তাকওয়ার রাজপথ
২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম
আদর্শ সমাজ বিনির্মানে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির কোন বিকল্প নেই। তাকওয়া নিয়ে ওয়াজ মাহফিলে, মসজিদ মাদ্রাসায়, আলেমগনের লেখনিতে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়। তাকওয়াহীন ইমান মরুভূমিতে বালির পাহাড়। এত কিছুর পর যেখানে তাকওয়ার গুনে গুনান্বিত মানুষ বেশি দেখার কথা। সেখানে তাকওয়া কোরআন হাদিসে আছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের সমাজে বাস্তব তাকওয়ার উপস্থিতি নেই বললে হয়তো বেশি বলা হবে না। তাকওয়া কথার কথায় পরিনত হয়েছে। মুসলমানদের যে তাকওয়া দেখে দলে দলে লোক ইসলামে দাখিল হয়েছে। এখন আমার তাকওয়া দেখে অন্য লোক মুসলমান হবে দুরের কথা আমার তাকওয়ায় একজন মুসলমানও আসস্ত হতে পারে না।
তাকওয়ার চেয়ে বড় পাহাড়াদার কারো জন্য কেউ নেই। একজন তাকওয়াবান পরিবার সমাজ রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় সম্পদ। একজন তাকওয়াবান কৃষক, একজন তাকওয়াবান শ্রমিক, একজন তাকওয়াবান কর্মকর্তা, একজন তাকওয়াবান সমাজপতি, একজন তাকওয়াবান সেনাপতি, একজন তাকওয়াবান ব্যবসায়ী, একজন তাকওয়ান রাষ্ট্র প্রধান মহান রবের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। তার দ্বারা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র শুধু উপকার আর উপকার পায়। আজকাল তাকওয়া শুধু আমাদের কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই কথার সীমা ছেড়ে যখন তাকওয়া জীবনের গন্ডিতে প্রবেশ করবে তখনই তার দ্বারা নিজে এবং অপরে উপকার লাভ করবে।
রমজান প্রতিবার আসে তাকওয়া পূর্ণ ব্যক্তি সমাজ গঠনের জন্য। কিন্তু এটা কাংখিত মানে অর্জিত হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, এটা নিয়ে চিন্তা করারও ফুসরত পাচ্ছি না। তাকওয়া অর্জন করার জন্য পরিকল্পনা, মেহনত, সময়দান কোনটাতেই আজ আমি নেই। ভাবছি এমনিতেই তাকওয়া চলে আসবে। আমরা জানি, বস্তু যত মূল্যবান, তাকে উপার্জন করা তত কঠিন। তাকওয়া মানব জীবনে, মহান রবের নিকট সবচেয়ে দামী চিজ। এটা অর্জন করাও অনেক কঠিন, অনেক চেষ্টা সাধনার ফল। তাকওয়ার স্থান হৃদয়ের অন্তপুরে। হৃদয়ে তাকওয়া লালন করলেই তা বাহ্যিকতায় প্রকাশ পায়। হৃদয়ে তাকওয়া না থাকলে শুধু পংকিলতা প্রকাশ পায়। আজ মনে মনে জনে জনে এত বিভেদ, এত হিংসা, এত অহংকার সব কিছুই হৃদয়ে তাকওয়ার অনুপস্থিতি।
তাকওয়ার সমাজ গঠনের রমজানের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ রমজানকে দেওয়াই হয়েছে তাকওয়ার জন্য। তাকওয়া অর্জনে সবচেয়ে বড় বাধা শয়তান। তাকওয়ার পথে আমাদেরকে যেন সে বাধা দিতে না পারে তার তাকে মহান রব বন্দি করে দেন। আমাকে শুধু যুদ্ধ করতে হয় একক ভাবে আমার নফসের বিরুদ্ধে। তাকেও আবার খানাপিনা না দিয়ে দুর্বল করে ফেলা হয়। আমাদের তাকওয়ার পথে বিজয় অর্জন করার জন্য শুধু প্রয়োজন কিছু পরিকল্পনা, কিছু চিন্তা ভাবনা, সে অনুযায়ী কিছু পরিশ্রম। কিছু জানা, পরিকল্পনা করা আর পরিশ্রম না করার কারনে বছরের পর আমাদের রোজা রাখা হচ্ছে। কিন্তু সফলতার মুখ দেখতে পারছি না।
কোরআন আমার জীবনের চলায় পাথেয়। আমি কোরআন নিয়ে ভাবাব সময় দেই না। অথচ প্রতিদিন মহান রব আমাকে চব্বিশটি ঘন্টা দান করেন। আবার সেকেন্ড মিন্টি ঘন্টা করে আমার কাছ থেকে নিয়ে নেন। এর মাধ্যমে তিনি আমাকে জানতে চান আমি এই সময় নামক হায়াতে কি কাজ করছি, কি করছি না। আমার সময় আমি কোন কাজে লাগাচ্ছি। ভাল কি খারাপ কাজে। অথবা অলস সময় পার করছি।
রমজান আমাদের খাওয়া কেন্দ্রিক আর কোরআন শুধু দোয়া খতম কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। রমজান আত্মসংযমের মাস, কোরআন জীবনের সংবিধান। কিন্তু রমজানে এতো বেশি খানাপিনা করি যে মাঝখানে দুপুরের খাবার না খাওয়ার কারনে শরীরে এর কোন প্রভাব পড়ে না। ক্ষুধা পিপাসার কাতরনা অনুভুত হয় না। অন্যদিকে কোরআন শুধু দোয়া খতম কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। শুধু সাওয়াবের আশায় কোরআন পড়া হয়। জানা আর মানা দুটোই অনুপস্থিত। এটা এমন যে কোরআনের কাছে আমার রোগের প্রেসক্রিপশন চাচ্ছি না। আর যেহেতু রোগের চিকিৎসায় ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি না। তাই ঔষধ সেবন করারও প্রশ্নই আসে না। দিন দিন আমার রোগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। তাকওয়ার পথ থেকে আমি দূরে আরো দূরে সরে যাচ্ছি। আমাদের সার্বিক সমাজ ব্যবস্থাও ঠিক একই রকম। আমরা যারা দ্বীনের কথা একটু আধটু বলি তারাও দুনিয়াকে পেতে এতো পেরেশান যে দুনিয়া পাওয়ার দৌড়ে আমরা সাধারণ জনগনকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছি। অল্প টাকায় আমাদের পেট ভরে না। অনেক অনেক টাকা চাই। তাকওয়ার লেবাস যেন টাকা কামানোর লেবাসে পরিনত হয়েছে। সত্যিই এভাবে কি তাকওয়া অর্জিত হবে। না তাকওয়ার সমাজ হবে! এই আফসোস আমি কোথায় করছি। যেখানে আমি নিজেও তাকওয়ার পথে পরিশ্রম করতে নারাজ। যে সে পথে কষ্ট, ধৈর্য্য, পরীক্ষা অনেক কিছুকে বরণ করে নিতে হয়।
তাকওয়ার এক মাথায় কষ্ট, সহিষ্ণুতা অপর মাথায় জান্নাত। তাকওয়ার ফলাফল দুনিয়াতে শান্তি, পেরেশানীহীন জীবন আর পরকালে জান্নাত সীমাহীন সুখ। অথচ আমরা চাই খুব সহজেই হালাল হারাম না বেছে, দুনিয়ার ভোগ বিলাশ, আরাম আয়েশ ভোগ করে আবার খুব সহজেই জান্নাতের আলা মাকাম লাভ করব। এটা কি করে সম্ভব! এটা কি কোন বাস্তবতা। তাকওয়ার রাজপথে চলতে চাই রাজকীয় চিন্তা, রাজকীয় পরিকল্পনা সেই অনুযায়ী শ্রম। তাহলেই জান্নাতের রাজপথে আমাদের স্বাগত জানানো হবে।
লেখক: কলামিষ্ট, শিক্ষাবিদ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটের অলিভিয়া মারা গেছেন
শাকিব খানের ঢাকা ক্যাপিটালস-এর থিম সংয়ে একঝাঁক তারকা
কোয়ালিফাইয়ারের বাধা টপকাতে চায় রংপুর
তারকাদের বিয়ে ও বিচ্ছেদের বছর
এবার ছাত্রদল সভাপতির পাশে দাঁড়ালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
বিয়ের আগে অভিনেত্রী স্বাগতার লিভ টুগেদার নিয়ে সমালোচনা
এসিআই লিমিটেড ২০ শতাংশ নগদ এবং ১৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে
পিকেকে নেতা ওকালানকে সন্ত্রাস ছাড়তে বলেছে তুরস্ক
ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করল বেলজিয়াম
প্রতিটি সিগারেট কমায় জীবনের ২০ মিনিট
এবার ইউনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ
ইহুদিবাদীদের ঘুমাতে দেব না : হুথি
সুয়েজ খালের পরীক্ষামূলক সম্প্রসারণ
ইথিওপিয়াতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭১
বিআরআই বাণিজ্যে মুনাফা বাড়বে চীনা রফতানিকারকদের
খাবার দেরি, বিয়ে ভেঙে খালাতো বোনকে বিয়ে করলেন বর
অবিশ্বাস্যভাবে বাঁচলেন কালিমা পড়তে থাকা বিমানের যাত্রী
হত্যাকারীদের সঙ্গে কোন আপোষ নয় : নজরুল ইসলাম খান
যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কঠোর নীতির অঙ্গীকার কিম জং উনের
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে সরকার: প্রেস সচিব