ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
ঢাকা টেস্ট

সুবিধা নিতেই এমন উইকেট!

Daily Inqilab স্পোর্টস রিপোর্টার

০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩১ এএম | আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩১ এএম

মিরপুরে স্পিন সহায়ক উইকেট এমনিতে অনুমিতই ছিল। টস রিপোর্টে ধারাভাষ্যকার হিল্টন ডিওন আকারম্যানও এরকম ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, সময়ের সঙ্গে খারাপ হতে থাকবে উইকেট। কিন্তু সেই সময়টা যে এত দ্রুত আসবে, তিনি নিজেও হয়তো ভাবতে পারেননি। প্রথম দিনেই ১৫ উইকেটের পতন হয়েছে। মিরপুরে প্রথম দিনে এত বেশি উইকেট আগে কখনও পড়েনি। তবে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানের সংখ্যার কারণেই শুধু নয়। পিচ নিয়ে এত প্রশ্ন উঠছে এটির আচরণের কারণেই। প্রথম দিন প্রথম সেশন থেকেই মনে হয়েছে যেন পঞ্চম দিনের পিচ। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে আসা দুই দলের প্রতিনিধির কাছেই একের পর এক প্রশ্ন ছুটে গেল উইকেট নিয়ে। বিশেষ করে মেহেদী হাসান মিরাজের ১৫ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বেশির ভাগ প্রশ্নই হলো মিরপুরের ২২ গজ নিয়ে। দলের ভাবনা প্রকাশে বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার খুবই অকপট। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, জয়ের নেশায় থাকা দল দেশের মাঠের বাড়তি সুবিধার সবটুকুই কাজে লাগাতে মরিয়া।
নতুন বলে টিম সাউদি বেশ সুইং আদায় করেন, তারপরও দ্রুত নিজেকে সরিয়ে নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। আরেক প্রান্তে দীর্ঘদেহী পেসার কাইল জেমিসনকেও বেশিক্ষণ বোলিং করানো হয়নি। ম্যাচের ষষ্ঠ ও সপ্তম ওভার থেকেই দুই প্রান্তে স্পিন আক্রমণে আনা হয় এবং দিনজুড়েই দেখা যায় দুই দলের স্পিনারদের দাপট। স্পিনারদের প্রথম ওভার থেকেই বল বিশাল বাঁক নিয়েছে। কোনো কোনো বল আবার পিচ করে সোজা গিয়েছে। কোনোটি লাফিয়ে উঠেছে বিপজ্জনকভাবে। অসম বাউন্স ছিল দিনজুড়েই। সব মিলিয়ে প্রথম দিনের উইকেট হিসেবে এটাকে ব্যাটসম্যানদের দুঃস্বপ্নই বলা যায়।
তবে এমন উইকেটের পেছনে আছে দলের জয়ের স্বপ্ন। সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের জয়টা অনেকের কাছেই ছিল অভাবনীয়। এগিয়ে যাওয়ার পর সিরিজ জয়ের সুযোগটা লুফে নিতে চেয়েছে বাংলাদেশ। এই ভাবনায় অন্যায্য কিছু দেখেন না মিরাজ, ‘আমরা যখন দেশের বাইরে খেলতে যাই, প্রতিটি দলই কিন্তু ঘরের মাঠের সুবিধা নিতে চায়। আমরাও ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছি। যেহেতু টেস্ট ক্রিকেট... যেহেতু আমরা এগিয়ে আছি (সিরিজে), এখানে জিততে পারলে পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকব। এটা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা। দুটি ম্যাচই জিতলে আমাদের অবস্থান অনেক উপরে চলে যাবে। যতটুকু বাড়তি সুবিধা নেওয়া যায়, অবশ্যই নেওয়ার চেষ্টা করছি। ব্যাটসম্যানরা অবশ্যই এসব উইকেটে অনেক ভোগান্তিতে পড়ে। তবে এটা অবশ্যই টিম ম্যানেজমেন্টের একটা পরিকল্পনা। যেহেতু আমরা ওপরে আছে, টপে আছি, অবশ্যই বাড়তি সুবিধাটা আমরা নিতে চাইব।’
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যখন আগের দফায় বাংলাদেশের কোচ ছিলেন, তখন প্রতিপক্ষ বুঝে দেশের মাঠে নিয়মিতই এই কৌশল বেছে নিতো বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড ও ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে স্মরণীয় দুটি জয় ধরা দিয়েছিল মিরপুরে টার্নিং উইকেট বানিয়েই। পরে গত কয়েক বছরে এই ধারা থেকে কিছুটা সরে এসেছিল বাংলাদেশ। তাতে জয়ও দূরে সরে গিয়েছিল অনেকটা। এই বছর আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রত্যাশিত দুটি জয়ের আগে টানা চার টেস্টে মিরপুরে হারতে হয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। এবার হাথুরুসিংহে কোচ হয়ে আসার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে আবার দেখা গেল পুরনো সেই কৌশল। এবার প্রথম দিনেই জয়ের ভিত গড়ার পর ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই জয়ের কথা মনে করিয়ে দিলেন মিরাজও, ‘আমরা যদি প্রতিপক্ষকে অলআউটই না করতে পারি, তাহলে তো জিততে পারব না। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অনেকটা এরকম উইকেটেই আমরা জিতেছি। আমাদের স্পিন আক্রমণ ভালো, সুযোগ তো অবশ্যই থাকে। আমরা যদি ওদেরকে অলআউট করতে না পারি, তাহলে তো জেতা কঠিন। দেশের বাইরে গিয়ে ভালো উইকেটে আমরা হয়তো অলআউট করতে পারি, কিন্তু অনেক রান হয়ে যায়। এটা তো রাতারাতি বদলানো যায় না। সময় দিলে আস্তে আস্তে বদলাবে।’
উইকেটের প্রসঙ্গে দেশের ক্রিকেটের পুরনো একটি হাহাকারের কথাও উঠল। দেশের মাঠে, বিশেষ করে মিরপুরে ভালো উইকেটে না খেলায় ক্রিকেটারদের অনেক ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের সার্বিক ব্যাটসম্যানশিপ সমৃদ্ধ হচ্ছে না, এই কথা ক্রিকেটাররাসহ অনেকই নানা সময়ে বলেছেন। সম্প্রতি ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষে নাজমুল হোসেন শান্তও আকুতি জানিয়েছেন যেন দেশের মাঠে ভালো উইকেটে নিয়মিত খেলানো হয়। কিন্তু এখনই দেখা গেল এরকম উইকেট। সেটির ব্যাখ্যাও জানা গেল মিরাজের কাছ থেকে। উইকেটের প্রসঙ্গে তারা সাদা ও লাল বলের ক্রিকেটকে আলাদা করে দেখছেন, ‘এটা (উইকেট) টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। আমরা ক্রিকেটাররা মাঠে সবসময় মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। ভালো উইকেট দিলে সেখানে মানিয়ে নিতে হবে, খারাপ উইকেট দিলেও মানিয়ে নিতে হবে। ভালো উইকেটে খেলে দুই-তিনটি ম্যাচ হেরে গেলেও হয়তো বাইরে গেলে ভালো করব। তবে আমার কাছে মনে হয় যে, আমরা যে টেস্ট ক্রিকেট খেলছি, সেখানে বাড়তি সুবিধা নিতে পারি। হয়তো ওয়ানডেতে বা সাদা বলে ভালো উইকেটে খেলার চেষ্টা করব। কারণ সামনে বড় বড় টুর্নামেন্ট থাকে।’
উইকেট এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার পেছনে অবশ্য আবহাওয়ার ভূমিকাও দেখছেন মিরাজ। ম্যাচের প্রথম দিন সকাল থেকেই চারপাশ ছিল গুমোট, দিনজুড়েই আকাশ ছিল মেঘলা। রোদের ছোঁয়া না পাওয়ায় উইকেট স্যাঁতস্যাঁতেই রয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি, ‘আজকে (পরশু) উইকেট একটু বেশিই আলাদা ধরনের। তবে প্রথম কয়েকটি ওভার আনইভেন ছিল। এরপর আস্তে আস্তে ভালো হয়ে গিয়েছিল। আর আবহাওয়াও একটা ব্যাপার ছিল। আগেও আমরা এই ধরনের উইকেটে খেলেছি। তখন দেখেছি, রোদ পড়ার পর উইকেটের আচরণ অন্যরকম হয়ে যায়। কিন্তু আজকে মেঘলা আবহাওয়া ছিল। আবহাওয়ার একটা সুবিধাও তাই ছিল। স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পেয়েছে।’
উইকেটের আলোচনার সুর ধরেই মিরাজ দায় দিলেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। তার মতে, যথেষ্ট নিবেদন দেখালে এই উইকেটেও রান করা সম্ভব, ‘ব্যাটসম্যানদের জন্য একটু চ্যালেঞ্জিং উইকেট। তবে কমিটমেন্ট থাকলে, আরও ভালোভাবে যদি খেলা যায়, ভালো ব্যাট করা যায়। প্রথম ৩০ ওভার অনেক চ্যালেঞ্জিং থাকে ব্যাটসম্যানদের জন্য, যখন বল নতুন থাকে। বল পুরনো হলে ব্যাটসম্যানদের সুযোগ বেড়ে যায়। বল পুরনো হয়ে গেলে অনেক কিছু হয় না। তবে যেহেতু টেস্ট খেলা, আন্তর্জাতিক খেলা, প্রথম দিকের ব্যাটসম্যানদের অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে।’
শুধু এই উইকেটই নয়, এমনকি ভালো ব্যাটিং উইকেটেও যে অনেক সময় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সীমাবদ্ধতা ফুটে ওঠে, সেটিও নিজ থেকেই বললেন মিরাজ, ‘এখানে উইকেট অনুযায়ী হয়তো আমরা ৩০-৪০ রান কম করেছি। ২০০ রানের বেশি করলে মনে করতাম যে এই উইকেটের উপযুক্ত স্কোর হতে পারত আমাদের জন্য। ওখানেই হয়তো ভুল করেছি। ৩০-৪০ রান আমরা অনেক সময়ই মিস করে যাই। যেখানে উইকেটে ৪০০ রান করা প্রয়োজন, ওখানে হয়তো আমরা ৩৫০ করি। এখানে আমাদের উন্নতি করতে হবে। আমরা কথা বলছি, কীভাবে উন্নতি করা যায়। একদিনে সম্ভব নয়, একটু একটু করে চেষ্টা করতে হবে।’
গতকাল বৃষ্টিতে ভেসে গেছে গোটা দিনই। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আজও আছে বেরসিক বৃষ্টির আগমনী বার্তা। যদি তাই হয়, সেক্ষেত্রে ম্যাচের যে অবস্থান তাতে এই উইকেটে বাকি দু’দিনে ম্যাচের ফল বের হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না!


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
টিভিতে দেখুন
দুই টিটি খেলোয়াড়ের পাশে নাভানা
তারুণ্যের উৎসবে তায়কোয়ান্দো
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত