পরিসংখ্যানের চোখে তামিমের ক্যারিয়ার
০৬ জুলাই ২০২৩, ১০:০৮ পিএম | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০২ এএম
কিছু ঘটনা থাকে, যেগুলো প্রক্রিয়াকরণে মস্তিষ্ক বেশ সময় নেয়। গতকাল বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন তামিম ইকবাল যখন বিশ্বকাপের ঠিক তিন মাস আগে অবসরের ঘোষণা দিলেন, টাইগার ভক্তদের মস্তিষ্ক হয়তা বা সময় নিচ্ছে গোটা ব্যাপারটা বোঝার জন্য। কারণ ব্যাপারটা যে প্রত্যাশার চেয়ে বেশী মন খারাপের। এই জায়গাটাতে একটু দাড়াচ্ছি। আসলেই কি তাই? মনে হয় না! কারণ ‘ডটবাবা’ বা ‘ভাতিজা’ বলে যারা তামিমকে কটাক্ষ করতেন, তারা তো আজ মহা আনন্দিত। নিন্দুক তার কাজ করবেই। তবে সত্যিকারের টাইগার ভক্তদের কাছে তামিম একজন আত্মবিশ্বাসের প্রতীক, যিনি কুইন্স পার্ক ওভালে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে জহির খানকে গ্যালারির দোতালায় আছড়ে ফেলতে পারেন। যিনি সর্বপ্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে জানান দিয়েছিলেন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে খেলবে। নানা উত্থান-পতনের ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে তার অর্জনের খাতাই ভারী। ফিরে দেখা যাক তার বর্নীল ক্যারিয়ার।
২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তামিমের। হারারেতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। টাইগাররা সেদিন জিতেছিল ১৪ রানে। ১৬ বছরের ব্যবধানে আরেকটি ওয়ানডে হয়ে থাকল তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। তবে তামিমের অবসর ঘোষণার আগের দিন চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানদের বিপক্ষে ডিএলএস পদ্ধতিতে ১৭ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। জীবনের ৩৪ বসন্ত পেরোনো তামিম অবসরে গেলেন বর্ণাঢ্য ও সমৃদ্ধ একটি ক্যারিয়ার সঙ্গী করে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক রেকর্ডে জ্বলজ্বল করছে তার নাম, অনেক ‘প্রথম’ এসেছে তার নৈপুণ্যে।
তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে ১৫ হাজার রান রয়েছে তামিমের। ৩৮৯ ম্যাচে তার সংগ্রহ ১৫২০৫ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের শতকের সংখ্যা মোট ২৫টি। বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারের ২০টি সেঞ্চুরিও নেই। এই বাঁহাতি ব্যাটার তিন সংস্করণেই সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার। তিনি ২৪১ ওয়ানডেতে ৩৬.৬২ গড় ও ৭৮.৫৪ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৮৩১৩ রান। বাংলাদেশের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এই সংস্করণে ৮ হাজার রানের তালিকায় আছেন তিনি। ওয়ানডেতে ১৪টি শতকের পাশাপাশি আছে ৫৬টি অর্ধশতকও। দুই ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে সবার উপরে আছেন তিনি।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দেড়শ রানের ইনিংস আছে কেবল তিনটি। এর দুটিই এসেছে তামিমেরব্যাট থেকে। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়ায়োতে তিনি খেলেন ১৫৪ রানের ইনিংস। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই সিলেটে নিজের রেকর্ড ভেঙে করেন ১৫৮। পরের ম্যাচেই অবশ্য ১৭৬ রানের ইনিংস খেলে রেকর্ডটি নিজের করে নেন লিটন কুমার দাস। বাংলাদেশকে ৩৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে তামিম জয়ের দেখা পেয়েছেন ২১টিতে, হেরেছেন ১৪টিতে। বাকি দুটি ম্যাচে কোনো ফল আসেনি। অন্তত পাঁচটি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে শতকরা ৬০ শতাংশ জয়ে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তিনি।
অন্যদিকে ৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে ১০টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি ফিফটিসহ তামিমের রান ৫১৩৪। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ফিফটির সংখ্যায় সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে ও সেঞ্চুরির সংখ্যায় মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে যৌথভাবে দুইয়ে আছেন তামিম। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম। ৭৪ ম্যাচে ২৪.৬৫ গড় ও ১১৭.৪৭ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেছেন ১৭০১ রান। সব সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৭৫৩টি চার ও ১৮৮টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তামিমের অবস্থান অবশ্যই আলাদা। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের সেই ম্যাচের পর ১৬ বছরে কত কীর্তি যে তার ব্যাট থেকে এসেছে, তা গুণে শেষ করা মুশকিল। তিনিই প্রথম আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন, লর্ডসের ওই অনার বোর্ডে সেঞ্চুরি করে নাম লেখানো যায়, হওয়া যায় উইজডেনের বর্ষসেরা। ইংলিশ কন্ডিশনে পরপর দুই টেস্টে পরাক্রমশালী প্রতিপক্ষের ভীত নাড়িয়ে শতকের দেখা পাওয়া যায়। তিনি বলেছিলেন, এমন বিশ্বমানের ব্যাটার বাংলাদেশেরও আছে। খুলনায় টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ডাউন উইকেট এসে জুনায়েদ খান ছক্কা মেরে ডাবল সেঞ্চুরি, ভারতের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ১৫১ রান। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে টানা দুই ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে সমালোচকদের মুখবন্ধ করা বা ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নশীপের পারফরম্যান্স, এসব দৃশ্য মনে করার পাশাপাশি তামিমের ক্যারিয়ারের সংখ্যাগুলোই বলে দিচ্ছে, এ দেশের ক্রিকেটে কতটা, কী ছিলেন তিনি।
বিদায় বেলা তামিম এটাও শিখিয়ে গেলেন চাইলে বিশ্বকাপ শুরুর নব্বই দিন আগেও বিদায় বলে ফেলা যায়। অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ খেলার অনন্য সুযোগ বৃহত্তর স্বার্থে ছেড়ে দেওয়া যায়। তামিমকে নিয়ে নিন্দুকের নিন্দার অভাব নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে তারা কেউই থাকবেন না ইতিহাসের পাতায়। তবে তামিম ঠিকই রয়ে যাবেন টাইগার ক্রিকেটের বাঁকবদলের নায়কদের একজন হয়ে। তার এই সাহসী সিদ্ধান্তটা লেখা রয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়।
ওয়ানডে
ম্যাচ- ২৪১
রান- ৮৩১৩
গড়- ৩৬.৬২
স্ট্রাইক রেট- ৭৮.৫৪
১০০/৫০- ১৪/৫৬
টেস্ট
ম্যাচ- ৭৪
রান- ৫১৩৪
গড়- ৩৮.৮৯
১০০/৫০- ১০/৩১
টি-টোয়েন্টি
ম্যাচ- ২৪১
রান- ১৭০১
গড়- ২৪.৬৫
স্ট্রাইক রেট- ১১৭.৪৭
১০০/৫০- ১/৭
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক