ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখেলেন সৌম্য সরকার। প্রত্যাশার দাবি মেটাতে পারলেন না বাকিরাও। এলোমেলো বোলিংয়ের পর হলো দিশাহারা ব্যাটিং। সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশেরও নিউজিল্যান্ড সফর শুরু হলো বিশাল ব্যবধানের পরাজয় নিয়ে।

ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওপেনে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে রোববার ৪৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

নিউজিল্যান্ড ইনিংসে তিন দফা বৃষ্টি হানা দেওয়ায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসে ৩০ ওভারে। তাতে ৭ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা তোলে ২৩৯ রান। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের লক্ষ্য ঠিক হয় ২৪৫ রান। নাজমুল হোসেন শান্তর দল ৩০ ওভারে করতে পারে ৯ উইকেটে ২০০ রান।

বাংলাদেশের রানে ফিফটি নেই একটিও। ত্রিশোর্ধো ইনিংস তিনটি। ৩৯ বলে সর্বোচ্চ ৪৩ রান এনামুল হকের। ২৮ বলে ৩৮ রান আফিফ হোসেনের। ২৭ বলে এক ছক্কা ও দুই চারে ৩৩ রান করেন হৃদয়।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে বল হাতে কেউই নিরাশ হননি। ছয় বোলাররের তিনজন শিকার ধরেছেন দুটি করে। অভিষিক্ত উইল ও’রোক ও জশ ক্লার্কসনও পেয়েছেন উইকেটের দেখা।

কিউইদের জয়ের নায়ক উইল ইয়াং। ৮৪ বলে ১০৫ রানের পর দুটি দারুণ ক্যাচ নেন এই ব্যাটার। ১৮ রানে সৌম্য সরকারের হাতে জীবন পাওয়া ল্যাথাম ৭৭ বলে ৯টি চার ও ৩ ছক্কায় করেন ৯২ রান। তৃতীয় উইকেটে এই দুজনের ১৪৫ বলে ১৭১ রানের জুটি ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়।

শেষ ৮ বলেই তারা হারায় ৪ উইকেট। চারজনই হন রান আউটের শিকার। তবু শেষ ১০.৪ ওভারে ১৩১ রান যোগ করে তারা! তবে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের লক্ষ্য ঠিক হয়েছে ২৪৪ রান।

ঝড়ের সবচেয়ে ঝাপটা গেছে সৌম্য সরকারের উপর দিয়ে। ৬ ওভারে তিনি দিয়েছেন ৬৩ রান। মেহেদী হাসান মিরাজের ৬ ওভার থেকে এসেছে ৫৩ রান। খরুচে বোলিংয়ে মুস্তাফিজুর রহমান ৬ ওভারে দিয়েছেন ৪৭ রান।

শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ ৬ ওভারে দিয়েছেন ২৮ রান করে। শরিফুল নিয়েছেন দুটি উইকেট।

কঠিন লক্ষ্যে প্রথম ওভারেই অ্যাডাম মিল্নের লেগ স্টাম্পে পিচ করে অফ স্টাম্পের দিকে মুভ করা ডেলিভারি খোঁচা মারেন সৌম্য। তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল জমা পড়ে দ্বিতীয় স্লিপে থাকা টম ল্যাথামের হাতে। ৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি সৌম্য।

এ নিয়ে শেষ ৫ ম্যাচে তিনবারই আউট হলেন কোনো রান না করেই। একবার করেছেন ১ রান। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই করেছিলেন ০ রান।

ভালো শুরুর পর ইশ সোধির বলে উইকেট বিলিয়ে আসেন শান্ত। ভাঙে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৬ বলে ৪৬ রানের জুটি। শান্ত করেন ১৩ বলে ১৫ রান।

এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। ১০৩ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে আউট হন মুশফিক।

ষষ্ঠ উইকেটে আফিফ-হৃদয় জুটি যোগ করে ৩৮ বলে ৫৬ রান। এই জুটিতে ফিফটি আসে ৩১ বলে। তবে জয়ের পথে কোনো সময়ই ছিল না বাংলাদেশ। নবম উইকেট জুটিতে হারের ব্যবধান কমান মেহেদি হাসান মিরাজ ও হাসান মাহমুদ। ২৪ বলে ২৬ রানের জুটি বিচ্ছন্ন শেষ বলে হাসানের বোল্ডে। ২১ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন মিরাজ।

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুটা করে দারুণ। শরিফুল ইসলামের প্রথম ওভারেই এক বলের ব্যবধানে দুই উইকেট হারায় কিউইরা। রাচিন রবিন্দ্রকে কট বিহাইন্ডের পর দ্বিতীয় স্লিপে হেনরি নিকোলসকে ক্যাচ বানান শরিফুল। দুজনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি।

এরপর ১৪৫ বলে ১৭১ রানের জুটি গড়েন ল্যাথাম ও ইয়াং। এই জুটিই দলকে বড় সংগ্রহের পথে নিয়ে যায়। যদিও জুটি ভাঙার দারুণ সুযোগ এসেছিল। দশম ওভারে ল্যাথামের ক্যাচ স্লিপে দাঁড়িয়ে দুই হাতে চেষ্টা করেও নিতে পারেননি সৌম্য। সে সময় ১৮ রানে ছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক।

বৃষ্টির বাধায় খেলা শুরু হয় এক ঘণ্টা ১০ মিনিট পর। এরপর ম্যাচ নেমে আসে ৪৬ ওভারে। পরে ২০তম ওভারে আবার হানা দেয় বৃষ্টি। লম্বা সময় খেলা বন্ধ থাকার পর আবার ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনা হয় ৩০ ওভারে।

আগামী বুধবার নেলসনে হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড: ৩০ ওভারে ২৩৯/৭ (ইয়াং ১০৫, রাচিন ০, নিকোলস ০, ল্যাথাম ৯২, চ‍্যাপম‍্যান ২০, ক্লার্কসন ১, ব্লান্ডেল ১, মিল্ন ১*; শরিফুল ৬-১-২৮-২, হাসান ৬-০-২৮-০, মুস্তাফিজ ৬-০-৪৭-০, সৌম‍্য ৬-০-৬৩-০, মিরাজ ৫-০-৫৩-১, আফিফ ১-০-১৭-০)।

বাংলাদেশ: (লক্ষ‍্য ৩০ ওভারে ২৪৫) ৩০ ওভারে ২০০/৯ (সৌম‍্য ০, এনামুল ৪৩, শান্ত ১৫, লিটন ২২, হৃদয় ৩৩, মুশফিক ৪, আফিফ ৩৮, মিরাজ ২৮*, শরিফুল ৫, হাসান ৪; মিল্ন ৬-০-৪৬-২, ডাফি ৬-০-৩৯-১, ও’রোক ৫-০৩৫-১, সোধি ৬-০-৩৫-২, ক্লার্কসন ৪-০-২৪-২, রাচিন ৩-০-২০-১)।

ফল: নিউজিল্যান্ড ৪৪ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: উইল ইয়াং।