অল্পের জন্য অবিশ্বাস্য জয় পেল না আফগানিস্তান

স্পোর্টস ডেস্ক

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১০ পিএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

ছবি: টুইটার

রোমাঞ্চকর বললেও খুব কমই বলা হবে! বার বার রং বদলানো ম্যাচে অল্পের জন্য অবিশ্বাস্য এক জয় পাওয়া হল না আফগানিস্তানের। টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাট করে লক্ষ্যের খুব কাছে গিয়েও হারের বেদনা নিয়ে এশিয়া কাপের আসর থেকে বিদায় নিতে হলো রশিদ খান-মোহাম্মদ নবিদের। পরাজয়ের শঙ্কা কাটিয়ে জয়ের হাসিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সুপার ফোরে উঠে গেল শ্রীলঙ্কা।

আসরে টিকে থাকতে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৯২ রানের লক্ষ্য ৩৭.১ ওভারে পূরণ করতে হতো আফগানদের। নবির ঝড়ো ফিফটি আর অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদির দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সেই পথেই ছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩৭.৪ ওভারে তারা ২৮৯ রানে গুটিয়ে ২ রানে হেরে যায়।

৩৮তম ওভারের প্রথম বলে মুজিব আউট হওয়ার পরেও কোয়ালিফাইয়ের সুযোগ ছিল আফগানদের। ৩৭.৪ ওভারের মধ্যে করতে হতো ২৯৫ রান। এমনকি ২৯১ রানে টাই করার পর একটি ছক্কা মারলে ৩৮.১ ওভারে পর্যন্ত সুযোগ ছিল। কিন্তু সমীকরণ ঠিকমত বুঝতে না পারার খেসারত দিতে হয়েছে দলটিকে। ধনাঞ্জয়ার টানা দুই বল ডিফেন্স করেন ফজলুলহক ফারুকি। এর মধ্যে একটা ছিল ছক্কা হাঁকানোর মত টসটসে ফুলটস। তৃতীয় বলে এলডিডব্লিউ হয়ে যান ফারুকি।

শুরুটা অবশ্য এরকম ছিল না আফগানদের। ৫০ রানের মধ্যে শীর্ষ তিন ব্যাটারকে হারিয়ে তারা ছিল চাপে। কিন্তু চাপের মাঝেও রান রেট ঠিক রাখার দিকে নজর ছিল রহমত শাহর। ১৬ ওভারের মধ্যে দলীয় একশ পূর্ণ করে আফগানরা। ৪০ বলে ৪৫ রান করে রাজিথার বলে বাউন্ডারিতে আউট হয়ৈ যান রহমত।

কঠিন এই লক্ষ্যও যে পূরণ করা সম্ভব, আফগান সমর্থকদের সেই স্বপ্ন দেখান নবি। টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওভারপ্রতি নয়ের উপরে তুলতে থাকেন রান। ২৪ বলে পূরণ করেন ফিফটি। আফগানদের হয়ে যা দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত ৩২ বলে ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৬৫ রানে থামে তার ইনিংস।

থিকসানার বলে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন নবি। এর আগে অধিনায়ক শাহিদির সঙ্গে গড়েন ৫১ বলে ৮০ রানের ম্যাচের রং বদলে দেওয়া জুটি। এরপর করিম জানাত (১৩ বলে ২২), নাজিবুল্লাহ জাদরান (১৫ বলে ২৩), রাশিদ খানরাও (১৬ বলে ২৭) দলকে একই পথে রেখেছিলেন।

সুপার ফোরের যোগ্যতা অর্জন করতে একসময় ১০ বলে আফগানদের দরকার ছিল ১৬ রান। রাজিথাকে ঠিকমত উড়াতে পারেননি নাজিবুল্লাহ, ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে। পরের দুই বলে রান নিতে পারেননি মুজিব। ৭ বলে যখন দরকার ১৫, ভেল্লালাগের ৬ বলে তিন চারে ১২ রান নেন রশিদ। এরপর সেই মুজিবের সেই লং অনে ক্যাচ দেওয়া আর ফারুকির ‘লজ্জার’ ডিফেন্স।

৪ উইকেচ নিয়ে শ্রীলঙ্কার সফলতম বোলার কুসন রাজিথা। তবে রান গুনতে হয়েছে ৭৯। শেষ দিকে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেয় দুনিথ ভাল্লালাগের এক ওভার। সেই ওভারে করিমকে ফেরানোর পর অধিনায়ক শাহিদিকেও তুলে নেন এই স্পিনার।

তবে এদের কেউই ম্যাচের নায়ক নন। শ্রীলঙ্কাকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার পথে অনবদ্য ৯২ রানের ইনিংস খেলা কুসল মেন্ডিস হলেন ম্যাচসেরা।

ব্যাট হাতে শ্রীলঙ্কার শুরুটা ছিল দারুণ। দশ ওভারে পেয়ে যায় ৬০ রানের সংগ্রহ। গুলবাদিন নাইবের স্পেলে ২৩ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারিয়ে উল্টো চাপে পড়ে যায় লঙ্কানরা। সেখান থেকে পাল্টা আক্রোমণ শুরু করেন কুসল মেন্ডিস। ৫৫ বলে ফিফটি তুলে নিয়ে ছুটছিলেন শতকের দিকে। কিন্তু রশিদ খানের কাছে রান আউট হয়ে সেঞ্চুরি মিস করেন তিনে নামা এই ব্যাটার।

৮৪ বলে ৬টি চার ও ৩ ছক্কায় ৯২ রান করেন মেন্ডিস। ইনিংসে ক্রিশোর্ধো রান আছে আরও চারজনের।

গুলবাদিন নাইব নিয়েছেন ৬০ রানে ৪ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৯১/৮ (নিশানকা৪১, করুনারত্নে ৩২, মেন্ডিস ৯২, সামারাবিক্রমা ৩, আসালাঙ্কা ৩৬, ধনাঞ্জয়া ১৪, শানাকা ৫, দুনিথ ৩৩, থিকসানা ২৮; অতিরিক্ত ৭; ফারুকি ৭-১-৫২-০, মুজিব ১০-০-৬০-১, গুলবাদিন ১০-০-৬০-৪, নবি ১০-০-৩৫-০, রশিদ ১০-০-৬৩-২, করিম ৩-০-২০-০)।

আফগানিস্তান: ৩৭.৪ ওভারে ২৮৯ (রহমানউল্লাহ ৪, ইব্রাহীম ৭, গুলবাদিন ২২, রহমত ৪৫, হাশমতউল্লাহ ৫৯, নবি ৬৫, করিম ২২, নাজিবুল্লাহ ২৩, রশিদ ২৭*, মুজিব ০, ফারুকি ০; অতিরিক্ত ১৫; রাজিথা ১০-০-৭৯-৪, থিকশানা ১০-০-৬২-১, ভেল্লালাগে ৪-০-৩৬-২, পাথিরানা ১০-০-৬৩-১, শানাকা ২-০-৩২-০, ধনাঞ্জয়া ১.৪-০-১২-২)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ২ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: কুসল মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা)।

বিভাগ : খেলাধুলা