হক-বাতিলের লড়াই
২৮ জুলাই ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০২ এএম
এখন থেকে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে এক অজ্ঞাত কবি আরবী কবিতায় কারবালার ঘটনার আভাস দিয়েছিল। পরবর্তীকালে কারবালার খুনিদের প্রায় সকলের জিল্লতির সাথে অপমৃত্যু ঘটেছে। যারা অবশিষ্ট ছিল তাদের মোখতার সাকাফী খুঁজে খুঁজে হত্যা করে, যদিও এ ভ- পরবর্তীকালে নবুয়তের মিথ্যা দাবি করে পরাজিত হয়। এভাবে কারবালার খুনিরা দুনিয়াতেই জাহান্নামের ক্ষুদ্র শাস্তি ভোগ করেছে।
কবির ভবিষ্যদ্বাণীটি নিম্নরূপ:
‘আতারজু উম্মাতুন, কাতালাত হুসাইনান,
সাফাআতা জাদ্দিহি ইয়াওমুল হিসাবি।’
অর্থ: তুমি কি এমন উম্মত সম্পর্কে জানতে চাও, যারা হোসাইন (রা.) কে হত্যা করেছে, তারা কেয়ামতের দিন তার নানাজানের শাফাআত আশা করতে পারে?
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আবির্ভাবেরও পাঁচশত বছর পূর্বে বর্ণিত কবিতাটি একটি এবাদতগাহের প্রাচীরে লেখা ছিল। বলা হয়ে থাকে যে, কারবালা দিবসে ইয়াজিদ ইবনে মোয়াবিয়া, সিমার প্রমুখ সৈন্যসহ দামেস্কে অবস্থান করছিল। তারা সবাই যাত্রা করে এবং পথে একটি এবাদতগাহে আরাম করতে প্রবেশ করে। হঠাৎ প্রাচীরে লেখা উক্ত কবিতাটি তারা দেখতে পায়। সৈন্যরা পাদ্রীকে জিজ্ঞাসা করে, কবিতাটি কে এবং কখন রচনা করেছে? পাদ্রী জবাবে বলেন, এ কবিতা তো রসূলুল্লাহ (সা.) এর আবির্ভাবেরও পাঁচশত বছর পূর্ব হতে এখানে লিখিত রয়েছে।
সৃষ্টিজগতের বহু ঘটনার স্মারক-প্রতীক, বিশ্বের আদিকালের অসংখ্য ঐতিহাসিক বিজয়, নাজাতের সাক্ষী হয়ে আছে হিজরি সনের ১০ মুহররম। হিজরি ৬১ সালের ১০ মুহররম শহিদে কারবালার ঘটনাবলীও যুক্ত করেছে। এর সঙ্গে এটা এদিনের ধর্মীয় তাৎপর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কারবালার শোকাবহ ঘটনার প্রভাব অন্য সব কিছুকে এতই ম্লান করে দিয়েছে যে, মাওলানা আজাদের ভাষায়, ‘আমরা এর অন্যান্য দিকগুলো ভুলে যাই। এমনকি হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) কোন আদর্শের জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন, মুহররম উদযাপনে আমরা তারও খেয়াল করি না, অথচ তাঁর (ইমামের) ভাষ্য থেকেই তা সম্যকরূপে অবগত হওয়া যায়।’ কারবালার অভিমুখে যাত্রা করার পর পথে এক ভাষণে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) বলেছিলেন, ‘হে লোক সকল! রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোন বাদশাহর সাক্ষাত লাভ করে, যে আল্লাহর হারামকে হালাল মনে করে, আল্লাহর ওয়াদা ভঙ্গ করে, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতের বিরুদ্ধাচারণ করে, আল্লাহর বান্দাদের প্রতি অত্যাচার ও অন্যায় আচরণ করে, আর যে ব্যক্তি ঐ বাদশাহ-এর কার্যকলাপ দেখা সত্ত্বেও কোন কথা বা কাজের দ্বারা তার বিরোধিতা করে না, তাহলে আল্লাহতা’লারই দায়িত্ব যে, তিনি সেই অত্যাচারী জালেম বাদশাহ-এর সাথে তাকেও সেই স্থানে (দোজখে) পাঠাবেন। আপনারা এ কথা জানেন যে, ইয়াজিদ এবং তার শাসক কর্মকর্তাগণ শয়তানের অনুসরণ করত রহমানের আনুগত্য ত্যাগ করেছে, দুনিয়ায় ফ্যাসাদ বিস্তার করেছে, আল্লাহর সীমালংঘন করেছে, ইসলামী বায়তুল মালকে নিজেদের অধিকার মনে করেছে, আল্লাহর হারামকে হালাল মনে করেছে এবং হালালকে হারাম মনে করেছে’ (কামেল ইবনে আছিরে হযরত ইমামের পূর্ণভাষণ রয়েছে)।
কারবালার ময়দানে ইয়াজিদ-সেনাদের হাতে অবরুদ্ধ অবস্থায় ইমাম হোসাইন (রা.) তাঁর সঙ্গী-সাথীদের প্রতি আবেদন জানান, তাঁকে ছেড়ে চলে যেতে। কারণ, শত্রুরা শুধু তাঁকেই চায়। তাঁর একথা শুনে আহলে বায়াতের সকলেই একবাক্যে বলে উঠেন যে, ‘আল্লাহর কসম! আমরা কখনও এটা করব না, আপনার পরে আল্লাহ যেন আমাদেরকেও জীবিত না রাখেন।’ ইমাম একে একে প্রত্যেককে চলে যাওয়ার অনুমতি দান করেন কিন্তু সকলেরই এককথাÑ তারা নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ করার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন। ইমামতনয় আলী আকবর বললেন, ‘আব্বাজান, আমরা কি সত্যের উপর নই?’ ইমাম বললেন, ‘অবশ্যই আমরা সত্যের উপর আছি’ আলী আকবর বললেন, ‘তাহলে আমাদের ভয় কিসের? আমরা সত্যের জন্য লড়ব এবং মরব।’ ইমাম এ জবাবের জন্য পুত্রকে সাবাস জানালেন এবং বললেন, ‘তুমি পুত্র হিসেবে পিতার সঠিক হক আদায় করেছ।’
চরম মুহূর্তেও ইমাম হোসাইন (রা.) আশুরার পবিত্র রাতের কথা ভুলেন নাই। তিনি শত্রুর কাছে ঐ রাতের জন্য যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব দিলে তা গৃহীত হয়। উদ্দেশ্য, এবাদত বন্দেগী, অছিয়ত, এস্তেগফার, নামাজ, দোয়া ইত্যাদিতে রাত অতিবাহিত করা। বোনকে তিনি উপদেশ দেন, ‘আমি তোমাকে আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমার শাহাদতে তোমরা কাপড় ছিড়বে না, বুক থাপড়াবে না, উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করবে না, চিৎকার করবে না।’ আশুরার রাতে তিনি এবাদতে লিপ্ত থাকেন। পরের দিন যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি জোহরের নামাজ ছালাতুল খাওফের নিয়ম অনুযায়ী আদায় করেন।
কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনায় হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও আহলে বায়াতসহ তাঁর ভক্ত সঙ্গীদের শাহাদত বরণের ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলে বুঝা যাবে, বাতিলের বিরুদ্ধে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সেদিন ইমাম আত্মত্যাগ করেন। কারবালার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় থেকে শাহাদাতের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর সাথী-সঙ্গী ও পরিবারের ছোট বড় সকলের আনুগত্যের অতুলনীয় মনোভাব লক্ষ করলে দেখা যায় যে, আদর্শের জন্য আত্মত্যাগী ইমামের ন্যায় তারা সবাই রেখে গেছেন বিরল দৃষ্টান্ত।
উপসংহারে বলব, একদিকে মহররম আশুরার ধর্মীয় তাৎপর্য, অপরদিকে শহীদে কারবালার মহান আদর্শÑ সবটাই একাকার হয়ে কোনটি আশুরা আর কোনটি কারবালা তা পৃথক করার উপায় নেই। ব্যবধানকে এমনভাবে এক ও অভিন্ন করে ফেলা হয়েছে যে, এখন আশুরা মানে কারবালা আর কারবালা মানে আশুরা হয়ে গেছে। এখানেই শুরু হয়েছে আদর্শ থেকে বিচ্যুতি এবং সত্যের বিকৃতি। কুসংস্কার এবং কুপ্রথার কুয়াশায় ফোরাত থেকে সিন্ধু, পদ্মা, মেঘনা পর্যন্ত তলিয়ে গেছে আশুরা কারবালার মহান আদর্শ।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি