ঢাকা   মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পিলখানা-শাপলা চত্বর হত্যা মামলা

পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেই

Daily Inqilab সাখাওয়াত হোসেন

০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম

ছাত্র-জনতার কঠোর অন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকারের পতন হলেও ইতিহাসের পৈশাচিক হত্যাকা- পিলখানায় ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যার নেপথ্যে জড়িতদের এখনও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়নি। অন্যদিকে শাপলা চত্বরে রাতের অন্ধকারে মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্রদের বড় জমায়েত সরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি যৌথ অভিযানের নামে যে হত্যাকা- চালানো হয়েছিল তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমান সরকারের তিন মাস হলেও বাংলাদেশের জন্য এক ঘন অন্ধকারতম অধ্যায় এখনও শেষ হয়নি। যদিও শুরু থেকে দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক দাবি উঠেছে পিলখানা এবং শাপলা চত্বরে নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের পুনঃতদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার। তবে গত মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে পিলখানা হত্যাকা-ের মামলায় পুনঃতদন্ত কমিশন কেন নয় তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। আদালত একই সঙ্গে পিলখানা হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ৪ নভেম্বর বিডিআর বিদ্রোহের সময় সংঘটিত হত্যাকা-ের পুনঃতদন্ত কার্যক্রম নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিডিআর হত্যাকা-ের পুনঃতদন্ত হবে এবং অবশ্যই হতে হবে। দ্রুতই তদন্ত টিম করা হবে। যেহেতু অন্য অনেকগুলো হচ্ছে, এটাও হয়ে যাবে। তবে বাস্তবে এর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
সম্প্রতি সময়ে সামরিক বিশেষজ্ঞরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিলখানা হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এছাড়া এ ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা। ভারতের মদদে পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানোর উদ্দেশ্যে এই হত্যাকা-। এই হত্যাকা-ের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল দেশের কিছু বিশ্বাসঘাতক, ছিল ভারতের চক্রান্ত। পুনঃতদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বের করতে হবে।
পিলখানা হত্যাকা-: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর বহুল আলোচিত এ হত্যাকা-ের পুনঃতদন্তের জন্য বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হলেও গত তিন মাসে এর কোনো উদ্য্গো নেয়া হয়নি। দীর্ঘ ১৫ বছরেও পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে নৃশংস হত্যাকা-ের পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। যাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে, তারা আসলে নেপথ্যের কারিগর নয়। যারা এ ঘটনার আসল কারিগর তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের বের করা সম্ভব হবে না। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। পিলখানা হত্যাকা-ে প্রাণ হারান ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জন। আহত হন কয়েক শত। এখনই সময় পিলখানা হত্যাকা-ের মতো বিশ্ব ইতিহাসে একটি জঘন্যতম ঘটনা তদন্ত করে নেপথ্যে জড়িতদের বের করা। সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া কনভেনশন হলে বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনেও পিলখানা হত্যাকা-ের নেপথ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পুনঃতদন্তের দাবি জানান অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা। ওই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির (অব.)। গত আগস্ট মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে পিলখানা হত্যাকা- নিয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য মেজর জেনারেল (অব:) আবদুল মতিন বলেছিলেন, পিলখানা হত্যাকা-ের নেপথ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল। এ হত্যাকা- অপারেশন ডাল-ভাতের জন্য হয়নি। এটি একটি দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিলখানা হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এছাড়া এ ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা। ভারতের মদদে পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানোর উদ্দেশ্যে এই হত্যাকা-। এই হত্যাকা-ের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল দেশের কিছু বিশ্বাসঘাতক, ছিল ভারতের চক্রান্ত। পুনঃতদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বের করতে হবে।
