তরুণ প্রজন্ম এবং ৭ নভেম্বরের বিপ্লব
০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীর সংখ্যা তিন কোটির ঘরে, যা জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের মাধ্যদিয়ে এরা আমাদের সকলের সমীহ এবং ভালোবাসা অর্জন করেছে। অকুতোভয় আন্দোলনকারীরা বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়েছে; হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতি, নির্যাতন-গুম তাদেরকে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। পকেটে নাম-ঠিকানা, পিতা-মাতার নাম লেখা কাগজ নিয়ে রাস্তায় নেমেছে, তাদের অনেকে ঘরে ফিরে আসেনি। তদের সংকল্প এবং আত্মত্যাগ সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং ছাত্র-জনতার যৌথ আন্দোলন শেখ হাসিনার রাষ্ট্র ধ্বংসকারী ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে তিনটি দিন ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, সার্বভৌম এবং আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র গঠনের ধারায় ফিরিয়ে এনেছে। দিবস তিনটি হলো ৭ নভেম্বর ১৯৭৫, ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ এবং ৫ আগস্ট ২০২৪। ৭ নভেম্বরের তাৎপর্য আমরা প্রবীণরা যেভাবে উপলব্ধি করতে পরি, আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য তা সহজ নয়। তাদের জন্ম ২০০০ থেকে ২০১০ এর মধ্যে এবং তাদের কাছে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দূর অতীতের কথা। আশার কথা, আমাদের কিশোর এবং তরুণেরা অনেক তথ্য, উপাত্ত নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করে এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচারের চেষ্টা করে। তা না হলে মুজিবময় পাঠ্যপুস্তক, শপথবাক্য আর আওয়ামী লীগ সরকারের মুজিব বন্দনার বিপরীতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠত না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে প্রতিনিয়ত তারুণ্যের সংস্পর্শে আসতে হয়। তাদের সচেতনতা, চিন্তার গভীরতা এবং নতুন কিছু গড়ার আকাক্সক্ষা প্রতিনিয়ত চমকিত করে। তাদের মাঝেই বেঁচে থাকবে আমাদের ইতিহাস, অর্জন এবং গৌরব। তাদের কথা বিবেচনায় ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের ঘটনাপ্রবাহ এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে এর অপরিহার্যতা নিয়ে আমার আজকের উপস্থাপনা। আমার আশা, এ লোখাটি তরুণদের ৭ নভেম্বরের বিপ্লব নিয়ে আরও জানার আগ্রহ তৈরি করবে এবং তাদের মাঝে এই বিপ্লবের ভাবাদর্শ জীবিত থাকবে।
৭ নভেম্বরের পটভূমি রচিত হয় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা লগ্নে। এক দশক ধরে শেখ মুজিবুর রহমানের নিরলস আন্দোলন আমাদের মাঝে জাতীয়তার উন্মেষ ঘটায় এবং আমরা ১৯৭১ সালে শোষণ এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আন্দোলনে অগ্রসর হই। পাকিস্তানী সামরিক শাসকেরা নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করে এবং ২৫ মার্চ গণহত্যার মাধ্যমে আমাদের স্তব্ধ করতে চায়। সেসময় আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ হয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হেফজতে অথবা আত্মগোপনে। এই ক্রান্তিকালে বিহ্বল জাতি মেজর জিয়াউর রহমানের চট্টগ্রাম রেডিও স্টেশন থেকে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণায় সম্বিত খুঁজে পায়। শেখ হাসিনার সরকার যেকোনো ছুতায় জিয়াউর রহমানের মর্যাদাহনিতে কুণ্ঠা বোধ করেনি, চক্ষু লজ্জারও ধার ধারেনি। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আদালতের রায়ের আড়ালে জিয়াউর রহমানের প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছে। অথচ, ২৫ মার্চ রাতে তাজউদ্দিন আহমেদ এবং কর্নেল ওসমানী পীড়াপীড়ি করেও শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা আদায় করতে পরেনি। সেসময়কার যে কেউ এক বাক্যে স্বীকার করবেন, তারা জিয়াউর রহমানের ঘোষণা শুনেছেন এবং সেটাই তাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা রেডিওতে প্রথম কে-কখন পাঠ করেছে তার বিতর্কে যদি নাও যাই, আমাদের মানতে হবে, জিয়াউর রহমানের বলিষ্ঠ এবং আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠের ঘোষণার ব্যাপক প্রভাব ছিল। এটা কেবল আহ্বান নয়, ইতোমধ্যে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে দেওয়া বিদ্রোহী সামরিক কর্মকর্তার ঘোষণা। জনগণ নিশ্চিত হয় প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনায়। আর জিয়াউর রহমান ২৫-২৬ মার্চ মাঝরাতে বিদ্রোহ করে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের পশ্চিম পাকিস্তানী কমান্ডিং অফিসার এবং সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেফতার না করলে ভাষণ দেওয়ার জন্য রেডিও স্টেশন থাকত না।
জিয়াউর রহমানের এই ভাষণের গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। একজন অপরিচিত সামরিক কর্মকর্তা থেকে তিনি হয়ে উঠেন সকলের পরিচিত এবং সম্মানিত। মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে তিনি ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয় এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের নিকট ঈর্ষণীয়। ঠিক একই কারণে এবং কাছাকাছি পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের জিয়ার ভাষণ দেশকে গৃহ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনে।
শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের সরকার এমন কি করেছিল যে, স্বাধীতার চার বছরের মাথায় দেশে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়? স্বল্প পরিসরে স্বাধীনতা উত্তর ৭২-৭৫ সালের আওয়ামী দুঃশাসন বর্ণনা করা কষ্টসাধ্য কাজ। এর কদর্যতা ব্যাপক বিস্তৃত এবং ভয়ঙ্কর। শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হলেও তিনি ছিলেন প্রথমত তার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের রক্ষক এবং দলের প্রতিপালক ও প্রশ্রয়দাতা। তিনি জনগণের বন্ধু হতে পারেননি অথবা হতে চাননি। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাপক পরিমাণে খাদ্যশস্য এবং আর্থিক সাহায্য এসেছিল। ৭২-৭৫ সালের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল যে, রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া দেশের অসহায় অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ আত্মসাৎ করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। দলীয় ছত্রছায়ায় চোরাকারবারি, কালোবাজারী এবং মজুদকারীতে দেশ ছেয়ে যায়। চালের সংকট এতটাই প্রকট হয়ে উঠে যে, দুবেলা ভাত খাওয়া বিলাসিতায় পরিণত হয়। ৭২-৭৪ সালের খরা এবং বন্যা আমলে নিলেও আমাদের দুবেলা খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত খাদ্য ছিল, তবুও ১৯৭৪ সালের শেষদিকে সারাদেশে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ, অনাহারে মারা যায় এক লাখের বেশি মানুষ। যারা এখনও এ দুর্ভিক্ষের জন্য শেখ মুজিবের ব্যর্থতা মানতে চান না, তাদের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেনের গবেষণা পড়ে দেখতে অনুরোধ করছি। তিনি তথ্য-প্রমাণ দিয়ে উপসংহার টেনেছেন, যথেষ্ঠ খাদ্য সরবরাহ থাকা স্বত্ত্বেও অব্যাবস্থাপনা এবং দুর্নীতির করণে বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।
দেশের আইন শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমান আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নে সেনাবাহিনীকে তিনবার মাঠে নামান। তারা দৃঢ়তার সাথে অপরাধীদের ধরলেও আওয়ামী নেতা এবং সর্বোপরি শেখ মুজিবের সুপারিশে চিহ্নিত অপরাধীরাও ছাড়া পেয়ে যায়। খুনের মামলার আসামীরাও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতো। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার বদলে তিনি তৈরি করেন লাল বহিনী এবং রক্ষীবাহিনীর মতো মিলিশিয়া বাহিনী যাদের কাজ ছিল প্রতিবাদী, সমালোচক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতন এবং গুম-খুনের মাধ্যমে নিস্তব্ধ করা। রক্ষীবাহিনী ছিল মুজিব বাহিনীর উত্তরসূরি এবং তৈরি করা হয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দাদের তত্ত্বাবধানে। বিতর্কিত মুজিব বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে তৈরি করা হয়, যা বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার এবং মুক্তিবাহিনীর কমান্ডের বাইরে ছিল। মুজিব বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য ছিল, শেখ মুজিবের নিরঙ্কুশ একচ্ছত্র ক্ষমতা নিশ্চিত করা। রক্ষিবাহিনীর অফিসাররা ভারতের দেরাদুন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার দেশে সাভারের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মেজর রেড্ডি নামক একজন ভারতীয়ের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ পেত। ভারত বাংলাদেশে বার বার একই ভুল করেছে, দেশের জনগণের আকাক্সক্ষা আমলে না নিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে আশ্রয় এবং প্রশ্রয় দিয়েছে। রক্ষিবাহিনী ছিল জনমনে আতংকের প্রতীক এবং সেনাবহিনীর অসন্তোষের কারণ। রক্ষিবাহিনীর অপকর্ম এত ব্যাপক হয়েছিল যে, তাদের দায়মুক্তি দিয়ে শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালে আইন পাশ করেন। ৩৪ বছর পর শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা একই পন্থা অবলম্বন করেছিলেন র্যাব নিয়ে। আমাদের দুর্ভাগ্য, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর মতন গৌরবজনক এবং ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের কিছু সুবিধাভোগী কর্মকর্তা শপথ ভঙ্গকরে শেখ হাসিনার জনবিরোধী কাজে শরীক হয়েছিলেন।
ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্য করেছে, এটি অনস্বীকার্য। ১২ হজারের মতো ভারতীয় সেনাসদস্য আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে। ১৯৭২ সালে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ মূলত ভারতের খাদ্য সহায়তায় বেঁচে ছিল। তদসত্ত্বেও ভারতের অভিপ্রায় এবং আচরণ দেখে প্রবাসী সরকার এবং মুক্তিবহিনীর মাঝে অস্বস্তি শুরু হয় ১৯৭১ সাল থেকেই, যা দূর হওয়ার বদলে আরও ঘনীভূত হয়। মাওলানা ভাসানীর সেই বিখ্যাত উক্তি ‘পিন্ডির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি দিল্লীর দাসত্ব করার জন্য নয়’। ১৬ ডিসেম্বর পকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবহিনী এবং প্রবাসী সরকারকে দূরে রাখা হয়। আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানী বাহিনীর সকল অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ে যায়। কিছু লুটতরাজেরও অভিযোগ পাওয়া যায়। ফরাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করে। শেখ মুজিব এবং ইন্দিরা গান্ধির স্বাক্ষরিত ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তিকে জনগণ সন্দেহের চোখে দেখে। এই চুক্তির একটি ধারা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ গোলোযোগে ভারতকে হস্তক্ষেপের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। সর্বোপরি শেখ মুজিবের দুঃশাসন যত দীর্ঘায়িত হতে থাকে জনগণের মধ্যে ভারত বিদ্বেষ তত দানা বাঁধতে থাকে।
শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে এবং চারটি ছাড়া সব সংবাদপত্র বন্ধ করে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে এক দলীয় শাসন কায়েম করেন। জনগণকে সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখানো শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্তব করেন। সকল সমালোচনা ঝেড়ে ফেলে পুরোদস্তুর ফ্যাসিস্ট শাসক বনে যান। প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ তাজউদ্দিন আহমেদ আক্ষেপ করে শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন, ‘মুজিব ভাই, এর পর বুলেট ছাড়া আপনাকে সরানোর কোনো উপায় থকল না।’
মুজিব শাসনের ব্যর্থতা এতটা প্রকট হতে থাকে যে, দেশের মানুষের স্বাধীনতার আনন্দ ফিকে হতে হতে বিলীন হয়ে যায়। অভাব, দুঃশাসন, দুর্নীতি, অরাজকতা এবং জুলুমে জর্জরিত জনগণ মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকে। এমন পটভূমিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় ক্ষুব্ধ মেজর শেখ মুজিবকে হত্যার মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করে। শেখ মুজিবকে হত্যা ছিল একটি ‘ক্যু দেঁতা’ যার কাছাকাছি পরিশব্দ অভ্যুত্থান। এর অর্থ, হঠাৎ বল প্রয়োগের মাধ্যমে একটি ছোট গোষ্ঠিদ্বারা কোনো সরকার প্রধানকে উৎখাত করা। বিপ্লব হয় তখন যখন জনসাধারণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার উৎখাত করে এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ধরনে পরিবর্তন আনে। যেমন ছাত্র-জনতার জুলাই ২০২৪ আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন একটা সফল বিপ্লব। একইভাবে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার দেশকে অরাজকতার হাত থেকে উদ্ধার করা সফল বিপ্লব।
শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর দেশে একটা অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। সংবিধান অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিধান থাকলেও অভ্যুত্থানে জড়িত মেজররা খন্দকার মোশতাকের হাতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অর্পণ করে। সকল বাহিনীর প্রধানরা খন্দকার মোশতাকের আনুগত্য স্বীকার করে, সংসদ বলবৎ থাকে এবং নতুন মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। নতুন মন্ত্রিদের অধিকাংশই শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য। খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হলেও বঙ্গভবনে অবস্থান নিয়ে অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড মেজর ফারুক এবং মেজর রশীদ সকল সিদ্ধান্ত দিতেন। বঙ্গভবন পাহারায় ফারুকের ট্যাংক বাহিনী নিয়োজিত থাকে। শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারবর্গ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দায়মুক্তি দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অগাস্টের শেষে জাতীয় চার নেতাকে কারাঅন্তরীণ করা হয়।
সেনাবহিনীর উচ্চপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ রদবদল করা হয়। উপসেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কাজী মোহাম্মদ সফিউল্লাহ্ বীর উত্তমের স্থলাভিষিক্ত করা হয়। সফিউল্লাহ কোনোদিনই যোগ্য অথবা বলিষ্ঠ সেনাপ্রধান ছিলেন না। জিয়াউর রহমানের জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও শুধু মাত্র শেখ মুজিবের আনুগত্যের কারণে এবং জেনারেল ওসমানীর প্রিয়ভাজন হওয়ায় সফিউল্লাহ্ সেনাপ্রধান হন। একটি বিতর্কিত পদায়ন হয়, নিয়ম বহির্ভূতভাবে দিল্লীতে প্রশিক্ষণরত ব্রিগেডিয়ার হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে তিন জন সিনিয়র অফিসারকে ডিঙ্গিয়ে উপসেনাপ্রধান নিযুক্ত করা হয় এবং মেজর জেনারেলে উন্নীত করা হয়। মাত্র এক বছর আগেই সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ তাকে এভাবেই প্রশিক্ষণে থাকা আবস্থায় কর্নেল থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি দেন। ১৫ অগাস্টে অভ্যুত্থানে জড়িত মেজরদের সাথে এরশাদের সখ্য এবং তাদের প্রতি আসকারা সেনাবাহিনীতে সর্বজনবিদিত। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশারফ বীর উত্তমের পদ পদবী অপরিবর্তিত থাকে। সফিউল্লাহ্ এবং খালেদ মোশারফের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের যোগাযোগ সর্বাধিক ছিল। সফিউল্লাহর পরবর্তীতে সেনা প্রধান হওয়ার স্বপ্ন লালন করছিলেন খালেদ মোশারফ। শেখ মুজিব জিয়াকে সেনাবাহিনী থেকে অপসারণের ব্যবস্থা প্রায় পাকা করে ফেলেছিলেন। ১৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে খালেদ মোশারফ মনক্ষুণ্ন ছিলেন।
সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে জিয়াউর রহমানের মতো যোগ্য অফিসার সে মুহূর্তে দ্বিতীয় কেউ ছিলেন না। কিন্তু তার যোগ্যতা, স্বাধীনচেতা মনোভাব এবং জনপ্রিয়তা অভ্যুত্থানে জড়িত মেজরদের উদ্বেগের বিষয় ছিল। এদুটি বিষয় মাথায় রেখে সেনাপ্রধানের উপর চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরি করা হয় এবং মেজর জেনারেল এম খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারও উপরে জেনারেল ওসমানীকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা করা হয়। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা সীমিত করে দেওয়া হয়। প্রকারন্তরে অভ্যুত্থানে জড়িত মেজর, ওসমানী এবং খলিলুর রহমান গং সামরিক বাহিনী পরিচালনা করতে থাকেন।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার জিয়াউর রহমানের সম্মানহানি এবং তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাতে এতটাই মনোযোগী ছিলেন যে, অনেক সত্য ঘটনা জনগণের কাছে অজানা থেকে গেছে। ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড মেজর ফারুক সম্পর্কে খালেদ মোশারফের ভাগ্নে এবং তার ছত্রছায়ায় ঢাকা সেনানিবাসে দম্ভের সাথে ঘুরে বেড়াতো। তারচেয়েও ভয়ংকর কথা হলো, ১৯৭৩ সালে তিনি অভ্যুত্থান চেষ্টা করে ব্যর্থ হন, যা সেনাবাহিনী জ্ঞাত ছিল। তবুও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং মিশর থেকে উপহার পাওয়া নতুন ৩২টি ট্যাংক তার হাতেই ন্যাস্ত করা হয়। মেজর ফারুকের ট্যাংক বাহিনী সরাসরি সেনাপ্রধানের কমান্ডে ছিল। অপরদিকে অভ্যুত্থানে মেজর ফারুকের প্রধান সহযোগী মেজর রশীদ সম্পর্কে ফারুকের ভায়রা ভাই। প্রশিক্ষণ শেষে তার পোস্টিং নিয়মিতভাবে যশোরে হয়েছিল। কিন্তু ফারুক খালেদ মোশারফকে ধরে রশীদের পেস্টিং বাতিল করে ঢাকাতে রাখার বন্দোবস্ত করেন।
শেখ মুজিব নিহত হওয়ার ঘটনা জনগণ একরকম মেনে নেয়। একমাত্র কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ছাড়া আর কেউ প্রতিবাদ অথবা প্রতিরোধ করতে বের হয়নি। মজলুমের উপর জুলুমবাজ রক্ষিবাহিনী, লাল বাহিনী, যুবলীগ, ছাত্রলীগÑ এদের কাউকে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি, ভোজবাজির মতো উধাও হয়েছিল। অথচ, তখনো আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। অত্যাচারী জালিমদের হম্বি-তম্বি সবসময় অসহায়, দুর্বল মানুষের সাথে। শক্ত প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হলে পলায়নপরতা তাদের একমাত্র গত্যন্তর। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে আমরা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখলাম। স্বাধীন বাংলাদেশে এমন গণপলায়ন দুইবারই হয়েছে, শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর এবং তার কন্যা শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উৎপাটিত হওয়ার পর। শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর অবস্থা এতটাই স্বাভাবিক ছিল যে, পরবর্তী দিনগুলিতে ১৪৪ ধারা জারি করারও প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়নি। উল্টো জনগণের মাঝে উৎসবের আমেজ দেখা যায়। একদিনের ব্যবধানে চাল কেজি প্রতি ৭ টাকা থেকে ৪ টাকায় নেমে আসে। অধিকাংশ চোরাকারবারি, মজুদদার এবং অপরাধী গা ঢাকা দেয়। কিন্তু সেনাবহিনীতে চলতে থাকে চাপা অস্বস্তি।
জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে একমাত্র ব্রিগেডিয়ার শাফায়াত জামিল বীর বিক্রম প্রকাশ্যে খন্দকার মোশতাক সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ এবং অভ্যুত্থানে জড়িত মেজরদের বঙ্গভবনে অবস্থানের বিরোধিতা করেন । তিনি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে সোচ্চার ছিলেন। শাফায়াত জামিল শেখ মুজিবের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন এবং তার অধীনস্থ মেজর রশীদের অভ্যুত্থানে জড়িত হওয়া তার জন্য গ্লানিকর ছিল। শাফায়াত জামিল বেশ কয়েকবার জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে অভ্যুত্থানে জড়িত মেজরদের বঙ্গভবন থেকে সেনানিবাসে ফিরিয়ে আনতে উদ্বুদ্ধ করেন। জিয়াউর রহমান এ বিষয়ে তাড়াহুড়োর পক্ষপাতি ছিলেন না। উপরন্তু জিয়াউর রহমানের উপর দুটি পদ তৈরি করে তাকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে অবশিষ্ট শৃঙ্খলা ধরে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। এখানে মনে রাখতে হবে, সেনাবাহিনীতে কেউই চেইন অফ কমান্ডের বাইরে নয়, স্বয়ং সেনাপ্রধানসহ। সেনাপ্রধানকেও দেশের গঠন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী হয় রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর আদেশ মানতে হয়। স্বউদ্যোগে কোনো কিছু করার স্বাধীনতা থাকে না। খন্দকার মোশতাকের সময়কালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ খলিলুর রহমানের নির্দেশ মেনে চলতে হতো। জিয়ারউর রহমান শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে নিজেকে জড়াবেননা বুঝতে পেরে শাফায়াত জামিল খালেদ মোশারফের মতামত জানার চেষ্টা করেন। খালেদ মোশারফ তার সম্মতি জানিয়ে দেন।
২/৩ নভেম্বর মাঝ রাতে শাফায়াত জামিল তার অধীনস্ত পদাতিক বাহিনী নিয়ে বিদ্রোহের সূচনা করেন। প্রথমেই সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে তার গৃহে অন্তরীণ করা হয়। রেডিও-টিভি স্টেশন দখল করা হয়, টেলিফোন এক্সচেঞ্জে বাংলাদেশের সাথে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ বিছিন্ন করা হয়। বঙ্গভবন পাহারায় নিয়োজিত ইউনিটকে সেনানিবাসে ফেরত আনা হয়। এরপর খালেদ মোশারফ বিদ্রোহের নিয়ন্ত্রণ নেন। রাষ্ট্রপতি এবং অভ্যুত্থানে জড়িত মেজরদের ভীতি প্রদর্শনের জন্য সারাদিন যুদ্ধ বিমান এবং হেলিকপ্টার সশব্দে বঙ্গভবনের উপর চক্কর দিতে থাকে। খালেদ মোশারফ মেজরদের সেনানিবাসে ফেরত আসার নির্দেশ দেন। সারাদিনের উত্তপ্ত বাদানুবাদ শেষে মেজর মহিউদ্দিন ছাড়া বাকী ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারীরা ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় পরিবারসহ থাইল্যান্ডে চলে যায়। ইতোমধ্যে জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করা হয়।
৪ নভেম্বর সকালে একটি মর্মান্তিক খবর খালেদ মোশারফ এবং শাফায়াত জামিল জানতে পারেন; ২/৩ নভেম্বর ভোর রাত্রে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক এবং মেজর রশীদের অনুমতিক্রমে চার নেতাকে হত্যা করা হয়। খালেদ মোশারফ এবং শাফায়াত জামিল উভয়ে খন্দকার মোশতাক এবং অভ্যুত্থানে জড়িত মেজরদের উপর ক্ষিপ্ত হন। কিন্তু ততোক্ষণে মেজররা থাইল্যান্ড পৌঁছে গেছেন। পরবর্তীতে জানা যায়, অভ্যুত্থানে জড়িতরা আগেই ঠিক করে রেখেছিল সেনাবাহিনী থেকে পাল্টা অভ্যুত্থান হলে স্বংক্রিয়ভাবে চার নেতাকে হত্যা করা হবে। তাদের ভয় ছিল চারনেতার যেকোনো একজনের আহ্বানে ভারত বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে পারে। পরে খালেদ মোশারফ বঙ্গভবনে তার দাবি নিয়ে উপস্থিত হন। জিয়াউর রহমানের পরিবর্তে নিজে সেনাপ্রধান হতে অভিপ্রায় প্রকাশ করেন এবং খন্দকার মোশতাকে রাষ্ট্রপতি রেখে মন্ত্রিপরিষদ ভেঙ্গে দেওয়ার দাবি জানান। আলোচনা সারাদিন ধরে চলতে থাকে। এর মাঝে শাফায়াত জামিল টের পাওয়া শুরু করেন জিয়াউর রহমানকে অন্তরীণ রেখে খালেদ মোশারফের সেনাপ্রধান হওয়ার চেষ্টা সাধারণ সিপাহীরা ভালো চোখে দেখছে না এবং তাদের মাঝে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। শাফায়াত জামিল অধৈর্য হয়ে সেনানিবাস থেকে বঙ্গভবনে গমন করেন এবং মন্ত্রিপরিষদের মিটিংয়ে সশস্ত্র প্রবেশ করেন। ভীত খন্দকার মোশতাক জিয়াউর রহমানের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেন এবং খালেদ মোশারফকে মেজর জেনারেলে পদোন্নতি দেন এবং সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন। খন্দকার মোশতাক পদত্যাগ করেন। মন্ত্রিপরিষদের মিটিং থেকেই চার জন মন্ত্রীকে আটক করা হয়। ৬ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন এবং রাতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি সংসদ ভেঙ্গে দেন।
এতকিছুর পরও খালেদ মোশারফ এবং শাফায়াত জামিল তাদের অভ্যুত্থান টিকিয়ে রাখতে পারেননি। এর কারণ বিশ্লেষণ করতে হলে যে আলোচনা আসে তা তাদের জন্য অসম্মানজনক। তারা দুজনেই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা অনুচিত। রক্তপাত এড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা তাদের মাঝে দেখা যায়। তাদের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পারিপার্শ্বিক কারণসমূহ আলোচনা করা উচিত তাদের ব্যক্তিত্বে কালিমা লেপন না করে। (চলবে)
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আবাসিক হলে ছাত্রদলের পোস্টারিং, মধ্যরাতে উত্তাল ঢাবি
আগামীর বাংলা হবে ইসলামের বাংলা ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন ছাড়া অন্য কিছু মানবো না
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জেড ফোর্স
যুগস্রষ্টা জিয়াউর রহমান
মার্কিন নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ে ট্রাম্পকে ড. ইউনূসের অভিনন্দন
সৈনিক-জনতার একতার অঙ্গীকার
৭ নভেম্বর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় গৌরবের প্রতীক
কেশবপুরের ত্রাস টিটু যৌথ বাহিনীর হাতে আটক
সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন
যশোরে বিদেশি পিস্তল-বুলেট ও মাদকসহ আটক ২
জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ
৭ নভেম্বরের তাৎপর্য
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস
ইসরাইলি অর্থনীতির ভবিষ্যত অন্ধকার, বেকারত্ব বেড়েছে
মেলানিয়াকে ফার্স্ট লেডি উল্লেখ করে বউয়ের প্রশংসায় ট্রাম্প
হিমালয় অববাহিকায় দুর্গম অঞ্চলে নতুন গ্রাম গড়ে তুলছে চীন
৭৩% ভোটার মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র হুমকির মুখে
অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে ইংলিশ
যুক্তরাষ্ট্র আরো বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে উঠতে পারে : জয়শঙ্কর
মার্কিন সিনেটে ইতিহাস গড়লেন দুই কৃষ্ণাঙ্গ নারী