ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১

যুগস্রষ্টা জিয়াউর রহমান

Daily Inqilab ব্রি. জে. ড. একেএম শামসুল ইসলাম (অব.)

০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

কখনো কখনো বহমান সময় ব্যক্তিকে নির্মাণ করে, আবার কখনো ব্যক্তিই তৈরি করে ইতিহাস। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম যেমন সময়ের নির্মাণ, তেমনি ইতিহাসেরও স্রষ্টা। আজকের বাংলাদেশ সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতা মাত্র, যেখানে সময়ের সাথে গড়ে উঠেছে ব্যক্তির এক অনস্বীকার্য মিথোজীবীতা।

সেনাবাহিনীর একজন মেজর যখন দ্ব্যর্থহীনভাবে নিঃশঙ্ক চিত্তে নিজের এবং পরিবারের জীবনকে বিপদাপন্ন করে ঘোষণা করেন, ‘উই রিভোল্ট’ তখন ব্যক্তি হয়ে ওঠেন কালোত্তীর্ণ। যখন একজন দেশপ্রেমিক স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন, তখন স্বাধীনতা ও ব্যক্তি হয়ে উঠে একে অপরের পরিপূরক। কালের স্রোতে, সময়ের প্রবহমানতায় যিনি তাঁর সত্তাকে বিলীন করে দেন জনগোষ্ঠির বৃহত্তর স্বার্থে, তখন তিনি হয়ে উঠেন জাতিসত্তার এক মূর্ত প্রতীক। জাতির এই অবয়বের নাম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।

মেজর জিয়াকে নিয়ে সম্পূর্ণ পাঠ এখনো হয়ে উঠেনি কিংবা বলা যায়, প্রচারবিমুখ বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার পাঠোদ্ধার দুরূহ এবং অনতিক্রম্য তার ভাবনার পরিধি। তবুও যেটুকু জানা যায় পরম্পরায়, আমরা এমন একজন সামরিক কর্মকর্তাকে দেখি, যিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত থেকেও ক্রমশ হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারক এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি হয়ে উঠেন জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বাহক।

১৯৭২ সালের এপ্রিলে জেনারেল এম এ জি ওসমানীর পদত্যাগের পর সেনাবাহিনীর প্রচলিত মান ও প্রথা ভেঙ্গে সর্বোচ্চ পেশাদারি, সৎ, ন্যায়পরায়ণ, বিচক্ষণ, সামরিক নেতৃত্বের সকল গুণাবলিতে মহিমান্বিত, প্রশ্নাতীত দেশপ্রেমিক ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমানকে বঞ্চিত করে, ব্রিগেডিয়ার কে এম শফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান মনোনীত করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সশস্ত্র বাহিনীতে রাজনীতিকরণ প্রথা চালু করেন। সেই বেদনা জারিত করে শতসহস্র সৈনিক ও অফিসারের হৃদয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক নেতা থেকে ক্রমশ হয়ে উঠেন স্বৈরশাসক, যার বিপরীতে জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনা কর্মকর্তা থেকে উত্তীর্ণ হন এক মহান নেতায়। যেন বহমান সময় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জায়গা করে দিতে উদ্যত হয়।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না, বরং এটি ছিল ঘটনার পরম্পরা ও পরিণতি। এই পরিণতি হলো একটি তিমির রাত্রির বিনাশ ঘটিয়ে একটি সদ্যোজাত রাষ্ট্রের জীবনে আরেকটি সম্ভাবনাময় ঊষার উন্মেষ। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর বিপ্লবের পর ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যে প্রতিবিপ্লবের সূচনা হয়, তার ধারাবাহিকতায় ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ কারান্তরীণ হন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। ৩ নভেম্বর শুধু জিয়াউর রহমান কারান্তরীণ হননি, শৃঙ্খলিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক বাঁক বদলের উপাখ্যান। কেননা ৩ নভেম্বর ছিল স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হরণের দিন। তেমনি ৭ নভেম্বর ছিল শৃঙ্খলমুক্তির এক মাহেন্দ্রক্ষণ। এই মহান দিনে আধুনিক ও জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশের জনক জেনারেল জিয়াউর রহমানের মুক্তির ভেতর দিয়ে মুক্ত হয় বাংলাদেশ। আর এই মুক্তির নেপথ্য কারিগর ছিল বাংলাদেশের জনসাধারণের অন্তর্গত স্পৃহা ও বীর সেনানীদের এক অভূতপূর্ব মিথস্ক্রিয়া, যার দরুণ ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দেদীপ্যমান হয়ে আছে সিপাহি-জনতার বিপ্লব নামে।

সূচনাতেই বলেছি, ইতিহাস হলো এক পরম্পরা। সেই পরম্পরায় ৭ নভেম্বর যুগস্রষ্টা জিয়াউর রহমানের শুরু করে যাওয়া কর্মযজ্ঞের পরম্পরা হলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যদিও এই পরম্পরায় যতি চিহ্ন ছিলেন জেনারেল এরশাদ, সেমিকোলন ছিল পলাতক স্বৈরাচারী হাসিনা। তবুও গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রবল সংঘবদ্ধ প্রয়াস ১৯৯১ সালে ম্যান্ডেট দেয় আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। বেগম খালেদা জিয়া দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে নিয়ে যান ৭ নভেম্বরের স্পৃহার এক জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশ।

সময়ের প্রবাহমানতায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা, কুশিয়ার প্রবাহ করেছে বাঁক বদল। বাংলাদেশের রাজনীতি ঘোর অমানিশায় আবর্তিত হয়েছে ১/১১-এর ভেতর দিয়ে।

তবুও গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাক্সক্ষা নির্বাপিত হয়নি কখনো। কারান্তরীণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তির মশাল তুলে দিয়েছেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি সেনাসন্তান তারেক রহমানের কাছে। একদা নির্যাতিত ও কারান্তরীণ পরবর্তীতে নির্বাসিত তারেক রহমান নিজেকে উৎসর্গ করেছেন জনগণ, দেশ ও গণতন্ত্রের মুক্তির কাণ্ডারি হয়ে।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়েছে স্বৈরাচারী হাসিনা। কিন্তু তারেক রহমানের যাত্রা চলমান। বন্ধুর পথে তিমির রাত্রিতে যে যাত্রা তিনি চলমান রেখেছেন, সেই যাত্রায় কোনো যতিচিহ্ন নেই। ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার যে বিপ্লবী স্পৃহা ধারণ করেছিলেন তাঁর পিতা, যা লালন করেছেন তাঁর বর্ষীয়ান মাতা, সেই অদম্য স্পৃহা লেলিহান অগ্নিশিখা হয়ে দেদীপ্যমান হয়ে দীপ্তি ছড়াচ্ছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশে। এ বাংলা দুর্ভেদ্য, অজেয় ও অদৃষ্টপূর্ব।

লেখক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আওয়ামী লীগের বেলাগাম পুঁজিলুণ্ঠন
বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পটভূমিতে এবারের বিজয় দিবস
ইসলামোফোবিয়া
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, যার মর্মমূলে স্বাধীন জাতিসত্তার চেতনা
স্মৃতি রোদ
আরও

আরও পড়ুন

নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ চলাচল শুরু

নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ চলাচল শুরু

ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে, হামাস নেতা হানিয়া তেহরানে নিহত

ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে, হামাস নেতা হানিয়া তেহরানে নিহত

হাওয়াইয়ের কিলাওয়া আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত, লাভার প্রবাহ শুরু

হাওয়াইয়ের কিলাওয়া আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত, লাভার প্রবাহ শুরু

ম্যাট গেটসের বিরুদ্ধে যৌন ও মাদক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ

ম্যাট গেটসের বিরুদ্ধে যৌন ও মাদক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে যুবককে বেঁধে নির্যাতন-নাকে খত দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে যুবককে বেঁধে নির্যাতন-নাকে খত দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

গাজার হাসপাতাল ও ত্রাণ বহরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি

গাজার হাসপাতাল ও ত্রাণ বহরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি  বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন