আশুরার তাৎপর্য ও শিক্ষা

Daily Inqilab ড. আবদুল আলীম তালুকদার

২৮ জুলাই ২০২৩, ০৮:১৩ পিএম | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০২ এএম

মহান আল্লাহ্ তা‘আলা হিজরি সনের চারটি মাসকে সম্মানিত করেছেন। এগুলো হলো জ্বিলকদ, জ্বিলহজ্জ্ব, মুর্হরম ও সফর। সম্মানিত এ চারটি মাসের মধ্যে মুর্হরম অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ ও বরকতময় এ মাসকে আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগের আরব্য বেদুঈনরাও বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখতো। এ মর্মে মহান আল্লাহ্ আল কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ্র কাছে আল্লাহ্্র কিতাবে (অর্থাৎ লাওহে মাহফুজে) মাসের সংখ্যা ১২টি, সেইদিন থেকে যেদিন আল্লাহ্ আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ।’ (সূরা তাওবা: ৩৬)।

হযরত আবু বাকরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (সা.) বলেন: বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। জ্বিলকদ, জ্বিলহজ ও মুর্হ্রম। তিনটি মাস পরস্পর রয়েছে আর একটি মাস হলো রজব, যা জুমাদাল আখিরা ও শাবান মাসের মাঝে অবস্থিত। (সহিহ্ বুখারি: ৩১৯৭)।

তাছাড়া হাদিস শরিফে চান্দ্রবর্ষের বারো মাসের মধ্যে মুর্হরমকে ‘শাহ্রুল হারাম’ বা ‘শাহ্রুল্লাহ্’ (আল্লাহ্র মাস) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোযা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুর্হরমের রোযা। আর ফরয নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদের নামাজ) (সহিহ্ মুসলিম: ২৬৪৫)। নবি (সা.) আরো বলেছেন: (রমজানের পর) শ্রেষ্ঠ মাস হচ্ছে আল্লাহর মাস, যাকে তোমরা মুর্হরম বলে থাক। (সুনানে নাসায়ী: ৪২১৬)। ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয় এ মাসকে ঘিরে। শুধু উম্মতে মুহম্মদীই নয় বরং পূর্ববর্তী অনেক উম্মত ও নবিদের অবিস্মরণীয় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এই মাসে।

মুর্হরম মাসের সবচেয়ে মহিমান্বিত দিন হচ্ছে ‘ইয়াওমে আশুরা’ তথা মুর্হরমের দশ তারিখ। হাদিসে আশুরার দিনের অনেক ফযিলত বিবৃত হয়েছে। এমনকি ইসলামপূর্ব আরবের জাহেলি সমাজে এবং আহলে কিতাবÑ ইহুদি-নাসারাদের মাঝেও ছিল এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা।

ইসলামি পঞ্জিকা অনুযায়ী মুর্হরমের দশম দিনকে আশুরা বলা হয়।
মুসলিম উম্মাহ্র জন্য এটি একটি তাৎপর্যময় ও গুরুত্ববহ দিন। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিবছর পবিত্র আশুরা পালিত হয়। ৬৮০ খ্রি. মোতাবেক ৬১ হিজরির এই দিনে অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইসলামের নবিশ্রেষ্ঠ হযরত মুহম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদত বরণ করেন। তাই বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দিনটি একদিকে যেমন শোকের, তেমনি হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেতনায় উজ্জ্বল।

ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর আত্মত্যাগ ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগের এই মহিমা মুসলিম উম্মাহ্র এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যুলুম-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং অসত্য ও অন্যায় প্রতিরোধে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর এ ভূমিকায় মানবজীবনের জন্য বিরাট একটি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।

ইসলামের ইতিহাসে কারবালার এই শোকাবহ ঘটনার আগেও এ দিনে নানা তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছে। বর্ণিত আছে, ১. আল্লাহ্ তা‘আলা এইদিনে আকাশ-জমিন, পাহাড়-পর্বতসহ সমস্ত পৃথিবী সৃষ্টি করেন এবং সর্বপ্রথম বৃষ্টি ও আল্লাহ্র রহমত বর্ষিত হয়। ২. আদি মানব হযরত আদম (আ.)-কে এইদিনে সৃষ্টি করা হয়েছে, এইদিনেই তিনি পৃথিবীতে আগমন করেন, এইদিনই তার তওবা কবুল করা হয় এবং এইদিনে তিনি স্ত্রী হাওয়া (আ.)-এর সাথে আরাফার ময়দানে সাক্ষাৎ লাভ করেন। ৩. হযরত ইউনুস (আ.) এইদিনে ৪০ দিন পর মাছের পেট থেকে আল্লাহ্র রহমতে মুক্তি লাভ করেন। ৪. এইদিনই হযরত নূহ্ (আ.) এর নৌকা মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়ে তুরস্কের জুদি নামক পর্বতে নোঙ্গর করে। ৫. হযরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকু-ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ৪০ দিন পর সেখান থেকে ১০ মুর্হরম মুক্তি লাভ করেন। ৬. দীর্ঘ ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগের পর হযরত আইয়ুব (আ.) দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করেন। ৭. হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর পুত্র হযরত ইউসুফ (আ.) তার ১১ ভাইয়ের ষড়যন্ত্রে কূপে পতিত হন এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ ৪০ বছর পর ১০ মুর্হরম তারিখে পিতার সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন। ৮. হযরত ইদ্রিস (আ.) এইদিনে সশরীরে জান্নাতে প্রবেশ করেন। হযরত মূসা (আ.) এইদিনে তাওরাত কিতাব লাভ করেন, ফিরআউনের অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি লাভ করেন এবং এইদিনে অভিশপ্ত ফিরাউনকে লোহিত সাগরে ডুবিয়ে মারা হয়। ৯. হযরত দাউদ (আ.) আল্লাহ্র কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করেন এবং বিশেষ সম্মানে ভূষিত হন এইদিনে। ১০. হযরত সুলায়মান (আ.) তার হারানো রাজত্ব পুনরুদ্ধারে সক্ষম হন এইদিনে। ১১. পবিত্র আশুরার দিনে ফিরাউনের স্ত্রী বিবি আসিয়া শিশু মুসা (আ.)-কে গ্রহণ করেন। ১২. এইদিনে হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন এবং তার জাতির লোকেরা তাকে হত্যা চেষ্টা করলে আল্লাহ্পাক তাকে আসমানে উঠিয়ে নেন। ১৩. কারবালার প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) পরিবার-পরিজনসহ শাহাদত বরণ। এছাড়াও হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে, মুর্হরম মাসের ১০ তারিখ আশুরার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।

ইসলামের ইতিহাসে ১০ মুর্হরম তারিখটির নানা গুরুত্ব ও তাৎপর্য থাকলেও কারবালায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণেই বর্তমান দুনিয়ার মুসলমানরা দিনটি পালন করে থাকে। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, হযরত আমিরে মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তার পুত্র ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ষড়যন্ত্র ও শক্তি ব্যবহারের পথ বেছে নেন। চক্রান্তের অংশ হিসেবে মহানবি হযরত মুহম্মদ (সা.) এর আরেক দৌহিত্র হযরত ইমাম হাসান (রা.)-কে বিষপান করিয়ে হত্যা করা হয়। একই চক্রান্ত ও নিষ্ঠুরতার ধারাবাহিকতায় ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন ও ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদত বরণ করেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। তাদের হত্যার ক্ষেত্রে যে নির্মম-নিষ্ঠুর পথ বেছে নেওয়া হয়, ইতিহাসে তার নজির বিরল। অসহায় নারী ও শিশুদের পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়নি ইয়াজিদ বাহিনী। বিষাক্ত তীরের আঘাতে নিজের কোলে থাকা শিশুপুত্র আলী আসগরের মৃত্যুর পর আহতাবস্থায় অসীম সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে শহিদ হন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। এই ঘটনার মূল চেতনা হচ্ছে ক্ষমতার লোভ, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য চক্রান্ত ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর উদ্দেশ্য ও আদর্শ বাস্তব জীবনে অনুসরণ করাই হবে এ ঘটনার সঠিক মর্ম অনুধাবনের বহিঃপ্রকাশ। অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আপোসহীন অবস্থান ও ত্যাগের যে শিক্ষা কারবালা মানবজাতিকে দিয়েছে, তা আজকের দুনিয়ার অন্যায় ও অবিচার দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

আশুরার দিনে অনেক আম্বিয়ায়ে কিরাম আল্লাহ্পাকের সাহায্য লাভ করেন এবং কঠিন বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি লাভ করেন। এই সাহায্যের শুকরিয়া হিসেবে নবি-রাসূলগণ এবং তাদের উম্মতগণ এ দিনে রোযা পালন করতেন। যেহেতু আশুরার দিনটি অত্যন্ত পবিত্র ও তাৎপর্যময় দিন। তাই এ দিনে উম্মতে মুহম্মদী হিসেবে বিশেষ নেক আমল করা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ। মুর্হরম মাসে তথা মুর্হরমের ১০ তারিখে (পবিত্র আশুরার দিন) রোযা রাখা সম্পর্কে অনেক বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোযা রাখছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? তোমরা এ দিনে রোযা রাখো কেন? তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ্তায়ালা বনি ইসরাইলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে নাজাত দান করেন। ফলে এ দিনে মুসা (আ.) শুকরিয়া আদায় স্বরূপ রোযা রাখতেন। আল্লাহ্র রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসার অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিনে নিজেও রোযা রাখলেন এবং উম্মতদেরকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। (সহিহ্ মুসলিম: ১১৩০, সহিহ্ বুখারি: ৩৯৪৩)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি (সা.) ইরশাদ করেছেন: আশুরার দিনে পূর্বের নবি (আ.)গণ রোযা পালন করতেন, সুতরাং তোমরাও এদিনে রোযা পালন করো। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা)।

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আশুরা ও রমযানের রোযা সম্পর্কে যেরূপ গুরুত্ব প্রদান করতেন, অন্য কোনো রোযা সম্পর্কে সেরূপ গুরুত্বারোপ করতেন না। (সহিহ বুখারি: ২০০৬)। অন্য এক হাদিসে নবি (সা.) বলেছেন, আশুরার রোযার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, আল্লাহ্ তা‘আলা এ উসিলায় অতীতের এক বছরের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ্ মুসলিম: ১১৬২)। হযরত আবু কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সা.)কে আশুরার রোযার ফযিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এই রোযা বিগত বছরের গুনাহ্ মুছে দেয় (মুসলিম: ১১৬২)। হযরত আবু মূসা আশয়ারি (রা.) বর্ণনা করেন, আশুরার দিন ইয়াহুদিরা ঈদ পালন করতো। রাসূল (সা.) সাহাবিদের সেদিন রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন। (সহিহ্ বুখারি: ২০০৫, সহিহ্ মুসলিম: ১১৩১)। হযরত যাবের (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আমাদের আশুরার দিনে রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে নিয়মিত তিনি আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমযানের রোযা ফরয করা হলো, তখন আশুরার রোযার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না এবং নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না। (সহিহ্ মুসলিম: ১১২৮)। হযরত হাফসা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ৪টি কাজ কখনো ছেড়ে দিতেন না। তার মধ্যে একটি আশুরার রোযা। (সুনানে নাসায়ী)।
তবে নবি করিম (সা.) ১০ মুহররমের সঙ্গে ৯ বা ১১ মুহররম আগেপিছে মিলিয়ে দু’টি রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) যখন আশুরার রোযা রাখছিলেন এবং অন্যদের রোযা রাখতে বলেছিলেন তখন সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল, এ দিনকে তো ইহুদি-নাসারারা সম্মান করে। তখন নবিজি এ কথা শুনে বললেন, ইনশাআল্লাহ্ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও রোযা রাখব। বর্ণনাকারী বললেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ইন্তিকাল হয়ে যায়। (সহিহ্ মুসলিম: ১১৩৪)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি আশুরার দিনে আপন পরিবার-পরিজনের মধ্যে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা পুরো বছর তার রিযিকে বরকত দান করবেন। (তিবরানী শরীফ: ৯৩০৩)। তাছাড়া এ দিনে গোসল করা ও চোখে সুরমা লাগানো মুস্তাহাব। মহানবি (সা.) বলেন: যে ব্যক্তি আশুরার দিনে গোসল করল এবং চোখে সুরমা লাগাল, সে আর ওই বছর রোগাক্রান্ত হবে না। (বায়হাকি)।

পূর্বে কৃত গুণাহ্-অপরাধের জন্য কায়মনোবাক্যে মহান আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা তথা তাওবা-ইস্তিগফার করা যে কোনো সময়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের জন্য বিশেষ কিছু সময় ও মৌসুম দিয়েছেন, যে সময় বান্দা অধিক ইবাদত ও ভালো কাজ করে সহজেই আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জন করতে পারে। বান্দার উচিত সেই প্রত্যাশিত সময়গুলোর সঠিক মূল্যায়ন করা। মুর্হরমের এই পুরো মাসটি, বিশেষ করে এ মাসের ১০ তারিখ এমনই এক বরকত ও পূণ্যময় দিন, যেদিন তওবা কবুল হওয়া, নিরাপত্তা এবং অদৃশ্য সাহায্য লাভ করার কথাও রয়েছে। তাই এদিন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উচিত বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করে মহান আল্লাহ্র রহমত কামনা করা। এক সাহাবি নবিজি (সা.) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেনÑ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! রমযানের পর আপনি কোন মাসে রোযা রাখতে বলেন? নবিজি বললেনÑ তুমি যদি রমযানের পর রোযা রাখতে চাও তাহলে মুর্হরমে রোযা রেখ। কেননা মুর্হরম হচ্ছে আল্লাহ্র মাস। এ মাসে এমন একদিন আছে, যেদিন আল্লাহ্ তা‘আলা (অতীতে) অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও অনেকের তাওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিযি: ৭৪১)।

আমাদের এই উপমহাদেশের সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুর্হরম মাস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। যেমনÑ এ মাসে জমিতে হাল-চাষ না করা, মাটি না কাটা, বাঁশ-ঘাস-কাঠ ইত্যাদি না কাটা, বিয়েশাদি না করা, নতুন ও সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছেদ না পরা, সাদা অথবা কালো কাপড় তথা শোকের পোশাক পরা, নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ না করা, গোশ্ত না খাওয়া ও নিরামিষ আহার করা, কোনো শুভ কাজ বা ভালো কাজের সূচনা না করা, সব ধরনের আনন্দ উৎসব পরিহার করা, কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে না যাওয়াÑ এগুলো সবই কুসংস্কার ও কুরআন-হাদিসের সাথে এসবের কিানো সংশ্লিষ্টতা নেই।

লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও সহকারী অধ্যাপক, শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ, শেরপুর।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড

পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও

পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও

বেতাগী দরবারে ওরশ আজ

বেতাগী দরবারে ওরশ আজ

সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা

সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা

কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে

কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে

নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি

নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি

বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ

বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ

শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী

শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী

মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড

মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড

গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা

গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা

নিহত রুদ্রের নামে শাবির প্রধান ফটকের নামকরণ

নিহত রুদ্রের নামে শাবির প্রধান ফটকের নামকরণ

তিনটি গুলি খেয়ে বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেটা মরে গেছে’

তিনটি গুলি খেয়ে বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেটা মরে গেছে’

মালয়েশিয়া ও প্রবাসী আর্ট মেলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া ও প্রবাসী আর্ট মেলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকুন- ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এমপি

সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকুন- ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এমপি

কুড়িগ্রামে তিন লাশ দাফন, পরিবারের আহাজারি

কুড়িগ্রামে তিন লাশ দাফন, পরিবারের আহাজারি

কুষ্টিয়ায় বছরে পাটের আবাদ কমেছে ৯০ হাজার বিঘা জমিতে

কুষ্টিয়ায় বছরে পাটের আবাদ কমেছে ৯০ হাজার বিঘা জমিতে

ভাঙন আতংকে যমুনা পাড়ের মানুষ

ভাঙন আতংকে যমুনা পাড়ের মানুষ

দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলা

দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলা

চুয়াডাঙ্গায় মাদরাসাছাত্র হত্যা মামলায় আসামির যাবজ্জীবন

চুয়াডাঙ্গায় মাদরাসাছাত্র হত্যা মামলায় আসামির যাবজ্জীবন

সাভারে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কেউ ছাত্র ছিল না

সাভারে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কেউ ছাত্র ছিল না