হজের তাৎপর্য
২৭ জুন ২০২৩, ০৮:৪৭ পিএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩, ১১:৪২ পিএম
বিশ্ব মুসলিমের মিলন কেন্দ্র হারামাইন শরীফাইন-মক্কা মোকাররমা ও মদীনা মোনাওয়ারা সারা বছরই মুসলমানদের সমাগমে ভর্তি থাকে। বিশেষভাবে হজের মওসুমে এবং হজের দিবসগুলিতে লাখ লাখ মুসলমানের লাব্বায়েক ধ্বনি সহকারে এই দুইটি পবিত্রতম স্থানে আগমনের প্রধান উদ্দেশ্য হজ ও ওমরা পালন করা। মুসলমান নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-আবাল-বনিতা, শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবক-সর্বস্তরের মুসলমান হারামাইন শরীফাইনের জেয়ারত করার জন্য বৎসরের যে কোনো সময় সেখানে আসে, ভিড় জমায় ওমরা আদায় করতে এবং হজের সময় হজ করতে। পবিত্র কাবাকে আল্লাহতায়ালা শান্তির আশ্রয়কেন্দ্ররূপে ঘোষণা করেছেন এবং মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) এর রওজা মোবারক অবস্থিত থাকায় মক্কা নগরীর ন্যায় মদীনা নগরীও শান্তির ও নিরাপদ স্থান হিসাবে মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে মনোনীত। এই দুই পবিত্র স্থানে যে কোনো প্রকারের ফেতনা-ফ্যাসাদ, হাঙ্গামা, গোলযোগ ও বিশৃংখলা সৃষ্টি কঠোরভাবে এবং বিশেষভাবে নিষিদ্ধ। এমনিতেই ফেতনা সৃষ্টি করা হত্যাকা- অপেক্ষা জঘন্যতম পাপ, তদুপরি হজের মওসুমে যে কোনো প্রকারের গোলযোগ সৃষ্টি বিশ্ব মুসলিমের নিরাপত্তা ও তাদের হজ কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বাধার সম্মুখীন হতে পারে, এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক কথা। ইসলাম হজের যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, এর পরিপন্থী কোনো কাজই হারামাইন শরীফাইনের পবিত্রতা ও মর্যাদা ক্ষুণœ করে। হজের আদর্শ শিক্ষার সাথে সমঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন সব ক্রিয়া-কলাপকে প্রশ্রয় দেওয়ার অর্থ হজের মর্যাদা বিনষ্ট করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। হজ ও হারামাইন শরীফাইনের মর্যাদা রক্ষা করা হজ যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার বিধান করা সউদী সরকারের রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় দায়িত্ব। এখন দেখা যাক, হজ কী ও কেন এবং এর ধর্মীয় তাৎপর্য কী?
নামাজ, রোজা ও জাকাতের ন্যায় হজ ইসলামের একটি রোকন ও অপরিহার্য করণীয় বিষয় বা ফরজ কর্তব্য। সমগ্র জীবনে একবার সেই ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ, যাকে আল্লাহতায়ালা এই পরিমাণ অর্থ-সম্পদ দান করেছেন যে, স্বদেশ হতে মক্কা মোকাররমা পর্যন্ত যাতায়াত করতে সে সক্ষম এবং প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত নিজের পরিবার-পরিজন ও সন্তানাদির ব্যয়ভার বহন করতে পারে, আর হজের যেসব শর্ত-শরায়েত বা শরীয়ত আরোপিত, সেগুলি তার মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান।
হজ ফরজ হওয়া ব্যাপারটি পবিত্র কোরআন, হাদীস, এজমা এবং যুক্তিজ্ঞান (কেয়াস) দ্বারা অকাট্যরূপে প্রমাণিত। সুতরাং কেউ যদি হজ অস্বীকার করে অর্থাৎ একে ফরজ নয় বলে মনে করে, অন্যান্য রোকন অস্বীকার করার মতো কাফের বলে গণ্য হবে। হজকে অস্বীকার করা মানে ইসলামের একটি অন্যতম রোকনকে অস্বীকার করা এবং এরূপ অস্বীকার একমাত্র কাফেরই করতে পারে। কোনো মোমেন-মুসলমানের পক্ষে এটা সম্ভব নয়।
হজ জীবনে একবার মাত্র ফরজ হয়ে থাকে, একবার ফরজ হজ পালন করার পর আর জীবনে কখনও ফরজ হবে না। কেননা বায়তুল্লাহ শরীফ একটি। অতঃপর নফল হয়ে যাবে। আবুদাউদে বর্ণিত হুজুর (সা.) এর একটি হাদীস হতে এটাই প্রমাণিত হয়।
হযরত ইবনে উমর (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন যে, হুজুর (সা.) বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের ওপর প্রতিষ্ঠিত: (১) এই বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া হয় যে, আল্লাহতায়ালা ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল। (২) নামাজ কায়েম করা। (৩) যাকাত প্রদান করা। (৪) বায়তুল্লাহ শরীফের হজ করা এবং (৫) রমজান মাসের রোজা রাখা।
এই বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ; যে ব্যক্তি এর একটিও পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামের প্রাসাদের একটি ইমারতকে ধ্বংস করতে চায়। যত প্রকারের এবাদতই বিধিবদ্ধ করা হয়েছে, সবগুলির উদ্দেশ্য আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করা ও তার নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। হজের মধ্যে এই দুইটি জিনিসই পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। হজের যাবতীয় ক্রিয়া-কর্মের প্রতি গভীরভাবে চিন্তা করলে তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এবাদতের প্রধান যে দুইটি প্রকার অর্থব্যয় ও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে এবাদত করার কথা আছে, হজের মধ্যে একসঙ্গে দুইটি জিনিসই পাওয়া যায়। এই জন্য হজের মধ্যে অর্থ ও স্বাস্থ্য উভয়কে শর্ত হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
হজ ফরজ হওয়ার জন্য যাতায়াত পথ নিরাপদ হওয়া শর্ত। অতএব, যদি কারো নিকট হজের যাবতীয় মাল সামান থাকে এবং হজের সমস্ত শর্তও তার মধ্যে পাওয়া যায়, কিন্তু রাস্তা নিরপদ নয়, বিপজ্জনক। যেমন ডাকাত কিংবা শত্রুর ভয় অথবা যুদ্ধের সময় জাহাজ বা যানবাহনের ওপর বোমা বর্ষণের আশংকা বিদ্যমান। এই সব অবস্থায় হজ ফরজ হবে না অর্থাৎ হজযাত্রীর গৃহ হতে মক্কা শরীফ পর্যন্ত সমস্ত পথ নিরাপদ হতে হবে। সাধারণভাবে মানুষ নিরাপদে আসা-যাওয়া করে এবং কোনো প্রকারের ভয়-ভীতি থাকে না। এটা হযরত ইমাম আবু হানিফারও অভিমত।
হজ ফরজ হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে তা আদায় করা ওয়াজেব। যে বছর হজ ফরজ হয়, ঐ বছরই সম্ভব হলে হজ আদায় করা উচিত। বিনা কারণে বিলম্ব করলে গুণাহ হবে। কিন্তু যদি মৃত্যুর পূর্বে হজ আদায় করে যায়, তাহলে হজ আদায় হয়ে যাবে এবং বিলম্বিত করার গুনাহও দূর হয়ে যাবে। আর যদি হজ আদায় করা ব্যতীত মারা যায়, তাহলে হজ না করার গুনাহ জিম্মায় থেকে যাবে। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই হুকুম প্রযোজ্য। তবে নারীদের জন্য মহররম হওয়া এবং ইদ্দত না হওয়া শর্ত। হজ ফরজ হওয়ার পর অবিলম্বে তা আদায় করার হুকুম এই জন্য দেওয়া হয়েছে যে, বিলম্বিত হলে হজ অনাদায় থেকে যাওয়ার আশংকা বিদ্যমান। কেননা মানুষের জীবনের ওপর কোনো আশা-ভরসা নেই, পরবর্তী বছর পর্যন্ত জীবিত থাকার কোনো নিশ্চয়তা নেই, আর অচিরে এরূপ আশা করাটাও অযৌক্তিক
হজের ফরজ তিনটি: (১) এহরামÑ অর্থাৎ অন্তরে হজের নিয়ত করা এবং তালবিয়া অর্থাৎ লাব্বায়েকা দোয়াটি শেষ পর্যন্ত পড়া। (২) আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা। অর্থাৎ জিলহজ মাসের ৯ তারিখ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর হতে ১০ জিলহজের সোবহে সাদেক পর্যন্ত যে কোনো সময় আরাফাত ময়দানে এক মুহূর্তের জন্য হলেও অবস্থান করা। (৩) তাওয়াফে জিয়ারত করা, যা ১০ জিলহজের ভোর হতে ১২ জিলহজ পর্যন্ত।
মাথার চুল মু-িয়ে ফেলা বা খাটো করার পর আরম্ভ হয়। এই তিন ফরজের মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ এহরাম বাঁধা হজের শর্ত এবং বাকি দুইটি অর্থাৎ আরাফাতে অবস্থান এবং তওয়াফে জিয়ারত হজের রোকন এবং এই দুইটি রোকনের মধ্যে আরাফাতে অবস্থান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক শক্তিশালী।
হজের ওয়াজেব: (১) অকুফের সময় মোজদালেফায় অবস্থান করা। (২) সাফা ও মারওয়া নামক পর্বতদ্বয়ের মধ্যে সায়ী করা। (৩) কংকর নিক্ষেপ করা। (৪) হজে কেরান ও তামাত্তকারী কর্তৃক কোরবানী দেওয়া। (৫) মাথার চুল মু-ন করে ফেলা অথবা কর্তন করা। (৬) আফাকী অর্থাৎ মিকাতের বাইরে লোকদের বিদায়ী তওয়াফ করা।
উল্লেখযোগ্য যে, হজযাত্রীর পক্ষে মক্কা শরীফে যেসব ফরজ-ওয়াজেব কাজ রয়েছে সেগুলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কোন ফরজ রোকন বাদ পড়লে হজই সিদ্ধ হবে না। ওয়াজেব কাজগুলির হুকুম এই যে, কোনো হজযাত্রী কোনো ওয়াজেব কাজ তরক করলে তওয়াফ পুনরায় করবে। তাওয়াফ পুনরায় না করলে এর বদলা দেওয়া ওয়াজেব। অনুরূপভাবে হজযাত্রীর জন্য নির্ধারিত কিছু কাজ নিষিদ্ধ এবং কিছু কাজ করা মাকরূহ। মাকরূহ কাজ করলে দম দিতে হয়। দম দেওয়ার মসলাগুলিও হজযাত্রীর অবশ্যই জানা থাকা উচিত। মোটকথা, হজসংক্রান্ত যাবতীয় মসলামাসায়েল পর্যালোচনা করলে প্রমাণিত হবে, হজের দিনগুলিতে কোনো প্রকারের হজ পরিপন্থী কাজ করা যাবে না।
হজযাত্রীদের জন্য একটি তালবিয়া ‘লাব্বায়েকা আল্লাহম্মা লাম্বায়েকা’ নির্ধারণ করা হয়েছে। একে এক অর্থে হজযাত্রীদের শ্লোগানও বলা যেতে পারে। হজের সময় এই তালাবিয়া পাঠ করা তাদের কর্তব্য। সেখানে তালবিয়া উচ্চারণ ব্যতীত হজের সময় অন্য কোনো প্রকারের শ্লোগান উচ্চারণের কোনো অবকাশ নেই।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি