ভারতকে ধবলধোলাই করে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস
০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ পিএম | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৭ পিএম
এজাজ প্যাটেলের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। বল সোজা গিয়ে আঘাত হারল স্টাম্পে। শুরু হলো নিউজিল্যান্ডের বাধনহারা উদযাপন। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে তখন শুনশান নীরবতা। জয়ের উৎসব করতে গ্যালারিতে আসা দর্শকরা যে পেল সম্পূর্ণ ভিন্ন নতুন এক স্বাদ! ইতিহাসে প্রথমবার ঘরের মাঠে ধবলধোলাইয়ের তিক্ততা।
মুম্বাই টেস্টে মাত্র ১৪৭ রানের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি ভারত। রিশাভ পান্ত ঝড় থামিয়ে স্রেফ ১২১ রানে স্বাগতিকদের গুটিয়ে ২৫ রানের জয়ে ইতিহাস গড়েছে নিউজিল্যান্ড। ক্রিকেট ইতিহাসে কোনো দল যা পারেনি, সেটিই করে দেখাল এই ব্ল্যাক ক্যাপস বাহিনী। ঘরের মাঠ যাদের দুর্গ, দেশের মাঠে যারা অপ্রতিরোধ্য ও অপরাজেয়, সেই পরাক্রমশালী ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করে দিল কিউইরা!
নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ঘরের মাঠে ধবলধোলাই হলো টিম ইন্ডিয়া। ২০০০ সালে একমাত্র দল হিসেবে ভারতকে তাদেরই মাটিতে ধবলধোলাই করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সেটি ছিল দুই ম্যাচের সিরিজ। দেশের মাঠে তিন বা এর বেশি ম্যাচের সিরিজে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশড হলো ভারত।
প্রথম ইনিংসের মতো এবারও রোহিত শর্মার দলকে একাই ধ্বসিয়ে দিয়েছেন প্যাটেল। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া এই স্পিনার এবার নিয়েছেন ৫৭ রানে ৬টি। নিজের জন্ম শহরে ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে ঐতিহাসিক এই জয়ের নায়ক এজাজই।
টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় বোলার হিসেবে ২০২১ সালে ইনিংসে ১০ উইকেটের সবকটি নিয়েছিলেন তিনি এই মাঠেই। সেই ম্যাচে মোট ১৪ উইকেট নেওয়ার পরও হেরেছিল দল । এবার ১১ উইকেট নিয়ে দলকে তিনি এনে দিলেন ঐতিহাসিক জয়।
১৯৮৮ সালে তার জন্ম মুম্বাইয়ের (সেই সময়ের মুম্বাই) এক গুজরাটি মুসলিম পরিবারে। জীবন এরপর তাকে নিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ডে। কিন্তু এখন তিনি ঠিকই মুম্বাইয়ের 'রাজা।' ইয়ান বোথামকে (২২ উইকেট) পেছনে ফেলে সফরকারী বোলারদের মধ্যে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের সফলতম বোলার এখন তিনিই।
সিরিজে তার অর্জন ১৫ উইকেট। ফিলিপস-স্যান্টানাররা তাঁকে পুরো সিরিজে দিয়েছেন সঙ্গ। স্যান্টনার ১৩ ও ফিলিপস নিয়েছেন ৮ উইকেট। আর ব্যাট হাতে প্রায় ৪৯ গড়ে ২৪৪ রান করেছেন উইল ইয়াং। কঠিন উইকেটে এমর রানের কারণে সিরিজ সেরা তিনিই।
ভীষণ শুষ্ক এবং এমন টার্নিং উইকেটে লক্ষ্য তাড়ায় ২৯ রানেই ৫ উইকেট হারায় ভারত। পান্ত ব্যাটিংয়ে আসার আগেই পিরে যান রোহিত-কোহলি-গিল। ব্যাটে এসে ফিরতে দেখন জয়সয়াল ও সরফরাজকে। তবু পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন পান্ত। ষষ্ঠ উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে গড়েন ৪২ রানের জুটি। এজাজের বলে শর্ট লেগে ডাইভ দিয়ে জাদেজার ক্যাচ নেন উইল ইয়াং। ভাঙে সেই জুটি।
এরপর সুন্দরকে নিয়ে আবার ৩৫ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন পান্ত। কিন্তু এজাজেরই বলে ব্যাট-প্যাড হয়ে কট বিহাইন্ড হন এই কিপার-ব্যাটার। প্রথমে আউট দেননি আম্পায়ার। রিভিউয়ে লম্বা সময় পর আসে আউটের ঘোষণা।
