ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

কুড়িগ্রামে নদীভাঙনে বিলীন ৯টি স্কুল ঝুঁকিতে আরো ১০টি

Daily Inqilab শফিকুল ইসলাম বেবু

০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

কুড়িগ্রামে তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত ভাঙনে চলতি বছর ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৯টি স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো ১০টি। ফলে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হবার পাশাপাশি কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বন্যা ও ভাঙনের কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতার্রা জানিয়েছেন, বিকল্প ব্যবস্থায় পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর ঝুঁকিতে থাকা স্কুল রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই গত এপ্রিল মাস থেকে কুড়িগ্রামের তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন পয়েন্টে শুরু হয়েছে ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি নদীগর্ভে চলে গেছে ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি স্কুল এন্ড কলেজ। এরমধ্যে চিলমারী উপজেলার ৪টি, সদর ও উলিপুর উপজেলায় দুটি করে স্কুল রয়েছে।
যেসব স্কুল ভাঙনকবলিত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, চিলমারী উপজেলার চর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর খাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর মুদাফৎ কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজ, সদর উপজেলার ঝুনকারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গোয়ালপুরি ম-লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভগবতিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, উলিপুর উপজেলার পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর সন্তোষ অভিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ভাঙনকবলিত স্কুলগুলোর মধ্যে কয়েকটির মালামাল পার্শ্ববর্তী ফাঁকা স্থানে রাখা হলেও বিকল্প জায়গার অভাব ও ঘন ঘন বন্যার কারণে পুরোদমে শুরু করা যায়নি পাঠদান কার্যক্রম। ফলে শিশুদের লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সদর উপজেলার ঝুনকার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হবার পর একই গ্রামের পার্শ্ববর্তী চালাঘর তুলে অস্থায়ীভাবে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। চিলমারী উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার একেএম জাকির হোসেন জানান, দফায় দফায় বন্যা সত্ত্বেও ভাঙনে বিলীন তিনটি স্কুল অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করে ষাণ¥াসিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।
অপারদিতে ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চিলমারীর উত্তর ওয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অংশ বিশেষ ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে। এছাড়া একই উপজেলার ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজারহাটের চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর উপজেলার চর সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাটকালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোড়ারচর সরকারি প্রাথমিক ও কালিরআলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
এদিকে ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা স্কুলগুলোতে প্রতিনিয়ত উদ্বেগজনকহারে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমছে। কোনো কোনো স্কুলে উপস্থিতি নেমে এসেছে ৫০ ভাগের নিচে। নিরাপত্তার অভাব ও ভাঙনের শিকার হয়ে বিভিন্ন স্থানে পরিবার চলে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ভগবতিপুরের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান জানান, স্কুল ভেঙে যাওয়ার পর কোনোমতে একজনের জমিতে চালাঘর তোলা হলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেই বললেই চলে।
ছাটকালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর জানান, এবারের বন্যায় স্কুলের মাঠের একটি অংশ ধসে গেছে। ধরলার ঘূর্ণিস্রোত-ভাঙনে স্কুলটি যেকোন সময় বিলীন হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনকে বারবার জানানোর পর জিও ব্যাগ ফেলা হলেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়া চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাওসার হোসেন ও আশা মনি আক্তার জানায়, স্কুলটি ভেঙে গেলে তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ আশেপাশে কোনো স্কুল নেই। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুব হোসেন জানান, ১১০ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ৫০ জন কমবেশি উপস্থিত থাকে, বাকিরা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার জানিয়েছেন, যেসব স্কুল নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে, সেখানে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অস্থায়ীভাবে চালাঘর তুলে পাঠদান অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বরাদ্দ আসলে স্কুল ভবন নিমার্ণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ায় চর সহিষ্ণু কয়েকটি স্কুল ইতোমধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অন্যগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলে স্কুলগুলোকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার চেষ্টা চলছে।

 


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা