‘চোকার’ খেতাব নিয়েই বিদায় দক্ষিণ আফ্রিকার!
১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
সেই ‘চোকার’ খেতাব নিয়েই আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্যদিকে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেই বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা পেল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। গতকাল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে চলমান বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অজিরা ৩ উইকেটে হারায় প্রোটিয়াদের। আগে ব্যাট করে দারুণ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও ডেভিড মিলারের সেঞ্চুরিতে ৪৯.৪ ওভারে ২১২ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ওপেনার ট্র্যাভিস হেডের দারুণ হাফসেঞ্চুরিতে ৪৭.২ ওভারে ৭ উইকেটে ২১৫ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। ফলে বিশ্বকাপ ইতিহাসে পাঁচবার সেমিতে খেলে তিনবারই অজিদের কাছে হেরে ফাইনালে খেলার স্বপ্নভঙ্গ হলো প্রোটিয়াদের। আগামী রোববার স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে অস্ট্রেলিয়া। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় শুরু হবে ম্যাচটি।
বিশ্বকাপে এর আগে চারবার (১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ ও ২০১৫ সাল) সেমিফাইনালে খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু একবারও ফাইনালের টিকিট পায়নি তারা। এর মধ্যে দুইবার (১৯৯৯ ও ২০০৭ সাল) অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেই আসর থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল প্রোটিয়াদের। এবার নিয়ে শেষ চারে অজিদের কাছে তৃতীয় হারের দেখা পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯২ সালে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশ নেয়া দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট এবং ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে সব সময়ই সেরা পাঁচের মধ্যে থাকে। যেকোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষকে ধুমড়ে-মুচড়ে দেয় তারা। কিন্তু বিশ্বকাপ কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় আসরে চেনা যায় না তাদের চেহারা। একেবারে ধুমড়ে-মুচড়ে পড়ে। সেই ১৯৯২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হারের পর থেকেই ‘চোকার’ তকমা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট। যে খেতাব এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে তারা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ‘চোকার’ তকমা ঘোচাতেই চলমান বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়ে ঠিক যেন ধুমড়ে-মুচড়েই পড়েছে প্রোটিয়ারা।
তবে সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন ডেভিড মিলার। দলের বিপর্যয়ে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেও শেষ পর্যন্ত হার এড়াতে পারেননি মিলার।
ইডেন গার্ডেনে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। পুরো টুর্নামেন্টেই দেখা গেছে টস জয় মানেই প্রোটিয়াদের রান উৎসব। অজিদের বিপক্ষেও তেমনটাই হবে, ভেবেছিলেন সবাই। তবে ঘটেছে তার ঠিক উল্টো। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের তোপে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তারা ধুঁকতে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা একদিকে যেমন উইকেট তুলে নিচ্ছিলেন, অন্যদিকে রানও আটকে রেখেছেন। ফলে ব্যাটিংয়ের শুরুতেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে প্রোটিয়ারা। ১২তম ওভারের মধ্যে ড্রেসিংরুমে ফেরেন চার টপঅর্ডার ব্যাটা টেম্বা বাভুমা (০), কুইন্টন ডি কক (৩), এইডেন মার্করাম (১০) আর রসি ফন ডার ডুসেন (৬)। প্রথম ওভারের শেষ বলেই মিচেল স্টার্ক ফিরিয়ে দেন টেম্বা বাভুমাকে। উইকেটের পেছনে জস ইংলিশের হাতে ক্যাচ দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। চার বল খেলে কোনো রানই করতে পারেননি তিনি। ৬ষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে আউট হন কুইন্টন ডি কক। জস হ্যাজলউডের বলে প্যাট কামিন্সের হাতে ক্যাচ দেন ডি কক। বিশ্বকাপে এবার দুর্দান্ত খেলা ডি কক একেবারে জায়গামত এসে ব্যর্থ হন। দলীয় রান ছিল তখন মাত্র ৮। দলীয় ২২ রানের মাথায় ফিরে যান এইডেন মার্করাম। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন তিনি। হ্যাজলউডের বলে আউট হওয়ার আগে ২০ বল খেলে করেন ১০ রান। দলীয় ২৪ রানের মাথায় আউট হন রসি ফন ডার ডুসেন। তিনি করেন ৩১ বলে মাত্র ৬ রান। দলের সেই কঠিন বিপর্যয়ের মুখে হেনরিখ ক্লাসেনকে সঙ্গে নিয়ে হাল ধরেন ডেভিড মিলার। পঞ্চম উইকেটে তারা গড়েন ৯৫ রানের জুটি। ক্লাসেন হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায় ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকাও অনেকট ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। ৩১তম ওভারে এসে টানা দুই বলে ২ উইকেট শিকার করেন পার্টটাইম অফস্পিনার ট্রাভিস হেড। ক্লাসেন ৪৭ রানে বোল্ড আর মার্কো জানসেন এলবিডব্লিউ হন প্রথম বলেই। ১১৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দেড়শোর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। আসা-যাওয়ার মিছিলে ডেভিড মিলার একটা প্রান্ত ধরে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। ১১৫ বল খেলে লড়াকু এক সেঞ্চুরিও তুলে নেন তিনি। তবে দলের রানকে একটু ভালো জায়গায় নিতে গিয়ে সেঞ্চুরির পরই ছক্কা হাঁকাতে যান মিলার। কিন্তু বল সীমানার বাইরে পাঠাতে পারেননি। প্যাট কামিন্সকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে হয়ে যান ক্যাচ। ১১৬ বলে ১০১ রানের ইনিংসে ৮টি চার ও ৫টি ছক্কা হাঁকান মিলার। তিনি আউট হওয়ার পরই আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার লড়াকু পুঁজি গড়ার স্বপ্নটা শেষ হয়ে যায়। ইনিংসের দুই বল বাকি থাকতে ২১২ রানে অলআউট হয় প্রোটিয়ারা। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক এবং প্যাট কামিন্স যথাক্রমে ৩৪ ও ৫১ রানে পান ৩টি করে উইকেট। জস হ্যাজেলউড (১২ রান) ও ট্রাভিস হেড (২১ রান) ২টি করে উইকেট শিকার করেন।
মামুলি লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা ভালো করলেও ৯ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। দুই ওপেনার ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার ৬০ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন। ৬.১ ওভারে মার্করামের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ওয়ার্নার। ফেরার আগে ১৮ বল খেলে ১ চার ও ৪ ছক্কার মারে করেন২৯ রান। ৭.৪ ওভারে দলীয় ৬১ রানে ফিরতে হয় মিচেল মার্শকে। রাবাদার বলে ডুসেনকে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরলেও কোনো রান নিতে পারেননি মার্শ। অল্প সময়ে দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়লেও ইনিংসে রানের চাকা সচল রাখেন ট্রাভিস হেড। মারমুখি ব্যাটিংয়ে তৃতীয় উইকেটে ৪৫ রানের জুটি গড়েন স্মিথ ও হেড। এক প্রান্ত আগলে রেখে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন হেড। তবে বেশিদূর যেতে পারেননি এই বাঁ হাতি ব্যাটার। কেশব মাহারাজের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ৪৮ বলে ৬২ রানে বোল্ড হন হেড। তার ইনিংসে ছিল ৯ চার ও ২ ছক্কার মার। ১৪ ওভারে একশো পেরোয় অজিরা। লাবুশেনকেও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে দেয়নি প্রোটিয়া বোলাররা। ২১.৫ ওভারে দলীয় ১৩৩ রানে শামসির বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ফেরেন লাবুশেন। ৩১ বলে দুই বাউন্ডারির মারে করেন ১৮ রান। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের আউটের মাধ্যমে। ২৩.৪ ওভারে দলীয় ১৩৭ রানে শামসির বলে বোল্ড হন আফগানদের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জেতানো ম্যাক্সওয়েল। ফেরার আগে ৫ বল খেলে করেন মাত্র ১ রান। এরপর স্টিভ স্মিথ ৬২ বলে ৩০ রান করে আউট হলে ১৭৪ রানে ৬ উইকেট হারায় অজিরা। এতে ম্যাচ ঝুঁকে পড়ে প্রোটিয়াদের দিকে। তখনও ক্রিজে ছিলেন জস ইংলিস। দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তবে ৩৯.৫ ওভারে দলীয় ১৯৩ রানে কোয়েৎজার দুর্দান্ত এক ইয়োর্কারে বোল্ড হন ইংলিস। আউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে তিন বাউন্ডারিতে করেন ২৮ রান। ইংলিস আউট হওয়ার সময় অজিরা জয় থেকে মাত্র ২০ রান দূরে ছিল। উত্তেজনার বারুদ ছড়িয়ে পড়ে ইডেন গার্ডেন থেকে পুরো বিশ্বে। তবে শেষ দিকে আর অঘটন ঘটতে দেননি অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক। স্টার্ক ৩৮ বলে ১৬ ও কামিন্স ২৯ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ পর্যন্ত ১৬ বল হাতে রেখেই প্রোটিয়াদের কাঁদিয়ে ম্যাচ জিতে ফাইনালে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার শামসি ও কোয়েৎজা যথাক্রমে ৪২ এবং ৪৭ রানে পান ২টি করে উইকেট। ম্যাচসেরার পুরস্কার পান ট্রাভিস হেড।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সিলেটে কোরআন খতম ও দোয়া
অধ্যক্ষ হয়ে ভাগ্য বদলে যায় অনুতোষ কুমারের
দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনে নামা হবে : কর্নেল অলি
ভুল এমনি এমনি হয় না, এর পেছনে কারো না কারো হাত থাকে : ইসি
সিলেটকে উড়িয়ে জয়ের ধারায় চট্টগ্রাম
ঈশ্বরগঞ্জে গলায় ফাঁস দিয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু
সচিবালয়ের পথে জবির অনশনকারী শিক্ষার্থীরা
হাজীগঞ্জে ছেলের ঘুষিতে বাবার মৃত্যুর অভিযোগ
ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা: চেয়ারম্যানকে আসামি করে মামলা
নরকিয়া ও এনগিডিকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ. আফ্রিকা দল
বান্দরবানে দূর্বৃত্তের গুলিতে মার্মা নারী আহত
‘বিতর্ক ওঠায়’ পিএসসির ৬ সদস্যের নিয়োগ বাতিল
পুলিশকে নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে : পুলিশ সুপার
কুয়াকাটায় জেলেদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৩
বাংলাদেশে থেকে ওরা পালিয়েছে- আল্লামা তারেক মনোয়ার
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ সমস্যা সমাধানে কঠোর পদক্ষেপ চাই
"স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ: আপামর জনতার ত্যাগের ফসল"
পূর্ব ইউক্রেনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া
কিশোরগঞ্জ হাওর অঞ্চলে সারের বাফার গুদাম করা প্রয়োজন মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
তাইম ও হৃদয় হত্যাকাণ্ডে দুই পুলিশ সদস্যকে ২০ জানুয়ারি ট্রাইবুনালে হাজিরের নির্দেশ