৫৭ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রান করে আউট হন পান্ত। দুই অঙ্কে যেতে পারেন আর কেবল সুন্দর (১২) আর ইয়াসভি জয়সয়াল (১১)। ১২১ রানে দাঁড়িয়েই শেষ ৩ উইকেট হারায় ভারত।
পান্তের আউটের সময় ভারতের প্রয়োজন ছিল আরও ৪০ রান, নিউজিল্যান্ডের ৩ উইকেট। রবিচন্দ্রন আশ্বিনকে নিয়ে লড়াইটা জমানোর সুযোগ পাননি সুন্দর। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি আউট হন ১২ রানে।
এই সিরিজে দলের সেরা ক্রিকেটার কেইন উইলিয়ামসনকে পায়নি নিউজিল্যান্ড। পুনে টেস্টের ম্যাচসেরা মিচেল স্যান্টনারও ছিলেন না মুম্বাইয়ে। এরপরও ভারতের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো দল ১৫০ রানের কম সংগ্রহ ডিফেন্ড করে টেস্ট জয়ের কীর্তি গড়ল তারা।
এর আগে ৯ উইকেটে ১৭১ রান নিয়ে দিন শুরু করা নিউজিল্যান্ড আর করতে পারে ৩ রান। প্রথম ইনিংসে ২৩৫ রান করা দলটির দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ১৭৪ রানে।
শেষ উইকেট নিয়ে ইনিংসে পাঁচ এবং ম্যাচে ১০ উইকেট পূর্ণ করেন জাদেজা। এই নিয়ে ১৫বার তিনি পেলেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট, ম্যাচে ১০ উইকেট তৃতীয়বার।
প্রথম ইনিংসে ২৮ রানে এগিয়ে থেকেও শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারল না গৌতাম গাম্ভিরের দল।
জয় দিয়ে গাম্ভিরের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু হলেও সেটা ছিল অপেক্ষাকৃত দূর্বল বাংলাদেশের বিপক্ষে। পরের সিরিজেই ঐতিহাসিক লজ্জা পেল ভারত।
ঘরের মাঠে বরাবরই স্পিনারদের সহায়তা দিতে টার্নিং উইকেট বানায় ভারত। নিজেদের পাতা সেই ফাঁদেই এবার ধরা খেল দলটি। এজাজ প্যাটেল ও গ্লেন ফিলিপসের ঘূর্ণির কোনো জবাবই ছিল না ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপের কাছে। ঘরের মাঠে রোহিত-কোহলিরা যেন ঘোরের মধ্যে ছিলেন নিউজিল্যান্ডের স্পিনের সামনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৩৫
ভারত ১ম ইনিংস: ২৬৩
নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ১৭৪
ভারত ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৪৭) ২৯.১ ওভার ১২১ (জয়সওয়াল ৫, রোহিত ১১, গিল ১, কোহলি ১, পান্ত ৬৪, সারফারাজ ১, জাদেজা ৬, ওয়াশিংটন ১২, অশ্বিন ৮, আকাশ ০, সিরাজ০*; হেনরি ৩-০-১০-১, এজাজ ১৪.১-১-৫৭-৬ , ফিলিপস ১২-০-৪২-৩)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ২৫ রানে জয়ী।
ফল: তিন ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: এজাজ প্যাটেল (৫/১০৩ ও ৬/৫৭)।
ম্যান অব দা সিরিজ: উইল ইয়াং (২৪৪ রান)।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের
‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি
ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান
আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল
ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ
ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা
কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু
হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ
শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯
লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা
পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান
ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা
ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ
যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়