ঢাকা   মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দাওয়াত হোক আল্লাহর দিকে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম

শান্তির গ্যারান্টি একমাত্র ইসলামেই দিতে পারে। বিশ^স্রষ্টা আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন। ‘সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করে, নিজে সৎ কাজ করে এবং বলে আমি একজন মুসলিম।’ আল-কুরআন। আল্লাহর দিকে যিনি মানুষকে আহ্বান করেন, তাকেই বলা হয় দায়ী ইলাল্লাহ। দায়ী আরবি ভাষার শব্দ। দাওয়াত প্রদান যিনি করেন তাকেই দায়ী বলে। ইলাল্লাহও আরবি ভাষার আল্লাহর প্রতিশব্দ। শব্দ দু’টি যখন একীভূত হয় তখন এ রূপ দাঁড়ায় দায়ী ইলাল্লাহ। আল্লাহর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপন করে অন্যদের এ পথে যে আহ্বান করা হয়, সেই আহ্বানকারীকে দায়ী ইলাল্লাহ বলা হয়। আরব জাহিলিয়াতের যুগে মানুষ স্বার্থপরতায় বিভোর ছিল, বিশেষ করে কায়েমি স্বার্থবাদী মহল যখন ক্ষমতা ও বৈষয়িক স্বার্থে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল, একে অপরের সম্পদ লুণ্ঠন, ক্ষমতা চূর্ণবিচূর্ণ করণে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিয়ে ছুটছিল, তখন সমাজে অশান্তি, হানাহানি, সামাজিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করেছিল। তখন সমাজের প্রতিটি মানুষ অশান্তির অগ্নিগহ্বরে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছিল। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে থেকে আরব জাহিলিয়াতকে সুপথে আনতে ও স্বর্ণযুগে রূপান্তরিত করেছিল ওই দায়ী ইলাল্লাহর সুমহান ডাক। যে অমর বাণী পেশ করে আখেরি জামানার পয়গম্বর মানবসমাজকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তা আজো ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।

বিপন্ন মানবতার আহাজারি যুগে যুগে মানবসমাজের অন্তর পুড়ে ছাই করেছে। কায়েমি স্বার্থবাদীদের ভোগলিপ্সা মানবসমাজকে যুগে যুগে ক্ষতবিক্ষত করেছে। তাদের স্বার্থ মানবতাকে পদদলিত করছে বারবার। মানবসমাজের ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম আ:-এর যুগ থেকে আজ অবধি ওই ঘৃণ্য অবতারণা বয়েই চলেছে। ইব্রাহিম আ:-কে নমরুদ আগুনে নিক্ষেপ করেছিল তার স্বার্থ আজীবন কায়েম রাখার স্বার্থেই। মুসা আ:-কে নীল নদে ডুবাতে চেয়েছিল ফেরাউনের স্বার্থ কায়েম রাখার জন্য। আখেরি জামানার পয়গম্বর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-কে জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছিল ওই কায়েমি স্বার্থের রোষানলে পড়েই। বর্তমান বিশ্বেও প্রায় সর্বত্রই চলছে কায়েমি স্বার্থের মহড়া। যেখানেই কায়েমি স্বার্থ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, সেখানেই মানবতা বিপন্ন হয়। অশান্তির কশাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়। বর্তমানে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশেও অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে, একে অপরের প্রাণ কেড়ে নিয়ে উল্লাস করছে। প্রতিপক্ষ দমনে নৃশংসতার পথ বেছে নিচ্ছে, বিপন্ন মানবতার কান্নার রোল আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলছে। কত দিনে এর পরিসমাপ্তি ঘটবে কে জানে। অগণিত প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলার স্বাধীনতা আজ বিপন্ন হতে চলেছে, কিসের জন্য এ দুরবস্থা? এর পেছনে কি কোনো মহৎ উদ্দেশ্য আছে? একবাক্যে সবাই বলবেন না, এর কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নেই। তবে কী? তবে এর একমাত্র কারণ হচ্ছে স্বার্থের টানাটানি। কায়েমি স্বার্থ বিপন্ন মানবতাকে পদদলিত করে আজীবন নিজেদের স্বার্থ কায়েম রাখার জন্যই এ ঘৃণ্য অভিলাষ। যুগে যুগে কায়েমি স্বার্থ যেমন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তেমনি তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্তও হয়েছে। সেখানেই মানবতা বিজয় লাভ করেছে। তবে এর জন্য প্রয়োজন একদল নিঃস্বার্থ জনতা আর নিরপেক্ষ ও সুবিচারপূর্ণ বিধিবিধানের। আজো যদি সমাজের নিঃস্বার্থবান মানুষগুলো ঐক্যবদ্ধ হয় তবে এ পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব। তবে ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে দৃঢ়পদে। প্রায় ১৫ শ’ বছর আগে আরব জাহিলিয়াতের যুগে বিপন্ন মানবতাকে মুক্তি দিতে যে মুক্তি সনদ প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেই মুক্তি সনদ এখনো তো অধিকৃত অবস্থায় আমাদের হাতে রয়েছে। যে পরশপাথরের সংস্পর্শে ইতর অসভ্যতা সুসভ্য সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিল, সেই মহান নেতা মুহাম্মদ সা:-এর অমূল্যবাণী ও তাঁর প্রদর্শিত পথ কোনোটাই আমাদের স্মরণ থেকে মুছে যায়নি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাণী আমাদের কাছে অক্ষরে অক্ষরে সংরক্ষিত রয়েছে। ওই অমর বাণী সমাজে যোগ্যতার সাথে তুলে ধরতে হবে। এ জন্য দায়ী ইলাল্লাহকে দৃঢ়পদে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের কলুষিত অন্তরকে পবিত্র করার জন্য আল্লাহর দাসত্বের প্রতি টানতে হবে। কায়েমি স্বার্থের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। বিশ্বমানবতাকে বুঝাতে হবে তুমি লাগামহীন স্বাধীনতার অধিকারী নও। যে সৃষ্টিকর্তা তোমাকে, আমাকে ও সব কিছু সৃষ্টি করেছেন, এসব পরিচালনার জন্য বিধানও তিনি রচনা করে দিয়েছেন। তোমার রচিত বিধান নিরপেক্ষ নয়। এ দ্বারা দুনিয়াতে কোনো দিন শান্তি আসেনি, আর আসবেও না। তাই সবাই মিলে আল্লাহর রজু ধারণ করো আর পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। দায়ীদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারাও বলিষ্ঠভাবে আল্লাহর বিধান কায়েমের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আল্লাহ বলেছেন, ‘মনভাঙা হয়ো না, চিন্তা করিও না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মোমেন হও।’ (আল কুরআন) তাই সৎকাজে তোমরা একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা কর, কাল্যাণসমূহকে যথাযথভাবে প্রাপ্ত হওয়ার জন্য। আল-কুরআন।

লেখক: চিকিৎসক-কলামিস্ট।

 


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কুবি প্রক্টর ক্ষমতার দাপটে মারলেন সহকর্মী ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলামকে

কুবি প্রক্টর ক্ষমতার দাপটে মারলেন সহকর্মী ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলামকে

রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য অটোমেশনের বিকল্প নেই- অর্থ প্রতিমন্ত্রী

রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য অটোমেশনের বিকল্প নেই- অর্থ প্রতিমন্ত্রী

কুষ্টিয়ায় শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ : বিমানবন্দর থেকে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আটক

কুষ্টিয়ায় শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ : বিমানবন্দর থেকে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আটক

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ: সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ: সালমান এফ রহমান

হাজীদের বাড়ী ভাড়া কার্যক্রম বন্ধ হজ ফ্লাইট বাতিলের শঙ্কা বাড়ছে

হাজীদের বাড়ী ভাড়া কার্যক্রম বন্ধ হজ ফ্লাইট বাতিলের শঙ্কা বাড়ছে

কুমিল্লায় আ'লীগের মতবিনিময় সভায় আসার পথে হামলার শিকার নেতাকর্মীরা

কুমিল্লায় আ'লীগের মতবিনিময় সভায় আসার পথে হামলার শিকার নেতাকর্মীরা

গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪,৫৩৫ জনে

গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪,৫৩৫ জনে

কুকি চিন সন্ত্রাসীদের দমনে কোন নিরীহ অধিবাসী যেন হেনস্তার স্বীকার না হয়

কুকি চিন সন্ত্রাসীদের দমনে কোন নিরীহ অধিবাসী যেন হেনস্তার স্বীকার না হয়

উদ্ধার করা মার্কিন আব্রামস ট্যাঙ্ক প্রদর্শন করবে রাশিয়া

উদ্ধার করা মার্কিন আব্রামস ট্যাঙ্ক প্রদর্শন করবে রাশিয়া

মহান মে দিবসে সকল মেহনতি মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন

মহান মে দিবসে সকল মেহনতি মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন

ফেসবুকে অপপ্রচার: জবি শিক্ষককের বিচার চেয়ে ভিসির কাছে ডীনের অভিযোগ

ফেসবুকে অপপ্রচার: জবি শিক্ষককের বিচার চেয়ে ভিসির কাছে ডীনের অভিযোগ

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচিতে ৩৯ হাজার বই দিলো বিকাশ

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচিতে ৩৯ হাজার বই দিলো বিকাশ

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার ইঙ্গিত চীনের

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার ইঙ্গিত চীনের

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা বাংলাদেশ সরকারের প্রধান লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা বাংলাদেশ সরকারের প্রধান লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব

আফগানিস্তানে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৬

আফগানিস্তানে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৬

পাকিস্তানের দাসু সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত চারজন গ্রেপ্তার

পাকিস্তানের দাসু সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত চারজন গ্রেপ্তার

কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২জন চেয়ারম্যান ১জন ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার

কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২জন চেয়ারম্যান ১জন ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার

নির্বাচনে অংশগ্রহনে কারো আত্মীয়স্বজনের বিষয়ে আইনে বলা নেই : ইসি আনিছুর রহমান

নির্বাচনে অংশগ্রহনে কারো আত্মীয়স্বজনের বিষয়ে আইনে বলা নেই : ইসি আনিছুর রহমান

কুড়িগ্রামে শিশুর দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার

কুড়িগ্রামে শিশুর দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার

সাতক্ষীরায় ২১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আজ হিটস্ট্রোকে এক শিক্ষকের মৃত্যু

সাতক্ষীরায় ২১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আজ হিটস্ট্রোকে এক শিক্ষকের মৃত্যু