পিলখানা হত্যাকা- নিয়ে শহীদ কর্নেল কুদরত-ই-এলাহীর ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ ঘটনার নেপথ্যে যারা ছিল তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে এ রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা মনে করছি একটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করা দরকার। এই কমিটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে ঘটনার প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করবে। এ ঘটনার পর আর্মি ও বেসামরিক প্রশাসন আলাদা আলাদা দুইটি তদন্ত করেছে। সেই তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। এই তদন্ত প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করতে হবে। নেপথ্যের কারিগররা অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, নেপথ্যে যারা ছিল তারা অনেক শক্তিশালী এতে কোনো সন্দেহ নেই। হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ঘটনার পেছনে আরও লোক আছে। কিন্তু নেপথ্যের কারিগরদের সমাপ্ত করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিলখানা হত্যাকা-ের সেই বীভৎস দৃশ্যাবলি এদেশের মানুষের মন থেকে আজও মুছে যায়নি। কতিপয় বিডিআর সদস্য যে এ হত্যাকা-ের পরিকল্পনা করতে পারে, সে কথাও মানুষ বিশ্বাস করে না। তাদের অনেকেই মনে করেন, পর্দার আড়াল থেকে কেউ না কেউ এ ঘটনায় ইন্ধন যুগিয়েছে। সেই ইন্ধনদাতা কারা? তারা কি এ দেশেরই লোক? পিলখানা হত্যাকা-ের অনেক আগে ঘটে যাওয়া কিছু কিছু ঘটনা বিচার-বিশ্লেষণ করে অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, কেবল কিছুসংখ্যক মধ্যম ও নি¤œ সারির বিডিআর সদস্য দ্বারা এতবড় ঘটনার পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় স্বার্থান্বেষী মহলের কোনো না কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে। আদালতও পূর্ণাঙ্গ রায়ে তারই প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে ছিল স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। দেশ-বিদেশে আলোচিত এই পিলখানা হত্যাকা-ের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত বলেছেন, ওই ঘটনা ছিল রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক-সামাজিক নিরাপত্তায় বিঘœ সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। শুধু তাই নয়, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি দক্ষ, প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ধ্বংসেরও চেষ্টা। বিডিআর জওয়ানরা দেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙে দেওয়াসহ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর প্রত্যক্ষ হুমকির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে যে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে, সেই কলঙ্কের চিহ্ন তাদের বহুকাল বহন করতে হবে।
শাপলা চত্বরের গণহত্যা: রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে রাতের অন্ধকারে চালানো হয়েছিল গণহত্যা। ২০১৩ সালের ৫ মে’র মহাসমাবেশে যৌথ বাহিনীর রাতের অভিযান ‘অপারেশন সিকিউর শাপলা’য় কতজন নিরীহ সাধারণ মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্রকে হত্যা করা হয় তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকারের পতন হলেও এ গণহত্যার সাথে সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কোনো উদ্যোগ নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। শিক্ষক-ছাত্রদের খুনের অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির কর্মকর্তা এখনও আড়ালেই রয়ে গেছেন। তবে ওই রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কয়েকশ’ সাধারণ শিক্ষক-ছাত্রকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছিল। পুরো মতিঝিল ও এর আশপাশ এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে নিরীহ মাদরাসা ছাত্রদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়। অভিযানের পর দ্রুত সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে লাশগুলো অজ্ঞাত স্থানে গুম করে ফেলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ মে দিনের সহিংসতা এবং পরদিন ৬ মে দুই দিনে সারা দেশে সহিংসতায় ২৮ জনের নিহত হওয়ার কথা বলেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অন্যেিদকে সেই রাতের ভয়াবহ ও নিষ্ঠুর অভিযানে ৬১ জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। তবে পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি। দিনভর সংঘাতে নিহত হয়েছেন ১১ জন। এছাড়া ১১ বছর পর গত আগস্ট ‘গণহত্যার’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আবেদনকারীর জবানবন্দি শুনে মতিঝিল থানার ওসিকে এই অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম জাকী-আল ফারাবী। তবে পুলিশ এখনও মামলার তদন্ত শুরু করেনি। বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী মামলাটির আবেদন করেন।
পুলিশের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, আলেম ও মাদরাসার ছাত্রদের একটি সমাবেশে রাতে অন্ধকারে যেভাবে গণহত্যা চালানো হয়েছিল তা কোনো সভ্য সমাজে মেনে নেয়া যায় না। আওয়ামী সরকারের নির্দেশে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির যেসব কর্মকর্তা এ ধরনের নিষ্ঠুর কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ জন্য অতি দ্রুত তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে জড়িতদের এবং নেপথ্যে থেকে যারা নির্দেশনা দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের মানুষ এ ধরনের গণহত্যায় জড়িতদের শাস্তি দেখতে চায় বলে ওই কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন। তারা আরো বলেন, বর্তমান ছাত্র-জনতার সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সরাসরি জড়িত ও নেপথ্যে নির্দেশদাতাদের শনাক্ত করার পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার এখনই উপযুক্ত সময়।
সাবেক আইজিপি খোদা বকশ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে রাতের অন্ধকারে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি যৌথভাবে অভিযান চালায় এবং ওই অভিযানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে তখন মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। আহত হয়েছিলেন অনেক মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্র। এ ঘটনায় এখন ভিকটিমের পক্ষে ফৌজদারি আইনে সরাসরি থানায় মামলা করা যায়। থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করলে আদালতের মাধ্যমে মামলা করে ভিকটিম ন্যায়বিচার পেতে পারেন।
ফিরে দেখা: ২০১৩ সালের ৫ মে দিনভর উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়িয়েছিল সংগঠনটির ওই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। সেই রাতে রাজধানীর অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের শাপলা চত্বর ঘিরে তৈরি হয়েছিল এক ভীতিকর পরিবেশ। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির অভিযানে খালি করা হয়েছিল শাপলা চত্বর। রাত দেড়টার দিকে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা এগোনোর চেষ্টা করেন। তারা প্রথমে হাতমাইক ব্যবহার করে অবস্থানকারীদের সরে যেতে বলেন। কিন্তু মঞ্চ থেকে তখনো আসতে থাকে বক্তব্য। ঘণ্টাখানেক এভাবে চলে। মূল অভিযান শুরু হয় রাত পৌনে তিনটায়। বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ তিন বাহিনীর তখনকার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সদস্যরা ফাঁকা গুলি আর কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকেন। থেমে থেমে সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করা হয়। শত শত গুলি, সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ এবং অন্ধকার এলাকায় এসবের আলোর ঝলকানি মুহূর্তেই ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। ২০ মিনিট ধরে চলে এ পরিস্থিতি। এরই মধ্যে একপর্যায়ে মঞ্চের মাইক বন্ধ হয়ে যায়। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে এগোতে শুরু করেন শাপলা চত্বরের দিকে। বিরতিহীন গুলি, কাঁদানে গ্যাস আর সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দের মধ্যেই ২০ মিনিটেই পৌঁছে যান শাপলা চত্বরে।
সেখানে দেখা যায়, নটর ডেম কলেজের সামনে রাস্তা ও দিলকুশা এলাকা থেকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রায় একই সময়ে শাপলা চত্বরে পৌঁছেছেন। তখন তিন দিক থেকে আসা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির দখলে শাপলা চত্বর। সেখানে মঞ্চের পাশে একটি ভ্যানের ওপর কাফনের কাপড় এবং পলিথিন দিয়ে মোড়ানো চারটি লাশসহ ১১টি লাশ ছিল। হেফাজতের শত শত কর্মী-সমর্থক মাথার ওপর দুই হাত তুলে লাইন ধরে পুলিশের কর্ডনের মধ্য দিয়ে ওই এলাকায় বিভিন্ন ভবন থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। তাদের বেশির ভাগ ছিল মাদরাসার ছাত্র ও কিশোর। তাদের চোখেমুখে ছিল অজানা আতঙ্ক ও ভয়।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আওয়ামী সিন্ডিকেট দমানো যায়নি
প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ
জনশক্তি রফতানিতে কাক্সিক্ষত গতি বাড়েনি
নাগরিক সেবায় দুই সিটির চ্যালেঞ্জ
স্বাস্থ্যসেবায় স্থবিরতা
আরও

আরও পড়ুন

চীনের ‘ঝুহাই এয়ারশো ২০২৪’,ভবিষ্যৎ বিমান শক্তির এক ঝলক

চীনের ‘ঝুহাই এয়ারশো ২০২৪’,ভবিষ্যৎ বিমান শক্তির এক ঝলক

ভারত নিজেকে মনে করে সে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালের বড়-দাদা : কবীর সুমন

ভারত নিজেকে মনে করে সে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালের বড়-দাদা : কবীর সুমন

‘ভারত বয়কট হোক’

‘ভারত বয়কট হোক’

ইসরায়েলকে ‘গণহত্যায় দায়ী বর্ণবাদী রাষ্ট্র’ ঘোষণা করলো মর্যাদাপূর্ণ অক্সফোর্ড ইউনিয়ন

ইসরায়েলকে ‘গণহত্যায় দায়ী বর্ণবাদী রাষ্ট্র’ ঘোষণা করলো মর্যাদাপূর্ণ অক্সফোর্ড ইউনিয়ন

সকালে ঝলমলে রোদ,সন্ধ্যা নামতেই শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়

সকালে ঝলমলে রোদ,সন্ধ্যা নামতেই শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতকে ব্যান্ডউইথ নেওয়ার অনুমতি দেয়নি বিটিআরসি

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতকে ব্যান্ডউইথ নেওয়ার অনুমতি দেয়নি বিটিআরসি

আজ ২৬তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস

আজ ২৬তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস

সময় এসেছে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গির, ভারতকে নিয়ে বার্তা হাসনাতের

সময় এসেছে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গির, ভারতকে নিয়ে বার্তা হাসনাতের

আসছে নতুন টাকা, থাকছে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি

আসছে নতুন টাকা, থাকছে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি

রায়গঞ্জে ৮ ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসকে বরণ করে নিলেন সাধারণ মানুষ

রায়গঞ্জে ৮ ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসকে বরণ করে নিলেন সাধারণ মানুষ

চাঁদপুরে দুই কোটি টাকার ব্রিজে উঠতে লাগে মই দিয়ে

চাঁদপুরে দুই কোটি টাকার ব্রিজে উঠতে লাগে মই দিয়ে

ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

খুনি হাসিনা সরকারের অর্থপাচারের তথ্য পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হবে’

খুনি হাসিনা সরকারের অর্থপাচারের তথ্য পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হবে’

শীতের শুরু থেকেই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে লেপ-তোষকের দোকানে কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে

শীতের শুরু থেকেই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে লেপ-তোষকের দোকানে কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে পর্তুগালে প্রতিবাদ সভা

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে পর্তুগালে প্রতিবাদ সভা

ভারতকে বুঝতে হবে এটা ফ্যাসিস্ট হাসিনার বাংলাদেশ নয় : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ভারতকে বুঝতে হবে এটা ফ্যাসিস্ট হাসিনার বাংলাদেশ নয় : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হলো ত্রিপুরার হোটেল-রেস্তোরা

বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হলো ত্রিপুরার হোটেল-রেস্তোরা

তুদুনবিরির ড্রোন হামলার শোকের গল্প,ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় স্বজনেরা

তুদুনবিরির ড্রোন হামলার শোকের গল্প,ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় স্বজনেরা

গাজায় ইসরাইলি তাণ্ডবে নিহত আরও ৩৭ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরাইলি তাণ্ডবে নিহত আরও ৩৭ ফিলিস্তিনি

বাংলাদেশের মানুষ কারো দাদাগিরি পছন্দ করে না : জামায়াত আমির

বাংলাদেশের মানুষ কারো দাদাগিরি পছন্দ করে না : জামায়াত আমির