১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি : রূপকথার ২৬ বছর

‘সেই ১৩ এপ্রিলই তৈরি করেছে আজকের মাশরাফি-সাকিব-তামিমদের’

Daily Inqilab ইমরান মাহমুদ

১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪৭ পিএম

অনেকটা নিরবেই কেটে গেল আরেকটি ১৩ এপ্রিল। অথচ এই দিনটিতেই যে বোনা হয়েছিল বর্তমান বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের প্রানে দোলা দেয়া, রোমাঞ্চ জাগানিয়া, উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দেয়া সার্বজনীন এক আয়োজন- ক্রিকেটের। দিনটি ১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল। কুয়ালালামপুরের কিলাত কিলাব মাঠে আইসিসি ট্রফির ফাইনালে কেনিয়ার মুখোমুখি বাংলাদেশ। শেষ বলের রোমাঞ্চকর এক অধ্যায় শেষে জয়। জেগে উঠে পুরো বাংলাদেশ। পুরো দেশে বয়সে যায় আনন্দের বন্যা। ক্রিকেট খুঁজে পায় নতুন দিগন্ত। সেই সাফল্যের হাত ধরে ধাপে ধাপে এখন অনেকটাই পরিণত দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
এখন বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন সাকিব আল হাসানের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের মতো ব্যাটার। এক সময় দাপটের সঙ্গে খেলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে সেদিন যদি ক্রিকেটে এমন জোয়ার সৃষ্টি না হতো, তা হলে হয়তো এতো বড় তারকা হয়ে ওঠা হতো না এই সকল খেলোয়াড়দের। হয়তোবা ক্রিকেটের দিকেই আকর্ষিত হতেন না তারা!
প্রতি বছর ১৩ এপ্রিল এলেই বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিদের স্মৃতিপটে জীবন্ত হয়ে উঠে হাসিবুল হোসেন শান্ত ও খালেদ মাসুদ পাইলটের বুনো উল্লাসের সেই ছবি। দুই হাত উঁচু করে মাঠে ছুটে বেড়ানো পাইলট-শান্ত’র সেই ছবি এখনো বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় প্রতীক। যদিও দুই দিন ব্যাপি ওই ফাইনাল ম্যাচের উৎসব শুরু হয় ১২ এপ্রিল থেকেই। মূলত কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হলেও বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ ব্যাটিং করে রিজার্ভ ডেতে, ১৩ এপ্রিল। জয়ের জন্য চাই ১ বলে ১ রান। কোনোমতে ব্যাটে লাগিয়ে স্বপ্নপূরণ! পরে জানা যায় ব্যাটেই লাগেনি বল, প্যাডে লেগে আসে কাক্সিক্ষত রানটি। কিন্তু তাতে কি আসে যায়, এখনও বাংলাদেশিরা বিশ্বাস রানটা হাসিবুল হাসান শান্তরই। বাংলাদেশিরা তাই আলাদা করে ফ্রেমে বাঁধিয়ে রেখেছেন আইসিসি ট্রফি জয়ের সেই স্মৃতিগুলোকে।
২৬ বছর পর এসেও সেই দিনের টাটকা স্মৃতি ফের তুলে আনলেন তৎকালীন অধিনায়ক আকরাম খান, ‘প্রায় ২৬ বছর হয়ে গেল আইসিসি ট্রফিটা, এতো বড় সাফল্য। এখন এতো বড় বড় খেলোয়াড় বাংলাদেশ দলে খেলছে, সাকিব, তামিম, মুশফিক, তারপর মাশরাফি যখন খেলত, আশরাফুল ছিল, মোস্তাফিজ। খুব ভালো লাগে সত্যি বলতে। ওইদিন আইসিসি ট্রফিতে যদি আমরা কোয়ালিফাই না করতাম, ওরা হয়তো খেলত, কিন্তু এই পর্যায়ে এমন পারফরম্যান্স করার সুযোগটা পেত না। এরজন্য আমাদের খুব ভালো লাগে, যে শুরুটা আমাদের হাত দিয়ে হয়েছে।’
তখন ক্রিকেট খেলার জন্য নিজেদের কোনো মাঠ ছিল না আকরামদের। ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) ছয় মাসের জন্য খেলতে দেওয়া হতো তাদের। ছিল না অনুশীলন করার মতো কোনো জায়গা। অন্যান্য সুবিধা তো অনেক দূরের বিষয়। অথচ তাই নিয়েই ক্রিকেটকে নতুন দিগন্তে তুলেছিলেন আকরাম-বুলবুলরা, ‘ক্রিকেটটা তখন এই পর্যায়ে ছিল এখন যেমন হকি, টেনিস, ব্যাডমিন্টন রয়েছে এই পর্যায়ে। তখন আমাদের কোনো কাঠামোই ছিল না। আমাদের না কোনো মাঠ ছিল, না কোনো অনুশীলনের জায়গা। ছয় মাসের জন্য বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পেতাম খেলার জন্য। সেখান থেকে আজকে কিন্তু যে জায়গায় চলে এসেছে। এতোটা মাঠ, এতো ইনডোর, এতো সুবিধা, এতো ভালো প্লেয়ার। সবকিছু চিন্তা করলে খুবই ভালো লাগে।’ মালয়েশিয়ায় আইসিসি ট্রফি টার্ফে অনুষ্ঠিত হবে জানার পর অনুশীলনের জন্য অনেক কষ্ট করে টার্ফ কেনা হয়েছিল বলে জানান তিনি, ‘মালয়েশিয়ায় যখন খেলা হবে, তখন কিন্তু টার্ফে হওয়ার কথা। আমরা তো টার্ফে খেলি নাই। তখন কিন্তু বোর্ডের টাকাও ছিল না। তখন অনেক কষ্ট করে, টার্ফ কেনা হয়েছে। ওই বছর লিগটা টার্ফে খেলা হয়েছে।’
শুধু তাই নয়, ঢাকা স্টেডিয়ামে খেলা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আন্দোলনেও নামতে হয়েছিল ক্রিকেটারদের। আইসিসি ট্রফি খেলার সেই যাত্রার গল্প বলতে গিয়ে উঠে আসে সেটিও, ‘একটা সময় ঢাকা স্টেডিয়ামে খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যেকোনো কারণে, কারণটা মনে করতে পারছি না। সেটা নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি। তখন আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম। তখন আমরা রাস্তায় ক্রিকেট খেলছিলাম, প্রেসক্লাবের সামনে। তখন কিন্তু আমরা আবার মাঠটা পাই ও খেলি। শুধু আমরা এই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য মাঠে খেলেছি তাই না। অনেক কষ্টও করেছি। অবশ্যই সবার জানা উচিত।’
হাজারো প্রতিকূলতা পেরিয়ে পাওয়া সেই জয় আমূল বদলে দেয় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে, বাংলাদেশকেও। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়ে যায় বাংলাদেশ। সে ধারায় (১৯৯৯ সালের) বিশ্বকাপে দারুণ পারফরম্যান্স। পাকিস্তানকে হারানোর পর টেস্ট স্ট্যাটাসও পেয়ে যায় টাইগাররা। এখনও ওয়ানডে ক্রিকেটে একরকম পরাশক্তিই বাংলাদেশ। অন্য দুই সংস্করণেও এগিয়েছে টাইগাররা। কিন্তু সেদিন যদি অন্য কিছু হতো, তাহলে হয়তো এখনও সংগ্রাম করতে হতো দেশের ক্রিকেটকে। তাইতো এমন একটি উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে কোনো আয়োজন না দেখে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন আকরাম নিজেই। শিরোপা জয়ে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া আকরাম মনে করেন নতুন প্রজন্মের জানা উচিত তাদের সেই উদ্দীপনার গল্প, ‘আমি যেহেতু বোর্ডের সাথে জড়িত, এটা বলাটা ভালো দেখায় না। মনে করেন যে, এটা কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাস। কারণ শুরু এখান থেকেই হয়েছে। দেখেন আজকে (গতকাল) ২৬ বছর হয়ে গেল আইসিসি ট্রফির। একটা গেট টুগেদার করা উচিত ছিল। ক্রিকেট বোর্ড বলেন, কোয়াব বলেন- করা উচিত ছিল। এখানে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আপনি যদি আপনার পরের প্রজন্মের কাছে তুলে না ধরেন তাহলে আপনার জিনিসটা তো মানুষের মনে থাকবে না। তাই এ জিনিসটাতে অনেক বেশি মন দেওয়া উচিত।’
হাসিবুল, খালেদ মাসুদ, রফিক, খালেদ মাহমুদ, সাইফুল, মিনহাজুল, আমিনুল ও আকরাম, নাইমুর ও এনামুল ও আতহারদের হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের নবজাগরণ হয়েছিল। তাদের উত্তরসূরী হাবিবুল বাশার, আশরাফুল, রাজ্জাক, আফতাব, মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকরা বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ক্রিকেট বিশ্বে! পরের প্রজন্ম হয়তো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তকমা উপহার দেবে বাংলাদেশকে। যেমনটি এরই মধ্যে করে দেখিয়েছে যুবারা।


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

চ্যাম্পিয়ন বিকেএসপি
‘বিদেশি’ আনছে ভারতও!
টিভিতে দেখুন
বিশ্বকাপে এক পা আর্জেন্টিনার
‘‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ কিংবদন্তি জর্জ ফোরম্যান আর নেই
আরও
X

আরও পড়ুন

চ্যাম্পিয়ন বিকেএসপি

চ্যাম্পিয়ন বিকেএসপি

‘বিদেশি’ আনছে ভারতও!

‘বিদেশি’ আনছে ভারতও!

কর্ণফুলীতে বন্যহাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু

কর্ণফুলীতে বন্যহাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত

কিশোরগঞ্জে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত

ঝিনাইদহে জমে উঠেছে ঈদের বাজার ক্রেতাদের ঝোঁক দেশি পোশাকে

ঝিনাইদহে জমে উঠেছে ঈদের বাজার ক্রেতাদের ঝোঁক দেশি পোশাকে

সুশীল বিপ্লবীরা আ.লীগের পুনর্বাসন করতে চায় : রাশেদ খান

সুশীল বিপ্লবীরা আ.লীগের পুনর্বাসন করতে চায় : রাশেদ খান

ধানমন্ডিতে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের ৭ সদস্য রিমান্ডে

ধানমন্ডিতে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের ৭ সদস্য রিমান্ডে

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৯০% ভোট পেয়ে বিএনপি জয়লাভ করবে : কায়কোবাদ

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৯০% ভোট পেয়ে বিএনপি জয়লাভ করবে : কায়কোবাদ

আপন চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৪ বছরের বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ

আপন চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৪ বছরের বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে : মাহমুদুর রহমান মান্না

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে : মাহমুদুর রহমান মান্না

টিভিতে দেখুন

টিভিতে দেখুন

অমর একুশে হল ছাত্রদলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

অমর একুশে হল ছাত্রদলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বিশ্বকাপে এক পা আর্জেন্টিনার

বিশ্বকাপে এক পা আর্জেন্টিনার

মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ায় হাফেজ ছেলের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নামাজরত অবস্থায় বাবা নিহত

মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ায় হাফেজ ছেলের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নামাজরত অবস্থায় বাবা নিহত

‘‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ কিংবদন্তি জর্জ ফোরম্যান আর নেই

‘‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ কিংবদন্তি জর্জ ফোরম্যান আর নেই

বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে : নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী

বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে : নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী

৬ এপ্রিল ক্যাম্পে ফিরছেন সাবিনারা

৬ এপ্রিল ক্যাম্পে ফিরছেন সাবিনারা

আর্জেন্টিনা ম্যাচে ‘বেকার’ আলিসনও

আর্জেন্টিনা ম্যাচে ‘বেকার’ আলিসনও

ইউট্যাবের ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়ার সুস্থতার কামনা

ইউট্যাবের ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়ার সুস্থতার কামনা

কুস্তির কমিটি নিয়ে ক্ষোভ অব্যহত

কুস্তির কমিটি নিয়ে ক্ষোভ অব্যহত