আর কিভাবে টেস্ট হারা যায়?
০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
প্রথম দিনে খেলা হয়েছে মাত্র ৩৫ ওভার। পরের দুই দিন তো বল মাঠেই গড়ায়নি। এমন অবস্থায় কে ভেবেছিল এমন ম্যাচেও ফলাফল আসবে? কিন্তু কাজটা সহজ করে দেয় বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ফলাফল আনার প্রাণপণ চেষ্টায় একের পর এক বাজে শটে উইকেট দিলেন বিলিয়ে। তাতে উল্টো এক সেশন হাতে রেখেই জয় তুলে নিল ভারত। গতকাল কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ৭ উইকেটে জয় পেয়েছে ভারত। বাংলাদেশের দেওয়া ৯৫ রানের লক্ষ্য ১৭.২ ওভারেই করে ফেলে দলটি। দিনের খেলা তখনও বাকি ছিল ৪৪.৪ ওভার।
সমীকরণটা ছিল পরিষ্কার। কানপুর টেস্ট বাঁচাতে হলে বাংলাদেশ দলকে ব্যাট করতে হতো কমপক্ষে দুই সেশন। ততক্ষণে যদি দেড়-দুই শ লিড হয়ে যায়, তাহলে শেষ সেশনে রোমাঞ্চকর কিছুই হয়তো অপেক্ষা করত ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য। কিন্তু তা হয়নি। প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রান করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানে রানে অলআউট। ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৯৫ রান। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৩৪.৪ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৫ রান তোলা ভারতের এ লক্ষ্য টপকাতে ঘাম ঝরাতে হয়নি। ১৭.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত। বৃষ্টি ও ভেজা আউটফিল্ডের কারণে প্রায় আড়াই দিন খেলা না হওয়ার পরও ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টের পর কানপুরেও ভারতের এই জয়ে বাংলাদেশের ধবলধোলাইয়ে শেষ হলো টেস্ট সিরিজ।
হারের শঙ্কাটা আগের দিনেই জাগায় টাইগার ব্যাটাররা। দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে রীতিমতো তা-ব চালায় ভারতীয়রা। একাধিক রেকর্ড গড়ে দারুণ শুরু করে দলটি। পরে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও আগ্রাসন থামেনি। ৯ উইকেটে ২৮৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। চতুর্থ দিনের শেষ বেলাতে দুটি উইকেট তুলে ইঙ্গিত দিয়ে রাখে ভারত। তাই শেষ দিনে ম্যাচ বাঁচাতে টাইগার ব্যাটারদের প্রয়োজন ছিল মাটি কামড়ে পড়ে থাকা। কিন্তু তা না করে নিয়মিত শট খেলতে থাকেন তারা। রিভার্স সুইপের মতো বিপজ্জনক শট খেলতে পিছ পা হননি। তাতে পড়েছে নিয়মিত উইকেটও। ফলে মাত্র ৯৪ রানের লিড নিতে পারে বাংলাদেশ।
সেই লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই আগ্রাসী ভারত। বিশেষকরে জশস্বি জয়সওয়াল ছিলেন দুর্দান্ত। ৪৫ বলে ৫১ রান করে জয় থেকে তিন রান বাকি থাকতে তাইজুল ইসলামের শিকার হন এই ব্যাটার। ৪৩ বলে ফিফটি স্পর্শ করা এই ওপেনার নিজের ইনিংস সাজিয়েছেন ৮টি চার ও ১টি ছক্কায়। বিরাট কোহলি অপরাজিত থাকেন ২৯ রানে। মাঝে ভারতীয় শিবিরে জোড়া ধাক্কা দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগ সীমানায় হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা (৮)। আর শুবমান গিলকে (৬) ফেলেছেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। কোহলির বিপক্ষেও অবশ্য এলবিডাব্লিউর আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউতে ইমপ্যাক্ট বাইরে থাকায় বেঁচে যান এই ব্যাটার। তবে বাংলাদেশ বাঁচেনি বড় হারের লজ্জা থেকে।
ভারতের উইকেট যেমনই হোক, ব্যাটিংয়ে বড় রান তোলা যায়। কিন্তু সেখানে দুই টেস্টের সিরিজে ৪ ইনিংস মিলিয়ে দলীয় সংগ্রহ একবারও আড়াই শ ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। তাহলে ভারত সফরে ব্যাটিং কি ভালো হলো? উত্তরটা এদিন কানপুর টেস্টে হারের পরই দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও সেই উত্তর সবারই জানা।
চেন্নাইয়ে ২৮০ রানের হার ভুলে শুধু কানপুরের গ্রিন পার্কে তাকানো যাক। মোট ১৭৩.২ ওভারের খেলা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাট করেছে ১২১.২ ওভার। ক্রিজে সময় কাটানো বিচারে ভারতের চেয়ে ভালো হলেও ম্যাচের দাবি মিটিয়ে খেলতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। যেমন ধরুন, ২ উইকেটে ২৬ রানে চতুর্থ দিন শেষ করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে পিছিয়ে ছিল ২৬ রানে। আজ টেস্টের শেষ দিনে ম্যাচ বাঁচাতে তাই যতটা বেশি সময় সম্ভব ক্রিজে থাকতে হতো ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ ব্যাট করতে পেরেছে মাত্র ৩৬ ওভার। এ সময়ে বাকি ৮ উইকেট হারিয়ে ১২০ রান। দ্রুত উইকেট হারানোয় প্রথম সেশনের শেষ বলেই আউট হয় বাংলাদেশ। ভারত জয়ের জন্য হাতে পর্যাপ্ত সময় রেখে লক্ষ্য পেয়েছে মাত্র ৯৫।
ভারত ৭ উইকেটে জেতার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সম্প্রচারকারী টেলিভিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত। দলের ব্যাটিংয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি, ‘দুই টেস্টেই আমরা ভালো ব্যাট করতে পারিনি। এই কন্ডিশনে আমাদের ভালো ব্যাট করতে হবে। যদি আমাদের ব্যাটসম্যানদের দেখেন- ৩০/৪০ বল খেলেই আউট হয়ে গেছে। ব্যাটসম্যান নামার পর বড় স্কোরের জন্য খেলাটা টেস্ট ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ।’
কানপুরে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে চল্লিশের বেশি বল খেলেছেন তিন ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় ইনিংসে সংখ্যাটা আরও কম। দুজন ব্যাটসম্যান চল্লিশের বেশি বল খেলতে পেরেছেন। অধিনায়ক নাজমুল নিজেও ভালো করতে পারেননি। ৩১ ও ১৯ রান করে আউট হন। নাজমুল এরপর চেন্নাই টেস্টে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার সেই কাব্যিক জুটির উদাহরণ টানেন। প্রথম ইনিংসে ভারত ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ১৯৯ রানের জুটি গড়ে ভারতকে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছিলেন অশ্বিন-জাদেজা। নাজমুল সেই উদাহরণ টেনে বোলারদের প্রতি বলেন, ‘অশ্বিন-জাদেজা তখন যেভাবে ব্যাট করেছে—তারা সত্যিই দারুণ ব্যাট করেছে। বোলিং ইউনিট হিসেবে আমাদের এসব মুহূর্তে দেখতে হবে, কীভাবে উইকেট নিতে পারি। ওই জুটির কাছেই আমরা ম্যাচ হেরেছি।’
তবে হারের শুরুটা হয়েছে গতকালই। আর সেটা করেছেন হাসান মাহমুদ। শেষ বিকেলে তাঁকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয়েছিল দিনের শেষ ভাগটায় উইকেট ‘পাহারা’ দেওয়ার জন্য। আর তিনি কি না রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ছয় মারতে গিয়ে ফিরলেন বোল্ড হয়ে। তা হাসান এমন বোকামি করতেই পারেন! তিনি তো আর ব্যাটসম্যান নন। কিন্তু মুমিনুল হক-নাজমুল হোসেনরা যেটা করেছেন, সেটাকে কোন দৃষ্টিতে দেখবেন! তামিম ইকবালের ভাষায় মুমিনুল-নাজমুলরা আউট হয়েছেন ‘স্ট্রেঞ্জ’ শট খেলে। সাকিবের আউটের সময়টায় ধারাভাষ্যকক্ষে ছিলেন তামিম। রবি শাস্ত্রী তখন কথা বলছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আউটের ধরন নিয়ে। তামিমকে তিনি নাজমুলের আউট নিয়ে প্রশ্ন করেন। তামিম বলেন, ‘স্ট্রেঞ্জ শট খেলে আউট হয়েছে, ভালো একটা জুটি হতে চলেছিল। এই সময়ে এই সব শটের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে তুমি ভালো সুইপ খেল কি না, ভালো রিভার্স সুইপ খেল কি না। এরপরও এমন সময়ে এই ধরনের শট নিশ্চয়ই তুমি খেলবে না। আর এক ম্যাচে সব ধরনের শটই বা কেন খেলতে হবে!’ এ সময় শাস্ত্রী বলেন, ‘খুব বাজে শট সিলেকশন।’
টেস্ট ক্রিকেটে দুই দিনে ৯০ ওভার করে মোট ১৮০ ওভার ধরলে কানপুরে খেলা দুই দিনও হয়নি। এর মধ্যে বাংলাদেশের এমন হার ভুলে যাওয়ার মতোই।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যেখানে নাহিদাই প্রথম
যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ডলারে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন জয়
সরকারের সর্বত্র এখনো শেখ হাসিনার দোসররা সক্রিয় : রিজভী
পোশাক খাতে অস্থিরতা
সরকারি হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থাপনা এত করুণ কেন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের জন্য রহমত স্বরূপ
পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে দুদকের উল্টো সুর কেন
বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য : যুবদল সভাপতি মুন্না
বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ শনিবার
চলতি পথে
সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ
ডেঙ্গু গল্প
তারেক রহমানের পক্ষে বাবুগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নাজমুল হাসানের গণসংযোগ
অচেনা সুরে
লাতিন কবি রোকে ডালটন’র দুটি কবিতা
কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে মানত করলে তা পুরণ না হলে করণীয় প্রসঙ্গে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ শফিকের লাশ দুই মাস পর কবর থেকে উত্তোলন
মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী বিনিময় চুক্তির খসড়া অনুমোদন
ব্যাপক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য
বাবা-মা-দুই ছেলের লাশ উদ্ধার ভারতে