বিভিন্ন ধর্মে রোজা
১২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৬ এএম
![](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024March/15-20240311215623.jpg)
হিজরী দ্বিতীয় সালে সিয়ামে রমজান বা রমজানের রোজার বিধিবদ্ধ বিধান নাজিল হয় উম্মতে মুহম্মদীর প্রতি। কিন্তু এর পটভূমি অত্যন্ত ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। আল্লাহ তায়ালা কুরআনের যে আয়াতে এই সিয়ামের নির্দেশ দেন সে আয়াতে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেন, পূর্ববর্তীদের ওপরেও এরূপ সিয়ামের বিধান ছিল। কুরআনের ভাষায়: ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি সিয়াম বিধিবদ্ধ করা হলো, যেরূপ তা বিধিবদ্ধ ছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাক্বওয়া হাসিল করতে পার।’ (সূরা আল বাকারাহ : ১৮৩ আয়াত)। পূর্ববর্তী জাতি ও ধর্মগুলোতে যে সিয়ামের অনুশীলন ছিল, তা এক ঐতিহাসিক বাস্তবতা। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা বিভিন্ন ধারার, বিভিন্ন উপলক্ষের বহুবিধ সিয়ামের ধারাবাহিকতায় সিয়ামে রমজানের পরিশীলিত প্রচলন ঘটে।
প্রাগৈতিহাসিককালেও রোজা তথা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উপবাস প্রথা মানবসমাজে বিদ্যমান থাকা অস্বাভাবিক নয়। সমাজবিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রাচীনকালের মানুষ তাদের পানাহার থেকে বিরত থেকে তা তারা তাদের মৃতদের উদ্দেশে উৎসর্গ করত। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত দার্শনিক স্পেন্সার লিখেছেন: রোজার প্রাথমিক মানদণ্ড হয়ত এভাবে হয়ে থাকবে যে, আদিম বন্যযুগের মানুষ স্বভাবতই ক্ষুৎ-পিপাসায় আক্রান্ত থাকতেন। তারা পানাহার বর্জন করে মনে করতেন, ‘আমাদের আহার্য বস্তু আমাদের পরিবর্তে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের মৃতদের নিকট পৌঁছে যায়।’ (দ্র. এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা: খণ্ড. ১০, পৃ. ১৯৪, সংস্করণ-১১) প্রাচীনকালের মানুষ সম্পর্কে উপরোক্ত ধারণা যে অমূলক নয়, তার বড় প্রমাণ হচ্ছে জগতে এমন কোনো ধর্ম, সম্প্রদায় বা জাতির অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, যাদের মধ্যে কোনো না কোনভাবে রোজার প্রচলন ছিল না। তাই এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে: ‘রোজার বিধি-বিধান ও আদায় পদ্ধতি, পরিবেশ, আবহাওয়া, সামাজিক ব্যবস্থা ও সভ্যতা বিবর্তনের দরুন যদিও বিভিন্নরূপে পরিদৃষ্ট হয়, তথাপি আমরা অতিকষ্টে এমন কোনো ধর্মের নাম উত্থাপন করতে পারব না, যেখানে রোজাকে ধর্মীয় বিধানের অন্তর্ভুক্ত বলে স্বীকার করা হয়নি। বস্তুত, রোজা একটি ধর্মীয় প্রথা হিসাবে সকল স্থানেই স্বীকৃত আছে।’ (এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা: খণ্ড. ১০, পৃ. ১৯৩-৯৪, সংস্করণ-১১)
জগতের অনেকগুলো পুরাতন ধর্মের আদিনিবাস ভারতবর্ষ। এই ভারতবর্ষে উদ্ভাবিত বা প্রচলিত সকল ধর্মেই উপবাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণদের জন্য প্রতিমাসের ১১ ও ১২ তারিখে একাদশীয় উপবাস, যোগীদের জন্য ৪০ দিনব্যাপী উপবাস ছাড়া বহু ধরনের উপবাসের সন্ধান মেলে হিন্দু ধর্মে। জৈন ধর্মে একটি উপবাস ৪০ দিনব্যাপী প্রলম্বিত হয়। জৈন অনুসারীরা তাদের বার্ষিক আরাধনাকালে কয়েক সপ্তাহব্যাপী উপবাস পালন করে থাকে। বৌদ্ধ ধর্মে পানাহার বর্জন করে যথাবিহিত উপবাস যাপন করা ধর্মের অপরিহার্য অঙ্গ। প্রাচীন মিসরীয়দের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেও রোজা বা উপবাস প্রচলন-পরিলক্ষিত হয়। পার্সিয়ান ধর্মে ধর্মীয় নেতাদের জন্য পাঁচসালা উপবাসব্রত অবশ্য পালনীয় ছিল। প্রাচীন গ্রিকদের মধ্যে হিসমোফেরিয়া মাসের ৩য় তারিখে কেবলমাত্র নারীদের জন্য রোজার বিধান দেখা যায়। ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মেও যে রোজার বিধান বিদ্যমান এবং বর্তমানকালেও অব্যাহত আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হযরত আদম (আ)-এর শরীআতে রোজার বিধান না থাকার কথা নয়। জান্নাতে তিনি অযাচিত ফলমূল ও অন্যান্য আহার্য উপভোগ করেন অবাধে। তিনি তাঁর ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকালে রোজা ও ইতিকাফ অবস্থায় ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তাফসীরে ইবনে কাসীরে উল্লেখ আছে, হজরত নূহ (আ.) থেকে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলের শরীআতে প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে তিনটি করে রোজার প্রচলন ছিল। হজরত মূসা (আ.), হযরত দাউদ (আ.), হযরত ঈসা (আ.) ও হযরত ইয়াহিয়া (আ.) যে রোজা রাখতেন তা বাইবেল ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বিবৃত আছে। তাঁদের উম্মতদের প্রতিও ঐরূপ রোজার বিধান ছিল। হজরত মুসা (আ.) তাঁর প্রতি অবতারিত তাওরাত গ্রহণকালে চল্লিশ দিনব্যাপী রোজা রাখছিলেন বলে কুরআনে আভাস পাওয়া যায়। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে বিস্তারিত বর্ণনা করে উল্লেখ করা হয়, ওই সময় মুসা (আ.) ইতিফাক ও রোজা অবস্থায় ছিলেন। জাবালে তুরে তাঁর উক্ত রোজার সূত্র ধরে চল্লিশ দিনব্যাপী রোজা রাখা ইহুদি ধর্মে উত্তম বিবেচনা করা হয়। চল্লিশ দিনের শেষ রোজা অর্থাৎ চল্লিশতম রোজাটি তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অবধারিত ছিল। এই চল্লিশতম রোজাটি তাদের বর্ষপঞ্জির সপ্তম মাস তাশরীন-এর দশম তারিখে পড়ত। আরবিতে দশমকে বলা হয় আশুরা। ‘তাশরীন’-এর উক্ত দশম তারিখের রোজা রাসূলুল্লাহ (সা.) আরব বর্ষপঞ্জিতে মুহররমের দশম তারিখে অনুষ্ঠিত হতে দেখতে পান। মূসা (আ.)-এর স্মৃতিবাহী উক্ত আশুরা পরবর্তীতে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমগ্র জগতব্যাপী একটি সর্বজনীন পালনীয় দিবসে পরিণত হয়। জাহিলিয়া যুগে মক্কার কাফির-মুশরিকরাও উক্ত আশুরার রোজা পালন করত। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)ও মক্কী জিন্দেগিতে আশুরার রোজা পালন করতেন। তিনি প্রতিমাসের তিন রোজাও পালন করতেন। কিন্তু তিনি এসব রোজা তাঁর অনুসারী নওমুসলিমদের পালন করতে নির্দেশ দিতেন না। তবে তিনি মদীনায় আগমনের পরে এসব রোজার প্রতি সাহাবীদের উৎসাহিত করে তুলতেন। কোনো কোনো হাদিসে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা ফরজ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো মুফাসসির এরূপও মত পোষণ করেন যে, সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে সাধারণভাবে যে রোজা ফরজের নির্দেশ আসছে উক্ত রোজা বলতে আশুরা ও প্রতিমাসের তিন রোজাকে বুঝানো হয়েছে। আর রমজানে রোজা ফরজ হয় ‘শাহরু রমাদানাল্লাযী উনযিলা ফিহিল কুরআন’ আয়াত নাজিলের পরে। উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে: ‘ফামান শাহিদা মিনকুমুশ্ শাহরা ফাল ইয়াসুমহু।’ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই (রমজান) মাস পায়, সে যেন এই মাসে রোজা রাখে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) হেরাগুহায় ধ্যানমগ্ন থাকাকালে সিয়ামরত ছিলেন বলে অধিকাংশ সিরাত গবেষকের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। হেরাগুহায় অবস্থানকালে তাঁর যে বিশেষ ইবাদতের কথা হাদিসে জানা যায়, তাতে সহজেই অনুমান করা চলে তিনি তখন সিয়াম ও ইতিফাক যাপন করতেন। তাছাড়া রোজা নামের এই বিশেষ ইবাদতটি উক্ত জাহিলিয়াত সমাজেও বহুলভাবে পরিচিত ছিল। আল্লাহর প্রত্যাদেশ লাভের পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) লোকদের আল্লাহর পথে আহবান করেন। শরীআতের ব্যাপকভিত্তিক আমলের কথা তখন তিনি তাদের বলেননি। মক্কার সুদীর্ঘ তের বছরের জিন্দেগিতে তিনি অভ্যাসবশত রোজা রেখেছেন, তাঁর অনুসারীরাও পারিবারিক ও সামাজিক প্রথামাফিক হয়ত রোজা রেখেছেন। কিন্তু বিধিবদ্ধভাবে রোজা রাখার নির্দেশ এ সময় আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকে আসেনি। কারণ, প্রতিকূল পরিবেশে সিয়াম অনুশীলনের পরিবেশ তাদের ছিল না। এরচেয়েও বড় কারণ হচ্ছে, ক্ষুৎ-পিপাসা ও যৌনক্ষুধার আকর্ষণে এবং দুনিয়ার মোহে যেসব রোগ-বালাই সৃষ্টি হওয়ার কথা সেসব রোগ-বালাই মক্কার প্রতিকূল পরিবেশে তাদের মধ্যে ছিল না। অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে মুক্তির জন্য যদি রোজার বিধান আসত তবে তা মক্কী জিন্দেগিতে ফরজ হওয়ার উপযোগী বেশি ছিল। কারণ, তখন মক্কার মুসলিমরা চরম অভাব ও দারিদ্র্যের মধ্যে কালাতিপাত করছিলেন। রোজার উদ্দেশ্য যেহেতু মানুষের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক পরিশুদ্ধি, অন্যায় ও নৈতিক অধঃপতন থেকে মানবতার মুক্তি ও উন্নতি; সেহেতু তা মুসলমানদের পার্থিব বিজয়, সম্পদ ও ক্ষমতা লাভের সূচনালগ্নে সেই মদীনা জীবনের প্রারম্ভে অপরিহার্য করে দেয়া হয়। ইসলামের বিজয়ে দলে দলে আগত মুসলিমদের তাক্বওয়া তথা আধ্যাত্মিক উন্নতির নিমিত্তে সিয়াম সাধনার কোনো বিকল্প দেখা যায় না। সিয়ামের বিধান নাজিলের ধারাগুলোর মধ্যে আল্লাহর দয়া ও হিকমতের অপূর্ব মিলন দেখা যায়।
তিনি প্রথমে ঘোষণা করলেন: তোমাদের প্রতি রোজা বিধিবদ্ধ করা হলো। এরপর ঘোষণা করলেন: এতে ভয়ের কিছু নেই। তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও এরূপ সিয়ামের বিধান ছিল। তারপর বললেন: তা বহুদিন ধরে নয়, নির্দিষ্ট কয়েকদিন ধরে পালন করতে হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট কতদিন সিয়াম পালন করতে হবে তা প্রথমে উহ্য রাখা হয়। পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে তা অন্য সময় আলাদা করতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো অপারগতার দরুন সিয়াম পালন করতে না পারলে পরিবর্তে মিসকিনকে ফিদ্য়া দিলে চলবে। এরূপ পর্যায়ক্রমে সিয়ামকে সহজ ও সহনীয় করে উপস্থাপন করা হয় উম্মতে মুহম্মদীর নিকট পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে। এই পটভূমি ব্যাখ্যার পরে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি সিয়ামে রমজানের নির্দেশ দেন এভাবে: রমজান মাস, যে মাসে নাজিল করা হয় কুরআনÑ মানুষের পথনির্দেশ, সুস্পষ্ট পথের দিশা এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাস পায় সে যেন সিয়াম পালন করে। বয়ঃপ্রাপ্ত ও উপযুক্ত হওয়ার পরে মুমিনের জীবনে রমজান এলে উক্ত রমজানে সিয়াম পালন করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। রমজান না এলে যথা সেখানে রাত-দিনের পরিক্রমণ হয় না, কয়েক মাস ধরে রাত ও কয়েক মাস ধরে দিন থাকে সেখানে রমজানভিত্তিক সিয়ামের অবকাশ নেই। অবশ্য দিন-রাতের স্বাভাবিক সময়ের হিসেব করে তথায় নামাজ-রোজা প্রভৃতি ইবাদত করা বিধিসম্মত।
হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, ইসলামের প্রথমাবস্থায় সালাতের মতো সিয়ামও তিনটি স্তর অতিক্রম করে। প্রথমত, আশুরা ও প্রতিমাসের তিনটি সিয়াম বিধিবদ্ধ করা হয় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাদানী জীবনের প্রারম্ভিক কালে। দ্বিতীয়ত, রমজানের মাসব্যাপী রোজা অবশ্য পালনীয় করা হয়। অবশ্য, এক্ষেত্রে রোজাদারের জন্য এখতিয়ার থাকে, ইচ্ছা করলে তিনি রোজা রাখতে পারেন কিংবা রোজা না রেখে সমপরিমাণআহার্য মিসকিনকে দিয়ে ফিদ্য়া অবলম্বন করতে পারেন। তৃতীয়ত, ইফতারের পর থেকে কেবলমাত্র নিদ্রার পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও যৌনসম্ভোগের অনুমতি দেয়া হয়। নিদ্রার পর থেকে রোজা শুরু হয়ে যায়। এই তিনটি স্তর অতিক্রম করে এবং এই তিনটি ধারা ও পূর্ববর্তীদের অন্যান্য ধারা ও পদ্ধতি সংস্কার করে রোজার বিধান যে চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয় তা নিম্নরূপ:
প্রথমত, আশুরা ও প্রতিমাসের তিন সিয়ামের ফরজিয়াত রহিত করা হয় এবং তা সুন্নত বা মুস্তাহাব হিসাবে পালনের বিধান দেয়া হয়।
দ্বিতীয়ত, মুমিন দৈহিক ও মানসিক শক্তিতে সিয়াম পালনে সক্ষম হলে তার জন্য ফিদ্য়ার সিসটেম বাতিল করা হয়। চিররুগ্ন, মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধ ও খুবই দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য ফিদ্য়ার সিসটেম অব্যাহত থাকে। আর গর্ভবতী, প্রসূতি, দুগ্ধদানকারিণী, মুসাফির ও সাময়িক পীড়িতের জন্য অন্য সময়ে সিয়াম কাজা করে নেয়ার বিধান আসে।
তৃতীয়ত, ইফতারের পর থেকে নিদ্রার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনসম্ভোগের নিয়ম আমূল পরিবর্তন করে তা সুবহে সাদিক পর্যন্ত প্রলম্বিত করা হয়। তাই এ সময় ইচ্ছুক ব্যক্তি নিদ্রিত থাকুক কিংবা ঘুমে বিভোর থাকুক, তিনি পানাহার ও যৌনসম্ভোগ করতে পারবেন। তার সিয়াম শুধু হবে সুবহে সাদিক থেকে নিদ্রাযাপনের পর থেকে নয়।
চতুর্থত, বিভিন্ন ধর্মে বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি রোজার বিধান ছিল, যথা- হিন্দু ধর্মে ব্রাহ্মণ ও যোগীদের প্রতি; পার্সিয়ান ধর্মে ধর্মীয় নেতার প্রতি এবং গ্রিক ধর্মে কেবল নারীদের প্রতি। কুরআনে সিয়ামকে সর্বজনীন ঘোষণা করা হয় এবং এক গোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে অন্য বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি তা বিশেষিত করা হয়নি। তা সকল মুমিনের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।
পঞ্চমত, বিভিন্ন জাতির রোজা পালনে সাল গণনায় সৌর বছর ধর্তব্য হয়। এতে গ্রীষ্মে রোজার বিধান থাকলে তা প্রতিবছর গ্রীষ্মকালেই পালন করতে হয়। শীতকালের ক্ষেত্রেও একথা সত্য। কিন্তু কুরআনের সিয়ামের সাল গণনার জন্য চান্দ্রবছরকে নির্ধারণ করা হয়। এতে ঘুরেফিরে বছরের সকল দিনেই রোজা রাখার অনুশীলন হয়। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা প্রভৃতি ঋতুতে পরিবর্তিতভাবে রমজান এসে উপনীত হয়। এতে সবরকম সাধনা ও অভিজ্ঞতা হাসিল হয়।
ষষ্ঠত, অনেক ধর্মে রোজার ক্ষেত্রে মানুষের স্বাভাবিক যোগ্যতা ও প্রকৃতিকে অবজ্ঞা করে অতিশয় দুঃসাধ্য বিধান দেয়া হয়েছে, যথা- জৈন ধর্মে একনাগাড়ে ৪০ দিনব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন রোজা মানুষের স্বাভাবিক বৃত্তির জন্য এ এক অসম্ভব বিধান। কুরআনে এরূপ দুঃসাধ্য বিধান সহজ করে সুবহে সাদিক থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজার বিধান দেয়া হয়েছে।
সপ্তমত, অনেক ধর্মে রোজা হচ্ছে বিপদাপদের স্মৃতি ও বেদনা প্রকাশের আলামত। এজন্য এসব ধর্মে রোজা রেখে সৌন্দর্য বিকাশের বিধান নেই। কুরআনে রোজাকে এরূপ বেদনা, দুর্ঘটনা বা দুঃখ প্রকাশের আলামত করা হয়নি। রোজার বিধান দেয়া হয়েছে আধ্যাত্মিক উন্নতি ও উৎকর্ষ সাধনের জন্য, তাক্বওয়া ও পরিশুদ্ধি হাসিলের জন্য। রোজা রেখে মলিন ভাব দেখানো কিংবা দুঃখিত-পীড়িত ভাব ধারণ করা ইসলামের সিয়ামে একেবারে বেমানান। (সংকলিত)
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
![ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/4634-20240727032845.jpg)
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড
![পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও
![বেতাগী দরবারে ওরশ আজ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
বেতাগী দরবারে ওরশ আজ
![সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা
![কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে
![নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/5-20240726212443.jpg)
নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি
![বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726212448.jpg)
বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ
![শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726212737.jpg)
শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী
![মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726213356.jpg)
মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড
![গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726213707.jpg)
গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা
![নিহত রুদ্রের নামে শাবির প্রধান ফটকের নামকরণ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726213859.jpg)
নিহত রুদ্রের নামে শাবির প্রধান ফটকের নামকরণ
![তিনটি গুলি খেয়ে বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেটা মরে গেছে’](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726222840.jpg)
তিনটি গুলি খেয়ে বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেটা মরে গেছে’
![মালয়েশিয়া ও প্রবাসী আর্ট মেলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726214708.jpg)
মালয়েশিয়া ও প্রবাসী আর্ট মেলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
![সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকুন- ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এমপি](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকুন- ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এমপি
![কুড়িগ্রামে তিন লাশ দাফন, পরিবারের আহাজারি](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
কুড়িগ্রামে তিন লাশ দাফন, পরিবারের আহাজারি
![কুষ্টিয়ায় বছরে পাটের আবাদ কমেছে ৯০ হাজার বিঘা জমিতে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/2-20240726211751.jpg)
কুষ্টিয়ায় বছরে পাটের আবাদ কমেছে ৯০ হাজার বিঘা জমিতে
![ভাঙন আতংকে যমুনা পাড়ের মানুষ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/1-20240726212504.jpg)
ভাঙন আতংকে যমুনা পাড়ের মানুষ
![দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/3-20240726211927.jpg)
দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলা
![চুয়াডাঙ্গায় মাদরাসাছাত্র হত্যা মামলায় আসামির যাবজ্জীবন](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
চুয়াডাঙ্গায় মাদরাসাছাত্র হত্যা মামলায় আসামির যাবজ্জীবন
![সাভারে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কেউ ছাত্র ছিল না](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
সাভারে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কেউ ছাত্র ছিল না