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায় বা অস্ব¯িত লাগে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ আলেমগণের মতে, হয়তো মহান আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন। সুতরাং যথাসাধ্য সতর্কতা অবলম্বন করা চাই।
উত্তর দিচ্ছেন: মুফতী মোঃ আব্দুল্লাহ্, মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন (গবেষণা বিভাগ)।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাণীশংকৈলে ফিল্মি স্টাইলে দোকান চুরি, ১৮ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও চোর ধরতে ব্যর্থ পুলিশ
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের