টি-টোয়েন্টিকে মাহমুদউল্লাহর বিদায়
০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম
২০২১ সালের ৭ জুলাই। হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে নামছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সতীর্থরা দিচ্ছেন গার্ড অব অনার! ঘটনার কারণ জানা জায় একটু পরেই। ড্রেসিং রুমেই নাকি জানিয়ে এসেছেন আর টেস্ট খেলবেন না। আনুষ্ঠানিক অবসরের ঘোষনা না দিলেও সেটিই হয়ে থাকলো সাদা পোষাকে তার শেষ ম্যাচ। ম্যাচটি বাংলাদেশ জেতে বিশাল ব্যবধানে। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ১৫০ রানের ইনিংসে ম্যাচসেরার পুরস্কারও জেতেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। সেই অবসরের কারণ নিয়ে রীতিমতো একটা রহস্যেরই জন্ম হয়েছিল। এরপর অনেক দিন মাহমুদউল্লাহ কিছু বলেননি।
তবে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিতে এমন কোনো নাটকীয়তার আশ্রয় নেননি মাহমুদউল্লাহ। আনুষ্ঠানিকভাবেই বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন। আজ ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। তার আগে গতকাল দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ জানিয়েছেন, তিন ম্যাচের এই সিরিজ শেষেই তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেবেন। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে খেললে বাংলাদেশের পক্ষে মাহমুদউল্লাহ শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি হবে আগামী ১২ অক্টোবর। সেদিন হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ।
হঠাৎ করেই নয়, এই সিরিজ শুরুর আগেই সিদ্ধান্তটা নিয়ে রেখেছিলেন ৩৯ ছুঁই ছুঁই মাহমুদউল্লাহ। প্রথম ম্যাচের পরই বিসিবিকে যা জানিয়ে দিয়েছেন। বিসিবিও মাঠ থেকে বিদায় নিতে চাওয়ার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এদিন সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘এই সিরিজের শেষ ম্যাচের পরেই আমি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেব। আসলে এটা আমি এই সফরে আসার আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচক এবং বোর্ড সভাপতিকেও সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। আমি মনে করি, এটাই সঠিক সময় এই সংস্করণ থেকে সরে গিয়ে সামনে ওয়ানডে যা আছে, সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার। আমার জন্য এবং পরের (টি-টোয়েন্টি) বিশ্বকাপের কথা যদি ভাবি, দলের জন্যও এটাই সঠিক সময়।’
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক মাহমুদউল্লাহর। বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৩৯টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। ১১৭.৭৪ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ২৩৯৫, গড় ২৩.৪৮। বাকি দুই ম্যাচ খেললে তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ হবে ১৪১ ম্যাচ খেলে। এর চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড আছে মাত্র দুজনের। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডও তার। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৪৩টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে টস করতে নেমেছেন মাহমুদউল্লাহ। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি জয়ও মাহমুদউল্লাহর। তবে এই রেকর্ডের একজন ভাগীদার আছেন। তার সমান ১৬টি জয় পেয়েছেন সাকিব আল হাসানও।
এই দিল্লিতেই ২০১৯ সালে মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বে ভারতকে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এই সংস্করণে ভারতের বিপক্ষে সেটিই একমাত্র জয় বাংলাদেশের। বিদায়ের ঘোষণাটাও দিলেন সে মাঠেই। স্বাভাবিকভাবেই মাহমুদউল্লাহর মনে পড়ছিল সেই সুখস্মৃতিও, ‘আমাদের জন্য সিরিজের ভালো শুরু ছিল সেটি। আমি আজ (গতকাল) যখন মাঠে ঢুকছিলাম, তখনো সেটা মাথায় কাজ করছিল। আমি ওই স্মৃতিগুলো সব সময় মনে রাখব।’ দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও হতাশাজনক মুহূর্তের কথা জানতে চাইলে মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘২০১৬ ব্যাঙ্গালুরু... হতাশাজনক এবং জীবন বদলে ফেরার মতো মুহূর্ত। কারণ আমার জন্য সেটা ছিল অনেক বড় শিক্ষা। আর সেরা মুহূর্ত? নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৩ রানের ইনিংসটিকে বলেছেন নিজের ‘সেরা ইনিংস’।
দীর্ঘ টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ভালো-খারাপ দুই রকম সময়ই গেছে মাহমুদউল্লাহর। এই লম্বা যাত্রায় কোনো আক্ষেপ? মাহমুদউল্লাহ বেশ জোর দিয়েই বললেন, ‘আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলার একটি মুহূর্তও আক্ষেপ করি না।’ একই প্রসঙ্গে পরে আবার বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, কোনো আক্ষেপ নেই। এক ফোটাও আক্ষেপ নেই। বাংলাদেশের হয়ে এত বছর খেলেছি, ব্যক্তিগতভাবে যা আমার জন্য খুবই ভালো ছিল। আমি ২০০৭ সাল থেকে টি-টোয়েন্টি যতটুকু খেলেছি, জানি না কতটা পেরেছি, তবে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি।’
মাহমুদউল্লাহ সহ পঞ্চপান্ডবেরা বাংলাদেশকে কোনো ট্রফি এনে দিতে পারেননি। এ নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও মাহমুদউল্লাহর কথা, ‘ট্রফি নেই, এটা অবশ্যই খারাপ লাগার মতো। তবে আমি এ কথাটা মানতে রাজি নই যে আমাদের কোনো অর্জন নেই। যদি ট্রফি জেতাই মানদ- হয়, তাহলে অনেককেই আমরা লিজেন্ড বলতাম না। ২০০৭ সালে যখন আমি এই ড্রেসিংরুমে এসেছিলাম, সেই তুলনায় এখন অনেক পার্থক্য। শুধু পাঁচ পা-ব নয়, এটা সবার অর্জন। আমি তারতম্য করতে পছন্দ করি না।’
তার এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই ফরম্যাটে শেষ হতে যাচ্ছে ‘পঞ্চপা-ব’ অধ্যায়! এই পাঁচজনের মধ্যে তামিম ইকবাল বাদে আর কারও হয়নি দেশের মাটিতে বিদায় নেওয়ার সৌভাগ্য। করোনা মহামারি শুরুর ঠিক আগে (২০২০ সালে) জিম্বাবুয়ে ম্যাচ দিয়ে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে বিদায় বলেছিলেন তামিম। তারও আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোয় অভিমান নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা বিদায় বলেছিলেন ২০১৭ সালে। মুশফিকুর রহিমের বিদায় হয়েছিল দুবাইয়ে ২০২২ এশিয়া কাপে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে কিংসটাউনের ম্যাচটিই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের শেষ ম্যাচ।
তামিমের মতো ঘরের মাঠে অবসরের সুযোগ ছিল মাহমুদউল্লাহরও। কিন্তু বাংলাদেশ ঘরের মাঠে আবার টি-টোয়েন্টি খেলবে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে। মাহমুদউল্লাহ এত দিন অপেক্ষা করতে চাননি, ‘এটা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। আমি যদি বাংলাদেশ থেকে অবসর নিতে চাইতাম, তাহলে অনেক দেরি হয়ে যেত। আমি মনে হয় ভালো সিদ্ধান্তই নিয়েছি।’ জানালেন, খেলা শুরু করেছিলেন নিজের ইচ্ছায়, শেষটাও করছেন সেভাবেই, ‘আমি খেলা শুরু করেছি আমার টার্মে, বিদায়ও নেব আমার টার্মে।’
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখনই ছাড়ছেন না অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। দেশের হয়ে ওয়ানডে খেলে যেতে চান। এই ফরম্যাট থেকে কবে অবসরে যাবেন এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘সময়ই বলে দেবে।’ তবে একটি সূত্র জানা গেছে, তার ইচ্ছা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন ওয়ানডে ক্রিকেট। বাকিটা নির্বাচকদের হাতে।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত