আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় জয় দিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আসরে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বল হাতে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেছে বাংলাদেশের বোলাররা। পরে ব্যাটাররা রেকর্ড ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে।

টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানকে ৩৭ দশমিক ২ ওভারে ১৫৬ রানে অলআউট করে টাইগার বোলাররা। এরমধ্যে আফগানিস্তানের পাঁচ ব্যাটারকে করেন বোল্ড আউট। বিশ্বকাপে এই  প্রথম প্রতিপক্ষের পাঁচ ব্যাটারকে বোল্ড করলো বাংলাদেশের বোলাররা।

ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আফগানিস্তানের নাজিবুল্লাহ জাদরানকে সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ নবিকে তাসকিন আহমেদ, আজমতুল্লাহ ওমারজাইকে শরিফুল ইসলাম এবং রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানকে মেহেদি হাসান মিরাজ বোল্ড আউট করেন।

নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এক ম্যাচে প্রতিপক্ষের পাঁচ বা তার বেশি ব্যাটারকে বোল্ড করার ক্ষেত্রে এটি নবম ঘটনা বাংলাদেশের। সর্বোচ্চ ছয় ব্যাটারকে বোল্ড করার নজির আছে বাংলাদেশের বোলারদের। গেল বছরের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ক্যারিবীয়দের ছয় ব্যাটারকে বোল্ড করেছিলো টাইগার বোলাররা। ঐ ম্যাচে স্পিনার তাইজুল ইসলাম তিন ব্যাটারকে, মোসাদ্দেকস হোসেন-নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান ১জন করে ব্যাটারকে বোল্ড আউট করেন।

বিশ্বকাপে এত কম রানে বাংলাদেশ কোনো দলকে অলআউট করতে পারেনি আগে কখনোই। এদিন আফগানিস্তানকে ১৫৬ রানে অলআউট করেছে তারা। অর্থাৎ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দলের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়া ইনিংস এটি। বিশ্বকাপে এই নিয়ে বাংলাদেশ ২০০ রানের কমে প্রতিপক্ষকে অলআউট করল নয়বার।

রান তাড়ায় ৯২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে সাকিব আল হাসানের দল। বলের হিসাবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটি। আগের রেকর্ডটি ছিল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২০১১ বিশ্বকাপে।

বিশ্বকাপে একই ম্যাচে ফিফটি ও কমপক্ষে ৩ উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় বাংলাদেশি হলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৫ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার সঙ্গে ৫৭ রান করেন তিনি। এমন অলরাউন্ড কীর্তি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে করেছিলেন বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। গেল বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষেই ব্যাট হাতে ৫১ রানের সঙ্গে বল হাতে ২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি, মুজিব উর রহমান- এই স্পিনত্রয়ী খেলেছেন এবং আফগানিস্তানের স্পিনাররা মিলে কমপক্ষে ২০ ওভার বোলিং করেছেন, অথচ কোনো উইকেটের দেখা পাননি, ওয়ানডে ক্রিকেটে এমনটা হলো মাত্র দুবার। আগের ঘটনাটি আরেকটি বিশ্বকাপেই, ২০১৯ সালে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০ ওভার বোলিং করেও উইকেটশূন্য ছিলেন আফগান স্পিনাররা। এদিন ২২ ওভারে ৯৬ রান খরচায় ফলাফল একই।

জয় দিয়ে টানা তিনটি বিশ্বকাপ শুরু করেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে ১০৫ রানে আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয় টাইগারদের। এরপর ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে। এবার আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ করেছে দারুণ সূচনা। 

ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম এক হাজার রানে আফগানদের মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে গুরবাজ। ২৭ ইনিংসেই এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন ডানহাতি এই ওপেনিং ব্যাটার। আফগানিস্তানের আর কোনো ব্যাটারই ত্রিশ ইনিংসের কমে এক হাজার রান করতে পারেননি। আগের সেরা ছিল ৩১ ইনিংসে, কীর্তিটি ছিল রহমত শাহর।

বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। বল হাতে ৯ ওভারে ৩ মেডেনসহ স্রেফ ২৫ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। ব্যাট হাতে খেলেন ৭৩ বলে ৫টি চারে ৫৭ রানের ইনিংস।

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৮৩ বলে ৩টি চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ রানে।

তিন উইকেট নিয়ে জয়ের আরেক পার্শনায়ক দলপতি সাকিব।