ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

খুন ধর্ষণ ও মাদকের ভয়াল অপরাধের জনপদ কুমিল্লা

Daily Inqilab সাদিক মামুন

০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রাচীন ঐতিহ্যের জেলা কুমিল্লায় বাড়ছে অপরাধমূলক কর্মকা-ের বিস্তৃতি। সেই সঙ্গে বেড়েছে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতাও। ন্যায়বিচারের জন্য সামাজিক অনুশাসন কিংবা আইনের আশ্রয় না নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা আধিপত্য বিস্তার, আর্থিক লোভ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক আক্রমণাত্মক কার্যক্রমের বহিঃপ্রকাশে খুন এবং পরকীয়ার ঘটনায় শিশুকে মেরে ফেলা ও তুচ্ছ ঘটনায় গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলার মতো অপরাধও বেড়েছে এই কুমিল্লায়। গত দুই যুগের প্রতিটি বছরের ন্যায় ২০২৩ সালেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। জেলা পুলিশের অপরাধচিত্রের আলোকে গেলো বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৯৫টি খুনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। একটি খুনের মামলার তদন্ত শুরু না হতেই আরেকটি খুনের ঘটনাও এখানে সংঘটিত হয়েছে।
গেলো বছরের প্রতি মাসেই ঘটেছে ৯/১০টি খুনের ঘটনা। হত্যাকা-ের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে মনে হয় এখানে নুনের চেয়ে খুন সস্তা। কেবল ৯৫টি খুনই নয়, ১২৮টি ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে এখানে। তাছাড়া ভারত সীমান্তবেষ্টিত এ জেলায় গেলো বছরে ২ হাজার ৮৩৭টি মাদকের মামলা হয়েছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিগত বছরগুলো মতো ২০২৩ সালও কুমিল্লা পরিণত হয়েছিল খুন, ধর্ষণ ও মাদকের ভয়াল অপরাধযজ্ঞের জনপদে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশের অপরাধচিত্রের তথ্যানুসারে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লার ১৮টি থানা এলাকায় ৯৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, জুলাই মাসে ১০টি করে ও সেপ্টেম্বরে ১১টি এবং অন্যান্য মাসে ৮/৯টি করে খুনের ঘটনা ঘটে। এসব খুনের মধ্যে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এমন সংখ্যাও কম নয়। এর মধ্যে দাউদকান্দির গৌরিপুরে তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেনকে বোরকাপরা তিন দুর্বৃত্ত গুলি করে হত্যা করে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজ দলের লোকেরাই তাকে খুন করে। এ ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এছাড়াও মুরাদনগরে ছাগলে কাঁঠাল পাতা খাওয়াকে কেন্দ্র করে, বুড়িচংয়ে বাড়ির রাস্তা নিয়ে বিরোধের জেরে, বরুড়ায় চুরির অভিযোগ এনে যুবককে গাছে ঝুলিয়ে পেটানো এবং কুমিল্লা শহরের ডুমুরিয়া চানপুর এলাকায় যুবককে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া লাকসামে মাদকের বিরোধিতা করায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন ও বুড়িচংয়ে গলা টিপে শিশুকে ও তিতাসে পূর্ব বিরোধের জেরে গলা কেটে আওয়ামী লীগ নেতাকে খুন করা হয়।
কেবল একের পর এক খুনই নয়, গেলো বছরে কুমিল্লায় বেড়েছে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা। প্রেমঘটিত, নিকটাত্মীয়, স্কুল, মাদরাসার শিক্ষক এর মতো বিশ্বাসের জায়গাগুলোতে পচন ধরায় ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে। যার ফলে বছরজুড়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১২৮ জন নারী ও শিশু। অপরদিকে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেও সীমান্তবর্তী জেলা কুমিল্লায় মাদকের ভয়াবহতা দমানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন না কোন সংস্থা গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ নানাধরনের মাদক আটক করছেন। কিন্তু কমছে না মাদকের পাচার ও বেচাবিক্রি। গেলো বছরে পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থা মাদক পাচার ও বেচাবিক্রির ঘটনায় ২ হাজার ৮৩৭টি মামলা করেছেন।
হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন অপরাধের তথ্য উদঘাটন বা জড়িতদের গ্রেফতার নিয়ে প্রায় সময় আয়োজিত প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেছেন, খুনের ঘটনাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কারণে তা ঘটনা ঘটছে না। বরং খুবই তুচ্ছ কারণে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। পুলিশ চেষ্টা করে যেকোনো অপরাধ সংগঠিত হবার পর দ্রুত সাড়া দিতে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে। আর মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সবসময়ই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তবে মাদকের প্রবণতারোধে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। অনেকে যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে শাস্তি দিচ্ছেন তাদের আইন প্রয়োগের বিষয়ে অজ্ঞতা আছে। আইন প্রয়োগ করার কার কতটুকু ক্ষমতা সেটাও জানতে হবে। জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তি যারা আছেন তাদেরকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন কুমিল্লার সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান বলেন, সামাজিক অস্থিরতা ও অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। তাই সমাজে বসবাসকারিদের একে অন্যের প্রতি সহনশীল হতে হবে। সম্পর্কের উত্তরণ ঘটাতে হবে। এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, টহল ব্যবস্থা জোরদার এবং সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পরামর্শ আমলে নেয়ার জন্য থানাগুলোতে নাগরিক সেবার মান বাড়াতে পারলে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে এবং তাতে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘটিত হত্যাকা- ও অন্যান্য অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা