সবল অর্থনীতির সোপান : মাতারবাড়ী বহুমুখী গভীর সমুদ্র বন্দর
০৩ জুন ২০২৩, ০৯:০৮ পিএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩, ০১:০২ এএম
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দেশের অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন’। এই বন্দরকে বলা হয় ‘সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার’। বন্দরের নিজেরই একটি উদ্দীপক স্লোগান আছে: ‘কান্ট্রি মুভস উইথ আস’। দেশের আরও দু’টি বন্দরÑ মোংলা এবং পায়রা। অস্বীকার করা যাবে না, চট্টগ্রামসহ তিনটি বন্দরেরই কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেগুলো প্রকৃতিগত। যেমন, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি-বার্থ-মুরিংয়ে সর্বোচ্চ দশ মিটার ড্রাফট (পানির নিচের অংশে জাহাজের গভীরতা) এবং দুইশ’ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভেড়ার সুযোগ আছে। দ্বিতীয়ত, চট্টগ্রাম ও অপর দু’টি বন্দরই জোয়ার-ভাটার নির্দিষ্ট সময়ের উপর জাহাজের জেটি প্রবেশ ও বহির্গমন নির্ভর করে। তাও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। আরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, ‘ন্যচারাল পোর্ট’ ঠিকই; তবে একটি ‘ফিডার পোর্ট’।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রফতানি পণ্যসামগ্রীর চালান সাধারণত সরাসরি জাহাজযোগে ইউরোপ কিংবা উত্তর আমেরিকায় যায় না। যদিও সম্প্রতি ছোট কিছু গার্মেন্ট পণ্যের রফতানি চালান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি জাহাজে ইউরোপে গেছে। প্রধানত যা হয়, প্রথমে কার্গো কন্টেইনারগুলো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কার ট্রানজিশনাল মাদার পোর্টে যায় ফিডার জাহাজে করে। এরপর সেখান থেকে ইউরোপ অভিমুখী কোন মাদার ভেসেলের জন্য অপেক্ষা করে। এটা দ্বৈত শিপিং বা ট্রানজিট ব্যবস্থা। এর ফলে সময় ও খরচ অনেক বেড়ে যায়। আছে আরও জটিলতা, ঝামেলা।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্যও একটি মাদার পোর্ট, ট্রানজিশনাল পোর্ট কিংবা গভীর সমুদ্র বন্দর অপরিহার্য হয়ে উঠে যুগের চাহিদা পূরণে এবং বৈশি^ক বাণিজ্য চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্যই। এ ধরনের একটি মৌলিক ও বড়সড় অবকাঠামো দেশের সবল অর্থনীতির সোপান হয়ে দাঁড়াবে সমৃদ্ধ আগামী গড়তে। অবশেষে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন গভীর সমুদ্রবন্দর। এটি শুধুই বাংলাদেশের নয়, নেপাল, ভুটান, ভারত, চীনসহ দক্ষিণ এশিয়ার ‘আঞ্চলিক হাব পোর্ট’ হিসেবে আগামী দিনের বিশেষ গুরুত্ব ধারণ করে আছে। আছে ভূরাজনৈতিক তাৎপর্যও। জাপানের ‘দি বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ (বিগ-বি)’ ইনিশিয়েটিভ বা উদ্যোগের আওতায় জাপান মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরসহ মেগাপ্রকল্পসমূহে সহযোগিতা প্রদান ও বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে মাতারবাড়ী বন্দরটি ঘিরে ভূরাজনৈতিক স্বার্থের বাস্তবতায় ভারত ও জাপানের অতি মাতামাতি দৃশ্যমান, যার পেছনের কাহিনী হচ্ছে মাতারবাড়ীর কাছে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনে আগেই চলমান মেগাপ্রকল্প থেকে ‘ভারতের বিরোধিতার ফলে চীন আউট’, আর, তাতে ‘জাপান ইন’ এবং ‘ভারতের স্বস্তি’। একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে আগেই একাধিকবার বলেছেন, ‘ভারতের চাপেই বাতিল হয়েছিল চীনের অর্থায়নের প্রস্তাবে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের মেগাপ্রকল্প। এর জন্য ভারত ও চীনের ভূরাজনৈতিক স্বার্থগত দ্বন্দ্বই দায়ী। ভারত চীনকে বঙ্গোপসাগরে আসতে দিতে চাইছে না। ভারতকে চটিয়ে তো এটা করা যাবে না, আর তাতে লাভও নেই। তবে মাঝখানে আমরা বঞ্চিত হলাম।’
কক্সবাজারের দ্বীপ (যা বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ) মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে বিশেষত জ¦ালানি সেক্টরে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। হচ্ছে কয়েক লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ। এর আওতায় ২০১৫ সালে মহেশখালীর মাতারবাড়ী-ধলঘাটে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ মেগাপ্রকল্পের কাজ শুরু করে সরকার। কয়লা খালাসের জন্য দরকার ছিল বন্দর-সুবিধা।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এজেন্সি- জাইকা’র অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে মাতারবাড়ী-ধলঘাট পয়েন্টে বহুমুখী সুবিধা সম্পন্ন এবং গভীর সমুদ্রবন্দরের সম্ভাবনা উদঘাটন করে জাইকা। তারা নিশ্চিত হয়, সেখানে শুধু কয়লার জেটি-বার্থিং সুবিধা নয়, রেগুলার বন্দরের সুবিধাও হাতের নাগালে। জাপানের কাশিমা বন্দরের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সাথে মাতারবাড়ীর মিল রয়েছে।
জাইকা গবেষণা ও সমীক্ষা চালিয়ে এ ব্যাপারে প্রস্তাবনা ও কর্মপরিকল্পনা পেশ করে। মাতারবাড়ীর চ্যানেল প্রাথমিক পর্যায়ে খনন ও উন্নয়ন করা হয়েছে। এতে সাড়ে ১৬ মিটার গভীরতা বা ড্রাফট-সম্পন্ন এবং ১৪ দশমিক তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল সৃজন করার কাজ অনেকাংশে হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে ড্রাফট ১৮ মিটারে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানের সক্ষমতা এবং ভবিষ্যতের সুযোগ-সম্ভাবনার হাত ধরে আশার ঝিলিক এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। মাতারবাড়ীতে সৃষ্টি হয়েছে পোর্ট-শিপিং সেক্টরের ইতিহাস। গেল ২৫ এপ্রিল ২০২৩ মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দরে ভেড়ে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ইন্দোনেশিয়া থেকে আনীত কয়লাবাহী পানামার জাহাজ ‘অউসো মারো’। এর দৈর্ঘ্য ২৩০ মিটার ও ড্রাফট ১৪ মিটার। দেশের পোর্ট-শিপিং ইতিহাসে এ যাবতকালের মধ্যে এই সবচেয়ে বড় জাহাজ ভিড়লো। বঙ্গোপসাগর থেকে ১৪ দশমিক তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩৫০ মিটার চওড়া নেভিগেশনাল চ্যানেলের মধ্যদিয়ে জাহাজটি জেটিতে বার্থিং নেয়। বাংলাদেশের জন্য এ দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয়।
আর, সাফল্যের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ হয় দ্রুত। ২৭ এপ্রিল ’২৩ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) মাতারবাড়ীকে আন্তর্জাতিক গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছর পর আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্য ও বন্দর ব্যবস্থাপনায় জাতির সক্ষমতার রেকর্ড সৃজিত হলো। মাতারবাড়ীর সুপরিসর জেটিতে এ পর্যন্ত ভিড়েছে ১১৭টি জাহাজ। প্রধানত এসব জাহাজে বিদ্যুতকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি এসেছিল। ‘অউসো মারো’ জাহাজে এবারই প্রথম এককভাবে নিয়ে আসা হয় বিদ্যুতকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য কয়লা।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের দায়িত্বে আছে চবক। ২০২৬ সালের মধ্যে এ সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হলে বড় আকারের জাহাজ সরাসরি বাংলাদেশে আসতে পারবে। এর ফলে সময়, খরচ সাশ্রয় ও নানা জটিলতা দূর হবে। যুগান্তকারী গতি আসবে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত শিল্পপণ্য রফতানিসহ শিল্পখাতে আসবে নতুন জোয়ার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, শিল্পোদ্যোক্তারা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গেম চেঞ্জার হয়ে উঠবে বলেও প্রত্যাশা করছেন।
সম্প্রতি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর মেগাপ্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর দৃশ্যমান হয়েছে। ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি, ৩শ’ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি, কন্টেইনার ইয়ার্ডসহ বন্দরের অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ অবস্থায় নবউদ্যমে এগিয়ে চলেছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ। পোর্ট-শিপিং সূত্রে জানা গেছে, ২০২৬ সালে দেশের প্রথম বহুমুখী সুবিধা সম্পন্ন গভীর সমুদ্রবন্দরটি পুরোদমে চালু হলে জাহাজের যাবতীয় খরচ প্রায় ৫৭ শতাংশে নেমে আসবে। পণ্য পরিবহনের সময় কমবে ৬০ শতাংশ। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ শেষ হলে ৩৫০ মিটার লম্বা এবং ১৮ মিটার গভীরতার (ড্রাফট) জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে। বাংলাদেশের জন্য ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানগত কারণে মাতারবাড়ী বেশ সুবিধাজনক। চট্টগ্রাম থেকে মাতারবাড়ীর দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল, পায়রা বন্দর থেকে ১৯০ নটিক্যাল মাইল এবং মোংলা বন্দর থেকে ২৪০ নটিক্যাল মাইল। আবার, মাতারবাড়ী পোর্ট থেকে খালাসকৃত পণ্যসামগ্রী সড়ক ও রেলপথ বা নৌপথে দেশের অন্যান্য এলাকায় পরিবহনে সময় ও খরচ লাগবে কম।
ভারত-জাপানের জয়
সম্প্রতি জাপানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘নিক্কেই এশিয়া’য় একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
‘বাংলাদেশ ডিপ সি পোর্ট প্রমিজেস স্ট্্র্যাটেজিক অ্যাংকর ফর জাপান-ভারত: নিউ দিল্লি’স ইনফ্লুয়েন্স ইন ঢাকা হেলপস্ ফয়েল চাইনিজ প্ল্যানস্ ফর সিমিলার ফুটহোল্ড’ (১২ এপ্রিল, ২০২৩) শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়, টোকিও-সমর্থিত এই মাতারবাড়ী বন্দর গড়ে উঠছে সোনাদিয়ার ঠিক উত্তরে। সোনাদিয়া বঙ্গোপসাগরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখানে চীন একটি বন্দর গড়ে তোলার চেষ্টা চালায়। শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। ঢাকা বছর কয়েক আগে ওই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।
শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের যে লড়াই চলছে, ঢাকার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ভারত তাতে কৌশলগতভাবে বিজয়ী হয়েছে বলে অনেক বিশ্লেষক তখন বলেছিলেন। এর মাধ্যমে ভারতের বন্ধু জাপানেরও জয় হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তবে অনেক বিশ্লেষক এখানে কোন লড়াই দেখেন না। তাদের মতে, বাংলাদেশ সরকার শুধু দেখছে কোথা থেকে টাকা পাওয়া যাচ্ছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেয়ারব্যাংক সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের গবেষণা সহযোগী আনু আনোয়ার ‘নিক্কেই এশিয়া’কে বলেন, সোনাদিয়ায় বন্দর নির্মাণে চীনের সাথে চুক্তির পরিকল্পনা সফল হয়নি ‘ভারতের বিরোধিতার কারণে’। কিন্তু চীন যা দিতে পারে সেটি দেয়ার সক্ষমতা ভারতের নেই। সে কারণে জাপানকে স্বাগত জানিয়েছে তারা। এখন এই বন্দরে বাংলাদেশের যেমন লাভ হবে তেমনি ভারতেরও কম লাভ হবে না।
সম্প্রতি ভারত সফরকালে দিল্লিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা বলেন, তার দেশ সংশ্লিষ্ট দুই দেশের সহযোগিতায় বঙ্গোপসাগর থেকে শুরু করে ভারতের উত্তর-পূর্ব এলাকায় একটি শিল্পাঞ্চল অবকাঠামো গড়ে তুলবে, যার উদ্দেশ্য হবে গোটা অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো। ২০২৭ সালে বন্দরের নির্মাণকাজ শেষে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের ওপর চাপ কমবে। তাছাড়া, ভারতের অনুন্নত উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক, ‘বিচক্ষণ বিকল্প’ প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে ভূমিকা রাখবে মাতারবাড়ী। কেননা প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গেই ভারতের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
জাপান, ভারত ও বাংলাদেশ গত এপ্রিল’২৩-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে তাদের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়। উত্তর-পূর্ব রাজ্যবিষয়ক ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কৃষ্ণা রেড্ডি জাপানের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
জাইকা’র পর্যবেক্ষণে, বন্দর উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাপান মাতারবাড়ীর চেয়ে ভালো আর কোন জায়গার কথা ভাবতেও পারত না। এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি প্রাকৃতিক প্রবেশদ্বার। এদিকে বিশ্বজুড়ে চীনের প্রভাব মোকাবেলার উদ্যোগ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে ‘কোয়াড জোট’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার বাইরে চার জাতির এ জোটের অন্য দুই দেশ জাপান ও ভারত। বাংলাদেশের দক্ষিণে নির্মাণাধীন সমুদ্রবন্দর মাতারবাড়ী তাদের কৌশলের একটি অপরিহার্য অংশ হতে যাচ্ছে এমনটি বলছে ‘নিক্কেই এশিয়া’।
মাতারবাড়ীর ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের বিষয়টি উঠে আসে গত মার্চ মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা’র ভারত সফরের সময়। তার খোলামেলা ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাজেন্ডা’র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে মাতারবাড়ী সামনে চলে আসে। ওই মাসেই জাপান সরকারের সংস্থা জাইকা বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১৬ হাজার ৫শ’ কোটি ইয়েন (১২০ কোটি ডলার) ঋণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। যদিও এর আগে টোকিও ৩ হাজার ৮৮০ কোটি ইয়েন দেওয়ার কথা জানিয়েছিল।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ফেয়ারব্যাঙ্ক সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের গবেষণা সহযোগী আনু আনোয়ার ‘নিক্কেই এশিয়া’কে বলেন, চীনের সঙ্গে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। ‘কারণ এ ব্যাপারে ভারতের আপত্তি ছিল, যা দিল্লির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে ঢাকা নাকচ করতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ভারত চীনা প্রস্তাবের বিকল্পও কিছু দিতে পারেনি। কারণ, তাদের সেই সম্পদ ছিল না। কাজেই তারা মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণে জাপানকে স্বাগত জানায়। এ বন্দর বাংলাদেশের স্বার্থ যতটা রক্ষা করবে, ভারতের স্বার্থ তার চেয়ে কম রক্ষা করবে বলে মনে হয় না।’
অবশ্য ফেয়ারব্যাঙ্ক সেন্টারের আনু আনোয়ার মনে করেন, ‘যদিও গভীর সমুদ্রবন্দরটি গড়ে তুলতে বাংলাদেশ চীনাদের চেয়ে জাপানি বিনিয়োগ পছন্দ করেছে; কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশ বন্দরটিকে একটি ভূরাজনৈতিক দাবার গুটি হতে দেবে, যাকে এক শক্তি অন্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে।’ ঢাকাভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক অ্যাডাম পিটম্যান বলেন, বাংলাদেশ সরকার যে বিভিন্নভাবে বিনিয়োগ সংগ্রহ করছে, সেটিই এখানে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে গত ২৬ এপ্রিল ২০২৩ জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা’র সঙ্গে টোকিওতে শীর্ষ বৈঠকে নেতৃত্ব দেন উভয় রাষ্ট্রনেতা। এ সফরে ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে আটটি ক্ষেত্রে চুক্তি ও সহযোগিতা স্মারক (এমওসি) স্বাক্ষরিত হয়। বৈঠকে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ (এমআইডিআই) এবং ‘বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি)’ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব নিয়েও আলোচনা হয়। এ সময়ে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘ব্যাপক অংশীদারত্ব’ থেকে সফলভাবে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীতে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে এমনটি আশাবাদ ব্যক্ত করেন উভয় রাষ্ট্রনেতা।
লেখক: উপ-সম্পাদক ও ব্যুরো প্রধান, দৈনিক ইনকিলাব, চট্টগ্রাম।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
বিষয় : year
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি
ঘনকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে: ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়