যাকাত ও সদকাতুল ফিতর
০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম
যাকাত ইসলামের পঞ্চ ভিত্তির অন্যতম। যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ পবিত্র ও বৃদ্ধি। ইসলামী পরিভাষায় যাকাত বলা হয়: আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তির সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেয়া। হিজরি দ্বিতীয় সনে মতান্তরে ৪র্থ সনে যাকাত ফরজ হয়। এর আগেও যাকাতের বিধান ছিল। তবে যাকাতের অংশ নির্ধারিত ছিল না। অপর দিকে সাদকাতুল ফিতর পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনার ত্রুটি বিচ্যুতির পরিপূরক ও মহান সত্তার কাছে সিয়াম কবুলের অনন্য মাধ্যম। নিম্নে যাকাত ও সাদকাতুল ফিতর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- যাকাত- বছরের সব খরচাদি নির্বাহ করার পর যদি কোনো ব্যক্তির কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা তার মূল্য অবশিষ্ট থাকে তাহলে ওই ব্যক্তির ওপর যাকাত দেওয়া ফরজ। যাকাত দারিদ্র বিমোচনের শ^াশত বিধান- ইসলাম যাকাত অনুমোদন করে সারাবিশে^র মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সুস্পষ্ট স্বাক্ষর রেখেছে। যাকাত সুষ্ঠু আর্থিক নীতির বুনিয়াদ, সমাজ কল্যাণের চাবিকাঠি, রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের পৃষ্ঠপোষক। পৃথিবীর যেখানে অর্থ বন্টনে বৈষম্য দেখা দিয়েছে এবং যাকাতের বিধান চালু করা হয়নি, সেখানেই স্বল্পসংখ্যক লোকের হাতে পুঞ্জিভূত হয়েছে বিপুল অর্থসম্পদ আর উত্তরোত্তর সিংহভাগ লোক দারিদ্রের বোঝা মাথায় নিয়ে রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছে। বিশ^ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশে^ দরিদ্রের সংখ্যা ১৭৫ কোটির উপরে, যা মোট বিশ^ জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। প্রতি রাতে বিশে^ ৭৫ কোটি মানুষ না খেয়ে ঘুমায়, প্রতি বছর ৪২ হাজার মানুষ না খেয়ে মারা যায়। পৃথিবীর মোট সম্পদের ৮২.৭ ভাগ ধনীরা এবং ধনী দেশগুলো ভোগ করছে, বাকি মাত্র ১৭.৩ ভাগ সম্পদ ভোগ করে ৮০ ভাগ গরীব দেশ। বাংলাদেশের ১ কোটি ধনীর কাছে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের সুখ-শান্তি, সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে আছে। মাত্র ১০ শতাংশ খাদ্য ঘাটতি ৯০ শতাংশ শ্রমজীবি মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্রের দিক ঠেলে দেয়। ১৯৮২ সালের ৭ জুন বাংলাদেশ সরকার যাকাত তহবিল অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় যাকাত তহবিল গঠন করে, সেই ফান্ডে ইচ্ছাকৃতভাবে যে কেউ তার যাকাতের টাকা দিতে পারে; এখানে বাধ্যবাধকতা নেই। যদি বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করা যেত তাহলে বিত্তবানদের নিকট থেকে প্রতি বছর পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি যাকাত আদায় করা যেত, যা দ্বারা পৌণে দুই কোটি মানুষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হতো। আর তাহলে সম্ভবত ছোট এই দেশে ৬ লাখ ভিক্ষুক ও ২ কোটি ৫২ লাখ মানুষ হত দারিদ্র থাকতো না। আল্লাহপাক সূরা আল জারিয়াতের ১৯নং আয়াতে বলেন, ‘এবং তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্থ এবং বঞ্চিতদের হক।’ বর্তমানে বিশে^ সম্পদের অভাব নেই, ওই সম্পদের ওপর জনগণের অধিকারহীনতাই দারিদ্র সমস্যার প্রধান কারণ। যাকাত প্রধানের মাধমে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি অর্জিত হয়। যাকাত প্রদানের খাতসমূহ- মিসকিন- যার কিছুই নেই, ফকির- যার একদিন চলে এমন কিছু নেই, ঋণগ্রস্ত, মুজাহিদ, সম্বলহীন পথিক। দূররে মুখতার কিতাবে বর্ণিত আছে সম্বলহীন তা’লিবে ইলমকে এবং যারা দ্বীন ইলম শিক্ষার কাজে মশগুল থাকার কারণে নিজেদের উপার্জন করার সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারেন তাহলে তাদের দিলেও যাকাত আদায় হবে। সুতরাং দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসা এবং দেশের দারিদ্র বিমোচন করা সব বিবেকবান ব্যক্তির একান্ত অপরিহার্য কর্তব্য। সাদকাতুল ফিতর- সাদকাতুল ফিতর আরবি শব্দ। শব্দদ্বয় পরস্পর সম্বন্ধপদ। যার সদকাহ অর্থ দান করা বা বিলিয়ে দেয়া। আর ফিতর অর্থ ভেঙ্গে ফেলা বা ভঙ্গ করা। অতএব শব্দদ্বয়ের অর্থ হচ্ছে ভেঙ্গে ফেলার দান বা রোযা ভেঙ্গে ফেলার সাদকাহ। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়- পবিত্র রমযান মাসের রোযা ভঙ্গ করে শাওয়াল মাসের শুরুতে রোযার সাদকাস্বরূপ গরিব-মিসকিনকে ওয়াজিব হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ দান করাকে সাদকাতুল ফিতর বলে। আনন্দ বন্টণের মাধ্যম সাদকাতুল ফিতর- দীর্ঘ এক মাস রোযা পালনের পর খুশির পশরা বয়ে আনে ঈদ। ইসলাম ঈদের এ আনন্দকে সমাজের ধনী ও দরিদ্রের মাঝে সমানভাবে বন্টনের এক উত্তম বিধান দিয়েছে সাদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে। রমযান মাসে রোযাদারগণ তার সাধ্যানুযায়ী রমযানের মর্যদা রক্ষা করার চেষ্টা করেন, তদুপরি জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে মানুষ অনেক ত্রুটি- বিত্রুটি করে ফেলে, আর সাদকাতুল ফিতর এগুলো ক্ষতি পূরণ হিসাবে ভূমিকা পালন করে। নিজের জন্য, নিজের দরিদ্র ছোট শিশুর পক্ষ থেকে, নিজের অধীনস্থ গোলামের পক্ষ থেকে, সাদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। গোলাম মোদাব্বার অথবা উম্মে ওয়ালাদ অথবা কাফির হলেও সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে, নিজের বয়স্ক ছেলের জন্য এবং নিজের ধনী ছোট শিশুর পক্ষ থেকে সাদকাতুল ফিতর আদায় করা শরিয়তের দৃষ্টিতে ওয়াজিব নয়। এক্ষেত্রে তার ছোট শিশুর মাল থেকে আদায় করা যাবে।
লেখক: চিকিৎসক-কলামিস্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন