ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ৩০ পৌষ ১৪৩১
রোহিতদের দম্ভচূর্ণ

ভারতকে গুড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার ছয়

Daily Inqilab জাহেদ খোকন

২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে উড়ন্ত ভারতকে গুড়িয়ে ষষ্ঠ শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া। গতকাল আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের জমজমাট ফাইনালে ৬ উইকেটে স্বাগতিক ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাট করে বিরাট কোহলি এবং লোকেশ রাহুলের হাফসেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৪০ রানে অলআউট হয় টিম ইন্ডিয়া। জবাবে ওপেনার ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ও মার্নাস লাবুশেনের অর্ধ শতকে ৪৩ ওভারে ৪ উইকেটে ২৪১ রান তুলে সহজ জয়ের পাশাপাশি বিশ্বকাপের ষষ্ঠ শিরোপা ঘরে তোলে অজিরা।
বিশ্বকাপে এবার লিগ পর্ব থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত টানা দশ ম্যাচে অপরাজিত ছিল ভারত। শুধু তাই নয়, ফাইনালের আগে কেউ তাদের অলআউটও করতে পারেনি। যা করে দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে আড়াইশ’র আগেই গুটিয়ে দিয়ে টুর্নামেন্টে প্রথমবার অলআউট করে স্বাগতিকদের প্রথম হারের স্বাদও দিয়েছেন প্যাট কামিন্সরা। শেষ পর্যন্ত ৪২ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে ছয়বারের মতো বিশ্বসেরার খেতাব জিতে নেয় অজিরা। আর নিজ দেশেই দম্ভচূর্ণ হয় রোহিত-কোহলিদের।
ফাইনালের আগে এই ভারত অজেয়, টানা দশ ম্যাচ জিতে শিরোপার কাছাকাছি। রোহিতদের সামনে দাঁড়াতেই পারছে না কোনো দল। খেলাও আবার ঘরের মাঠে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতই ফেভারিট, ফাইনালের আগে ছিল এ আলোচনাই। তবে অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেছিলেন, ফুল প্যাকড স্টেডিয়ামকে স্তব্ধ করে দিতে চান তারা। সেটা শুধু কথায় না, করেও দেখালেন কামিন্সরা। ম্যাচ জিতে টিম অস্ট্রেলিয়া যখন বিজয়-উল্লাস করছে, তখন প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শকে পরিপূর্ণ পুরো নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ছিল পিনপতন নীরবতা।
মূলত অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের তোপেই পুরো টুর্নামেন্টে উড়তে থাকা ভারতীয় ব্যাটাররা ফাইনালে তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি। যদি কোহলি ও রাহুল হাফসেঞ্চুরি না করতেন এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মা মারকুটে ইনিংস না খেলতেন, তাহলে আরও বড় বিপদে পড়তে হতো ভারতকে। অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও জোশ হ্যাজেলউডরা পুরো আসরে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা ভারতীয় ব্যাটারদের সেভাবে দাঁড়াতেই দেননি। আর ব্যাটিংয়ে নেমে রবিন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদবদের পাত্তাই দেননি ট্রাভিস হেড- মার্নাস লাবুশেনরা।
‘শিশির’ ভাবনায় টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। এবারের বিশ্বকাপে প্রথমে ব্যাট করতে নামা মানেই ভারতের ঝাড়ো সূচনা। ব্যত্যয় ঘটেনি ফাইনালেও। ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই মারমূখি ছিলেন দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভ গিল। যদিও শুরুতে ওপেনার শুভমান গিলের উইকেট হারিয়ে ফেললেও ঝড়ের গতিতেই রান তোলে ভারত। ৪.২ ওভারে দলীয় ৩০ রানে গিল শিকার হন স্টার্কের। ফেরার আগে তিনি করেন ৭ বলে মাত্র ৪ রান! তবে আরেক ওপেনার রোহিত মারকুটে ভঙ্গিমায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিকই। ছিলেন হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায়। তবে ৯.৪ ওভারে দলীয় ৭৬ রানে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত এক ক্যাচ হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন রোহিত। ফেরার আগে ৩১ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ভারত অধিনায়ক করেন ৪৭ রান। এরপরই যেন স্বাগতিকদের চেপে ধরে অস্ট্রেলিয়া। নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার স্বদেশী সমর্থকদের হতাশ করেন ভারতীয় ব্যাটাররা। ১০ ওভারে ২ উইকেটে যেখানে ভারতের রান ছিল ৮০, সেখানে এরপর টানা ১৬ ওভার কোনো বাউন্ডারির দেখা পায়নি ভারত। অবশেষে ২৭তম ওভারে এসে সেই বাউন্ডারিখরা কাটান লোকেশ রাহুল।
এর আগে দশম ওভারের চতুর্থ বলে রোহিত আউট হওয়ার পর ব্যাট করতে নামেন শ্রেয়াস আয়ার। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেও ফাইনালে তিনি ছিলেন পুরোপুরিই ফ্লপ। একটি বাউন্ডারি মেরে তিনিও ফেরেন ১০.২ ওভারে। প্যাট কামিন্সের বলে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আয়ার। ৮১ রানের মাথায় ভারত হারায় তৃতীয় উইকেট। তিন উইকেট হারানোর পর কোহলি আর রাহুল যেন খোলসে ঢুকে পড়েন। দলকে এগিয়ে নিতে দাঁতে দাঁত চেপে ক্রিজে পড়ে থাকার চেষ্টা করেন তারা। চতুর্থ উইকেটে ১০৯ বল খেলে এ দুইজন ধীরগতিতে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন ৬৭ রান। অবশেষে এই জুটি ভেঙে দেন প্যাট কামিন্স। ২৮.৩ ওভারে কামিন্সের দুর্দান্ত ডেলিভারিতেই ইনসাইডেজ হয়ে বোল্ড হন কোহলি । দলীয় ১৪৮ রানে ফেরার আগে ৬৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৫৪ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন কোহলি। রবীন্দ্র জাদেজা সুবিধা করতে পারেননি। ৩৬তম ওভারের পঞ্চম বলে হ্যাজেলউডের শিকার হন তিনি। ফেরার আগে ২২ বলে ৯ রান করেন জাদেজা। তার আউটে ১৭৮ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন লোকেশ রাহুল। বেশ ধীরগতিতেই ব্যাটিং করেন তিনি। অবশেষে ধীরগতির রাহুলকে ড্রেসিংরুমের পথ চেনান মিচেল স্টার্ক। ৪১.৩ ওভারে দলীয় ২০৩ রানে উইকেটরক্ষক জোশ ইংলিশকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১০৭ বলে ৬৬ রান করেন রাহুল। তার ইনিংসে মাত্র একটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। ৪৩.৪ ওভারে মোহাম্মদ শামিকেও (১০ বলে ৬) ড্রেসিংরুমে ফেরান স্টার্ক। ২১১ রানে ৭ উইকেট হারায় ভারত। এরপর আর বেশিদূর এগোতে পারেনি ভারত। এর ৩ রান পরেই আউট হন জাসপ্রিত বুমরাহ। ৪৪.৫ ওভারে তাকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান জাম্পা। শেষ স্বীকৃত ব্যাটার সূর্যকুমার যাদবের ওপর ভরসা থাকলেও তিনি ২৮ বলে ১ চারের মারে ১৮ রান করে হ্যাজেলউডের শিকার হন। ৪৭.৩ ওভারে সূর্যকুমার আউট হলে ২২৬ রানে ৯ উইকেট হারায় ভারত। ইনিংসের শেষ বলে মোহাম্মদ সিরাজ ডাবল নিতে গেলে রানআউটের কবলে পড়েন কুলদ্বীপ যাদব (১৮ বলে ১০ রান)। তাতেই আড়াইশ’র ১০ রান আগে অলআউট হয় ভারত। শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ সিরাজ ৮ বল খেলে এক বাউন্ডারিতে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ৫৫ রানে পান ৩ উইকেট। প্যাট কামিন্স আর জশ হ্যাজেলউড যথাক্রমে ৩৪ ও ৬০ রানে নেন ২টি করে উইকেট।
ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের জন্য লক্ষ্য খুব বড় নয়। তবে ২৪১ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মোহাম্মদ শামি-জাসপ্রিত বুমরাহদের বোলিং তোপে ৪৭ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে অজিরা। তবে ট্রাভিস হেড আর মার্নাস লাবুশেনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। ২১৫ বলে ১৯২ রানের জুটিতে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসেন হেড ও লাবুশেন। তবে জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে মোহাম্মদ সিরাজের বলে আউট হন হেড। ১২০ বলে ১৩৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসে ১৫টি চার ও ৪টি ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি এই ব্যাটার। হেডকে দারুণ সাপোর্ট দেওয়া লাবুশেন ১১০ বলে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন। জয়সূচক ২ রান আসে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট থেকে।
অথচ ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৬ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ৩ বলে ৭ করে মোহাম্মদ শামির বলে খোঁচা দিতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ হন ডেভিড ওয়ার্নার। ১৫ বলে ১৫ রান করে জাসপ্রিত বুমরাহর শিকার হন মিচেল মার্শ। উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুল নেন তার ক্যাচ। এরপর মাত্র ৪ রান করে স্টিভেন স্মিথও বুমরাহর বলে এলবিডব্লিউ হলে চাপে পড়ে অজিরা। যদিও স্মিথ আউট ছিলেন না। বল বাইরে পিচ করেছিল। কিন্তু আম্পায়ার আউট দিলে আর রিভিউ নেননি স্মিথ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকায়নি অস্ট্রেলিয়া। হেড-লাবুশেনে ভর করেই সহজ জয়ে বিশ্বকাপ ঘরে তোলে তারা। ভারতের বুমরাহ ৪৩ রানে পান ২টি উইকেট। ম্যান অব দ্য ফাইনাল হন ট্রাভিস হেড। পুরো আসরে ৭৬৫ রান করে টুর্নামেন্ট সেরা হন বিরাট কোহলি। ফাইনাল শেষে বিজয়ী ও বিজিত দলের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী রিচার্ড মার্লস।


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এসবির প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গোলাম রসুলকে

এসবির প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গোলাম রসুলকে

পিএসসির ৬ সদস্যের নিয়োগ বাতিল করেছে সরকার

পিএসসির ৬ সদস্যের নিয়োগ বাতিল করেছে সরকার

বাংলাদেশের সীমান্তে ১৬০টি জায়গায় কাটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত : রিজভী

বাংলাদেশের সীমান্তে ১৬০টি জায়গায় কাটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত : রিজভী

সব ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ, ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

সব ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ, ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

মোক্ষম চাল রাশিয়ার

মোক্ষম চাল রাশিয়ার

লুকিয়ে পাথর লুঠে যেয়ে সিলেটে এক শ্রমিকের মৃত্যু !

লুকিয়ে পাথর লুঠে যেয়ে সিলেটে এক শ্রমিকের মৃত্যু !

বাগেরহাটে আওয়ামী লীগ নেতা বাদশা মিয়া গ্রেফতার

বাগেরহাটে আওয়ামী লীগ নেতা বাদশা মিয়া গ্রেফতার

ভারতে পালানোর সময় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী সুস্মিতা পান্ডে গ্রেপ্তার

ভারতে পালানোর সময় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী সুস্মিতা পান্ডে গ্রেপ্তার

খুশদিল ঝড়ে খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল রংপুর

খুশদিল ঝড়ে খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল রংপুর

টানা ৩৫ ঘণ্টা পর অনশন প্রত্যাহার জবি শিক্ষার্থীদের

টানা ৩৫ ঘণ্টা পর অনশন প্রত্যাহার জবি শিক্ষার্থীদের

যাদের চিন্তাধারায় গড়ে উঠেছে পাশ্চাত্য জীবন দর্শন

যাদের চিন্তাধারায় গড়ে উঠেছে পাশ্চাত্য জীবন দর্শন

`সমন্বয়ক, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হ'

`সমন্বয়ক, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হ'

মুজিবনগর ঘোষণায় সেক্যুলারিজম সমাজতন্ত্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ছিল না : ৭২ এর সংবিধানে আছে

মুজিবনগর ঘোষণায় সেক্যুলারিজম সমাজতন্ত্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ছিল না : ৭২ এর সংবিধানে আছে

সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-দখলবাজি রুখতে হবে

সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-দখলবাজি রুখতে হবে

এইচএমপিভি: বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা

এইচএমপিভি: বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা

হতাহত ৩০

হতাহত ৩০

৩শ’ সৈন্য নিহত

৩শ’ সৈন্য নিহত

৫ মাওবাদী হত্যা

৫ মাওবাদী হত্যা

দাবানলে চুরি

দাবানলে চুরি

চেক প্রজাতন্ত্রে নিহত ৬

চেক প্রজাতন্ত্রে নিহত ৬