যুক্তরাষ্ট্রে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করে আর্থিকভাবে লাভবান তো হয়-ইনি; বরং ক্ষতিই হয়েছে আইসিসির। ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রায় ২ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৩৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার। গত শনিবার কলম্বোতে হওয়া আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভার সূচিতে এই বিষয়টিই ছিল আলোচনার শীর্ষে। নিউইয়র্কে পাকিস্তান-ভারত ম্যাচসহ সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বড় একটা অংশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যদিও গ্রুপ পর্বের পর সেখানে আর কোনো ম্যাচ হয়নি।
ক’দিন আগেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনে বিশৃঙ্খলার জেরে পদত্যাগ করেছেন আইসিসির শীর্ষ দুই কর্মকর্তা ক্লেয়ার ফারলং ও ক্রিস টেটলি। ফারলং সংস্থাটির বিপণন ও যোগাযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন। টেটলি ভেন্যু পরিদর্শক দলের সদস্য ও আয়োজক কমিটির প্রধান ছিলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ জানতে পেরেছে, সর্বশেষ টি-টোয়েন্টিতে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ম্যাচগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অর্থ খরচ করা হয়েছে। এ নিয়ে আইসিসির পরিচালনা পর্ষদের বেশ কয়েকজন সদস্য প্রশ্ন তুললে পরিচালক পঙ্কজ খিমজি বিশ্বকাপে আয়-ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব জানতে চেয়ে সব সদস্যের কাছে চিঠি পাঠান এবং তদন্তের আহ্বান জানান। সেই রিপোর্ট করতে গিয়েই লাভ-লসের হিসেব পেয়েছে ফাইন্ডিং কমিটি। বিশদভাবে এই অর্থায়নের তদন্ত হওয়ার আগেই নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দেন ফারলং ও টেটলি।
ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ অবশ্য আইসিসির বরাতে জানিয়েছে, ফারলং ও টেটলি কয়েক মাস আগেই পদত্যাগ করেছেন। এরপরও তারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্ব চালিয়ে গেছেন যেন নতুন কেউ এই দুই পদে যোগ দেওয়ার পর সবকিছু বুঝে উঠতে কিছুটা সময় পান এবং আইসিসির দৈনন্দিন কাজে যেন ব্যাঘাত না ঘটে। ফারলং ও টেটলি শ্রীলঙ্কায় বসতে চলা বার্ষিক সম্মেলনেও উপস্থিত থাকবেন। আইসিসির উন্নয়নসংশ্লিষ্ট একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র নিউজ১৮-কে বলেছেন, ‘জনাব খিমজি (পরিচালনা পর্ষদের) সব সদস্যের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র পর্বের খরচ তুলে ধরেছিলেন। এ মাসের শেষ দিকে শ্রীলঙ্কায় আইসিসির বৈঠকের সময় এ নিয়ে অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যেই পদত্যাগপত্র আসতে শুরু করেছে।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র পর্ব চলাকালীন খরচের কোনো নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য ছিল না দাবি করে ক্রমাগত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউজ১৮-এর ক্রীড়া বিভাগের একাংশ ‘ক্রিকেট নেক্সট’। তারা জানায়, আইসিসি আশা করেছিল টিকিটের দাম বাড়িয়ে ‘অযাচিত ব্যয়’ পুষিয়ে নেবে। কিন্তু একাধিক ম্যাচে মাঠে দর্শক সমাগম কম হওয়ায় মোটা অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্মকর্তা এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই অর্থের অপচয় করা হয়েছে। তারা শুধু একটি দিক সক্রিয় রাখার জন্য হাজার হাজার ডলার ব্যয় করেছে। কিন্তু (ক্রিকেটপ্রেমীদের) দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বকাপ নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের ইচ্ছেমতো টাকা ঢেলেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ডের ওই কর্মকর্তা ক্রিস টেটলির বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তার দাবি, ব্রেট জোন্স টেটলির ঘনিষ্ঠ বলেই তাঁকে বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র পর্বের আয়োজক কমিটির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অথচ সহ–আয়োজক হয়েও মার্কিন বোর্ডের কারও কথা শোনা হয়নি, ‘ব্রেট জোন্স হঠাৎ কোত্থেকে এল? সে অস্ট্রেলিয়ায় থাকত, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে। এসেই প্রধান নির্বাহী হয়ে গেল। আসলে সে ক্রিস টেটলির খুব ঘনিষ্ঠ। এ কারণে সে উচ্চ পদ বাগিয়ে নেওয়ায় অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র পর্বের ম্যাচগুলো হয়েছে তিনটি ভেন্যুতে- নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়াম, ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম ও লডারহিলের সেন্ট্রাল বোয়ার্ড পার্ক। এর মধ্যে নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামের ড্রপ ইন পিচ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এ মাঠে অনুষ্ঠিত আট ম্যাচের সব কটি ছিল ‘লো স্কোরিং’। অস্ট্রেলিয়া থেকে নিয়ে এসে সেখানে বসানো পিচগুলো ব্যাটসম্যানদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল। অর্থ অপচয়ের ব্যাপার তো আছেই; ধারণা করা হচ্ছে ওই মাঠসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের দায়িত্বে থাকা ফারলং ও টেটলি ‘গড়পড়তা মানের’ পিচ নিয়ে বেশ চাপে ছিলেন। আইসিসির সম্মেলনে এ ইস্যুতেও জবাবদিহি করতে হবে বলেই তারা পদত্যাগ করেছেন।
এদিকে, শ্রীলঙ্কার এই সভায় আইসিসির চোরম্যান হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন জয় শাহ। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এই শীর্ষ কর্তা স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন গ্রেগ বার্কলের। আইসিসির একটি সূত্রকে উদ্বৃত করে পিটিআই লিখেছে, ‘কিভাবে তিনি (বার্কলের স্থলাভিষিক্ত) হবেন সেটি নিয়েই সকলের সন্দেহ ছিল। কেননা জয় শাহ বিসিসিআইয়ের সদস্য পদে আরো এক বছর মেয়াদ আছে!’