রেকর্ডের মালায় মধুর প্রতিশোধ বাংলাদেশের
১৭ জুন ২০২৩, ১১:৫০ পিএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
পেশাদার ক্রিকেটে সরাসরি প্রতিশোধর কথা সাধারনত কেউ বলে না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের আগে কিংবা পরে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যুক্ত কেউ সেই শব্দ উচ্চারণও করেননি। তবে সব কথা কি আর মুখে বলতে হয়? মোটেই না। গতকাল মিরপুরে একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানকে বিধ্বস্ত করে ৫৪৬ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। ফলে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে আফগানদের কাছে ২২৪ রানের পরাজয়ের যে ক্ষত এতদিন বাংলাদেশের ক্রিকেট দল বা সমর্থকদের বুকে ছিল, তা কিছুটা প্রশমিত হলো মধুর প্রতিশোধ মাধ্যমেই। লাল বলের ক্রিকেট ইতিহাসে এটি তৃতীয় বৃহত্তম জয়। আর টাইগারদের জন্য সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড। এভারেস্টসম ৬৬২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে, টাইগার পেসারদের আগ্নিঝড়া বোলিংয়ের তোপে আফগানিস্তান গুটিয়ে গিয়েছে কেবল ১১৫ রানে। এর আগে তারা প্রথম ইনিংসে করতে পেরেছিল কেবল ১৪৬ রান।
তৃতীয় দিন শেষেই নিশ্চিত হারের মুখে ছিল আফগানিস্তান। শেষ ২ দিনে তাদের আরও প্রয়োজন ছিল ৬১৭ রান। অন্যদিকে টাইগারদের মাত্র ৮ উইকেট। গতকাল শেরে বাংলায় লাঞ্চ বিরতির আগে ম্যাচটা শেষ করার জন্য প্রথম সেশনে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৫ মিনিট বেশি খেলানো হলো। সেই সময়ের মধ্যেই ম্যাচটা প্রায় শেষও করে দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। আফগানিস্তানের শেষ উইকেট নিয়ে চলছে নাটকীয়তা। ৩৩তম ওভারের তৃতীয় বলে জাহির খান ব্যাট চালালে উইকেটরক্ষকের গøাভসে বল জমা পড়তেই উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট হয়ে গেছে ভেবে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তাসকিন। তবে রিভিউতে বেঁচে যান জাহির।
পরের ডেলিভারিতে ফুল টসে বোল্ড হন জাহির। আরও একবার উল্লাস করে বাংলাদেশ। তবে এই যাত্রায় বলটি ছিল ব্যাটারের কোমরের ওপরে। বাংলাদেশের বিজয়ও বিলম্বিত হলো। ওই ওভার শেষেই লাঞ্চ বিরতি ঘোষণা করা হয়। তবে আফগানিস্তান জানিয়ে দেয়, জহির আর ব্যাট করতে নামতে পারবেন না। তাসকিনের ওই ওভারের শেষ বলে ভয়ংকর এক বাউন্সারে আহত হন তিনি। তাতেই বিশাল জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম জয় পেয়েছিলো ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ওই টেস্টে ২২৬ রানের ব্যবধানে পাওয়া জয়ই এতদিন রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় ছিল টাইগারদের। ২০১৮ এবং ২০২০ সালে দুটি ইনিংস ব্যবধানে জয় থাকলেও শুধু রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় সেটিই। অন্যদিকে টেস্ট ইতিহাসে ১৯২৮ সালে ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৭৫ রানে জিতেছিলো ইংলিশরা। এরপর ১৯৩২ সালে দ্য ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৬২ রানের ব্যবধানে জয় পেয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। এরপর সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ের রেকর্ডটিই এখন বাংলাদেশের।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর ১৪৬ রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশ ৩৮২ রান সংগ্রহ করে। জবাব দিতে নেমে ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। ২৩৬ রান এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে। ম্যাচ সেরা শান্তর ব্যাক টু ব্যাক এবং অভিজ্ঞ মুমিনুল হকের শতকে ভর করে ৪ উইকেটে ৪২৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে টাইগাররা।
গতকাল সকালে ব্যাট করতে নেমে চুড়ান্ত ব্যর্থ হলেন আফগান ব্যাটাররা। একের পর এক উইকেট হারিয়েছেন তারা। দিনের তৃতীয় ওভারেই এবাদত হোসেনের অফ স্ট্যাম্পের একটু বাইরে লেন্থ বলটি ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বসেন ব্যাটার নাসির জামাল। উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে সেই ক্যাচ ধরতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। এরপর শরিফুল ইসলাম পরপর দুই ওভারে আফসার জাজাই ও বাহির শাহকে ফিরিয়ে আফগানদের লড়াইয়ের আশা প্রায় শেষ করে দেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬৫ গড়ে রান করা বাহির নেমেছিলেন হাশমতউল্লাহ শাহিদির কনকাশন সাব হিসেবে।
একটু দেরিতে আক্রমণে আসা তাসকিন ও মেহেদী হাসান মিরাজ সারেন বাকিটা। তাসকিন শিকার শুরু করেন এক প্রান্ত আগলে রাখা রহমত শাহর প্রতিরোধ ভেঙে। অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বলে খোঁচা মেরে লিটনের গøাভসে ধরা পড়েন আফগান টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। এরপর দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে করিম জানাতের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তাসকিন। আমির হামজাকে ফিরিয়ে দলকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে যান মিরাজ। ইয়ামিন আহমাদজাইকে বিদায় করে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়ার আশা জাগান তাসকিন। সেটি হতে দেননি জহির। পরপর দুই বলে বেঁচে যান তিনি।
মিরপুর টেস্টে রেকর্ড জয়ের সাথে বাংলাদেশ দল পেল আরও কিছু রেকর্ডের সন্ধান। এই ম্যাচে পেসাররা পেয়েছেন ১৪ উইকেট। বাংলাদেশের কোনো টেস্টে যা সর্বোচ্চ। এর আগে এক টেস্টে বাংলাদেশের পেসাররা সর্বোচ্চ ১৩টি উইকেট নিয়েছিলেন গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। শুধু তাই নয়, এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দলের একজন ব্যাটসম্যানও কমপক্ষে ৫০ রানের ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হলেন। অন্যদিকে দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৪৩২ বল খেলতে পেরেছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সর্বনি¤œ ৫৭৬ বলের মধ্যে দুবার অলআউট হয়েছিল। মিরপুরের সে ম্যাচটি তারা জিতেছিল ইনিংস ও ১৮৪ রানে। ১৮৯৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুবার অলআউট করতে ইংল্যান্ডের লেগেছিল মাত্র ২৪৮ বল, যা এখনও রেকর্ড।
এই ম্যাচের মাধ্যমে লিটন দাস তৃতীয় বাংলাদেশী অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই জয়ের দেখা পেলেন। এর আগে মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসান ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইওন্ডিজ সফরে পরপর দুই ম্যাচে এই কৃর্তী অর্জন করেছিলেন।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভাবনার দিক দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যবধান ঘটে গেছে
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিমানের মাসিক বিক্রয় ৯০০ কোটি টাকা ছাড়ালো
ফরিদপুরের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে মামা-ভাগ্নের লাশ
সিরাজদিখানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩ জন টেটা বৃদ্ধ, আহত ১০
হাসিনাকে কি বাংলাদেশে নির্বাসিত করা হবে?
জকিগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের সেবা সহজীকরণ অনুষ্ঠান
লাকসামে বিএনপির আজিম-কালাম গ্রুপ মুখোমুখি: ককটেল বিস্ফোরণ, অস্ত্রের মহড়া
ভুয়া পেইজে ঢাবি প্রশাসনসহ অনেকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, এডমিন ঢাবি ছাত্রদল নেতা
ইটনায় বিএনপির স্বাধীনতার বিজয় উৎসবে নেতাকর্মী ও জনতার ঢল এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে বিএনপি ৯০ শতাংশ ভোট পাবে: ফজলুর রহমান
ব্যান্ড সঙ্গীত ও বাইকপ্রেমীদের জন্য সুজুকি ও আর্টসেলের নতুন মিউজিক ভিডিও
বিএনপি সকল ধর্ম -বর্ণ-গোত্রের দল : প্রিন্স
বিয়ের করার সময় যে সমস্ত খেয়াল রাখা প্রসঙ্গে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
`আগামী নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে'
সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বরণ!
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ২৬ নারী-পুরুষ ও শিশু
লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফরহাদ হোসেন ইমন গ্রেফতার
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরও এক মাস বাড়ল